বাজারের থলে হাতে লম্বা পায়ে হাঁটছি৷ রাস্তার পাশের বারান্দা থেকে ডাক আসে, মাষ্টার!” আমি কানে নিই না৷ আবার ডাক আসে৷ আমি থমকে দাঁড়াই৷ কন্ঠটা কানে বাজে৷ চোখ ফেললাম পাশের চেনা বারান্দায়৷ ” খোলা চুলে মুখভরা হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা চোখে পড়ে আমার৷” চোখের চশমাটা আরেকটু নেড়েচেড়ে দেখি আমি৷
-কিরে চোখ খেয়েছিস নাকি?” ওপাশ থেকে হাসিমুখো মেয়েটা বলল৷ মেয়েটার নাম মিতু৷” আমি নিজেকে সামলে নিই একটু৷ মুখে হাসি টেনে বললাম,
– কবে আসা হলো৷”
-এইতো কাল৷”
ওপাশ থেকে জবাব দেয় মিতু৷ ভাবলাম আরেকটু থাকি৷ কথার ছলে মায়ামায়া মুখটা আরেকটু দেখি৷” আমার আর দেখা হল না৷ পান্জাবির পকেটের ফোনটা বাজে৷ আব্বার ফোন৷ আমি দ্রুত পায়ে হাঁটা দেই৷ পেছন থেকে ডাক আসে৷ আমি হাত দেখিয়ে অগ্রাহ্য করি৷” থলে হাতে ঘরে ঢুকতেই আব্বা বলল,
-মিতু এসেছে কাল৷ দেখেছিস?”জবাবে আমি মাথা নাড়ালাম৷ আব্বা শার্টের হাতার বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল,এই বয়সে আবার প্রেমপত্র লিখে আমার মান সম্মান শেষ করিস না বাপ!” আমি কপাল কুচকে আব্বার দিকে তাকালাম৷ আমাকে খোঁচা মারাটা আম্মার ভালো লাগেনি, আমারো না৷”
-তুমিওতো প্রেম পত্রই দিয়েছিলে৷ মনে নেই?” আম্মা সহসা প্রতিবাদ করে বসলো৷” আমি টুপ করে রুমে ঢুকি দরজা লাগালাম৷ খোঁচা আমার গায়ে লাগেনা৷ সেই সুযোগে বাজারের অল্প টাকাটা মেরে দিয়েছি৷”
স্কুলের ছেলেপূলেগুলো দিনকয়েক ধরে মাথা খাচ্ছে৷ তারা ফুটবল কিনবে৷ আমার ডোনেশন দেয়া লাগবে তাদের৷”
এই নিয়ে বারকয়েক এসেছে৷ আমি ঢিলেঢালা পান্জাবীর ঢিলেঢালা পকেট বের করে ঠোঁট উল্টিয়ে বলি, মাসের শেষ৷ আগামী মাসে নিবি৷ বেতনটা পাই আগে৷” তারা হতাশ হয়৷ আবার বলে, তাইলে একটু বাড়িয়ে দিবেন স্যার৷” আমি হেসে বলি, আচ্ছা আচ্ছা৷” লজ্জার কথা তাদের বলিনা৷ আমার বেতনটা সোজা আব্বার হাতে যায়৷ আমি প্রতিবাদ করি মাঝেমধ্যে৷ আব্বা গলা মোটা করে বলে, তোরে এতবছর পড়াইলাম, খাওয়াইলাম৷ টাকাগুলা কে দিবে? সামনে তোরে বিয়া দিবো৷ এই বেতনে মেয়ে কে দিবে তোরে?” আমি আর কিছু বলিনা৷” আমার টিউশন বলতেও ঐ একটায়৷ মিতুর ছোট বোন নীরু৷ মেয়েটা অসম্ভব ভালো৷ পড়ালেখায়ও যথেষ্ট ভালো৷ এখানেও শান্তি নেই৷ টিউশনের বেতনটাও আব্বার হাতে৷”
আমি যে স্কুলে মাষ্টারি করি, মিতুর বাবা “শফিক চাচা” প্রধান শিক্ষক৷ প্রথম যেদিন প্যান্টের ভেতরে শার্ট ঢুকিয়ে, নতুন ঘড়ি আর চুল হালকা উচু করে স্কুলে আসলাম৷ ভদ্রলোক আমার চুলের আগা থেকে পায়ের জুতো পর্যন্ত একবার দেখে নিলেন৷ অথচ এই মানুষটা আমাকে বাচ্চাকাল থেকে দেখে আসছে৷” তারপর চশমা নেড়ে বললেন, চুল একদম ছোট করে ফেলতে হবে৷ নাম্বার ওয়ান মেশিন দিয়ে কাটবি৷ এইসব ফিটিং ফাটিং শার্ট প্যান্ট চলবেনা বাপু৷ এখানে পড়াতে এসেছো৷ মেয়ে দেখতে নয়!” আমি দাঁতমুখ শক্ত করে মাথা নাড়ালাম৷ পাশে থাকা সুন্দরী ম্যাম হেসে উঠলো৷ আমি লজ্জা পেলাম৷” সেদিন ঘরে ফিরলাম মন খারাপ নিয়ে৷ সন্ধ্যা হতেই আব্বা ঢিলেঢালা দু’চারটা পান্জাবী নিয়ে হাজির হলেন৷ আমি ততক্ষণে মাথার চুলে এক নাম্বার সাইজের মেশিন মেরে এসেছি৷ আব্বা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে পান্জাবী হাতে দিয়ে বললেন, কাল থেকে এগুলা পড়বি বুঝলি৷”
আব্বার মুখের উপরে কথা বলার উপায় নেই আমার৷ ঐদিকে স্যারের সাথেও না৷ মিতুর আব্বার সাথে আমার আব্বার ভালো বন্ধুত্ব৷ বাচ্চা কালের বন্ধু৷ দুই বন্ধু মিলে কত মেয়েকে প্রেমপত্র লিখেছে৷ সেই গল্প আমাকে শোনায় প্রায়সময়৷ আমি চুপচাপ শুনি৷” তারপর থেকেই আমার অত্যাচারের শুরু৷ এই অত্যাচারের শুরু অবশ্য আমার কলেজ জীবনের শেষের দিক থেকেই৷ মিতুর সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল ছোটবেলা থেকেই৷ একটু নাদুসনুদুস ছিল বলে পাশের বাড়ির মেয়েগুলো খেলায় নিতো না৷ অন্যদিকে আমি তখন জুনিয়র দলের অঘোষিত লিডার৷ এক বিকেলে মামার কেনা ব্যাট নিয়ে মাঠে যেতে প্রস্তুত আমি৷ সামনের বারান্দায় আসতেই দেখলাম, আব্বা আর তার প্রিয় বন্ধু শফিক৷ শফিক সাথে গুলুমুলু করে একটা মেয়ে৷
আমি মেয়ের দিকে দেখি৷ মেয়ে তখন চানাচুর গেলায় ব্যস্ত৷ আমি সালাম দিলাম শফিক চাচাকে৷ আব্বা আমাকে হাতের ঈশারায় কাছে ডাকলেন৷ পরিচয় পর্ব শেষ৷ আমি দৌড় দিতে যাবো৷ আব্বা থামিয়ে আমার হাত থেকে ব্যাট নিয়ে বললেন, আজ থেকে মিতু তোর বন্ধু৷ এসব ব্যাট নিয়ে দৌঁড়াদৌঁড়ি বন্ধ৷” তারপর থেকেই এই নাদুস নুদুস মেয়েটা আমার বন্ধু৷ আমি সুযোগ পেলেই ব্যাট নিয়ে ছুটি৷ মিতু ঠিকই আমাকে খুঁজে বের করে৷ আমি বিরক্ত হই৷ এক বিকেলে আব্বা ব্যাট পুড়লেন৷” আব্বাকে আমি কীছু বলতে পারি না৷ আব্বার তখন ভীষণ রাগ৷ রাগ ঝাড়লাম মিতুর উপর৷ নাদুসনুদুস গালগুলোয় লম্বা নখের চিমটি দিয়ে রক্তারক্তি অবস্থা৷” আব্বা এসে তুলোধুনো করলো৷ মারর চোটে আমার বেগতিক জ্বর৷ ঐদিকে আমার অত্যাচারে নাদুসনূদুস মেয়েটার অবস্থা ভালো না৷”
সুস্থ হয়ে আম্মার সাথে গেলাম মিতুকে দেখতে৷ খানিকক্ষণ ভয়ে ছিলাম৷ কবে আবার প্রতিশোধ নিতে কামড়ে বসে৷
আমাকে অবাক করে দিয়ে মিতু আমার সাথে মিলে গেল আবার৷ ফোকলা দাঁতের হাসিটা আজো মনে আছে আমার৷” সেবার মিতুর জমানো টাকায় ব্যাট পেলাম আমি৷ নাদুসনুদুসস মেয়েটাকে আমার আর বিরক্ত লাগেনি৷
আমি যখন মাঠে ব্যাট নিয়ে দৌঁড়াই৷ মিতু মাঠের এককোণে বসে দেখে৷ সন্ধ্যা হলেই ঘরে ফিরি একসাথে৷ ”
সন্ধ্যা সকালের দোলাচলে বড় হই আমরা৷ মেয়েটা তখনো নাদুস নুদুস৷ আমি সুযোগ পেলেই গাল টেনে দেই৷
সে মেকি রাগ করে বলে, ইতরামি করলে মাথায় তুলে আচাড় দিবো৷” আমি কয়েক পা সামনে এগিয়ে গানের সুরে বলতাম, তুমি এত মোটাাাাাাা”
মিতু ছুটতো আমার পেছনে৷ একটু হাঁপিয়ে উঠতো৷ হাতের ঈশারায় আমার ডাক পড়তো৷ আমি ফিরে যেতাম৷ ব্যাগে রাখা বোতলের পানি গিলিয়ে ঠিক করতাম৷” তারপর আবার মিটমাট৷ কাঁধে হাত দিয়ে স্কুলে হাঁটা ধরতাম৷” স্কুল পেরিয়ে কলেজ উঠলাম৷ মুখে হালকা হালকা দাঁড়ির ছাপ আমার৷ মিতু আর অতোটা নাদুসনুদুস নেই৷ মিতুর সাথে আমি কলেজের পথে বেরোলেই দেখি পাড়ার মোড়ের ছেলেগুলো দাঁড়ানো৷ মাঝেমধ্যে আমাকে ঘুষ দেয় মিতুর সাথে প্রেম করিয়ে যেন দেই৷ আমি না করিনা৷ শেষে আবার হাড় গোড় ভেঙে দিতে পারে৷ তখন আমি ঘরকুণো হয়ে শুয়ে বসে থাকবো৷ ততদিনে মিতুর প্রেম হয়ে যাবে৷” এই ভেবে আমি ঘুষ নেই চুপচাপ৷ কলেজ শেষে মিতুর সাথে ফুচকা গিলে ফিরে আসি৷ বিন্দাস জীবন৷
ক’দিন বাদে মোড়ের ছেলেগুলোকে হতাশার খবর দেই৷ তারা আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলে, তোকে ধন্যবাদ৷” আমি চুপচাপ ফিরে আসি৷” ক্লাসের ফাষ্ট বয় ছেলেটাও লাইন মারার চেস্টা করে৷ তাকে হুমকি ধামকি দেই আমি৷ সে ভয় পাই৷ অথচ তার হাতের একঘুষিতে মাসখানেক বেডে পরে থাকার মতো ছেলে আমি৷ তবুও আমি তার উপরে৷” চারিদিকে এসব ঝামেলার মাঝে আমি আর ঝুকি নিলাম না৷ মিতুকে একখানা প্রেমপত্র লিখলাম৷ আমি লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে মিতুকে প্রেমপত্র দেই৷ মিতু জবাব দেয়না৷ আমিও কিছু বলিনা৷ দিনকয়েক ঘুরাঘুরি হল৷ ফুচকা গেলা হলো৷ কলেজ ফাঁকি রিক্সায় ঘুরলাম৷ আমি আড়চোখে মিতুর দিকে তাকাই৷ মিতু আমার দিকে৷ উড়ুউড়ু ভাব৷ এটাই বুঝি প্রেম৷ নিয়মিত বাংলা সিনেমা দেখে যখন আমি প্রেম শিখছি৷ তখনই ঘটলো অঘটন৷” একরাতে আব্বা ঘরে ফিরলেন বরাবর৷ আমাকে রুমে ডাকা হলো৷ হাতের কাগজটা চেনা চেনা৷
আব্বা শুধু একটা কথা বলেছিল, এইটা তোর হাতের লেখা?” আমি মিথ্যা বলতে পারিনি৷” স্বরণকালের শ্রেষ্ঠ পিটুনি খেলাম সেই রাতে৷” তারপর আর মিতুকে দেখিনি আমি৷ মেয়েটা নাই হয়ে গেল একদম৷ তারপর থেকে আমি আব্বার বাধ্যগত সন্তান থেকে চরম বাধ্যগত সন্তান হলাম৷ পড়ালেখা শেষ হতেই ভাবলাম, বিন্দাস জীবন শুরু আমার৷ সেই আশা আর পূরণ হলোনা৷ আব্বার লালচোখ এখনো রয়ে গেল৷ মিতুকেও পাওয়া হলোনা আমার৷ আব্বার বন্ধু শফিক চাচা স্কুলের হেডমাষ্টার হলেও ভালো মানুষ ছিলেন৷ উনিও আর আগের মতো রইলেননা৷ আব্বা আমাকে সে বাচ্চাকালের মতো শফিক চাচার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন৷ এবার মাষ্টার হিসেবে৷
অথচ আমি হতে চেয়েছিলাম ঠুনকো চাকরি করা এক ভবঘুরে৷ আব্বা কিভাবে জানি মতিগতি বুঝে নিয়েছিলেন৷
আমার “মাষ্টার হয়েও হইলোনা মাষ্টার” অবস্থা৷ ঢিলেঢালা পান্জাবী আর ছোট ছোট চুল৷ ছেলেপূলেরা মাঝেমধ্যে বলে, স্যার একটু স্মার্ট হয়ে আইসেন৷ এরা আমার বন্ধুর মতো৷ পড়ালেখার সাথে সাথে তাদের সাথে আমার হা হুতাশের গল্প বলি৷ ভালো লাগে৷” আজ অর্ধযুগ পর মিতুর সাথে দেখা আমার৷ আগের চেয়ে সুন্দরী হয়েছে৷ আমি চোখেচোখে তাকাতে পারছিনা৷ লুকিয়ে পালিয়ে দেখছি৷ মনের ভেতর সূক্ষ হা হুতাশ লাগছে৷ তবুও সেই পিটুনির কথা ভেবে মনে মনে বলি, এই মেয়ে তোর নয়৷”
ডাইনিং এ বিরিয়ানী সাজানো৷ মৃদ্যু গরম দোয়া উড়ছে৷ এইটা মিতুর বানানো৷ বিরিয়ানী নিয়ে বেড়াতে এসেছে৷ এমন মেয়ে যদি আমার বৌ হতো! ইশশ” আবারো সূক্ষ আফসোস নাড়া দিলো৷ নিজেকে শান্তনা দিলাম, বিরিয়ানির মালকিন আমার নাহলেও বিরিয়ানীতো আমার৷” ভাবলাম রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিবো৷ পরক্ষণে ভাবলাম, এত বেহায় হলে চলবেনা৷” গলাখাকারি দিলাম৷ আম্মা ছুটে আসে৷ আম্মার পেছনে মিতু৷ একপলক দেখে বুঝলাম লজ্জা পাচ্ছে!” আজব লজ্জা পাওয়ার কি হল! সকালেও তো আমাকে দেখে কত হাসাহাসি করলো৷ সুন্দরের সাথে সাথে ঢংটাও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দেখছি৷” মনে মনে বললাম আমি৷” বিরিয়ানী সামনে পেয়ে অতো আনুষ্ঠানিকতার ধার ধারলাম না আমি৷ কার বিরিয়ানী আর কেমন হয়েছে সেটা বলার ধার ও ধারিনি৷
গলা পর্যন্ত বিরিয়ানী সাবাড় করে মিতুকে না পাওয়ার আফসোস চাপা দিয়ে ঘুমোলাম৷ পেটপুরো বিরিয়ানী, লক করা রুমের সাথে মৃদ্যু কন্ঠে আরমান আলিফের গান৷ আমার ঘুম আর আটকায় কে বাপু!” ঘুম ভাঙলো নরম হাতের ছোঁয়ায়৷ আমি আদো চোখ মেলে অবাক হই৷ আবার ভাবলাম, বিরিয়ানী খেয়ে ভুলবাল স্বপ্ন আসছে চোখে৷” চিমটি খেয়ে ভ্রম ভাঙে৷ মুখ হাত দেই আমি৷ রক্ত বেরিয়ে এসেছে৷ আমি লাফিয়ে উঠে রাগ চোখে তাকায় মিতুর দিকে৷ মিতু মুচকি হাসে৷ খুন করা হাসি৷ আমি বীরের মতো মুখ শক্ত করে রেখে বললাম, আব্বাকে ডাক দিবো? তুই দরজা খুলেছিস কেমনে?” মিতু ভ্রু কুচকে বলল, দে ডাক৷ উনিই চাবি দিয়েছে বাছা৷” আমি মুখে হতাশা মনে খুশি নিয়ে বললাম, ও আচ্ছা৷”
-একটা প্রেমপত্র লিখে দিবি?”
-৫০০লাগবে বুঝলি৷ ফ্রিতে লিখিনা৷
তুই আমার প্রেমপত্র নেসনি৷ তারপর থেকে আমি প্রেমপত্রই লিখি৷ আমার নাহ৷ মানুষের৷ তোকে না পাওয়ার দুঃখটা আমি অনুভূতি বেচা বিরিয়ানী খেয়ে চাপা দেই বুঝলি মিতু৷ তুই সেদিন ঐরকম না করলেও পারতি মেয়ে৷” আমি মিতুর দিকে তাকাই৷ ভাবলাম, এইসব আবেগী কথাবার্তা বললে সে গলে যাবে৷ হুট করে বলবে, চল পালাই যাই আমরা৷ ভালোবাসা খেয়ে পরে বাঁচবো৷” আমার ভাবনা তুড়ি মেরে উড়িয়ে মিতু খিলখিল করে হেসে উঠলো৷” আমি মনে মনে বলি, এত সুন্দর করে হাসার কী দরকার৷ বুক মুচড়ানো হাসি হাসে মেয়েটা৷”
-এখন এসব বলে লাভ নেই বন্ধু৷ বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে বুঝলি!” আমার ভেতরে আরেকবার মোচড় দেয়৷ আমি হাসিমুখে বলি, আমার জন্য তিনপ্লেট বিরিয়ানী রাখবি বুঝলি!” মিতু হেসে বলে,
-হ্যা রাখবো৷ আচ্ছা চান্দু তোর আর প্রেম হয়নি৷ তাই নারে?” আমি আমার অত্যাচারের গল্প শুনাই মিতুকে৷ মেয়েটা হাসে৷ শেষবেলায় এত হাসবে কেন মেয়েটা! আজব৷” আজ বিয়ের দিন৷ আব্বা এবার ফিটিং করা পান্জাবির অনুমতি দিয়েছে৷ সাথে দু’টো হাজার টাকার কচকচে নোট৷ সম্ভবত গিফ্টের টাকা৷” আমার মনটা খারাপের মধ্যে একটুখানি ভালো হলো৷ মিতুর হলুদের বিরিয়ানী খেয়ে এই দু’হাজার টাকার বিরিয়ানী খাবো আমি৷ মদের বদলে বিরিয়ানী খেয়ে মাতাল হবো৷”
বিয়েবাড়িতে ঢুকে মেজাজ ধরলো একটু৷ মিতুকে বৌ এর সাজে দেখবো ভাবলাম৷ ঐখানে নীরুর ফটোশুট চলছে৷
আজকাল ঢং এর ট্রেন্ড শুরু হয়েছে৷ বড়বোনের বিয়েতে ছোটগুলাও বৌ সেজে বসে থাকে৷ নীরু হাতের ইশারায় ডাকলো৷ আমি গেলাম৷ ছবি তোলা শেষ হতেই মীরা বলল, এত ছ্যাচড়া ক্যান আপনি?” আমি মুখ চেপে বললাম, আমি তোর মাষ্টার লাগি মেয়ে৷ সম্মান দে৷ বড়টার মতো বেয়াদব হবিনা৷” কথা শেষ হতেই পেছন থেকে হাতটা চেপে ধরলো কেউ৷ পরিচিত হাত৷ আমি তাকালাম৷ মিতুর পরনে সবুজ শাড়ি৷ আমি নিজেকে সামলে বললাম, কাজের বেটির মতো লাগে তোরে৷ নিজের বিয়েতে এভাবে থাকে মানুষ৷” মিতু লম্বা নখে হাতে চিমটি দিয়ে বলল, চল বিয়ে করবো৷” আমি গলা উচু করে বললাম, মোটেই না৷ আমি অতীত ভুলিনি৷”
-অতীতের পিটুনিটা মনে আছে? ঐ যে তোর আব্বার…
-হ্যা৷ সেজন্যই তোরে বিয়ে করবোনা৷”
-বিয়ে না করলেই আব্বার মাইর খাবি৷
-কেন?
-তোরে এতোদিন ঢিলেঢালা পান্জাবি, বান্দরের মতো চুলের কাটিং দিয়ে আমার জন্য পোষেছে বুঝেছিস ব্যাটা৷ চল বিয়ে করবো৷
-আচ্ছা প্রেমপত্র সেদিন আব্বার হাতে ক্যান দিলি তুই?”
-তুই আমাকে প্রেম পত্র দিলি, তুই ঘুরবি আমার সাথে, ফুচকা গিলবি আমার সাথে, রিক্সা, বাস, নৌকা, বিমান সব আমার সাথেই চড়ার কথা ছিল৷ তুই অন্য মেয়ের ভাড়াটে প্রেমিক হবি ক্যান?” বলল মিতু৷ “তাই বলে অর্ধযুগ শাস্তি দিলি আমায়?”
-তুই সেদিন মিলির গালে আধডজন ফুচকা ঢুকিয়েছিলি৷ আমার মনে আছে৷ ফোনের গ্যালারিতে স্বাক্ষি আছে৷
-বাদ দিয়ে দে স্বাক্ষী৷
-না৷
-কেন?
-নাতি-নাতনীদের তাদের দাদার গল্প শুনাবো৷ তোর ভালো মানুষীর গল্প৷”
আমি আর কিছু বললাম না৷ মনের ভেতর চেপে রাখা ধূসর অনূভূতি এক ফুৎকারে উড়িয়ে বললাম, একটি দূর্ঘটনা অর্ধযুগের কান্না আমার৷ পন্ডিতগণ অর্ধেক সত্য৷ পুরোটা নয়৷”