“ বাসের মধ্যে একটা মেয়েকে ধর্ষণ করে আসলাম। পঞ্চাশ লাখ টাকা রাখেন। ” কমিশনার সাহেব নড়েচড়ে বসলেন।
“ আরে তোমরা? এতো টাকা দিলে যে? এর আগে তো ধর্ষণের জন্য দশ লাখ টাকা করে দিতে। ”
“ স্যার এবারের মামলাটা ভিন্ন। পাবলিক বাসে ধর্ষণ করার কারণে কোন শালা জানি ভিডিও করে ফেলেছে। ওকে পেলে খুন করবো। ভিডিওটা ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে। আমাদের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এবার বুঝলেন কেনো পঞ্চাশ লাখ? ” কমিশনার মুচকি হাসলেন।
“ আমি অতটাও বোকা না। আচ্ছা তোমাদের জন্য চা আনতে বলি? ”
“ না স্যার। আমাদের ভারত যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন। ” কমিশনার সাহেব কয়েক জায়াগায় ফোন দিলেন। বাংলাদেশ শেষ সীমানা এই থানা থেকে মাত্র দশ মিনিট দূরত্বে।
“ হ্যাঁ তোমরা আমার বাইকটা নিয়ে যাও। বর্ডারে বলে দিয়েছি, আটকাবে না। নিশ্চিন্তে যেতে পারো কোনো ভয় নেই। আর শুনো এবারে কিন্তু পাবলিক একটু গরম থাকবে। ভিডিও বলে কথা। কমপক্ষে ছয় মাস পরে আসবে। ”
“ সে চিন্তা আপনার করতে হবে না স্যার। ভারতের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বাবার হাত আছে। এক বছর থাকলেও সমস্যা নেই। ”
“ তাহলে তো হলোই। আর শুনো বাইকটা বর্ডারে রেখে যাওয়ার দরকার নেই। তোমরা নিয়ে যাও। পারলে মুখ্যমন্ত্রীকে আমার সালাম দিয়ো। ”
“ মনে থাকবে। এই চল। ”
সিফাত, রজত, আকাশ ও শুভ। চারজন কমিশনারের গাড়িটা নিয়ে রওনা হলো। সীমান্তে কেউ আটকালো না। কমিশনারের নাম বলতেই ছেড়ে দিলো। এর মধ্যে শফিক একটা দুঃসাহসিক কাজ করে বসলো। কমিশনারের ঘুষ খাওয়ার দৃশ্যটা ক্যামেরাবন্দী করে ফেললো।
“ ঐ শফিক। ”
“ ইয়েস স্যার। ”
“ চা আনতো। ঘুম পেয়েছে। ”
শফিক চা দিয়ে গেলো। কমিশনার চা খেয়েও ঘুম নিবারণ করতে পারলেন না। দুই ঘণ্টার লম্বা ঘুম। ঘুমটা ভাঙতেই আবার শফিককে ডাকার সুযোগ পেলো না কমিশনার সাহেব। সামনের চেয়ারে নিজের স্ত্রীকে দেখে চমকে গেলেন।
“ আরে রেহানা তুমি? হঠাৎ এখানে কেনো? কখন আসলে? ” রেহানা বেগম ফোনটা বের করলেন।
“ আজকে সকাল থেকে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে দেখেছো? ধর্ষণের ভিডিও। ”
“ দেখো বাঙালীর স্বভাব এমন। কদিন একটু ফেসবুকে চিল্লাপাল্লা করবে তারপর আবার নতুন কোনো ইস্যুতে ঘুলিয়ে যাবে! এসব নিয়ে তুমি মাথা ঘামিয়ো না। চলো বাইরে যাই। ”রেহানা বেগম ফোন থেকে একটা ভিডিও বের করলেন। কমিশনারের হাতে দেয়ার আগে বললেন।
“ শফিক সাহেব ভিডিওটা আমাকে দিলেন। পঞ্চাশ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছো তুমি ওদের থেকে। ” কমিশনার বেশ মাথা গরম করে চেয়ার থেকে উঠতে চাইলেন।
“ শফিকের এত্তো সাহস? ওর চাকরীর বারোটা না বাজাতে পারলে আমার নাম সুমন না। ” রেহানা বেগম তাঁর স্বামীকে থামালেন। কাঁধের ব্যাগটা খুলে টেবিলে রাখলেন।
“ এখানে এক কোটি টাকা আছে। একটা কথা বলছি তোমাকে। কাউকে বলবে না কিন্তু হ্যাঁ? ” কমিশনার সাহেব হাসলেন। আবার অবাকও হলেন।
“ কী কথা শুনি? ”
“ আমাদের মেয়েটা আজকে গাড়ি করে স্কুলে যায়নি। ড্রাইভার গ্রামের বাড়িতে গেছে। বান্ধবীদের সাথে বাসে করে স্কুলে গেছিলো। কিন্তু বাসে করে আর বাসায় ফেরেনি। এম্বুলেন্স করে ফিরেছে। তাও জীবিত না, মৃত! পঞ্চাশ লাখ টাকার বিনিময়ে নিজের মেয়ের ইজ্জত লুট করা সুপুরুষদের বাঁচিয়ে দিয়ে কেমন অনুভূতি হচ্ছে আপনার কমিশনার সাহেব? ”
কমিশনার কোনো কথা বললেন না! কাঁপতে কাঁপতে ফেসবুক জগতে শেষবারের মতো ঢুকলেন। দুইটা ভিডিও ও শেষ বারের মতো দেখলেন। এক, নিজের মেয়ের চিৎকারের ভিডিও! দুই, সেই সুপুরুষদের হাত থেকে ঘুষ নেয়ার ভিডিও! ” নিজের মাথায় হাত দিয়ে চেয়ার থেকে পড়ে গেলেন কমিশনার। রেহানা বেগম শফিককে ডাককেল।
“ আরেকটা ভিডিও করো শফিক। এটাও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়ো। ” বলেই নিজের স্বামীর বুকে শোঁ-শোঁ করে কয়েকটা গুলি করলেন! এতেও ক্ষ্যান্ত নন তিনি। স্বামীর মুখে থুথু মারতে মারতে বন্যা বইয়ে দিলেন! ভিডিওটা ছাড়তেই, ইন্টারনেট জুড়ে আরেকটা ভিডিও ভাইরাল হতে বেশি সময় লাগলো না।