কয়েন

কয়েন

মুনিয়া হাতে রাখা কয়েনটাকে উপরের দিকে ছুড়ে দিয়ে হাত পেতে বসে আছে কিন্তু ওর হাতে কয়েনটা পরলো না৷ কয়েনটা পরলো গিয়ে বিপরীতদিকে বসে থাকা ছেলেটির মুষ্টিবদ্ধ হাতে৷ এক প্রকার রেগে উঠে বললো—
‘Who the hell are you? this is play ground?’

কাঁদো কাঁদো কন্ঠে মুনিয়া বলল— ‘i’m sorry. i can’t understand….’ ‘Stop your crying & stop your mouth. you are not a kid. okay?’ মুনিয়া কিছু না বলে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো৷ উকি দিয়ে দেখলো কয়েনের কোন সাইডটা উপরে আছে৷ দেখে মুচকি হাসলো৷ ছেলেটার হাতে একটা ইংরেজী বই৷ বইটা এমনভাবে ধরে আছে শুধু লেখকের নামটা দেখা যাচ্ছে

“জেফরি আর্চার” একমনে ঠোঁট উল্টিয়ে ভাবলো
“বাব্বাহ্ অনুবাদও নয় ডিরেক্ট ইংরেজী থেকে পড়ছে৷ বেশ ভালো৷ নাহ্ থাক তাকে আর বিরক্ত করব না৷”

জানালার কাছ থেকে বেশ বাতাস৷ সদ্য শ্যাম্পু করা চুলগুলোকে ছেড়ে দিলো হাওয়ায়৷ বাতাসে চুলগুলো উড়ছে৷ লম্বা চুল৷ বইয়ের উপর কিছু চুল এসে লেখাগুলোকে ঢেকে দিলো৷ বসে থাকা ছেলেটির চোখে মুখেও হানা দিচ্ছিলো চুলগুলো৷ যদিও প্রথমে বিরক্ত হয়েছে কিন্তু চুলের সুঘ্রাণ পেয়ে চুপটি করে বসে আছে৷ চুলের নেশায় পরে গেছে যেন৷ এত মিষ্টি ঘ্রাণ বেরিয়েছে যা দ্বারা মূহুর্তেই মোহে আচ্ছাদিত হয়েছে সে৷ আস্তে করে বইটা বন্ধ করে পাশের ব্যাগে রেখে বুকের উপর হাত আড়াআড়ি করে ঘুমের ভাব ধরে চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে৷

মুনিয়া এবার ব্যাগ থেকে বাবল তৈরির উপাদান বের করলো৷ ওর সাথে সবসময়ই থাকে এসব৷ জানালার পাশে বসে ফুঁ দিতেই বাতাসে বাবলগুলো ভিতরে এসে পরছে৷ ওর উড়ে যাওয়া চুলে বসছে বাবলগুলো কিছু গিয়ে পরলো ছেলেটার চোখে মুখে আর চুলে৷ কিছু একটা অনুভব করে চোখ খুললো৷ বাতাসে ভেসে আসা বাবল আর চুল দু’টোই সিনেমাটিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে৷ আস্তে করে এগিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো৷ মুনিয়া বুঝলো সেও বাবল ফুলাতে চাইছে৷ ওর হাতে দিয়ে নিজের স্থানে গিয়ে বসলো৷  বাবল ফুলাতে ফুলাতে বলল—

‘এদিকটায় এসো৷ জানালার কাছে আমার পাশে৷’ মুনিয়া এগিয়ে গেল৷
‘নাম কী তোমার?’
‘মুনিয়া৷’
‘মুনিয়া অর্থ কী?’
‘একটা পাখির নাম এটা৷’
‘বাহ্ তুমি বুঝি পাখি? উড়তে পারো পাখির মতো?’ ঘাড় নাড়িয়ে উত্তর দিলো
‘না৷’ চোখটাকে উপরে নিচে করে বলল
‘তাহলে নামটা বদলে ফেলো৷’
‘না৷ বাবা ভালোবেসে রেখেছে৷’
‘বাবাকে ভালোবাসো?’
‘খুব৷’
‘আমার নাম জানতে ইচ্ছে করছে না?’ আবার মাথা উপর নিচ করে বোঝালো ‘হ্যাঁ’

‘এত মাথা ঝাকাও কেন? মুখে বলতে পারো না?’
‘পারি৷ যদি আপনি বকা দেন তাই বলি না?’
‘তখন বকাতে মন খুব খারাপ হয়েছে?’
‘হু৷ আমি ইচ্ছে করে আপনাকে বিরক্ত করিনি৷’
‘ঠিক আছে৷ সরি বকা দেয়ার জন্য৷’
‘চকলেট খাবে?’
‘উহু৷’
‘কেন?’

‘বাবা বলেছে অপরিচিত কারো দেয়া কিছু না খেতে৷’ ‘তাই বুঝি? তো বাবা বলেনি অপরিচিত কারো সাথে এরকম এক কামড়ায় না থাকতে? তাতে তো বিপদও হতে পারে৷ আমি যদি খারাপ লোক হই?’ ‘আপনি খারাপ লোক নন৷’ ‘কি করে বুঝলে?’ ‘আপনি বই পড়েন৷ যারা বই পড়ে তারা খারাপ হয় না৷’ ‘বই পড়লেও অনেকে খারাপ হয়৷’ ‘আরো একটা কারণে আমি জানি আপনি খারাপ নন৷ তার আগে বলুন আপনার নাম কী?’ ‘সুমন৷’ ‘মানে সুন্দর মন?’ ‘হু পিচ্চি পাখি৷ বলো এবার কি করে জানো?’

‘আমার কয়েনটা আপনার হাতে তাই৷’ ‘কয়েন আমার হাতে থাকলে কী বোঝা যায়?’ ‘আমার কয়েনটা লাকি কয়েন৷ ওটা আপনার হাতে গিয়েছে মানে আপনি ভালো লোক৷ খারাপ লোক হলে যেত না৷ আর কিছু বলব না৷’ ‘তো একা একা কোথায় যাচ্ছো?’ ‘এসেছিলাম বান্ধবীদের সাথে পিকনিকে৷ কয়েন বলল পিকনিকে থাকা যাবে না৷ তাই কয়েনের সাথে বেরিয়ে পরলাম৷ কয়েনই ট্রেণে আনলো৷’ ‘তারপর কোথায় যাবে?’ ‘কয়েন যেখানে নেয়৷’ ‘কয়েনের কী হাত পা আছে যে তোমাকে নিয়ে যাবে?’

চোখ বড় বড় করে বলল— ‘হু আছে৷ তবে সেগুলো শুধু আমি দেখতে পাই৷’ ‘আচ্ছা৷’ হাত বাড়িয়ে বলল ‘কয়েনটা ফেরত দিন৷’ সুমন কয়েনটা হাতে নিয়ে এপিঠ ওপিঠ করে দেখল কী এমন আছে এটাতে৷ দেখলো তেমন কিছুই নেই৷ জাস্ট একটা পুরোনো কয়েন৷ তারপর ফিরিয়ে দিলো কয়েনের মালিককে৷ বাহিরে দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পরেছে সুমন৷ লোকজনের কোলাহলে ঘুম ভাঙলো৷ কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছে৷ দু’জনই একই সাথে নামলো ট্রেণ থেকে৷ একটু এগুতেই মুনিয়া পাগলের মতো কয়েন খুঁজতে লাগলো কিন্তু পেলো না৷ এটুকুতেই মেয়েটা কেঁদে ফেলল৷

‘আমার লাকি কয়েন কোথায়? কয়েন যেখানে আমাকে সেখানেই যেতে হবে৷’ কান্নাকাটিতে কিছু লোকও জড়ো হলো৷ কি মনে করে যেন পকেটে হাত রাখলো সুমন৷ হাতে কিছু অনুভব হতেই হাত বের করে দেখলো মুনিয়ার কয়েন৷ ‘তোমার কয়েন আমার পকেটে কী করে এলো? অথচ আমি নিজ হাতে তোমাকে কয়েনটা দিয়েছিলাম৷ বাই দ্যা ওয়ে তোমার কয়েন আমার কাছে মানে তুমি আমার সাথে যাবে?’ ‘নিয়ম তো তাই বলছে৷’ ‘হু নেয়াই যায়৷ মেয়ে হিসেবে তুমি মন্দ না৷ বউ হিসেবেও ভালোই হবে৷’ বলতেই মুনিয়া ওখানেই জড়িয়ে ধরলো সুমনকে৷ চোখের কোণের পানি মুছে মনে মনে বলছে ‘ভাগ্যিস ঘুমের মধ্যে কয়েনটা রেখেছিলাম ছেলেটার পকেটে৷ নয়তো ভালোলাগার মানুষটা হাত ছাড়া হয়ে যেত৷’

মুনিয়াকে ছাড়িয়ে বললো— ‘তবে কয়েনকে জিজ্ঞেস করো কোথায় যেতে হবে এখন?’ ‘কয়েন আমাকে বলেছে কাজী অফিস৷’ ‘যথা আজ্ঞা কয়েনের মালকীন৷’

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত