কেনো

কেনো

অভ্র আমার খুব ভয় করছে আমাদের অনি আর পাঁচটা বাচ্চার মত না। আমার এখন ওকে দেখলেই ভয় করে। আমি মনে হয় ওর কোনো ক্ষতি করেছি। আমার দিকে খুব রাগি ভাবে তাকিয়ে থাকে। অনির কাছে যেতেও আমার ভয় হয়। এগুলো তোমার মনের ভুল মিম। আমাদের অনি ভালো আছে। আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই স্বাভাবিক। তুমি শুধু শুধু ভয় পেয়ে এমন আবল তাবল বকছো। না আমি শুধু শুধু কেনোই বা বলতে যাব বলো। আমিও প্রথম তোমার মতো ভেবেছিলাম।কিন্তু না অনি স্বাভাবিক না অভ্র।

সেদিন ওকে ঘুম পারানোর সময় আমাকে বলে, জানো মামনী আমাদের পাশের বাসার চাচা কাল মারা যাবে। আমাকে কিন্তু তুমি নিয়ে যাবে ওখানে। আমার না লাশ দেখতে অনেক ভালো লাগে। আমি ওকে ঐদিন কিছু বলতে পারিনি। সেদিন ওর কথা সত্যি হয়েছিলো। করিম ভাই মারা গিয়েছিলো। তুমি এগুলো আমাকে আগে বলোনি কেনো? তুমি দেশের বাইরে ছিলে তাই তোমাকে কিছু বলিনি আমি। আচ্ছা এখন তুমি ঘুমাও কাল সকালে আমি অনিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। তুমি দেখো অনি ঠিকি আছে। তুমি শুধু শুধ আমার মেয়েটাকে নিয়ে এসব বলছ। দেখো তুমি কাল ডাক্তার কি বলে। ঠিক আছে, তুমিও ঘুমাও। আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমাও তো তুমি। মিম কে ঘুম পারিয়ে বেল কোনিতে যায় অভ্র। সিগারেটের ধোয়া ছারতে থাকে। ধোয়া গুলো যেনো ঘিরে ধরছে আজকে। হজারো চিন্তা ঘিরে ধরে সিগারেটের ধোয়ার মতো।

মাকি তাহলে সত্যি বলেছে। মিম কেনো এমন করছে। এগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে তার খবর নেই। সকালে ঘুম ভাংতেই ঘরে যায় অভ্র। ঘুমলে মিম কে কতো সুন্দর লাগে। কতো নিষ্পাপ লাগছে ওকে। এই কি সেই মিম কেনো এমন করছে মাথায় কিছু ঢুকছেনা। তুমি অনিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে না? হুমম যাবোতো আজকে না যাই কাল যাবো। আগে যাও তুমি ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও। আচ্ছা যাচ্ছি এতো পাগলামি করোনা বুঝলে। দেখো অনি স্বাভাবিক তুমি শুধুই ওকে দোষ দিচ্ছ। আগে যাওতো। জাফর ভাইয়ের কাছে নিয়ে যেও। উনি তো অনিকে অনেক দিন ধরেই চিনে তাইনা বলো। ওর কাছেই নিয়ে যাবো তুমি চিন্তা করোনা। আমরা গেলাম।

রাতে বাসায় ফিরে অভ্র। হাজারে চিন্তা ঘিরে ধরছে তাকে। কি বললো জাফর ভাই?  অনি সুস্থ। আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই স্বাভাবিক। তুমি শুধুই এত হয়রানি করালে। তাহলে অনিযে আমাকে এতকিছু বললো। কেনো বললো আমাকে। অনি সেদিনো আমাকে বলেছে ওর লাশ দেখতে ভালো লাগে। ও লাশ দেখতে চায়। অনেক হয়েছে বাজে কথা তুমি যাও তো। আমি একটু একা থাকবো। থাকো তুমি একা আমি গেলাম। ঠিক আছে যাও। সিগারেটের ধোয়া ছারতে ছারতে একটা কথাই ভাবছে কেনো এমন করছে মিম। নিজের মেয়ের নামেও এত কিছু কেনো বলছে।

মা আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু মাতো আর বেঁচে নেই। কি বলতে চেয়েছিলো মা? অন্ধকারে স্টর রুমের দিকে যেতেই কিছু একটা চোখে পরলো অভ্রর। কে কে ওখানে? মিম তুমি নাকি? দরজা খুলে ভিতোরে যেতেই দেখে পুরো স্টোর রুম ফাকা। অথচ এখানে অনেক কিছুই ছিলো। কেনো সরাবে মিম এগুলো? কেনো এমন করছে? কিছুই মাথায় আসছেনা। মা কিছুতো একটা বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু কি সেটা? মাথা ব্যাথাটা সহ্য করা যাচ্ছে না। কি হচ্ছে এসব। হাজারো ভাবনা নিয়ে সিগারেট ধরায় অভ্র। কয়দিন একটু বেশি সিগারেট খাওয়া হচ্ছে। মিম তুমি কি স্টোর রুমের দিকে গিয়েছিলে? না কেনো যাবো আমি ওখানে? না এমনেই মনে হলো তাই বললাম। আমি সিগারেট আনতে যাচ্চি আসতে একটু দেরি হবে। যা তোমার ইচ্ছা। সিগারেট কিনে বাসায় যায় অভ্র।

মিম মিম এই মিম কথায় গেলে তুমি? কেনো কি হয়েছে আমি কেথাও যেতে পারবোনা নাকি? পারবেনা কেনো কোথাও দেখলাম না তাই আর কি। ভালো আমি ঘুমালাম তুমি যা খুসি করো। ঠিক আছে। বেলকুনিতে যেয়ে সিগারেট ধরায় অভ্র। মাথাটা ভিসন ব্যাথা করছে। মিম কে নিয়ে চিন্তা করতে আর ভালো লাগছে না। কোথায় গিয়েছিলো আজকে মিম? আনমনে এগুলো ভাবতে ভাবতে কখন সিগারেটের পেকেট শেষ করেছে তার কোনো খবর নেই। শুধু মাথায় ঘুরছে কি বলতে চেয়েছিলো মা। না আর পারছেনা অভ্র। মাথা ব্যাথাটা বেরেছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।

তোকে বলেছিলাম অভ্র বাসায় থাকলে আসবি না। আজকে একটুর জন্য বাঁচলি। অভ্রর কাছে ধরা পরিস নাই। মিম তুমি কার সাথে কথা বলছ? কই কারো সাথে নাতো।কার সাথে কথা বলবো আমি? না এমনি মনে হলো তুমি মনে হয় কারো সাথে কথা বলছো। আমি কথা বলিনি বুঝলে। আমি ঘুমাই এখন। ঠিক আছে। সকালবেলা বাসা থেকে বের হয়ে অভ্র আগে যায় জাফরের কাছে। ছোটো বেলার বন্ধু জাফর। কিরে কি মনে করে এতো সকালে? কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি? না আসলে খুব চিন্তার ভিতর আছি।

অভ্র সব কিছু খুলে বললো জাফরকে। জাফর এক মনে শুনে শুধু একটা কথাই বললো আন্টি(অভ্রর মা) কি বলেছিলো আবার বলতো। মা অসুস্থ হওয়ার আগে লাশ নিয়ে কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু কি তা আর জানা হয়নি। আমি যদি বাসা থেকে বের হয়ে যাই মিম অনেক খুশি হয়ে যায়। কেনই বা এমন করছে মিম? কাল রাতে ভাবিকে(মিম) কোনদিক থেকে আসতে দেখেছিস? স্টোর রুমের দিক থেকে। তুই আগে বাসায় যা। তোদের স্টোর রুমে হয়তো কিছু পাবি। ঠিক আছে। রাস্তায় একা হাটা হাটি করে রাত দুটায় অভ্র বাসায় ফিরলো। এর ভিতর মিম তার খবর নেয়নি।

এই সেই মিম যে কিনা আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারতো না? নিজেকে বিস্ব্যাস করাতেও কষ্ট হচ্ছে অভ্রর।
আর পারছেনা এত চাপ নিতে। অভ্র সোজা চলে গেলো স্টোর রুমের দিকে। না এখানে কিছুই নেই। আচ্ছা পাটাতনের উপরে কিছু নেই তো। পাটাতনের উপরে উঠেই অবাক হয়ে গেলো অভ্র। চারোদিকে শুধু নগ্ন লাশ আর মিম সেই লাশ গুলোর সাথে যৌন কর্মে লিপ্ত। দেখতে কতোটা ভয়ানোক লাগছে। এমন কিছু দেখবে সেটা কল্পনাও করেনি অভ্র। অভ্রকে দেখে পাগলের মতো ছুটে আসছে মিম।কোনো রকোম পাটাতনের দরজা লাগিয়ে মিম কে আটকিয়ে রাখে অভ্র। কিছু বুঝে উঠতে না পেরে জাফর কে কোল দেয় কই তুই তারা তারি আমার বাসায় আয়। কেনো কি হয়েছে? আগে আয় তারপর বলছি। ঠিক আছে আসছি।

ঘন্টা খানেক পর জাফর আসে কি হয়েছে? এত দ্রুত আসতে বললি যে? সব কিছু খুলে বলে জাফরকে। জাফর শুনে বলে নেক্রোফিলিয়া। ভাবির (মিম) নেক্রোফিলিয়া হয়েছে।এই রোগ হলে রোগি মৃত দেহের সাথে যৌন মিলন করতে আগ্রহী হয়ে পরে। যদি কোনো মৃত দেহ না পায় তাহলে কাছের মানুষকে মেরে যৌন কাজে লিপ্ত হতে পারে রোগিরা। কি বলছিস এসব? যা বলছি ঠিকি বলছি। কিন্তু এত লাস ও পাবে কথা থেকে? সেইটা ভাবি ভালো জানে। এখন কি করবো আমরা? পুলিশ কে খবর দেয়া ছারা কেনো উপায় নেই। মিম কে কি ধরে নিয়ে যাবে পুলিশ? হুমম তার চিকিংসার ব্যবস্থা করতে হবে। আমি পুলিশ কে খবর দেই। পুলিশ যা করার করবে।

পুলিস এসে মিম কে ধরে নিয়ে যায়। মিম সব স্বিকার করে নেয়। লাশ গুলো সে সরকারি হাসপাতালের ডোমের কাছ থেকে নিতো। এর জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিতো সেই ডোম কে। ডোমের স্ত্রী সেই লাস গুলো মিমকে দিয়ে যেতো। অভ্রর মা একদিন দেখে ফেলে তাই কৌশলে তাকেও মেরে ফেলে মিম। কিন্তু অভ্র ফিরে আসায় খুব কষ্ট হয়ে পরছিলো মৃত লাশ আনতে। বিভিন্ন কোশলে অভ্র কে বাইরে পাঠিয়ে লাশ আনতো মিম। অনির নামেও এই জন্য এতো কিছু বলে ছিলো মিম। যাতে করে অভ্রকে বাইরে পাঠানো যায়। আর সুযোগ খুজছিলো অভ্র কে শেষ করার। অভ্রকে আর শেষ করতে পারলোনা।

১০ বছর পর অনি এবং অভ্র বাবা মেয়ে ভালোই আছে। অনির এখন ১৪ বছর বয়স। সারাদিন অফিস করে বাড়ি ফিরে অভ্র। এসে দরজা খুলতেই দেখে অনির জামা কাপর সোফায় পরে আছে,আর তিব্র এক বোটকা গন্ধ ছড়িয়ে আছে চারিপাশে। মনে হয় মৃত লাশের গন্ধ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত