শাড়িপরা মেয়েটি আমাকে দেখে হাত নাড়ছে। অথচ আমি তাকে চিনি না। হতভম্বের মত কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বুঝলাম আমার পেছনের কারো উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছে সে। নিজের আহাম্মকিতে যখন মনে মনে নিজের গালে কসে গোটা দুই চড় মারা সারা তখনই ঘাড় কাত করে পেছনে তাকালাম। নাহ ওখানে একটা ন্যাংটা দেয়াল ছাড়া আর কিছু নেই!
মেয়েটা তাহলে কি সত্যিই আমার উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছিল? তাও আবার এত সুন্দরী একটা মেয়ে! এবং এত এত মানুষকে দেখিয়ে! পরক্ষণেই মনে হল মেয়েটা কি আদৌ হাত নেড়েছিল! এরপরই দারুণ হতাশার সাথে মনে প্রশ্ন জাগল, আসলেই কি ওখানে কোনো মেয়ে আছে? এদিক ওদিক তাকানোর বাহানায় চোখ রগড়ে নিয়ে আবারও তাকালাম। দুষ্টু দুষ্টু মুখে মেয়েটা মুচকি হাসছে। আমার বিপর্যয়কর মানসিক অবস্থা উপভোগ করছে। অথবা মেয়েটা হয়ত আদৌ আমাকে নিয়ে ভাবছে না। কিংবা কে জানে হয়ত ভাবতেও পারছে না যে আমি ওকে চিনি না।
আচ্ছা আমি কি মানসিক রোগী! এখানে কোথা থেকে এসেছি? এমনকি হতে পারে যে আমি মাল খেয়ে টাল হয়ে সব ভুলে গেছি! না না এমন সুন্দরী মেয়েকে কিছুতেই ভোলা উচিত হবে না। যে কোন ভাবে আমাকে মনে করতেই হবে ও আমার কে? আমি কি তাহলে মেয়েকেই জিজ্ঞেস করব, অগো রুপসী! তুমি আমার কে হও?
যদি এমন হয় যে, আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আর অমনি সে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল, মাইনষের বউয়ের দিকে তাকায়া থাকতে থাকতে কি নিজের বউর চেহারাও ভুইল্যা গেলা! আইজ বাড়ি গিয়া দেইখ তোমার কি করি! এই ভাবনায় খুশি হয়ে উঠলাম। এমন সুন্দরী একটা বউ থাকলে জীবনে আর কি চাই! আচ্ছা আমাদের তো গোটা তিনেক বাচ্চাও থাকতে পারে! আমি কি তাহলে আমাদের সন্তানদেরও ভুলে গেলাম!
অথবা দেখা গেলো প্রশ্ন শুনে মেয়ে রেগে মেগে এমন কাণ্ড ঘটালো যে, পুলিশ এসে আমাকে ধরে নিয়ে গেল! আজকাল তো হরহামেশা এসব ঘটছে। আমি এখন কি করি! এমন সুন্দরীকে উপেক্ষা করার মন্ত্র তো কোন মাওলানা আমাকে শেখায়নি। অথচ মেয়েটি যেন আমার কোমরে এক অদৃশ্য সুতো বেঁধে নিজের দিকে টেনেই চলেছে? আচ্ছা সুন্দরীরা এমন খন্নাস কেন? সব পুরুষকে কেন নিজের দিকে টানতে হবে?
কিছুক্ষণ পর মনে হল, আমি কি আসলে আমি! এমন কি হতে পারে না যে, আমি আসলে অন্য কেউ। মেয়েটা হয়ত সেই অন্য কাউকেই হাত নেড়েছিল! তাহলে সেই অন্য আমিটা আসলে কে? এমনও তো হতে পারে যে মেয়েটাই আসলে অন্য কেউ! তাহলে সেই অন্য মেয়েটা কে? সে কি আমার একান্ত আপন কেউ?
নাহ আর ভাবতে পারছি না। এত টেনশন নিয়ে মানুষ বাঁচে কিভাবে? আমি রাস্তা পার হয়ে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু একি! রাস্তা শেষ হচ্ছে না কেন? এটা কি তাহলে রাস্তা না? তখনি মিছিলটি আমাকে অতিক্রম করতে শুরু করল! আরেব্বাপস! এ আবার কেমন মিছিল? মাথা আছে লেজ নাই। আমার আর সুন্দরীর মাঝখানে একটি গঙ্গাদীর্ঘ মিছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইতে চাইতে সেই যে শুরু হয়েছে আর শেষ হয় না।
আমি বাদামওয়ালার কাছ থেকে বিশ টাকায় একশ’ বাদাম নিয়ে ফুটপাতে বসে পড়ি। বাদাম শেষ হয় মিছিল শেষ হয় না। হায় খোদা আমার এখন কি হবে? এত সুন্দর বউটাকে কি হারিয়েই ফেলব! আহা! খেপেন কেন? বউ না হোক আমার দিকে তাকিয়ে হাত যেহেতু নেড়েছে কিছু একটা তো হবেই! দুপায়ের ডগায় ভর করে উঁচু হয়ে রাস্তার অপর পাড়ে তাকালাম। মেয়েটা এখনো হাস্যজ্জ্বল ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আমার অপেক্ষা করছে। অথচ আমাদের মাঝখানে ঝুলে থাকল একটি অশেষ মিছিল। তখনি আবার মনে প্রশ্ন জাগল, এটা কি আসলেই মিছিল? খালেদা জিয়া কি আসলেই বন্দি? কিংবা তিনি কি আদৌ জীবিত?
হঠাৎ মিছিলটি পানির স্রোত হয়ে গেল। তার উপর ভাসছে সারি সারি নৌকা। কোনোটা পাল তোলা, কোনোটা উল্টে আছে পাছা উপর দিকে তুলে, কোনােটা বা কাইত হয়ে আছে। নাহ এসব আর সহ্য হচ্ছে না। আমাকে সুন্দরীর কাছে যেতে হবে। এইসব মিছিল, স্রোত, নৌকা আমার চাই না। আমার চাই সুন্দরী! আমি নদী সাঁতরে রাস্তা পার হয়ে যার কাছে পৌঁছলাম, দেখি সে আসলে সুন্দরী না। সুন্দরীর বেশ ধরা অন্য কেউ। যাকে আসলে আমি চিনি না।