ধোঁকা

ধোঁকা

প্রাক্তনের মেসেজ দেখে আমি চমকে উঠলাম।এতদিন পর কি মনে করে নক করেছে?তবে যাই হোক আমিও ভাব নেয়ার চেষ্টা করলাম।রিপ্লে দিলাম, আমাকে আমার মত থাকতে দাও,আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি। প্রাক্তন আমার মেসেজে হাহা রিঅ্যাক্ট দিল। রাগে আর অপমানে আমার সারা শরীরে আগুন জ্বলে উঠল। কিন্তু কিছুই বললাম না।ঝোপ বুঝে কোপ মারার অপেক্ষায় থাকলাম। প্রাক্তন এবার রিপ্লে দিল। মিতুকে দেখলাম গতকাল তোমার সাথে।দেখতে বেশ সুন্দর হয়েছে। আমার মনের আগুনে যেন কেউ ঘি ঢেলে দিল। কিন্তু এখন আমাকে চুপ থাকতে হবে।আর সুযোগের অপেক্ষা করতে হবে। মিতুকে তোমার পছন্দ হয়েছে বুঝি? প্রাক্তন আমার ম্যাসেজে এবার লাভ রিঅ্যাক্ট দিল। আসলে বাড়িতে বিয়ের জন্যে চাপাচাপি করছে।কিন্তু আমার কোন মেয়েই পছন্দ হয় না। হবে কি করে আমার মত সুন্দরী মেয়ে আর পাবি কোনদিন?

আসিফ আমার মামাতো ভাই।আম্মার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে।আমার বছর খানেকের বড় হবে।সেবার পরীক্ষার পর নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম।একদিন হঠাৎ দেখি খালাতো ভাই এসে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল।চিরকুট খুলতেই অবাক হলাম।আসিফ আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে।আমার ও যে ওকে অপছন্দ ছিল তা না।তাই রাজি হয়ে গেলাম।৭ দিন চুটিয়ে প্রেম করলাম।তারপর বাড়িতে ফিরে আসলাম।এরপর কয়েকবার আমাদের মোবাইলে কথা হয়েছে।এর কিছুদিন পর আব্বা এসে জানলো আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।আমি তখন বাংলা সিনেমার নায়িকের মত চিৎকার করে বলতে চেয়েছিলাম, আমি আসিফকে ভালোবাসি, তাই অন্য কাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।কিন্তু একটা শব্দ ও মুখ থেকে বের হল না।আব্বাকে দেখলে এমনিতেই আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। পাত্রপক্ষ আমাকে দেখে পছন্দ করে গেল।মহাধুমধাম করে আমার বিয়ে হয়ে গেল।নানাবাড়ি থেকে অনেকেই এসেছিল। তবে আসিফ আসেনি।যা ভীতু ছেলে!

টুম্পার বাবাকে দেখে আমার একদম পছন্দ হয়নি।একেতো বয়স বেশি,তার উপর দেখতেও ভালো না।কিন্তু সবাই আমাকে বোঝালো। আমি যেহেতু সুন্দরী, তাই অসুন্দর কাউকে বিয়ে করলেই ভালো।তাহলে সে বউ বলতে অজ্ঞান থাকবে।মুরুব্বিদের কথা কখনো ফেলনা হয় না।টুম্পার বাবা আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝেনা।আমি যা বলি তাই শোনে।তাই বিয়ের পর আমার আর আসিফের কোন কথায় মনে ছিল না।কিন্তু আজ ও যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিল।কোথায় আমি?আর কোথায় মিতু? মিতু বাসায় ফিরতেই ওকে ধরলাম।একবছর হল ও আমার এখানে থেকে পড়াশুনা করছে। তুই আমাকে কতটা ভালোবাসিস? আমার কথা শুনে মিতু অবাক হল।এ কথা বলছ কেন আপু?আমার ভালোবাসায় কি তোমার সন্দেহ আছে? তাহলে বল আমি যা বলব তাই শুনবি। অবশ্যই শুনব।তুমি বললে নদীতে ঝাঁপ দেব।

নদীতে ঝাঁপ দিতে হবে না।একজনের সাথে প্রেমের অভিনয় করতে হবে।মাত্র ৬ মাসের জন্যে।তারপর তাকে এমন ছ্যাকা দিবি যেন ইহজনমে কোন মেয়ের নাম মুখে না আনে। আমার কথা শুনে মিতু কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,এসব কি বলছ আপু?আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। আমি খুশিতে মনে মনে একটা লাফ দিলাম।ভালোই হয়েছে সাপ ও মরবে লাঠিও ভাংবেনা।না হলে মিতুর যা বয়স তাতে আসিফের প্রেমে পড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক না। নিজের খুশিটা মনের মধ্যে চেপে রেখে মিতুকে বললাম,তুই চিন্তা করিসনা তোর পছন্দের ছেলের সাথেই আমি তোকে বিয়ে দেব।তুই শুধু আমার কথামত কাজ কর। মিতু বাধ্য মেয়ের মত মাথা নেড়ে চলে গেল।

সবকিছু আমার পরিকল্পনা মত হচ্ছে।মিতু আর আসিফের প্রেম জমে গেছে।আমি শুধু ঝোপ বুঝে কোপ মারার অপেক্ষায় আছি।যদিও আমার একটু অসুবিধা হচ্ছে। টুম্পার বাবার কাছ থেকে মিথ্যে বলে টাকা নিয়ে মিতুকে দিতে হচ্ছে।আর এতে আমার নিজের সপিং করা হচ্ছে না।কিন্তু তাতে কি?কিছু পেতে গেলে ত কিছু ত্যাগ করতেই হবে। এরমধ্যে আমার সামনে সুবর্ন সুযোগ এলো।টুম্পার বাবা ব্যাবসার কাজে কিছুদিনের জন্যে চট্রগ্রাম যাবে।বিকালে বাসায় ফিরে ও কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল, নীতু একটা দুঃসংবাদ আছে।

আমার মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ল।টুম্পার বাবা কি ব্যাবসায় অনেক টাকা লস করেছে? ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম,কি হয়েছে বল আমি ত আছি। আরে তুমি থাকলে ত হত।আমাকে কাল সকালে চট্রগ্রামে যেতে হবে ১০ দিনের জন্যে।তোমার খুব কষ্ট হবে জানু। আমি খুশিতে মনে মনে তিন লাফ দিলাম।সেই সাথে টুম্পার বাবার উপর রাগ ও হল।শুধু শুধু আমাকে চিন্তায় ফেলল। মুখটা দুঃখি দুঃখি করে বললাম,কষ্ট ত হবেই।কিন্তু কি করব বল?টুম্পা ত এত জার্নি করতে পারেনা।না হলে আমি ঠিকই যেতাম।টুম্পার বাবা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে ওয়াশরুমে গেল। আমি খুশিতে বিছানা থেকে একটা লাফ দিয়ে নামলাম।

টুম্পার বাবা চলে যেতেই আমি আসিফকে আমার বাসায় আসতে বললাম।ও এলে ঘুরেঘুরে পুরো বাসা দেখালাম।দেখ কার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।তোর মত ছেলে কি আর আমার মর্ম বুঝবে?দুপুরে অনেক কিছু রান্না করে খাওয়ালাম।আমার অনেকদিনের শখ ছিল ওকে আমার বাসায় আনব।আল্লাহ যে এত তাড়াতাড়ি সেই ইচ্ছা পূরন করবে বুঝিনি। এবার আমার পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক মিতুকে দিয়ে ফোন করিয়ে বলালাম,টুম্পার বাবা ওর জন্যে ছেলে দেখেছে।এই ছেলেকে বিয়ে না করলে ও এ বাড়িতে থাকতে পারবেনা।ব্যস আসিফ ও বাংলা সিনেমার নায়কের মত বলল,থাকতে হবেনা ও বাড়িতে চলে এসো আমার কাছে।দরকার হলে রাস্তায় থাকব।

তোর মত ছেলে রাস্তায়ই থাকে। ফকির একটা।মিতুকে বললাম কাল সকালে তুই বাসা থেকে বের হবি।ওকে কিছুক্ষণ বিশ্বাস করানোর জনে একটা ব্যাগে কিছু কাপড় চোপড় নিবি।মিতুও আমার কথা শুনে ব্যাগ গোছাতে চলে গেল।এই বয়সের মেয়েরা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করে।মিতু বলল আপু তোমার বিয়ের গয়নাগুলো আমাকে দাও। গয়না দিয়ে কি করবি? বলব গয়না নিয়ে পালিয়েছি। আচ্ছা নিয়ে যা।কিন্তু মনে করে বলিস এগুলো আমার গয়না।আদেখলেটা দেখুক আমার কি আছে। মিতু সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। আমার বোনটার মাথায় বুদ্ধি আছে।নাটকটাকে আরও নাটকীয় করতে আমাকে সাহায্য করছে।আলমারি খুলে আমার সব গহনা ওকে দিয়ে দিলাম।মিতু কয়েকটা রাখতে চেয়েছিল।আমি না করলাম।এরকম সুযোগ বারবার আসবেনা।

আজ আমার শান্তির ঘুম হবে।কাল মিতু চলে আসার পর আসিফের চেহারাটা কেমন হবে সেটা কল্পনা করার চেষ্টা করছি।কিন্তু বারবার আসিফের জায়গায় দিলদারের চেহারা চোখে ভাসছে।একটা খুশি খুশি ভাব নিয়ে ঘুম দিলাম।
ঘুম থেকে উঠে দেখি মিতু নেই।বাহ মেয়েটা সেই স্মার্ট। পরিচালক ছাড়াই নিজে নিজে স্ক্রিপ্ট বদলে দেয়। ওকে দিয়েই হবে।দেখতে হবে না বোনটা কার?মনের সুখে গান গাইতে গাইতে নাস্তা বানালাম।টুম্পার বাবার সাথে ইমোতে এক ঘন্টা গল্প করলাম।আমার এত প্রেম দেখে পারলে সে তখনি চলে আসে।আসলে আমি সময় দ্রুত পার করার চেষ্টা করছি।

দুপুর গড়িয়ে গেল কিন্তু মিতুর আসার কোন খবর নেই।এবার আমার কিঞ্চিত দুঃচিন্তা হচ্ছে।এতগুলো গয়না নিয়ে গেল মেয়েটা।পথে যদি কোন বিপদ হয়?তাড়াতাড়ি ফোনটা নিয়ে মিতুকে কল দিলাম।ওর মোবাইল অফ।এবার আসিফকে কল দিলাম।ওর মোবাইল বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গেল। কি করব কিছুই বুঝতে পারছিনা।টুম্পার বাবাকে জানাতে হবে।ওর আবার পুলিশের সাথে ভালো সম্পর্ক আছে।এমন সময় আসিফের ম্যাসেজ, “নীতু তোমাকে ধন্যবাদ দেবার মত কোন ভাষা নেই।তুমি সাহায্য না করলে মিতুকে কখনোই পেতাম না।সত্যিই তুমি খুব উদার মনের।না হলে কেউ নিজের বোনকে এত গয়না দেয়?তাছাড়া আমাদের হানিমুনের জন্যে ১ লাখ টাকা দিয়েছ।সত্যি আমি কৃতজ্ঞ।আমরা পাতায়া থেকে ঘুরে এসে তোমার সাথে দেখা করব।”

ম্যাসেজটা পড়তে পড়তে আমার মাথা ঘোরা শুরু হয়ে গেছে।মাথায় হাত দিয়ে আমি দৌড়ে আলমারি খুললাম।যা ভেবেছিলাম তাই।টাকাগুলো নেই।গত এক বছর ধরে আমি টুম্পার বাবাকে সারপ্রাইজ দেব বলে টাকা জমাচ্ছি।কত আশা করে ছিলাম এবার বিবাহবার্ষিকীতে আমরা পাতায়া যাব।সবকিছু ওই ফাজিল আসিফটা শেষ করে দিল।আসিফ্যা তোরে যদি কোনদিন আমি সামনে পাই? আমার তখন মমতাজের বিখ্যাত সেই গানটা গাইতে ইচ্ছা করছিল,বন্ধু যখন বউ নিয়া,,,, না না,গানটা,একটু অন্যরকম হবে বন্ধু যখন আমার বোনরে নিয়া পাতায়া ঘুরতে যায়।ফাইটা যায়,বুকটা ফাইটা যায়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত