আমার ভাই চুরি করছে তাই তার সালিশ হইতাছে। আমার ভাইয়ের হাত দুইডা বাইন্ধা সবাই তারে ঘিরা দাঁড়াইয়া রইছে। তার অপরাধ সে কাদের আলীর টোংগ থেইকা তার শার্টের পকেট থেইকা একশো পঞ্চাশ টেকা চুরি করছে।
সবাই তারে জিগাইতাছে তুই স্বীকার কর টেকা নিছত? আমার ভাই কিছুতেই স্বীকার করতাছে না। তাই মাত্তাব্বর তারে কাঁচা কঞ্চির লাঠি দিয়া মাইর শুরু করলো। আমার ভাই মাইর খাইয়া দাঁতে কামুড় দিয়া দাঁড়াইয়া রইলো। আমার মায় গিয়া মাত্তাব্বের পায়ে ধরলো। তবুও তিনি মাইর থামাইলেন না। কিছু বারি আমার মায়ের শরিলেও লাগলো আমি দূর থেইকা দাড়াইয়া কাঁদলাম ডরে কাছে গেলাম না। গুনলাম ভাইরে পঁচিশটা বারি দিলো।
কাদের আমার ভাই পঁচারে টুংগে বসাইয়া রাইখা বিড়ি ধরাইতে গেছিলো যদুগো বাড়িতে। আইসা দেখে পঁচা টুংগে নাই। ভাবছে সে চইলা গেছে বাড়িতে। কিন্তু রাইতে সে পকেটে হাত দিয়া দেখে সে যে একশো পঞ্চাশ টেকা রাখছিলো সেইটা উধাও। তার বুঝতে আর বাকী রইলো না কেডায় নিছে।
আমার ভাই পঁচাই টেকা নিছে তা আমার মা আর আমি ভালা কইরাই এহন বুঝতাছি। আমাগো ঘরে তিন দিন ধইরা চাইল নাই। আমরা এক বেলা কইরা খালি দুই খন্ড কচু সিদ্ধ কইরা খাইছি এই দুইদিন। আইজ খাওনের কিছুই নাই। ভাই মেলা কষ্ট করছে জানি তবুও খাওনের লেইগা কিছুই জুগাইতে পাড়ে নাই। এহন কাম কাজ নাই গেরামে। ইটভাটাও বন্ধ। তাই আর কোনো কাজকাম নাই। হঠাৎ ভাই রাইতে ব্যাগে কইরা কি কি নিয়া যেন হাজির হইলো। আমি আর মায় তহন চৌকির উপর শুইয়া আছিলাম। আমি দৌড়াইয়া ভাইয়ের কাছে গেলাম। কইলাম ভাই আমার জন্যে খাওন আনছো?
-ভাই কইলো হ আনছি আনছি, সব আনছি।
ভাই তারপর ব্যাগ থেইকা দুইকেজি চাইল,একটা মাঝারি সাইজের পাংগাস মাছ,কিছু বেগুন আর আমার জন্যে দুইডা সবরি কলা নিয়া আইলো। আমি খুশিতে লাফাইতে লাগলাম। মায় ভাইরে জিগাইলো, “কই টেকা পাইলি?” ভাই উত্তর দিলো, “কামাই কইরা আনছি তাড়াতাড়ি রান্ধন বহাও মেলা খিধা লাগছে।” মায় তাড়াতাড়ি ভাত বসাইয়া দিয়া মাছ কুটা শুরু করলো। ভাই আমার হাতে কলা দিয়া কইলো, “খা মনা” আমি কইলাম, “একটা তুমি খাউ ভাই”। কিন্তু ভাই কইলো, “আমি খামুনা তুই খা, আমার কলা ভালা লাগেনা তিতা লাগে।” জানি ভাই মিছা কথা কইলো। আব্বা বাঁইচা থাকতে আমাগো দুইজনের লেইগাই কলা আনতো। ভাই তহন মেল্লা কলা খাইতো। আব্বা প্রতি হাটে কলা আনতো ভাই কলা ভালা পায় তাই। আর আইজ ভাই আমার জইন্যে কলা খাইলো না।
কলা খাইয়া দুই ভাই-বোইন চুলার পাড়ে বইসা আছি কহন রান্ধা হইবো সেই অপেক্ষায়। মায় বেগুন দিয়া পাংগাসের ঝুল রানতাছে। ভাই আর আমি পাংগাস মাছ অনেক ভালা পাই। ছালুনের গন্ধে আমাগো খিদা আরো বাইড়া গেলো।
সময় কাটানের জইন্যে ভাই নানান গপ্প শুরু করলো। ভাই ভুতের গপ্প কউন ধরছিলো। আমি ভুতের গপ্প ভয় পাই তাই কইলাম, “ভাই পরীর গপ্প কউ” ভাই লাল পরী নীল পরীর গপ্প শুরু করলো।
রান্ধন শেষ, এইবার আমরা খাইতে বসলাম। গরম ভাত সঙ্গে পাংগাস মাছের ঝুল। খাবার মুখে তুলার আগেই হঠাৎ দরজায় ডাকাডাকি শুরু হইলো। মায় দরজা খুললো। ভাইরে সবাই ধইরা নিয়া গেলো মাত্তাব্বের বাড়ি। সেইখানেই ভাইরে ওরা মারতাছে।
এহন গুইনা দেখি বারি চল্লিশটা ছাড়াইছে। মায় কানতাছে আর কইতাছে, “দয়া করেন মাত্তাব্বরসাপ, আমার পুলাডা মইরা যাইবো। আল্লার দুহায় লাগে আর মাইরেন না!” এতোক্ষনে গেরামের সব মানুষ সজাগ হইয়া গেছে। ভাইরে মারতে দেইখা সবার ঘুম যেন কাইটা গেছে। সবাই মনোযোগ দিয়া ভাইয়ের শরীলের উপর পড়া বৃষ্টির ফুটার মতোন কঞ্চির বারি গুনতাছে। একশো পঞ্চাশ টেকার জইন্যে কয়ডা বারি দিবো ভাইরে আমি জানিনা। তবুও আমি অপেক্ষা করতাছি কহন বারি দেওয়া শেষ হইবো। আর কহন আমরা বাড়িতে গিয়া পাংগাস আর বেগুনের ঝুল দিয়া গরম ভাত খামু। এতোক্ষণে মনে হয় ভাত আর ছালুন ঠান্ডা হইয়া গেছে!