ফোনে হঠাৎ ম্যাসেজের শব্দ।স্বভাবগত ভাবেই চেক করতে গিয়ে দেখি ক্রাশের ম্যাসেজ।লেখা
– ভাইয়া!কেমন আছ? বাহ,বাহ,আযব ব্যাপার। এমনিতে কখনোই তার ম্যাসেজ পাওয়া যায় না!আজ কি হল কে জানে? আমি ঝটপট প্রতি উত্তরে লিখলাম
– এই তো আলহামদুলিল্লাহ, তুমি?
একি ম্যাসেজ ফেইল্ড লেখা কেন? ব্যালেন্স চেক করতে গিয়ে কপালে হাত, দেখি এক টাকাও নাই। সাথে সাথে দেরি না করেই লোন নিলাম। আমাকে ২৫ টাকা ইতমধ্যে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তারা দুঃখ প্রকাশ করলো।ও নো!এখন কি করি? তার সাথে কথা বলার জন্যতো মনটা আকুপাকু করতেছে। আইডিয়া!আব্বুর বিকাশ আইডিতে যদি কিছু টাকা থাকে তাহলে কেল্লাফতে। দৌড়ে আব্বুর রুমে গিয়ে তার ফোনে বিকাশ ব্যালেন্স চেক করলাম। নাহ, এতে মাত্র ২টাকা ৭ পয়সা ব্যালেন্স আছে। ট্রান্সফারই হবে না। সময় যখন খারাপ যায় তখন চারিদিক দিয়ে যায়। এখন বাইরে বের হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিন্তু আম্মু, আম্মু কি যেতে দিবে বাইরে। টানা ৩ দিন গৃহবন্দী। একটি বারের জন্যও বাইরে যেতে পারিনি।এখন কি হবে? তবুও সাহস করে আম্মুর কাছে গেলাম। সরাসরি বললাম
-আম্মু কোকাকোলা খাইতে ইচ্ছা করছে বিশটা টাকা দাও না প্লিজ।
-এখন তুই বাইরে যাবি মানে? সামনের থেকে সর,যা গিয়ে পড়তে বয়।সারাদিন খালি বাইরে যাবো বাইরে যাবো, বই পড়ার নাম গন্ধও নেই।
-আম্মু প্লিজ দেখো একটি বারের মতন যাইতে দাও,আগামী সাত দিনে আর বলবোই না বাইরে যাওয়ার কথা।
-তুই কি সত্যিই কোকাকোলা কিনতে যাবি?নাকি ফোনে টাকা ভরতে,শুনি?
– আরে না, না। ফোনে টাকা ভরতে না, কোক কিনতেই, আচ্ছা বাসায় এসে খাবো তোমার সামনে, প্লিজ যাইতে দাও।
-আমার কাছে এখন টাকা নেই। কিনতে হবে না, ফ্রিজে দেখ ফল আছে ঐ খা।
– টাকা দিতে হবে না, তবুও একটু গেলাম, প্লিজ রাগ কইরো না, লক্ষী আম্মু।
এই বলে কোনো মতে পকেটে ফোন আর মানি ব্যাগ থেকে ৭০ টাকা নিয়ে বাড়ির থেকে বের হইলাম। কিন্তু একি একটা দোকানো দেখি খোলা নেই।এবার?রাস্তার শেষ মাথায় একটি মাত্র মুদিখানা দোকান খোলা পেলাম, সেখানে গিয়ে ফ্লাক্সিলোডের কথা বলতেই আংকেল বললো
– নেই,লোড নেই। এখান দিয়ে আগেও লোড নিয়েছি, লোকটা বোধ হয় মিথ্যা কথা বলছে।আরেকটু সিরিয়াস করে তুলি ব্যাপারটা।
-আংকেল, আমাদের বাসার কারো ফোনেই টাকা নেই, এখন যদি না দেন তাহলে তো যোগাযোগ করাই যাবে না কোনো বিপদে আপদে।আপনার বিকাশে ব্যালেন্স থাকলে ওখান থেকে হলেও প্লিজ দেন
-কতটাকা? আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ রক্ষা করছে।এ লোক অল্পতেই মেনে নেবে ভাবি নি।
-জি আংকেল মাত্র ৫০ টাকা।
-নাম্বার বলো
-জি,
-পঞ্চাশ না?
-জি, আংকেল, আরেকটা কোকাকোলা আড়াইশো এমএল দিবেন
-হুম।
কি যে আনন্দ লাগতেছে মনের ভেতর।মিশন সাকসেস ফুল ভেবে নাচতে নাচতে যেই না ফোন বের করেছি ম্যাসেজ রিসেন্ড করবো বলে ওমনি পুলিশের গাড়ি আমার সামনে থামলো। এক অফিসার লাঠি নিয়ে নেমে এসে জিগায়
– কি বাবা, কোক কিনতে বের হইছিলা? কি বলবো বুঝতে পারছি না, বুক ধড়ফড় করতেছে।কোনো মতে বললাম
-জি আর ফোনেও একটু লোড দিতে এসেছিলাম।
-বাচ্চা, তুমি জানো না এখন বাইরে বের হওয়া নিষেধ। কান ধর আর ১০০ বার উঠ বস কর। চুপচাপ কান ধরে ২০ বার উঠবস করার পর যেই না বলছি
– স্যার আর পারছি না মাফ করে দেন!
সাথ সাথ মেরুদন্ডের নিচের কোমল অংশে সপাসপ ২টা বাড়ি। মনের অজান্তেই ও মাগো বলে চিতকার দিয়েই দৌড় শুরু। এক দৌড়ে বাড়ির গেটে এসে দেখি পুলিশের গাড়িটা স্টার্ট দিচ্ছে, পেছনে বসা কয়েকজন সদস্য আমার দিকেই তাকানো।আমি এবার দ্রুত বাড়ি ভেতর ঢুকে পুরা ব্যাপারটা আবারো মনে করার চেষ্টা করলাম, কি বিভৎস কাহিনী ঘটে গেল, বাপরে বাপ। ব্যাথা ও করছে মারাত্মক আকারে।মুখে আতংক আর ভয় নিয়ে ঘরে ঢুকে ফ্রিজে কোক রেখেই নিজের ঘরে চলে গেলাম, প্রচুর ব্যাথা করতেছে।চিৎকার করিয়া কাদিতে চাহিয়াও করিতে পারিতেছি না চিৎকার। এই অবস্থার ভেতর ফোনটা অন করে ম্যাসেজ রিসেন্ড করলাম।হ্যাঁ এবার গেছে ম্যাসেজটা।যদিও ম্যাসেজ টা যাবার পেছনে ছোটখাটো এক বিশাল ইতিহাস আছে তবুও ব্যাপার না আমি সফল, মিশন কমপ্লিট!ইতমধ্যে ফোনের ওপার থেকে আবারো ম্যাসেজ
-আমি ভালো আছি,ভাইয়া!আমার একটা উপকার করবা?
-হ্যাঁ, বলো তোমার উপকার করতে আমি সদা প্রস্তুত
– আমার ফোনে একটুও ব্যালেন্স নাই।আর ম্যাসেজ করতে পারবো না।একটু ৪৯ টাকা ব্যালেন্স ভরে দিবা, প্লিজ।আব্বু বের হতে চাচ্ছে না। তুমি এটাকে ধার হিসাবে নাও আমি শোধ করে দেব! ম্যাসেজটা দেখবার মাত্রই বুকের ভেতর অচিন পাখি হঠাৎ কবিতা আবৃত্তি করে উঠলো- “ছোট ফোন, ছোট ম্যাসেজ নিতান্তই ছোট্ট আয়েশ, তবুও হয় না পূরণ কারণ বাইরে বের হওয়া বারণ। মানতে হবে প্রশাসনের আইন কারণ এখন এদেশে চলছে হোম কোয়ারেন্টাইন।”