আকাঙ্ক্ষা

আকাঙ্ক্ষা

বিবাহিত জীবনের পাঁচ বছরেও মা হতে পারলাম না।বিষয় টা শুরুর দিকে আমার আর রিয়াদের ব্যক্তিগত ব্যাপার হলেও পরবর্তীতে তা আর ব্যাক্তিগত রইলো না।আত্মীয়,পরিবার,স্বজন,বান্ধবী,পড়শী সবাই জানতে চায়,আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা টা কার।কেন এত বছরেও আমাদের ঘরে একটা সন্তান নেই।প্ৰথম প্ৰথম কথাগুলো বুকে খুব বিঁধতো।তারপর ধীরে ধীরে নিজের সহনশীলতা আর সহ্য শক্তি বেড়ে গেল।প্রসঙ্গ গুলো সামনে এলে এড়িয়ে যেতাম কিংবা চুপ করে থাকতাম।

বিয়ের দুই কি আড়াই বছর পার হওয়ার পর থেকেই ডাক্তার দেখাচ্ছিলাম।একের পর এক ডাক্তার বদল করতে থাকলাম।এক ই টেস্ট বার বার করেও রিপোর্টে যা আসছিল তা হলো,আমি কিংবা রিয়াদ দুই জন ই সন্তান ধারনে সক্ষম।কারো শারীরিক কনো ত্রুটি নেই,কোথাও কোনো সমস্যাও নেই।ঠিক কি কারনে আমি কনসিভ করতে পারছিনা বিষয়টা ডক্টররা ও ধরতে পারছিলেন না।

রিয়াদরা দুই ভাই,আমি আর আমার শাশুড়িকে নিয়ে আমাদের পরিবার।শাশুর মারা যাওয়ার পর থেকে ,রিয়াদ তার বাবার ট্রান্সপোর্টের বিজনেস দেখাশোনা করে।ছোটভাই রিজভী ছয় মাস হলো পারিবারিক এই ব্যবসায় জয়েন করেছে।দিনগুলো আমাদের বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছিল।রিয়াদের অভিজাত পরিবার,ঢাকায় নিজেদের বাড়ি,একটা মানসম্পন্ন ব্যবসা,সবই ছিল তাদের।অভাব ছিল শুধুমাত্র একটা সন্তানের,একটা পরবর্তী প্রজন্মের।

ইদানিং শাশুড়ী মা একটা নাতির জন্য প্রায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন।যদিও আমার কবিরাজ,ঝাড় ফুকে বিশেষ বিশ্বাস নেই,তারপরও উনার কথা মেনে,সেই সব ও করলাম।তাবিজ কবজ,গাছের ছাল বাকল থেকে শুরু করে যে যা বললো সব করে দেখলাম।কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না।কোনো এক ওঝার কথা মতো একদিন শাশুড়ী মা বললেন,আমাকে দিয়ে নাকি তাদের বংশ রক্ষা হবে না। এই সংসারের জন্য আমি একটা অভিশাপ। তারপর থেকে ধীরে ধীরে শাশুড়ীর ব্যবহারে পরিবর্তন আসতে লাগলো।সমস্ত দোষ আমার,আমি মা হতে অক্ষম।কথায় কথায় দোষ ধরা, কাজের ছোটখাট ভুল গুলোকে বড় করে দেখা।অল্পতেই ঝগড়া,চিল্লাফাল্লা করা,বাসাটা যেন একটা কুরুক্ষেত্রে পরিনত হতে লাগলো দিন দিন।

আমার কোনো কিছুই তাঁর আর ভালো লাগেনা,কোনো কাজ পছন্দ হয়না।সব চেয়ে খারাপ লাগতো তখন,যখন বাইরের লোক এসে মুখের উপর কথা শুনিয়ে যেত।যেন সন্তান জন্ম দেয়া,না দেয়াটা আমার হাতে !আচ্ছা,আল্লাহ না চাইলে আমার কি করার আছে?বাড়িতে মেহমান বা মায়ের বান্ধবীরা আসলে নিজেকে যতটা পারতাম আড়াল করে রাখতাম।এত অসম্মান,এত লাঞ্ছনা,গঞ্জনা যে ভাগ্যে ছিল তা আমার নিজেরও কখনো জানা ছিলনা।

মা ঠিক করেছেন তাঁর ছেলের আবার বিয়ে দিবেন।আমি এই সংসারে অলক্ষী,এমন নানা ধরনের কথা তিনি আমাকে আকারে ইঙ্গিতে বোঝাতে থাকলেন।আমি যেন কোনো ঝামেলা না করে নিজেই এই সংসার থেকে চলে যাই।মনে মনে ভাবতাম,সম্পর্কগুলো কি এতই ঠুনকো? দিনের পর দিন এক ছাদের নিচে বসবাস করলেও বাড়ির বউ সবসময় পরের মেয়ে ই থেকে যায়।আপন হতে পারে না কোনদিনও!প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে পুরনো থালা বাসনের মত ফেলো দেয়া যায় তাকে? প্রায় রাতে কাঁদতাম, রিয়াদ সব বুঝতো,আমাকে নানাভাবে শান্তনা দিতো।বিয়ের আগে আমার আর রিয়াদের তিন বছরের সম্পর্ক ছিল।

ছিল একটা সমঝোতা,শ্রদ্ধা,দৃঢ়প্রতিজ্ঞা,আর গভীর ভালোবাসার দায়বদ্ধতা।জীবনের যে কোনো পরিস্থিতিতে একজন আরেক জনের পাশে থাকার অঙ্গীকার ছিল।আজো আমাদের কমিটমেন্টগুলো তেমনি আছে যেমন বিয়ের আগে ছিল।এই একটা কারণ ই তখন আমাকে শক্তি জোগাতো। রিয়াদ খুব গম্ভীর প্রকৃতির প্রেক্টিক্যাল টাইপ মানুষ।কথা কম বলতো।রাগারাগী করাটা তার আচরণ বহির্ভূত ব্যাপার।সব সময় শান্ত আর কোমল।আমি যখন ভেঙ্গে পরতাম,আমাকে সে বোঝাতো,বলতো:

– বেঁচে থাকার জন্য একটা বাচ্চা ই সব নয়।আমাদের মধ্যে যে ভালোবাসা,বোঝাপড়া,বিশ্বাস আছে,এটাই অনেক।

– একটা সুন্দর সুখী জীবন কাটিয়ে দেয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ঠ।আল্লাহ যদি চান তো কখনো আমরা বাবা মা হবো,আর না চাইলে কোনদিনও হবো না।এতে আমার বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই।তুমিও মন খারাপ করবে না।খুব তাড়াতাড়ি রিজভী কে আমরা বিয়ে দিবো।তাদের ঘরে সন্তান আসলে মা এইসব বংশ রক্ষা করার কথা ভুলে যাবে।একটু ধৈর্য ধরো।মায়ের বয়স হয়েছে,তিনি পুরনো ধ্যান ধারণার মানুষ।তাই না বুঝে তোমার সাথে অনেক অন্যায় আচরণ করে।একটু মানিয়ে নাও। আমিও মানিয়ে নিচ্ছিলাম।মনে মনে ভাবতাম,রিয়াদ আমার পাশে আছে,এই জগতে আর কিছুই চাইনা আমার। কিন্তু,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে লাগলো। আমার শাশুড়ী গুপনে রিয়াদের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা শুরু করলেন।আমি কিছুই জানতাম না।তবে আন্দাজ করতে পারতাম।

একদিন খুব ভোরে দেখলাম গ্রাম থেকে আমার শাশুড়ীর দূর সম্পর্কের এক চাচাতো বোন এসেছে।সাথে তার ষোল/ সতেরো বছরের মেয়ে।শাশুড়ী খুব আদর যত্ন করছেন তাদের।রাতে খাবার টেবিলে সেই মেয়ে সবাইকে প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে,যেন এ বাড়ির ই কোনো সদস্য সে।আমার বুঝতে আর বাকি রইলো না কিছু।এই মেয়েটা কে ই শাশুড়ী রিয়াদের বৌ করতে চান। সেদিন রাতে শাশুড়ী আমাদের ঘরে আসলেন।সাথে তার সেই বোনের মেয়েটি এক বাটি পায়েস হাতে। মা বললেন:

– বৌমা তুমি একটু যাও তো,রিয়াদের সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে। আমার পা দুটো যেন নড়ছে না,বুঝে গেলাম মা ঠিক কি বলতে এসেছেন ।নিজের অজান্তে চোখের কোনে পানি চলে আসলো।অশ্রু গোপন করে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম আমি।

সিঁড়ি বেয়ে ছাদে চলে গেলাম,খোলা আকাশের নিচে প্রাণ ভরে নিঃস্বাস নিলাম।রাতের আকাশটা কে খুব ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম।অসংখ্য তাঁরার মাঝে একটা চাঁদ।খুব উজ্জ্বল,এত উজ্জ্বল যে পাশের তাঁরাগুলো কে তার কাছে অনেক ম্লান লাগে।ওখান থেকে একটা তাঁরা যদি খসে পরে যায়, আকাশের তাতে কি বা আসে যায়? আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম।কাল খুব ভোরে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।কারো জীবনে গলগ্রহ হয়ে থাকবোনা আর। ঘরে এসে রিয়াদ কে পেলাম না।সবগুলো ঘরে খুঁজলাম।কোথাও নেই সে।তার ফোন সুইচ অফট।শাশুড়ী কে জিজ্ঞাসা করতেই,একদম তেড়ে আসলেন আমার দিকে।অবস্থা এমন যে, মনে হচ্ছিল গায়ে হাত তুলবেন তিনি।

– আমার ছেলেকে কি জাদু মন্ত্র করেছিস?যে ছেলে জীবনে কোনদিন আমার কোনো কথার অবাধ্য হয়নি আজ সে তোর জন্য ঘর ছেড়ে চলে গেল।অপয়া,অলক্ষনী,আমার সামনে থেকে চলে যা।

শাশুড়ীর এমন ভয়াবহ রূপ প্রথম দেখলাম সেদিন।কাজের মেয়েটা জানালো,আমাকে ডিভোর্স দিয়ে,শাশুড়ী মায়ের বোনের মেয়ে কে বিয়ে করার কথা বলার পর রিয়াদ রাগারাগি করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছে। সারারাত ছটফট করে কাটালাম।আত্মীয়,স্বজন,বন্ধু বান্ধবী,পরিচিত সবার কাছে ফোন করেও রিয়াদের কোনো খোঁজ পেলাম না। সোফায় বসে রইলাম ঠাঁয়।ফজরের নামাজ শেষ করে বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছি।গলির মোড়ে একটা সি এনজি আটোরিক্সা ঢুকতে দেখলাম।আমাদের বাসার গেটের ঠিক সামনে এসে ওটা থামলো।সাথে সাথে আমার মোবাইলে একটা রিংটোন বেজে উঠলো।

– শীলা,আমি নিচে,যদি আমাকে ভালোবেসে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারো তো এক কাপড়ে এখনই বেরিয়ে এসো।

রিয়াদের গলায় কি ছিল জানিনা।আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিলাম।কি এক দূর্বার আকর্ষণ যেন আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।আমি বের হয়ে গেলাম,কাউকে কিছু না বলে।একবারো আর পিছু ফিরে তাকালাম না। তারপর শুরুহলো অন্য রকম একটা নতুন জীবন।

একটা পাঁচ তলা বাসার চিলে কোঠার এক কামড়ার বাসা,সাথে একটা ছোট কিচেন আর ছোট একটা বাথরুম।আর সামনে বিশাল ছাদ।বিলাসবহুল আভিজাত্য ছেড়ে রিয়াদ আর আমার ছোট্ট একটা অনাড়ম্বর নীড়। আমাদের ঠিকানা কাউকে দেয়া হয়নি। প্রচন্ড অভিমানী ছেলে রিয়াদ তার বাবার ব্যবসা, বাড়ি,গাড়ি সব ছেড়ে চলে এসেছে।জীবনে কখনো চাকরি করেনি সে,নেই কোনো অভিজ্ঞতা।সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবে আমাদের দুজনেরই সম্পূর্ণ অজানা।

কয়েকটা মাস খুব কষ্টে কাটলো। ঘরে চাল হলে ডাল হয়না,ডাল হলে লবন মরিচের ঘাটতি।তবে অভাব ছিলনা শুধু একটা জিনিসের আর তা ছিল “ভালোবাসা”।এর মধ্যে আমার একটা ছোটখাটো চাকরি হলো।একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের চাকরি।বাচ্চাদের পড়াই।আবার কিছু বাচ্চা বিকেলে বাসায় টিউশন নিতে ও আসে।একসময় একটা বাচ্চার জন্য আমার জীবনে এত হাহাকার ছিল,আর আজ আমার ঘর ভরা থাকে ছোট ছোট বাচ্চা দিয়ে।সারাদিন কলকাকলিতে মুখর থাকে আমার চারপাশ। রিয়াদ আর কোনদিন তার পিছনে ফেলে আসা জীবনের খোঁজ নেয়নি।আমিও ফিরে তাকাইনি।একই শহরে থেকেও আমরা বহুদূরে।

একদিন আমার এক স্টুডেন্ট তার মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসলো।কথাপ্রসঙ্গে ভদ্রমহিলা জানালো তাদের অফিসে বেশ কয়েকটা পদ খালি আছে। উনাদের এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এর ব্যবসা।কিছু শিক্ষিত,মার্জিত,স্মার্ট লোক তাদের দরকার। রিয়াদের সাথে কথা বলার পর তিনি রিয়াদ কে চাকরি টা অফার করলেন। রিয়াদ সেখানে জয়েন করলো। কিছুদিনের মধ্যে ঐ অফিসের কাজ কর্ম,ব্যবসা অনেক বড় হতে লাগলো। রিয়াদের বিস্বস্ততা, একাগ্রতা আর সিনসিয়ারিটির জন্য একের পর এক তার প্রমোশন হতে থাকল । পাশপাশি রিয়াদ শেয়ার ব্যবসাও শুরু করলো।আল্লাহ যেন তখন নিজের হাতে ঢেলে দিলেন।শেয়ার ব্যবসায় আশানুরূপ লাভ হতে লাগলো।

দেখতে দেখতে সুখে দুঃখে কয়েকটা বছর কেটে গেল। আমাদের নিজেদের একটা ফ্ল্যাট হলো।রিয়াদের চাকরি আর পাশাপাশি ছোট ছোট ব্যবসাগুলোও বড় হতে লাগলো।আমিও আমার চাকরিটা খুব আনন্দের সাথে করে যাচ্ছিলাম। সকালে স্কুলে বাচ্চাদের পড়াই,বিকেলে আবার তারা বাসায় পড়তে আসে।যেন সত্যিকারের জীবনের স্বাদ পাচ্ছি।আর বাড়িতে ওরা আমাকে মা বলেই ডাকে।অমি তখন কতো শত বাবুর মা,দিনগুলো ভালোই কেটে যাচ্ছে।

কিন্তু,বেশ কয়েকদিন হলো শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।সকালের দিকটাতে জ্বর জ্বর লাগে।কিছু খাওয়ার রুচি নেই।শরীর হাত পা ব্যথা।মাথাটা হঠাৎ হঠাৎ ঘুরতে থাকে।আবার ডক্টরের কাছে যাওয়ার মত ও শরীর খারাপ না।কিন্তু রিয়াদ কিছুতেই মানতেই চাইছে না। ডক্টরের এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছে।ডক্টর দেখলাম।পরদিন কিছু টেস্টের রিপোর্ট নেয়ার জন্য আবার গেলাম।ওয়েট করছিলাম।অনেক দিনের পরিচিত ডক্টর,কিছুক্ষন পর আমাদের দুজনকে রুমে ডাকলেন। এরপর ডক্টর যা বললেন তা শোনার জন্য হয়তো অনন্ত কাল ধরে আমরা অপেক্ষায় ছিলাম।আজ নয় বছর পর মনে হলো আমি কোনো সুখের স্বপ্ন দেখছি।ডক্টর জানালো আমি তিন মাসের প্রেগনেন্ট।অথচ আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।আমি যেন আমার নিজের কান কে ও বিশ্বাস করতে পারছিলামনা।

সবার আগে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালাম।আল্লাহ চাইলে সব পারেন। আমরা তো সেই কবেই আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। পাশের সিট থেকে রিয়াদ উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।মুহূর্তে মধ্যে ভুলে গেলাম আমাদের সমানে কেউ আছেন।গভীর আবেগে রিয়াদ চুমোতে চুমোতে ভরে দিল আমার মুখ,চোখ, নাক, ঠোঁট।আজকের এই দিনটা দেখানোর জন্য আল্লাহ আমাদের কত অপেক্ষা করিয়েছেন।কত ধর্য্যের পরীক্ষা দিলাম,জীবনের কত চড়াই উৎরাই পার করে আজ এই নতুন অনুভূতির স্বাদ পেলাম। ধন্যবাদ সৃষ্টিকর্তাকে।বুকে এখন শুধু একটা সুন্দর আগামীর স্বপ্ন বুনে যাচ্ছি।একটা সুস্থ্য স্বাভাবিক ছোট্ট প্রাণ আসুক আমার এই বহু প্রতীক্ষিত,আকাঙ্খিত কোল জুড়ে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত