সিগারেটখোর

সিগারেটখোর

-“এরিকাকে দেখার সাথে সাথে হিমান্ত তার হাতের সিগারেটটা সহ হাতটা পিছনে নিয়ে জলন্ত সিগারেটটা হাতে মুষ্টি বদ্দ করে নেই। মনের সুখে সদ্য টান দেওয়া সিগারেট ধোঁয়াটা মুখের মধ্যে চেপে রেখেছে। না পারছে গিলতে আর না পারছে বাতাসে উড়িয়ে দিতে।

এরিকা তার চোখগুলোকে কিঞ্চিৎ ছোট করে হাত দিয়ে তার কাধের ব্যাগ টা শক্ত করে চেপে ধরে হিমান্তের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওদিকে জলন্ত সিগারেটের আগুনে তার হাতে ছোট্ট করে ছ্যাঁকা লেগে যায়। সিগারেটের ছ্যাঁকা খেয়ে বেচারা ইশ করে উঠাতে মুখ দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়াটা বেড়িয়ে আসে। আর সাথে হিমান্তের কাশি। এদিকে রাগে এরিকার শ্যাম বর্ন গাল টা লাল হয়ে গিয়েছে। কাধের ব্যাগ টা হিমান্তের মুখের উপর ছুড়ে মেরে এরিকা হাটা দেই। এরিকার ছুড়ে মারা ব্যাগ টা সোজা এসে হিমান্তের নাকে লাগে। হিমান্ত তার নাকটা ঘষতে ঘষতে উঠে দাঁড়িয়ে একটা ক্যাটবেরি নিয়ে দৌড় দেই এরিকার দিকে। এরিকার ছুড়ে মারা ব্যাগটা কাধে নিয়ে ক্যাটবেরি চকলেট টা সে তার মুখে পুরে দেই পুরোটা।

এরিকা গদগদ করে হেটে চলে যেতে থাকলে হিমান্ত পিছন থেকে নানা রকম করে ডাকছে। একবার,এরিকা  বললে আরেকবার বলে এরি,অন্য আরেকবারে ডাকে এরু, তাতেও না হলে, বাবুই বলে ডেকে চলছে। হিমান্তর এতো ডাকার পরেও এরিকার সেদিকে কোন ভাবান্তর নেই। সে তার মতো করে চলছে। অবশেষে একটা পার্কের নির্জন একটা জায়গায় গিয়ে বসে এরিকা। হিমান্ত একটু জিরিয়ে নিয়ে তারপর আবার এরিকার পাশে গিয়ে একদম এরিকার গা ঘেঁষে বসে। হিমান্ত বসাতে এরিকা কিছুটা দুরত্ব রেখে সরে বসে। হিমান্ত আবার এরিকার একদম গা ঘেঁষে বসে। হিমান্তের দিকে এবার এরিকা কপট রাগ দেখিয়ে ওর দিকে তাকায়। এরিকার রাগীভরা চেহারাটা দেখে হিমান্ত আস্তে করে সরি বলে এরিকা থেকে এক ইঞ্চি সরে বসে। এরিকা হিমান্তের হাতে থাকা ব্যাগটা হেচকা টান মেরে ব্যাগটা নিয়ে নিজের কোলের উপর রাখে। হিমান্ত একটু আড়চোখে এরিকার দিকে তাকিয়ে চট করে এরিকার একটা হাত ধরে বলে উঠে,

-” সরি বাবুই৷ আজ লাস্ট আর কখনো এমন হবেনা। প্লিজ বাবুই মাফ করে দাও। প্লিজ প্লিজ প্লিইইইজ৷ এরিকা কোন কথা না বলে হাতটা টেনে নিয়ে নিতে গেলে হিমান্ত আরো শক্ত করে এরিকার হাতটা চেপে ধরে। হিমান্ত নিজের চেহারাটা আড়াই বছরের বাচ্চাদের মতো ইনোসেন্ট করে বলতে থাকে,

—” বাবুই তুমি ক্ষমা না করলে আমি তোমার হাত ছাড়বোনা। এভাবে ধরে রাখবো। আ’ম সরি বাবুই, আর সিগারেট খাবোনা সিগারেটের কসম।এই কথাটা বলে হিমান্ত আলতো করে নিজের ঠোঁটে কামড় বসায়।এরিকা এবার হিমান্তের দিকে শান্ত ভাবে তাকিয়ে বলে এই পর্যন্ত তুমি একশোবার কসম কেটেছো, তোমার কসম কেটেছো, তোমার যতো জানের জিগার ফ্রেন্ড ছিলো প্রতিবার একজন একজন করে কসম কেটেছো, তারপর আমার কসম কেটেছো, তোমার , দাদা, নানা, কাউকে বাদ রাখোনাই। আজ আর কাউরে না পাইয়া সিগারেটের কসম কাটো সিগারেট খাবেনা! তোমার মতো মিথ্যেবাদীর সাথে আমার কোন কথা নেই।

—“সরি তো বাবুই, আমার লক্ষ্মী সোনা বাবুইটা প্লিজ লাস্ট আজকে। কি করবো তুমি ই বলো, সিগারেট তো আমি ছাড়ার চেষ্টা করি কিন্তু সিগারেট ই আমায় ছাড়তে চাইনা। কিছুদিন সিগারেটের থেকে দূরে থাকতে পারলেও কয়েকদিন পর সিগারেট আমায় চম্বুকের মতো টানে। তখন আমার, দিলে প্রানে, মনে মস্তিষ্ক সব কিছুতে শুধু সিগারেট সিগারেট করে। নিজের মধ্যে তখন নিজেকে রাখতে পারিনা। নিজের ভিতর অন্য একটা সত্তা জেগে উঠে মাই গড বলছি। তোমার মতো সিগারেটখোর আমি আর একপিস দেখিনি। কয়েকদিন যা খাওয়ানা তার থেকে দিগুন তুমি একদিনে খাও। তোমার শরীর যদি এখন কেটে দেখা হয় তবে সেখানে রক্ত কম সিগারেটের রিয়েকশন বেশি দেখা যাবে। এতো বাজে ভাবে কেউ সিগারেটের দিওয়ানা হয়!

–” সরি তো বাবুই।
—–” তুমি আমায় বলছো গত দুইমাসে তুমি সিগারেট খাওনি। কিন্তু তোমার ফ্ল্যাটে গেছিলাম তোমার জন্য রান্না করে। সিগারেটের গন্ধে সারা ফ্ল্যাট ভোঁ ভোঁ করছিলো।

ডাস্টবিনের বক্স টা তো সিগারেটের প্যাকেট আর আর সিগারেটের অর্ধ অংশে ভরা। তুমি কি ভাবো আমার জন্য তোমাকে সিগারেট খাইতে নিষেধ করি? নিজের কি পরিমাণ ক্ষতি করতেছো বুঝতেছো? ওইদিন ডাক্তারে কি বলছিলো তোমায়? রিপোর্ট গুলো দেখোনাই তুমি? কি ছিলো জানোনা? ফুসফুস ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে তোমার দিনদিন তার দিকে তো খেয়াল রাখবা। তোমার বুকে প্রচন্ড রকমের ব্যথাটার কথাটার কথাও কি ভুলে গেছো। কথা গুলো বলতে গিয়ে এরিকার গলা ধরে আসে। এদিকে হিমান্ত চুপ করে মাথা নুয়ে বসে থাকে। হিমান্তের থেকে হাতটা ছাড়িয়ে চোখের কোনাতে আসা পানিটা হাতের উল্টো দিক দিয়ে মুছে নেই এরিকা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে এরিকা আবার বলে উঠে,

—–” তোমায় আমি একদিনে ছাড়তে বলছিনা। অল্প অল্প করে কমাতে বলছি। তোমার সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোর কথা একটু চিন্তা করো। যারা তোমার উপর ভরসা করে আছে।

যারা তোমায় ছাড়া অচল তাদের কথা ভাবো। এভাবে তুমি পারবানা বাবুই, একটু একটু করে লিমিটে নিয়ে আসো প্লিজ। তোমার শরীরের কথা একটু ভাবো বাবুই৷ হিমান্তের গালে আলতো করে হাত রেখে এরিকা কথা গুলোবলে উঠে। হিমান্ত চুপ করে শুধু মাথা নেড়ে এরিকার কথায় সায় দেই। —” এইযে এভাবে মাথা নিচু করে না থেকে যা গুনাহ করেছেন তার জন্য ক্ষমা চান। আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে কানে ধরে সরি বলেন তাড়াতাড়ি। এরিকার বলতে দেড়ি হলেও হিমান্তের হাটু গেড়ে বসে কানে ধরতে দেরি হয়নি। কানে ধরে হিমান্ত মুখটা অপরাধী করে বলে , –” আজ সত্যি বলছি বাবুই আজ থেকে সিগারেট খাওয়া কমিয়ে দিবো। সরি বাবুই। হিমান্তের কথা শুনে এরিকার মুখে কোনাতে হাসি ফুটিয়ে হিমান্তের কাছে ঝুকে হিমান্তের কপালে একটা চুমু এঁকে দেই। তারপর বলে হুম জানি ।

—-“হিমান্ত উঠে এসে এরিকার পাশে বসলে এরিকা হিমান্তের বাহু আঁকড়ে তার কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকে। তারপর এরিকা বলে উঠে, আমি শুধু তোমার জন্য রান্না করে নিয়ে যায়নি তোমার সাথে কিছু কথাও ছিলো। বাসায় না পেয়ে বুঝেছি তুমি কামাল চাচার দোকানে থাকবে। ছুটির দিনে তোমার যাওয়ার জায়গা তো ওই একটা সেখানে আড্ডা দেওয়া। তো যেটা বলছিলাম, আম্মু- আব্বু তোমার সাথে দেখা করতে চাই। আজ ডিনারে দেখেছে তোমার আম্মু সহ।

ওদের কে আসতে বলো। এরিকার কথা শুনে হিমান্ত ভ্রু নাচিয়ে এরিকাকে জিজ্ঞেস করে কি বললে শুনি আমার ব্যাপারে এটায় কি, মা একটা সিগারেটখোর তোমার মেয়ের মন পুড়েছে! হিমান্তের কথা শুনে এরিকা হিমান্তের পিঠে চড় দিয়ে বলে , জাস্ট সাটাপ। আজ যেতে পারবা নাকি অন্য আরেকদিন? হিমান্ত কিছুটা ভাব নিয়ে বলে আজ ই যাবো। তুমি না এলে কি করে আমার সিগারেটের নেশা কাটবে?  হিমান্তের সিগারেটের নেশাটা আজো গেলোনা। বিয়ের পনেরো বছরেও। যখন সুযোগ পায় তখন ই হিমান্ত সিগারেট ধরিয়ে নেই। তবে ভুল করেও এরিকার সামনে সে সিগারেট তো দূরে থাক সিগারেটের নাম ও নেইনা। আগে যেমন একবসাতে দুই তিন প্যাকেট সিগারেট খেতো তা কমে এসেছে দুই তিনটাতে। সারাদিন মিলে একটা না হয় দুটো।

অফিস থেকে ফিরার পথে ইচ্ছে মতো চকলেট না হয় সেন্টারফ্রুট খেয়ে আসে যাতে সিগারেটের গন্ধটা না লাগে। চোর হাজার তার চুরি করাটা লুকাতে চাইলেও লুকাতে মাঝে মাঝে ব্যর্থ হয়ে পরে। হিমান্ত ও তেমন অনেকবার এরিকার কাছে ধরা পরেছে তারপর এটা সেটা। এখন এরিকা বুঝেও না বুঝার মতো হয়ে থাকে। রাগ হলে তা এখন আর চিল্লায় না এরিকা বুঝে গেছে শুধু শুধু চিল্লিয়ে নিজের এনার্জি, নষ্ট করে কোন লাভ হবেনা। তাই চুপ হয়ে থাকে হিমান্তের সাথে কথা না বলে। আর হিমান্ত এরিকার রাগ দেখে সে একই বাহানা দেই আজ কলিগের চাপে একটা খেয়েছি। এই সেই। তারপর আবার সরি বলে দুইদিন চুপ থেকে তার পরের দিন আবার আরেকটা সে খাবে।

যখন হিমান্ত সিগারেট খাইনা তখন তার মুখটা শুকনো হয়ে তাকে এটা,এরিকার সহ্য হয়না। এরিকা তখন তাদের দশ বছরের সন্তান কে দিয়ে হিমান্তের জন্য সিগারেট আনিয়ে তার কাছে পাঠায় আর বলে, খবরদার মা আনতে বলেছি সেটা বাবাকে বলবিনা। বলবি বাবার মন খারাপ সহ্য হচ্ছেনা তাই তুই আমার থেকে চুরি করে এনেছিস বাবাইয়ের জন্য বুঝেছিস? আলভীন তখন তার মায়ের বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিয়ে বলে হ্যাঁ আমি বুঝেছি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত