আমার স্ত্রী মায়া যখন প্রেগন্যান্ট হয় তখন প্রায় সময় সেই অসুস্থ থাকতেন।ডাক্তার সবসময় আমাকে বলতেন-কখন কি হয় বলা যায় না একটু কেয়ার করিয়েন আপনি।মায়া অামাকে খুব ভালোবাসতো এই অসুস্থ শরীর নিয়ে আমার পছন্দের খাবার তৈরি করতো অনেক নিষেধ করতাম শুনতো না।সংসারী বৌ ছিলো আমার।নিজের কথা কখনো চিন্তা করতো না সবসময় নিজের সংসার আর বাবুর চিন্তা অস্থির থাকতো মায়া।দৈর্ঘ্য নয় মাস পরে কোল জুড়ে আসে আমাদের মেয়ে বাবু।মায়া বাবুর নাম দিলো অবন্তী। অনেক যত্নে বড় হচ্ছে অবন্তী।বরাবরে আমার স্ত্রী আগের মতো অসুস্থ থাকতেন এই অসুস্থ শরীর নিয়ে ঠিকে একদিন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন মায়া।অনেক কষ্ট করেছে মায়ার, হার্টের রুগী ছিলো সেই।এই মিথ্যা দুনিয়া ছেড়ে মায়া চলে গেছে, মায় যেখানে আছে সেখানে খুব শান্তিতে থাকবে।আমার মেয়ে অবন্তীর বয়স ছিলো তখন ৫ বছর।
আজ আমার স্ত্রী মায়ার ৩০”তম মৃত্যু বার্ষিকী।আজ খুব কষ্টের দিন।আজ মায়ার মৃত্যু বার্ষিকী আজকে আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো আমার মেয়েটাও নাই।মেয়ের সুখের জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করি নাই অদৌ যদি সৎ মা তাকে অত্যাচার করে?এই ভয়ে বিয়ে করি নাই।আমার ছোট বোন পারু,পারু অবন্তীকে লালনপালন করেছে।পারু স্বামী নিয়ে অামার বাড়ি থাকে।নিজের মেয়ের মতো খুব যত্নে পারু অবন্তীকে লালনপালন করে।আমার মেয়ে অবন্তী যাহ চেয়েছে আমি তার ইচ্ছা পূরণ করেছি।অবন্তী সব কথা অামাকে শেয়ার করতো,কোনো কিছু গোপন করতো না।কিন্তু কিসের জন্যে তার ভালোবাসার কথা গোপন রেখেছে আমি বুঝি নাই।আমার মেয়ে চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে পড়তো, রাজন ছেলেটা এক সাথে পড়তো তার বাড়ি ছিলো রাজশাহী। সেই ছেলের সাথে নিজের ইচ্ছা পালিয়ে বিয়ে করলো অামার মেয়ে।৫” টা বছর হয়ে গেলো আমার মেয়ে আমার থেকে অনেক দূরে।অনেক আদুরী মেয়ে ছিলো অামার অবন্তী সেই অাদুরী মেয়েটা আমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে
আজ আমার স্ত্রীর ৩০”তম মৃত্যু বার্ষিকী। কয়েকজন পথশিশুকে নিমন্ত্রণ দিয়েছি। পারু নিজ হাতে রান্না করেছে, ছেলেগুলো পেট ভরে খেয়ে দুই হাত তুলে দোয়া করলো।কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে আছি।আমার যখন মায়ার জন্য প্রচণ্ড কষ্ট হয় তখন নিরব হয়ে থাকি। আগের মতো চোখে তেমন অশ্রু আসে না।কিন্তু আমার মেয়ের কথা মনে পড়লে আমার চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারি না।আমার নিরবতা দেখে ছোট বোন পারু বলে-
_ভাইয়া একটা কথা বলি?
_হ্যাঁ বল না?
_শুনে কিন্তু রাগ করতে পারবেন না।
_আচ্ছা ঠিক আছে।
_একটি বারের জন্যে হলেও অবন্তীর খোঁজ নেন।
পারু অাগেও অনেকবার বলেছে অবন্তীর খোঁজ নিতে কিন্তু আমি নিয় নাই।আমার প্রচুর রাগ তার উপর। অবন্তী আমাকে জড়িয়ে ধরে যদি বলতো-
_বাবা আমি ভুল করেছি তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
এই কথা যদি আমার মেয়ে বলতো আমি থাকে ক্ষমা করে দিতাম।কিন্তু আজ ৫”টা বছর হয়ে গেলো একবার ও আমার কাছে আসে নাই।পারুর কথা শুনে রাজি হলাম রাজশাহী যাবো অবন্তীর কাছে,গিয়ে দেখি আসি মেয়েটা কেমন আছে।
অবন্তীর ক্লাসমেটের সাহায্য নিয়ে গেলাম রাজশাহী।চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহী অনেক দূরের সফর।কিন্তু অামার কষ্ট হয় নাই, আজ কারণ অনেকদিন পরে কলিজার টুকরা মেয়েটাকে দেখবো।ঠিকানা নিয়ে অবন্তীর বাসায় উঠে।আমাকে দেখে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অবন্তী।তড়িঘড়ি চেয়ার নিয়ে আসলো অবন্তী।চেয়ারটা একটা অংশ ভেঙ্গে গেছে।ছোট ছোট দুটা রুম কোনো মতে কিচিনরুমে রান্না করে।অবন্তী আমার জন্যে লেবুর শরবত নিয়ে আসে।লেবুর শরবত আমার হাতে দিয়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে-
_বাবা ঘরে চিনি নাই একটু লবণ মিশিয়ে বানিয়ে দিয়েছি।
_আচ্ছা ঠিক আছে আমি খেতে পারবো। অবন্তীর পাশে ছোট একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, জামাটা কিছুটা ছেঁড়া।তবে বাচ্চাটাকে অনেক মায়া লাগতেছে।অবন্তীকে জিজ্ঞেস করি-
_তোর মেয়ে নাকি?
_হ্যাঁ বাবা।
_নাম কি?
_মায়া।
অামার কাছে অনেক ক্লান্ত লাগছে,বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে মেয়ের সংসার দেখে।রাজন নিজ থেকে বিয়ে করেছে তাই তার বাবা মেনে নেয় নাই তাই আজ এই করুন অবস্থা।কি করে মেনে নিবে?তাদের তো সপ্ন ছিলো ছেলেকে নিয়ে,কিন্তু সেই ছেলে মেয়েরা বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে না।আমার মেয়ে লজ্জা কিছু বলছে না চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুধু নিরবে কান্না করতেছে।কিছুক্ষণ বসে অাসার সময় বলে আসি-
তোর জন্যে আমার ঘরের দরজা সবসময় খোলা। রওনা দিলাম রাজশাহী থেকে চট্টগ্রামের পথে।খুব ঘুম পাচ্ছে অামার,কিন্তু ঘুমাবো না।মনে কষ্ট থাকলে ঘুম ঠিক মতো হয় না।চট্টগ্রাম আমার প্রিয় শহর কারণ সেই মাটিতে শুয়ে আছে আমার স্ত্রী মায়া।চট্টগ্রাম গিয়ে বাড়িত যাবো না প্রথমে যাবো আমার মায়ার কবরের পাশে।আমার মায়াকে বলবো- আমি দেখে আসছি আমার মেয়ের কষ্টের সংসার।