বুকের বা পাশে

বুকের বা পাশে

রাস্তার মাঝে মরার মতো পরে আছে সুন্দরী একটা মেয়ে।সিগারেটে শেষ দুইটা টান দিয়ে ফেলে দিলাম।নাকের কাছে হাত রাখতে বুঝলাম এখনো জীবিত।

– ‘হ্যালো, ম্যাম এভাবে রাস্তায় শুয়ে আছেন কেন? আপনার বাসায় খাট নাই নাকি?

‘স্পেসশীপ… স্পেসশীপ’ বলতে বলতেই আবারও জ্ঞান হারালো। আচ্ছা ঝামেলায় পরলাম তো.! বাসায় এনে খাটের উপর শুয়ে দিলাম। চাদর দিতে গিয়ে আমার হাতটা জোরে ধরে। আহা.! কি নরম হাত কি চেহারা।সারা শরীরে যেন কারেন্ট মেয়েটার। না আমি আর থাকতে পারছিনা। ছটফট করছে শরীরের প্রতিটা অঙ্গ-প্রতাঙ্গ! মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা লুচ্চাটা বুক চিরে বের হয়ে যেতে চাচ্ছে।কোনো ভাবে মনকে শান্ত করলাম ‘আজ প্রটেকশন নাই অন্য একদিন’ বাইরে বৃষ্টির বড় বড় ফোটা কপালে এসে লাগছে।ভেতরে সুন্দরী মেয়ে ঘুমাচ্ছে আর আমি কিনা এখানে সিগারেট টানছি। বৃষ্টির পানিতে সিগারেট ভিজে গেছে। আমার একটুও ভালো লাগছে না। আরও এবার গেলাম রুমে মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে।ঘুমন্ত চেহারা বড্ড বেশি মায়াবী লাগে।মাঝে-মাঝে কেপে উঠছে ঠান্ডা বাতাসে। কাছে গিয়ে কপালে হাত রাখতেই বুঝলাম জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।সারা রাত জলপট্টি দিলাম কপালে।সকালে মেয়েটা একটু সুস্থ হলো….

– ‘আমি কোথায়? লম্বা হাই তুলে বললাম…

– ‘আপনি আমার বাসায়।কাল রাস্তার মাঝখানে জ্ঞান শূন্য হয়ে পরেছিলেন’ আমার চেহারার দিকে তাকাল সিক্সটি নাইন এ্যাঙ্গেলে বাঁকা দেখতে চতুর ভূজ আকৃতির।মুচকি হাসলো তারপর বলল…

– ‘তোমাকে দেখতে অনেক কিউট’ আমি হাসলাম। মেয়েটাকে কিছু কিনে দিতে হবে এক কাপড় কত দিন পরবে? মেয়েটা ভিন্ন ছিলো মার্কেটিং ঠিকি করছে কিন্তু বিল পে নিজেই করে।এমনকি আমাকেও একটা শার্ট আর ঘড়ি গিফ্ট করছে। এরপর রেস্টুরেন্টে গেলাম।খাওয়ার সময় কিছু মানুষের হুশ ঠিকি থাকে না কিন্তু বিল দেওয়ার সময় মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে।আমারও সেম অবস্থা! দাঁত বের করে একটা হাসি দিলাম….

– ‘বাবু, বিল..পে করে দাও’
– ‘আমি কি বলছি তোমার দিতে হবে? আমি আগেই দিয়ে রাখছি।সাথে ৫টাকা খুশি হয়ে দিছি’ বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।আকাশে কালো মেঘ জমেছে।সম্ভবতো আজও বৃষ্টি হবে।উফ! ভাবেই দাড়িয়ে গেলে শরীরের লোম! শীতে সবারি দাড়ায় (লোম) সব চোর এক না।কিছু কিছু চোর মন চুরি করে থাকে। সেই চোরটা সম্ভবতো আমি নিজেই।তবুও নিজের নামে প্রসংশা করতে ইচ্ছা করেনা আমি একজন মন চোর! বৃষ্টির কারণে কারেন্ট চলে গেছে। অন্ধকারেই যা করার করতে হবে।নয়তো রান্না না করলে খালি পেটে থাকতে হবে।খিচুড়ি খেতে পারলে ভালো হতো।বৃষ্টিতে বেশ উপভোগ করে খেতাম।হঠাৎ করে মোমবাতি হাতে সামনে দাড়াতে ভয়ে চমকে উঠলাম….

– ‘তুমি গিয়ে বসো।আমি খিচুড়ি রান্না করে আনতেছি।তুমি তো খিচুড়ি বৃষ্টির রাতে পছন্দ করো’ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম কি ভাবে বুঝলো বৃষ্টির রাতে খিচুড়ি ভালো লাগে? আগে তো বলিনি! তাহলে বুঝলো কিভাবে মনের কথা গুলো? তবে কি মেয়েটার ভেতর অলৌকিক কোনো শক্তি আছে? গলা বেয়ে ঢোক চাপলাম।পাঁচ মিনিট না হতেই প্লেট ভর্তি খিচুড়ি আনলো। পাঁচ মিনিটে খিচুড়ি কিভাবে রান্না সম্ভব! যাই হোক খাওয়ার পরেই ঘুম হবে।তারপর ঘুম ঘুম খেলা খেলবো ভাবতেই লজ্জা লাগে।

– ‘ডিনার শেষ করে আমরা ঘুম ঘুম খেলবো।তারাতারি খাও’

আমি আবারও আচর্য হলাম মেয়েটা বুঝলো কিভাবে আমার ব্রেণে কি চিন্তা ভাবনা ঘুরপাক করছে? রাতের খাবার শেষ করে চাদরের নিচে ঢুকলাম।আজ আমার খাটে আরও একজন বেড়ে গেলো।বিদ্যুৎ চমকানোয় আমাকে জোরিয়ে ধরে।এমন সময় ঠোঁটে একটা চুমু পেলে।ভাবতে না ভাবতেই ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে দিলো মেয়েটা। সকাল ৯ টা ১৫ মিনিট। খাট থেকে উঠে দেখি মেয়েটা পাশে নেই! গেলো কই? কিচেনের দিকে গেলাম।আচর্য চিহ্নর মতো তাকিয়ে পিছন থেকে কোমর জোরিয়ে ধরে বলি….

– ‘কাপড় নাই কেন তোমার শরীরে.?
– ‘আমাদের গ্রহে এভাবেই এলিয়েন’রা চলাফেরা করে।কেন তুমি জানো না বাবু’
– ‘গ্রহ, কিসের গ্রহ? তোমার কি এক রাতেই মাথা নষ্ট হলো নাকি? কি সব আবল তাবল বলো’
– ‘আমার পেটে তোমার বাচ্চা আছে সোহান’ (লজ্জা পেয়ে বলে) আকাশে থেকে পরার মতো অবস্থা।আমার যতো দূর মনে পরে কাল রাতে মাত্র ৩-৪ শত চুমু ছাড়া কিছুই করিনি।কারণ বাচ্চার বাপ হওয়ার ইচ্ছা একদমি নেই আমার।

– ‘কিভাবে কি? শুধু কিস করেছি মাত্র’
– ‘আমাদের গ্রহে কিস করলেই মেয়েদের বাচ্চা পেটে এসে যায়। কথাটা বলেই মুখ ফিরে তাকালো উলঙ্গ এলিয়েন।নাক কপালে, চোখ দুটি যেন স্পিরিং এর মতো লাফাচ্ছে আর কান দুটি জিরাফের মতো লম্বা।ব্যাকটেরিয়ার মতো দেখতে কিছুটা! বড়-সড় ধাক্কা খেলাম মনে।পা হরকে ফ্লোরে পরে যায়।মুখ দিয়ে অপস্ট ভাবে বেরিয়ে এলো..

– ‘তু..তু. তুমি এলিয়েন?’
– ‘এলিয়েন হলেও আমি তোমাকে ভালোবাসি।ভালোবাসা চেহারা দেখে হয়না বাবু।আমি এলিয়েন সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না।আমার পেটে যে তোমার বাচ্চা আছে।তুমি এই বাচ্চার বাবা’ বাপ্পারাজের মতো ডাইলোগ দিলাম…

– ‘না, আমি বিশ্বাস করিনা।আমি বিশ্বাস করিনা.!
– ‘আমি তোমার নামে পুলিশ কেস করবো।জেলের ভাত খাওয়াবো তোমাকে।তুমি আমার ইজ্জৎ নষ্ট করছো তুমি’
– ‘কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে.? একটু একটু এগিয়ে আসছে আমার দিকে।হামাগুরি দিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি নিজের শেষ শক্তি দিয়ে।১৩ শত টাকার টিশার্ট ছিড়ে দিলো পিঠের পিছনে।

– ‘এই দেখো প্রমাণ।তোমার পিঠে আমার আঙ্গুলের দাঁগ।মনে পরে কাল রাতের কথা।

– ‘তুমি আমাকে ভালোবেসে থাকলে কখনোই কষ্ট দিতে না।পিল কিনে দিবো।সেটা না হলে মায়া বরি কিনে দেবো তবুও ভুলে যাও প্লীজ।আমার জীবনটা নষ্ট করো না’ কাঁদতে-কাঁদতে বাইরে চলে যাচ্ছে।পিছনে থেকে ওকে দেখতে আমারও সুন্দর লাগছিলো।মেইন গেটের কাছে দাড়ালাম। স্পেসশীপ এসে ল্যান্ড করলো। কয়েক সেকেন্ডেই দ্রুত গতিতে আকাশে অদৃশ্য হয়ে যায়। ওর শেষ কথাটা ছিলো.. ‘আমার মতো গালফ্রেন্ড তুমি পৃথিবীতে খুব বেশি পাবা না।রিক্সা ভাড়া, রেস্টুরেন্ট বিল সবাই দেয় না ফারাবী আজ এক মাস হয়ে গেছে। নতুন একটা গালফ্রেন্ড পেয়েছি।দেখতে ভারতী নায়কাদের মতো।কিউট ফেস, হাসলে গালে টোল পরে ও লম্বা চুল।সৌন্দর্যের দিক দিয়ে কোনো ভাবেই পিছিয়ে নেই আমার গালফ্রেন্ড।ভালোই চলছে নতুন গালফ্রেন্ডের সাথে জীবনটা। রিক্সা থেকে নেমে ফোন টিপছিলাম।গালফ্রেন্ড ৩০ সেকেন্ড ‘হা’ করে তাকিয়ে ঝাজালো কন্ঠে বলে….

– ‘কি হলো ভাড়া দিচ্ছো না কেন? তুমি না একদম ভিন্ন টাইপের বয়ফ্রেন্ড! গালফ্রেন্ড কখনো ভাড়া দেয় দেখছো।অন্যদের কাছ থেকে কিছু শিখতে পারো না আচর্য!’ পকেটে হাত দিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম।সেই এক মাস আগের মেয়েটার কথা মনে পরছে।আসলেই পৃথিবীর গালফ্রেন্ড গুলো কি কখনো ওর মতো হতে পারবে না। অজান্তেই চোখ দিয়ে পানির কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো।মানিব্যাগ থেকে ৫০ টাকা বের করার সময় তার থেকেও বড় কষ্ট পেলাম।বুকের বা’পাশে ব্যাথা হচ্ছে!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত