আইডি কার্ড

আইডি কার্ড

নাম- তাহিয়া, শ্রেণি-একাদশ,রোল-১২৯০

–এটা তোমার আইডি কার্ড ?

কোমর পর্যন্ত লম্বা কালো সিল্কি চুলগুলোতে দুটো বেণী করে নীল এবং সাদা ড্রেসে মেয়েটা দাঁড়িয়েছিলো।অবশ্য তার পাশে আরও দুটো মেয়ে ছিলো।তিনজনেই কলেজ গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছিলো। আমি ভার্সিটি শেষ করে কলেজের পাশ দিয়ে যাওয়ার পথেই ওদের পাশেই আইডি কার্ডটা পড়ে থাকতে দেখলাম। তুলে নিয়ে দেখতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েগুলোর একজনের সাথে মিলে যাওয়ায় তাকে গিয়ে প্রশ্ন করলাম।

–জ্বি আমারই।তবে ফেলে দিয়েছি।আপনি এটা নিয়ে আসতে গেলেন কেন ? চোখ বড় বড় করে ধমকের স্বরে মেয়েটা জবাব দিলো।

–মানে? আমিও তিরিক্ষি মেজাজে মানে জানতে চাইলাম।কোথায় উপকার করবো ভেবেছি তার বদলে কিনা আমাকে ধমক দিচ্ছে মেয়েটা!

–মানে হলো আমার লেখাপড়া করতে ভালো লাগেনা, না ভালো লাগে আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে থাকতে।আপনিও এটা ফেলে দিন।

কথাটা বলেই তাহিয়া নামের মেয়েটা হনহন করে চলে গেলো। অদ্ভুত একটা মেয়ে! আইডি কার্ডটা কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। তাই নিজের কাছেই রেখে দিলাম। এই ঘটনাটা ঘটেছিলো প্রায় সাত বছর আগে। এরই মাঝে আমি পড়ালেখা কমপ্লিট করে দেশের বাইরে চলে যাই।আমি অয়ন, মাস্টার্স কমপ্লিট করে বড় ভাইয়ার কাছে চলে যাই চার বছর আগে।ভাইয়া আমেরিকা স্যাটেল।ভাবি এবং ভাইয়ের ছেলেমেয়ে সহ সবাই একসাথে থাকে। আজ প্রায় চার বছর পর দেশে ফিরে আসি।অবসর সময়ে বাসায় বসে পুরোনো জিনিসগুলো ঘাটাঘাটি করা আমার ছোটবেলা থেকেই অভ্যাস। আজ যখন বাসায় বসে পুরোনো জিনিসগুলো ঘাটাঘাটি করছিলাম তখন এই মেয়েটার আইডি কার্ডটা আরও একবার চোখে পড়লো।

যদি লেখাপড়ে করে থাকে তাহলে এতদিনে নিশ্চয় অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে লেখাপড়ায়।তবে দেখে মনে হয়নি এই মেয়েটা লেখাপড়া চালিয়ে যাবে। আচ্ছা এই কার্ডটা, তাহিয়া নামের মেয়েটার কি সত্যি আর প্রয়োজন হয় নি ? কার্ডের ছবিটা ঝাপসা। সাতবছর আগে দেখতে কেমন ছিলো মেয়েটা আমি প্রায় ভুলেই গেছি।কেবল ঘটনাটা মনে আছে স্পষ্ট।

জিনিসপত্র সব গুঁছিয়ে আবার আগের জায়গায় রেখে দিলাম। কেবল তাহিয়ার আইডি কার্ডটা ছাড়া।আইডি কার্ডে উল্লেখিত নাম্বারটা হয়তো ওর মা কিংবা বাবা অথবা অন্য কারোর। কারণ ঐ টুকু মেয়ের তখন নিজের ফোন থাকাটা নিতান্তই অসম্ভব ব্যাপার। নীলার অট্টহাসিতে ঘুমটা ভেঙে গেলো।ভীষণ বিরক্ত লাগছিলো মেয়েটার উপর।এই অকালকুষ্মাণ্ড মেয়েটা আমার ছোটবোন। মায়ের পরে ঘরের প্রধান সদস্যের খেতাবে নীলা ভূষিত হয়েছিলো বছর কয়েক আগে।উনাকে মোটামোটি সবাই প্রেসিডেন্ট বলেই ডাকে। যদিও এটা আমি আসার পর বুঝতে পেরেছিলাম। ঘুম থেকে উঠে ছাদে পায়চারি করছিলাম। হাতে অবশ্য কফি ছিলো।পরনে একটা সাদা ট্রাউজার আর একটা নীল টি শার্ট ছিলো গায়ে।

–ভাইয়া চটজলদি রেডি হ। মা তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাবে। ছোট্ট করে অলস মেয়েটা অর্থাৎ নীলা একটা বার্তা পাঠালো। আমার মায়ের কথা আর কি বলবো! আসার পর থেকেই বিয়ে কর বিয়ে কর বলে আমার মাথাটা শেষ করে দিচ্ছে। নিচে যেতেই ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল শুরু হয়ে গিয়েছে উনার।বাধ্য হয়ে মেয়ে দেখতে যেতে হলো।

–আপনার নাম কি? আমাকে আর মেয়েটাকে আলাদা করে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিলো।আমি সেই সূত্রেই মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করলাম।

–তাহিয়া। মেয়েটা মাথার উপর থেকে শাড়িটা ফেলে দিতে দিতেই উত্তর দিলো।

–তাহিয়া! কোন তাহিয়া ? আমি বেশ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম।

–কোন তাহিয়া মানে? আপনি কয়টা তাহিয়াকে চিনেন ? মেয়েটা চোখ বড় বড় করেই ধমকের স্বরে জিজ্ঞেস করলো।

–আপনাকে নিয়ে ম্যাবি দু’জন তাহিয়াকে চিনি।

–আরেকজন তাহিয়া আপনার এক্স গার্লফ্রেন্ড ছিলো?

–আজব তো! গার্লফ্রেন্ড হতে যাবে কেন? তাছাড়া এসব এক্স ওয়াই এগুলা আমার ছিলো না।

–কিন্তু আমার ছিলো জানেন? আমার একজন বয়ফ্রেন্ড ছিলো,ইভেন এখনও আছে। মেয়েটার চুলগুলো ভীষণ সুন্দরভাবে বাতাসে উড়ছিলো।অবাধ্য চুলগুলো ঠিক করতে করতেই আমায় নির্দ্বিধায় কথাগুলো বলছে মেয়েটা।

–তাহলে আপনার বাবাকে জানান।আর যদি কোনো হ্যাল্প লাগে তাহলে আমাকে বলুন।আমি না হয় হ্যাল্প করবো।

–জ্বি লাগবে তো হ্যাল্প।আপনার নিকট আমার যে আইডি কার্ডটা আছে, সেটা দিয়েন তো।ঐ আইডি কার্ডের জন্য আমাকে সেদিন কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিলো, ক্লাসভরতি মেয়েগুলোর সামনে। আপনার চিন্তাভাবনাও বা কেমন বলুন তো? আইডি কার্ডটা বাইরে দাড়িয়ে থাকা আমার ফ্রেন্ডগুলোর একজনের হাতে দিয়ে দিতে পারলেন না?

–মানে! তুমি আই মিন আপনি সে পিচ্চি তাহিয়া ? স্ট্রেঞ্জ ! আমি তো সেদিন আপনাকে আইডি কার্ড দিতে চেয়েছিলাম বাট আপনিই তো নিলেন না! তাছাড়া আপনি কিভাবে জানেন যে ওটা আমার কাছে আছে?

–আরে ঐদিন ফ্রেন্ডদের সাথে ট্রুথ ওর ডেয়ার খেলাতে আমি ডেয়ার নিয়েছিলাম।ঠিক তখনি হুট করে ওরা আমায় এই ডেয়ারটা দিয়েছিলো।আইডি কার্ড ফেলে দেওয়ার এবং সেটি আর নিতে পারবো না।এরকম টাইপ একটা ডেয়ার।
আর আইডি কার্ডটা আপনার কাছে যে এখনো আছে, সেটা আমাকে নীলা বলেছিলো।

–নীলা আপনাকে কিভাবে চিনে?

–নীলা আমার ভার্সিটি ফ্রেন্ড ছিলো।তখনই ও আমাকে আইডি কার্ডের কথা বলেছিলো।ইভেন আজ সকালে আইডি কার্ডে উল্লেখিত নাম্বার মানে বাবার ফোনে ফোন দিয়ে আন্টি এবং নীলা আপনাকে নিয়ে এখানে এসেছে।

–এতদূর ! আর আমি কিছুই জানিনা ?

–আপনি আরেকটা কথাও জানেন না। মেয়েটা মৃদু হেসে বললো।

–কি জানি না? আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

–আপনাকে আমার ভালো লাগে,সেটা জানেন কি?

–মানে ? আপনার যে বয়ফ্রেন্ড আছে বললেন!

–সে তো আপনিই।নীলার কাছ থেকে রোজ আপনার আপডেট নিউজ নিতাম।একটু একটু করে জানিনা কিভাবে আপনার প্রতি ভালোলাগার জন্ম হলো! আর শুনুন, আপনি আমাকে তুমিই বলুন। সেদিনকার মতো। আর হ্যাঁ, বিয়ের রাতে আমি কিন্তু আইডি কার্ডটা নিয়ে যাবো।নাতি নাতনিকে গল্প শুনাতে হবে তো, তাই।

কথাটা বলেই ধীরে ধীরে তাহিয়া ছাদ থেকে চলে গিয়ে সিঁড়িপথ ধরে নামতে শুরু করলো।আমিও তার সঙ্গ দিলাম। ভাবছি তাহিয়ার আইডি কার্ডটা নীলা কিভাবে দেখলো! পরে অবশ্য মনে পড়েছে, যে ঘরের প্রেসিডেন্ট তো উনি। আমার লাইফ পার্টনারও তিনি সিলেক্ট করে ফেলেছেন। অবশ্য মেয়েটাকে অপছন্দ করার মত কোনো কারণও ছিলো না।বিয়েটা করাই যেতে পারে তাহিয়া ম্যাডামকে। বলেই নিজেই নিজেকে নিয়ে হাসলাম।অবশেষে অকালকুষ্মাণ্ড মেয়েটা এতদিনে একটা দারুণ কাজ করেছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত