দেহ

দেহ

আমার সাথে যার বিয়ে দিলো বাবা। লোকটা আমার থেকে দুগুণ বয়সের বিদেশ ফেরত বড়লোক মানুষ। তাই হয়তো বাবা ভালো রাখার দায়বদ্ধতা সঠিক ভাবে পালন করলো। তিন ভাইবোন আমরা, আমরা দুবোন দেড় বছরের বড় ছোট আর দেখতে ও সুন্দরীদের দলে পরি। তাই সবার চোখ লেগে যাই আরো দুই মেয়ে সমান হলে লোকের চিন্তায় ঘুম আসে না। ( বাংলাতে একটা কথা আছে যার বিয়ে তার খবর নাই পারাপরশির ঘুম নাই) আপুর ও আমার মতো ১০ ম শ্রেনী তে উঠতেই বিয়ে দিয়ে দিলেন বাবা আর আজকে আমাকে। হয়তো আমরা তার কাছে বোঝা হয়ে যাচ্ছি তাই!! অপ্রকাশিত অভিযোগ এসে গেছে মনে তবুও তারা বাবা মা। আমাকে একটা রুমে রেখে গেলো কয়জন মিলে খুব ভয় করছে চেনা জানা কেউ নেই বলে।

কেউ দরজা খুলে ভিতরে আসলো বুজতে পারলাম। আমি উঠে তাকে সালাম করলাম ( আপু বলে দিছে) । উনি আমাকে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো। আমি তার দিকে একবার তাকালাম নাহ্ লোক টা বয়সের চাপ নেই চেহারাতে। লোকটা কিছু ভের করচ্ছে ড্রয়ার থেকে। আমার সামনে কিছু টাকা ধরলো! তোমার দেনমোহর পরিশোধ করে নিলাম। তোমার আর কোন দাবি আছে? আমি মাত্র ১৫ বছরের দাবি, দেনমোহর এগুলো বুজি না তাই না বলা সঠিক মনে হলে তাই বললাম। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে একটু লাইটটা বন্ধ করে দিবেন? বলতে লাইট বন্ধ করে দিলো আমি শুয়ে পরি উনি ও পাশে শুয়ে পরে।

সারাদিন এর ক্লান্তিতে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসে তখন মনে হচ্ছে কেউ আমার কাপড়ের ভিতর হাত ঢুকাচ্ছে আমি লাপ দিয়ে উঠে বসি। কিন্তুু উনি আমাকে টেনে বিছানায় চেপে ধরে উনার কাজ চালাচ্ছে! যন্ত্রণায় চিতকার আসতেছে তবুও কেন জানি চিৎকার দিতে পারছি না। উনার কাজ শেষ হলে ওপাশ ফিরে শুয়ে পরে। আমার মনে হচ্ছে বমি আসবে শরীর এর যন্ত্রণায় কান্না চলে আসে। কারণ আমি ফিজিক্যাল রিলেশন সম্পর্কে জানতাম না! ওয়াশরুম থেকে এসে শুয়ে পরি কিছু সময় পরে হয়তো লোকটার আবার চাহিদা জেগেছে। তাই নিজের মনের মতো সুখ খুঁজে নিচ্ছে। তবে আমি বাঁধা দেইনি কারণ শক্তি ছিলো না। সত্যি বলতে লোকটা বিয়ের নামে দেহ কিনে নিলো।

“”””তিনবার কবুল বললে শরীর পবিত্র হলে ও মনে জায়গা করে নিতে হয় লোকটা হয়তো ভুলে গেছে “”””””

“””” দেহের চাহিদায় দেহ কিনে আনলো!!””””

সকাল হতেই ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে হলো। আজকে আমাদের বাসা থেকে মেহমান আসলো সবাই খেয়ে চলে গেলো কিছু সময় ছিলো আমাকে নিতে বলছিলো। তবে উনি বলছে উনার কাজ আছে তাই কয়দিন পরে যাবে। আমাদের বাসা থেকে অনেক কিছু দিছে বাবা। আমার ভালো থাকার কিমত হইতো দিলো। আচ্ছা আমি তাদের কাছে থাকলে লেখা পড়া করলে কি এর থেকে ও বেশি টাকা খেয়ে পেলতাম?? হয়তো অনেক ভালো রাখতে চাইছে!! আজকে এক সপ্তাহ এই বাড়িতে আমাদের বাসা থেকে কল দেই কথা বলে তবে নিতে কেউ এলো না। খুব মনে পরে সবার কথা তারা কি বুজে না?? তাদের মনে পরে না??? আর লোকটা ও দেহের চাহিদা একরাত ও বন্ধ হলো না। তার কথা হলো আবার গেলে ২ বছর বিদেশ থাকবে। এই কয়দিন যদি মজা করতে না পারে বিয়ে করলো কেন?

সত্যি আমি তার মজা বস্তু?? তাহলে তার একটু বড় কাউকে বিয়া করা উচিত ছিলো যে তার সাথে সমান ভাবে মজা করতে ও দিতে পারতো। তবে এই সময় বউ ছোট খুঁজলে ও তার মাঝে বড়ত্বের সব গুণ থাকতে হবে! তবে কখনো বলা হবে না কারণ “”” নারী তুমি যতখন চুপ ততখন তুমি সবার মনের রুপ”” আমার ২ দিন পরে টেস্ট পরীক্ষা আব্বুকে নিতে বললাম আসলো না। উনাকে বলতে বলতে ও রাজি হলোনা। তাই আমি সারা দিন না খেয়ে আছি অভিমান ছেড়ে যাচ্ছে বাবা- মার উপর।

উনি আসতে রাজি হলে ও আমাকে রেখে চলে যাই!আমি পরীক্ষা তেমন ভালো হয়নি কারণ পড়তে পারি নাই। পরীক্ষা শেষ হলে ও উনি আসে নাই বাবা- মা কেমন কেমন ব্যাবহার করতেছে। আপুকে কল দিয়ে অনেক কান্না করি ও করে কারণ দুঃখ দুজনের হয়তো সমান। বলে বোনরে কেঁদে কি করবি? আমাদের জীবনের ইতি আমাদের বাবা-মা টেনে দিছে। কপাল এর কি দোষ দিবো আর শান্তনা দিবার ভাষা আমার জানা নেই।

বাবা আমাকে সাথে নিয়ে আসে আমি ও না বলি নাই। উনি বাবাকে বলে আমার চলা ভালে না উনার কথা শুনিনা মুখে মুখে কথা বলি। মাত্র ১ মাসে ঠিক কয়টা কথা বলছি জানি না। তবে বাবা আমাকে তাদের সামনেই বকলো। উনার পক্ষে বলে চলে যাই। তবে আমি জানি তার কি কথা শুনি নাই। তার রোজ দেহের চাহিদা মিটিয়ে দিবার জন্য রাজি হয়না তাই। সত্যি আমার শরীর দিচ্ছে না। সারাদিন কাজ রাতে উনি আমি পড়ার সময় পাই না। হয়তো তারা দিতে চাইনা! এতো কিছু মাঝে নতুন কেউ আসার খবর দিয়ে দিলো! আপু শুনে অনেক আফসোস করে আমার পরীক্ষার জন্য। কখনো ক্লাস এ ফেল মারিনি ১০ জনের ভিতর ছিলাম। কারণ ১০ জনের ভিতর থাকলে Half লাগে সব কিছুতে ইস্কুলে।

আপুর মতো স্বপ্নো গুলো কই জেনে বিধায় নিচ্ছে। তবে আমি হারিয়ে যেতে ছাই না তারার মতো আঁধারে ও জ্বলতে চাই। তাই পরীক্ষা আমি দিবোই যা কিছু হয়ে যাক বলে দিছি সবাই কে। উনি চলে গেলেন ৩ দিন হলো। জানি সম্পর্ক বন্ধত্বের না হলে ও কিছু একটা ছিলো যার জন্য মায়া লাগছে। বার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে পরীক্ষা দিলাম। তেমন ভালো হয়নি তবে আল্লাহ রহমতে খারাপ ও হয়নি। প্রায় ২ মাস পরে সকালে বেথা উঠে আমার ডাক্তার এর কাছে নিয়ে আসে তারা। কারণ মাত্র ৮ মাস আমার বেথা উঠার নাকি কথা না।

ডাক্তার কিছু টেস্ট করে বলে সিজার করতে হবে। বাচ্চার অবস্থা ভালো না। কেন জানি না দেখা বাচ্চা টার জন্য মায়া লাগছে। অনুভূতি কাজ করছে যদি ও আমি প্রকাশ করি না কোন কিছু। তবুও কথা বলা হতো তার সাথে। মনের সব অভিযোগ করা হতো। টাকার অভাব নেই তাই রাজি হয়ে যাই ২ ঘন্টার ভিতর অপারেশন থিয়েটার এ নিয়ে যাওয়া হয়। উনাকে কল দিয়ে ছিলো হয়তো বিজি তাই ধরেনি। আমার আর কথা বলা হলো না তার সাথে। ভালোবাসি কিনা জানি না তবে স্বামী হিসেবে অনেক টা আপন লাগে! এটাই হয়তো পবিত্র সম্পর্কে টান! আমার বাবা- মা ও আসছে। তবে কান্না করছে কেন? তারা কি জানতো না বিয়ের পরে এটা হওয়াই ছিলো। আমি না হয় ছোট ছিলাম তারা না!

আপু মাথার কাছে বসে আছে কোন কথা বলছে না। আমরা দু বোন দু’জনের সব কথা জানি বন্ধ বলতে দুজন দুজন কে বুজি। আধো আধো কান্না শুনতে পাচ্ছি বাচ্চার তবে দেখতে না। কিছু সময় পরে মনে হলো শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছে। আস্তে আস্তে কিছু শুনতে পেলাম না। আজকে আমার মৃত্যুর ৪ দিন!! কতো মানুষ আসলো হয়তো। আমার মা কান্না করতে করতে কয়বার বেহুশ হয়েছে। বাবা নিজের কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। সবার উপর একরাশ অভিমান নিয়ে এই দেহ বিদায় নিলো। আর মানুষের অভিযোগ থেকে!

শুধু বাচ্চাটাকে দেখে হলো না। সবাই সারা জীবন তার মার গল্প শুনাবে তাকে! অনেক টা শান্ত রাগী ছিলো!! আর সে তারার মাঝে খুঁজবে তার মা’কে! শত দেহের গল্প আছে আমাদের চারপাশে! কেউ খোঁজ রাখে না, কেউ বলে না, চাপা কষ্ট নিয়ে হাসি মুখে বেঁচে আছে। কেউ বা ওপরে! স্বপ্ন দেখানো মানুষ গুলো যখন ভালো থাকার কাছে রেখে আসে। তখন সবার ভালো থাকা হয়ে উঠে না! ভালো থেক বাবা – মা আমি ও ভালো আছি কারণ আমি দেহ বিহীন! শতো অভিযোগ এর ভিতর একরাশ ভালোবাসা ছিলো তোমাদের প্রতি তবে বলা হলো না।

ইতি
মেয়ে দেহবাসী!
যেই দেহটা বেড়ে উঠার আগেই লোকচক্ষুতে পিপাসা, চিন্তা, ভোগ, ব্যাবহার এর বস্ত হিসাবে লাগে।

“”” হয়তো কেউ কখনো ভাববে না মেয়ে দেহের ভিতর ও একটা হৃদয় থাকে। যেখানে আকাশ ছুঁয়ার ইচ্ছে”””””

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত