শুকনো পাতা

শুকনো পাতা

মারিয়ার দেওয়া ছ্যাঁকার লোড সহ্য করতে না পেরে আজ তিনমাস যাবত চোখে পেঁয়াজ দিয়ে কান্না করি। মাঝরাতে বিচ্ছেদ গান শুনে উড়াধুরা নাচি। ফেসবুকে মানুষের পোস্টে প্রচুর হাহা দেই। যার ফলে এখন নিজেকে একটু হালকা লাগছে।

অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়না। তাই ভাবলাম কোথাও যাওয়া দরকার। আর তার জন্য টাকা দরকার। একপা দু’পা করে রান্না ঘরে আম্মার কাছে গেলাম। আম্মা রান্না করতেছে। নিজেকে প্রস্তুত করে ভাদাইম্মা স্টাইলে দাঁড়িয়ে ভেংচি মেরে বললাম….

–ও আম্মাআআগোওওওও….

আমার আচমকা এমন ডাক শুনে আম্মাজান থতমত খেয়ে ঘুরান্টি দিয়ে পিছনে তাকালেন। মুখটা বাকিয়ে বললেন….

-ও রুবেইল্যাআআআ গো বলোগোওওওও বুঝলাম আম্মা আমার ডাকের প্রতিশোধ নিচ্ছে। তাই বললাম….
–সরি আম্মা।
-কিউ আব্বাজান?
–মশকরা করো আমার লগে?
-মোটেও না, আমি রান্না করছি
–তাহলে এভাবে বলছো কেনো?
-ভাল্লাগে, খুশির ঠেলায়, ঘোরতে তরে খেপাইতে।
–মানে?
-কুচ নেহিহে বেটা।
–দেখো আমার সাথে ইয়ার্কি করবা না, এমনিতেই ছ্যাঁকা খেয়ে প্রসুর ডিপ্রেশনে আছি।
-কি বললি?
–মারিয়া ছ্যাঁকা দিছে।
-মারিয়া কে?
–তোমার প্রাক্তন বৌমা।
-মজা লস?
–মোটেওনা, টেকা দাও?

অতঃপর আম্মাজান রান্নাঘর থেকে দুইটা আলু দিয়ে বললেন”এগুলো বিক্রি করে টাকা নি” কি আর করার কাঁচা আলু চিবুতে চিবুতে রুমে আসলাম। ভাবতেছি কিভাবে টাকা আদায় করা যায়। তখনই আব্বাজানের কথা মনে হলো। দৌড়ে রুমে চলে গেলাম, দেখি আব্বাজান নেই। ছোটভাই সাইফকে দেখেই চক্ষু চড়কগাছ। সাইফ টেবিলের উপর বালতি রেখে তারমধ্যে হাত ওঠানামা করছে। আমি বললাম….

–কিরে কি করস?
-ইঁন্দুর চুবাই।
–মানে?
-বালতিতে পানি দিয়েছি, তারমধ্যে ইঁন্দুর চুবাচ্ছি।
–ফাইজলামি করস?

অমনি ছোট ভাই বালতির ভিতর থেকে হাত উঠালো। সাইফের হাতে ইঁন্দুর মারা ফাঁদ। সেখানে দুইটা ইন্দুর। তারমানে সাইফ বালতিতে ইঁন্দুর চুবাচ্ছে। কিন্তু সাইফতো যথেষ্ট ভালো। ও কেনো ইঁন্দর চুবাচ্ছে? ব্যাপারটা কেমন জানি রহস্যময় মনে হলো। বললাম….

–ইঁন্দুর চুবাচ্ছিস কেনো?
-আমার নতুন লুঙ্গি কেটেছে।
–তাই বলে ইঁন্দুর চুবাতে হবে?
-তাইলে টেকা দেও।
–আমি টেকা পামু কই? আব্বার কাছে চাইতে পারস না?
-সকালে আব্বায় কম্বল মুরি দিয়ে শুয়ে ছিলো। টেকা চাইছিলাম দেয়নায়, পরে কম্বলের নিচে ইঁন্দুর ছেরে দিছিলাম।
–কস কি, আব্বায় কই গেছে?
-জানিনা, সকাল সকাল দৌড়ানি খাইছে বেচারা।
–তুই আব্বার লগে বেয়াদবি করছস কেনো?
-বেশি কথা কইলে তোমারেও ইঁন্দুর দিমু।
–থাক ভাই লাগতনা।

ফাকা হাতে আব্বাজানের রুম থেকে চলে আসলাম। নিজেকে এতিম মনে হচ্ছে। রুমে এসে সব জায়গায় সার্চ করলাম মাগার একটা টাকাও পাইলাম না। মন খারাপ করে বসে রইলাম। ডাটা অন করে ফেবুতে গেলাম। নিউজফিড ঘাঁটতেই মারিয়ার পোস্ট চোখে পরলো। সেখানে লেখা…” ১৪ ই ফেব্রুয়ারি আমার নিউ বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে যাব।” পোস্ট দেখে চান্দি গরম হয়ে গেলো। কমেন্টে ২০০+ প্লাস ব্যাঙের ইমুজি দিলাম। সাথে কিছু উগান্ডার ওয়াজ করে মেসেজ ব্লক দিয়ে বিচ্ছেদ গান ছেরে দিয়ে কিছুক্ষণ উড়াধুরা বেলি ড্যান্স দিলাম। নিজেকে স্বার্থক ছ্যাঁকাখোর মনে হচ্ছে। ফেইক আইডি দিয়ে মারিয়াকে মেসেজ দিলাম….

–নানি আপনারা কোন পার্কে যাবেন?
-হোয়াট?
–আরে আপনার বয়ফ্রেন্ড সহ কোন পার্কে যাবেন বলুন। আসলে আমিও আমার জিএফকে নিয়ে যাবতো তাই।
-আমাকে নানি বললেন কোন সাহসে?
–চ্যাতেন ক্যান?
-আর ইউ রাবিশ?
–তুই ফকিন্নি রাবিশ, উলালা….
-হোয়াট উলালা?
–উলালা মেনিংস হারামজাদি।
-টুটটুট….

you can’t reply to this conversation অতঃপর ব্লকলিস্ট নামক ভিআইপি সোফায় আমার জায়গা হলো। মারিয়ার এক ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে জানলাম ওরা কোন পার্কে যাবে। পার্কের নাম শুনলাম। মনে মনে বললাম… ‘মারিয়া আমারে ছ্যাঁকা দেওয়ার মজা কালকে বুঝবা’। আমি রিফাতকে (আমার ফ্রেন্ড) ফোনে সব খুলে বললাম। আব্বার রুমে গিয়ে সাইফকে বললাম….

–কালকে কোথাও যাবি?
-না, আমি ইন্দুর চুবাবো।
–হারামি থাপ্পড় খাবি, এভাবে কেউ ইন্দুর চুবায়? ছেরে দে, মারা যাবেতো।
-তাইলে আমারে লুঙ্গি কিনে দাও?
–কালকে কিনে দিব।
-তাহলে আজকে সারাদিন ইন্দুর চুবিয়ে কালকে ছেরে দিব।

বুঝলাম সাইফের সাথে কথা বলে লাব নেই। বেচারা হেব্বি ক্ষেপছে ইঁন্দুরের উপরে। যাইহোক সেটা ইঁন্দুরের দুর্ভাগ্য। কোন দুঃখে যে ইন্দুর সাইফের লুঙ্গি কেটেছিলো। ভাগ্যিস সাইফের প্যান্ট কাটেনি। তাইলে নির্ঘাত সাইফ ইন্দুরের নুনু কেটে দিতো। আজকে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি। ফেসুবক ভালোবাসা ময়। কিন্তু আমার মন প্রতিশোধ ময়। সাইফের রুমে গেলাম, দেখি ইঁন্দুরের সামনে খাবার রেখে খাবার খাওয়াচ্ছে। আমি সাইফের এমন কাণ্ড দেখে অবাক হয়ে গেলাম। বললাম….

–কিরে কালকে ইন্দুর চুবালি আবার আজকে খাবার খাওয়াচ্ছিস। কাহিনী কি?
-খাইয়ে মোটা করতেছি।
–কেনো?
-মোটা করে চুবাবো।
–ভাই এরকম করিস না।
-আমার লুঙ্গি কিনে দাও তাইলে?
–আচ্ছা চল….

সাইফকে সাথে নিয়ে পার্কের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। সাইফ ইঁন্দুর দু’টোকে সাথে নিয়েছে। ওর একটাই কথা যতক্ষণ না লুঙ্গি কিনে দিব ও ইঁন্দুর ছাড়বেনা। সাইফকে পার্কে নিয়ে যাওয়ার একটাই উদ্দেশ্য সেটা হলো ও প্রতিশোধ ভালো নিতে পারে। টপ টু ফাজিল, সি ইজ নাম্বার ওয়ান বান্দর। রিয়ালিটি ইজ হারামজাদা। দিজ ইজ মাই ছোট ভাই। পার্কে এসে দেখি রিফাত আগেই এসেছে। আমি মারিয়াকে খুজতে লাগলাম। সাইফ একটা কাঠি দিয়ে ইঁন্দুরকে খোঁচা দিচ্ছে। ইঁন্দুরের জন্য আফসোস হচ্ছে। পার্কে শুধু জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে। আমরা তিনজনই সিঙ্গেল। হঠাৎ মারিয়াকে দেখলাম একটা বেঞ্চে একটা ছেলের সাথে বসে আছে। তারমানে ওটা ওর নিউ বিএফ। আমি মারিয়ার কাছে গেলাম, মারিয়া আমাকে দেখে ভ্রু-কুঁচকে তাকালো। আমি ফকলা হাসি দিয়ে বললাম….

–হায় ট্যাঁও ট্যাঁও…
-হোয়াট, ট্যাঁও ট্যাঁও কি?
–কিছুনা, তাইলে এই বুড়া হারামি তোমার বিএফ।
-রুবেল সাবধানে কথা বলবা। ও আমার বয়ফ্রেন্ড।
–তাই আমার কি?
-এইযে মিঃ আপনি কে? (মারিয়ার বিএফ)

আমি প্রশ্নের উত্তর দিতে যাব তখনি সাইফ আচমকা মারিয়ার বিএফের সামনে গিয়ে ইঁন্দুর ধরে বলল….

–কিরে ইন্দুর খাবি?
-হোয়াট..
–আমি লুঙ্গি কিনুম।
-মারিয়া কি হচ্ছে এসব?
–সাইফ ইন্দুর খুলে দে, তরে নতুন তিনটা লুঙ্গি কিনে দিব। (আমি)

সাইফ সাথে সাথে ফাঁদের মুখ খুলে দিয়ে মারিয়ার বিএফের দিকে ধরলো। দু’টো ইন্দুর ছিলো একটা লাফিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় মারিয়া পায়ের সাথে বারি খেলো। ভয়ে মারিয়া চিৎকার দিয়ে দিলো দৌড়। আরেকটা ইন্দুর মারিয়ার বিএফের শার্টে কলার দিয়ে ভিতরে ঢুকলো। এদিকে মারিয়ার বিএফও চিৎকার করছে আর সমানে লাফাচ্ছে। সে কি লাফ, ইন্দুরের মতই লাফাচ্ছে। সাইফ শিষ বাজাচ্ছে আর বলছে “সুপ্রিম দর্শক আপনার দেখছেন ইন্দুরর খেলা। থুক্কু লাফালাফি। এই বেডার শার্টের নিচে আমি ইন্দুর দিছি, সে এখন লাফাচ্ছে, জানিনা ইন্দুরের কত কষ্ট হচ্ছে। একটু পর শুরু হবে কথা শেষ না হতেই মারিয়ার বিএফ লাফাতে লাফাতে দৌঁড়। তার পিছে পিছে সাইফ দৌড়াচ্ছে আর বলছে…..

–ভাই আমার ইন্দুর দেন চুবাবো…
-ও মাগো আমারে বাঁচাও…

–ভাই প্লিজ গিভ মি মাই ইন্দুর আমি চুবাবো। কে শোনে কার কথা মারিয়ার বিএফ আগে আগে দৌড়। তারপিছে সাইফ। আমি শুধু শুধু দৌড়ালাম না। পার্কের একটা বেঞ্চে বসে পরলাম। মাথা দুলিয়ে গুনগুন করে গান গাচ্ছি “আজ পাশা খেলবরে সামুচল…ওআআআআআ….”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত