কলা পাতা রঙের শাড়ি

কলা পাতা রঙের শাড়ি

বাহিরে যাওয়ার পর হঠাৎ করে মনে হলো ফোনটা আমি বাসায় রেখে এসেছি। ফোনটা নিয়ে আসতে যখন বাসায় গেলাম তখন বাবা আমায় দেখে বললো,

-তুই যেন কোথায় যাচ্ছিস? আমি আমতা আমতা করে বললাম,

— বাবা, তোমায় বললাম না একটা জবের ইন্টারভিউ আছে। সেখানে যাচ্ছি বাবা বইয়ের পাতা থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

– তুই তো বেকার ছেলে। রেস্টুরেন্টে প্রেম করতে করতে একদিন তো ফকির হয়ে যাবি। তখন রেস্টুরেন্টের বিল মেটানোর জন্য রাস্তাঘাটে ছিনতাই করা শুরু করবি আর লোকে আমাকে বলবে, ছিনতাইকারীর বাবা আমি বাবার কথা শুনে অবাক হয়ে রইলাম। কি বলবো না বলবো বুঝতে পারছিলাম না। বাবা তখন বললো,

– রেস্টুরেন্টে প্রেম করতে হলে যোগ্যতা লাগে। তাই আগে সেই যোগ্যতা অর্জন কর তারপর না হয় রেস্টুরেন্টে প্রেম করিস। আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম,

— বাবা তুমি কি বলছো আমি ঠিক বুঝতে পারছি না বাবা এইবার বইয়ের পাতার দিকে নজর দিয়ে বললো,

-যাবি তো রেস্টুরেন্টে শ্রাবণীর সাথে দেখা করতে। তো আমায় মিথ্যা বলার কি আছে? এক কাজ কর মেয়েটাকে বাসায় নিয়ে আয়। আমি না হয় ছেলের ভবিষ্যত বউকে দেখলাম আর সবাই মিলে দুপুরের খাবারটাও একসাথে খেলাম। আজ কচি লাউ দিয়ে চিংড়ি মাছ রান্না করেছি। আশা করি রেস্টুরেন্টের খাবার থেকে খুব একটা খারাপ হবে না আমি বাবার পাশে বসে বাবার হাতটা ধরে বললাম,

–বাবা আমি তোমায় মিথ্যা বলতে চাই নি।আমি চিন্তা করেছিলাম যেদিন চাকরি পাবো সেদিন তোমায় সব খুলে বললো বাবা মুচকি হেসে বললো,

– প্রেমে পড়লে সবাই টুকটাক মিথ্যা কথা বলে এটা ব্যাপার না আমার বাবা হামিদ আহমেদ একজন সরকারি কর্মকর্তা। মা মারা যাবার পর থেকে দেখছি বাবা এই সংসারটাকে আগলে রেখেছেন। আমাকে কখনো বুঝতেই দেন নি যে আমার মা নেই। বাবা কখনো আমার সাথে বাবার মত আচরণ করে নি। সব সময় বন্ধুর মত মিশেছেন এমন সময় হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ। বাবা আমায় বললো,

– যা দরজা খুল গিয়ে। শ্রাবণী এসেছে বোধহয়। আমি অবাক হয়ে বাবাকে বললাম,
— মানে? বাবা বললো,

– তুই ফোন রেখে গেলে শ্রাবণী কল করেছিলো। তখনি ও সব বলেছে।আর আমিই ওকে বাসায় আসতে বলি… বাবা শ্রাবণীকে দেখে বললো,

– আচ্ছা মা, তুমি কি স্বাভাবিক ভাবে সুস্থ? না কি তোমাদের পরিবারে কারো মাথায় সমস্যা আছে? শ্রাবণী অবাক হয়ে বললো,
~কেন আংকেল? হঠাৎ এই কথা কেন বলছেন? বাবা তখন হাসতে হাসতে বললো,

— এত সুন্দর সুস্থ একটা মেয়ে কি করে আমার গর্দভ ছেলের প্রেমে পরতে পারে সেটাই ভাবছি। বাবার কথা শুনে শ্রাবণী কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি মুচকি হাসছে। বাবা আড়ালে আমায় ডেকে নিয়ে বললো,

– মেয়ে এত সুন্দরী হলে মেয়ের মা নিশ্চয়ই আরো বেশি সুন্দরী। সুন্দরী বিয়ানের সাথে আমারও সময়টা ভালোই কাটবে বাবার এমন ছেলেমানুষি কথা শুনে আমি নিজেও হাসতে লাগলাম বাবা আমাকে নিয়ে আজ শ্রাবণীদের বাসায় এসেছে আমাদের বিয়ের কথা বলতে। বাবা শ্রাবণীর মাকে দেখে অনেকক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। শ্রাবণীর মা আমাদের দেখে শ্রাবণীকে সরাসরি বললো,

~ ছেলে আমার পছন্দ হয় নি। আমি এই ছেলের কাছে তকে বিয়ে দিবো না হুট করে বাবাও রেগে গিয়ে আমাকে বললো,

— তোর কি রুচি বলে কিছু নেই? শুধু ফর্সা হলেই কি মানুষ সুন্দর হয়। এই মেয়ে আমার একদম পছন্দ হয় নি বাবার কথা শুনে শ্রাবণীর মা শ্রাবণীকে বললো,

~ছেলে যেমন তেমন ছেলের বাবা আরো বেশি খারাপ। এক নাম্বারের ধোঁকাবাজ আর অপদার্থ। বাবা আমাকে বললো,

— মেয়ে যেমন তেমন মেয়ের মা এক নাম্বারের বদরাগী আর একরোখা

বাবা আর শ্রাবণীর মা এমন ঝগড়া করছিলো যে আমাদের কিছু বলতেই দিচ্ছিলো না। অবস্থা যখন বেশি খারাপ তখন আমিই টানতে টানতে বাবাকে বাসায় নিয়ে আসলাম রাত ২ঃ১১ বাজে। বাবা তো এত রাত কখনো জেগে থাকে না। রুমের ভিতর উঁকি মেরে দেখি বাবা বসে আছে। আমি বাবার পাশে যেতেই বাবা চোখের চশমা খুলে একটা সাদাকালো ছবি আমার হাতে দিয়ে বললো,

-দেখতো মহিলাটাকে চিনতে পারিস কি না? আমি ছবিটা দেখে অবাক হয়ে বললাম,

— এটা তো শ্রাবণীর আম্মু রিনা আন্টি বাবা বললো,

-আমি তখন ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩য় বর্ষের ছাত্র। নবীন বরণ অনুষ্ঠানের দিন দেখি একটা মেয়ে কলা পাতা রঙের শাড়ি পরেছে আর চুল লম্বা করে বেণী করা। প্রথম দেখেই মেয়েটাকে ভালো লেগে যায়। তারপর টুকটাক কথা বলা আর একটা সময় দুই জন দুই জনকে ভালোবেসে ফেলা। আমাদের সময় প্রেম ভালোবাসাটাকে পরিবার কখনো মেনে নিতো না। তাছাড়া আজকালদের বাবারা সন্তানদের সাথে যেমন বন্ধুর মত মিশে তখন এমন ছিলো না। তখন ছেলে মেয়েরা বাবাদেরকে বাঘের মত ভয় পেতো। কিন্তু মেয়েটি ছিলো অন্য রকম। খুব একরোখা টাইপের। ও ওর বাবার মুখের উপর বলেছিলো ও আমাকেই বিয়ে করবে কিন্তু আমার তখন সাহস হয় নি বাবার বিরুদ্ধে কিছু করার। অতঃপর আমার ভালোবাসার মৃত্যু হয়।সেই মেয়েটি হলো আজকের শ্রাবণীর আম্মু….

আমি চাই না আমার মত তোর ভালোবাসার মৃত্যু হোক। কারণ মৃত ভালোবাসা বয়ে বেড়ানো কতটা কষ্টের সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। তুই শ্রাবণীকে নিয়ে পালিয়ে যা। একদম বিয়ে করে ২ মাস সংসার করে তারপর আসবি আজকেও রিনা কলাপাতা রঙের শাড়ির সাথে চুল বেণী করেছে। তবে আগের মত দীঘল কালো চুল না কাঁচা পাকা চুল। ছাদের কার্ণিশ ধরে দূরে তাকিয়ে আছে রিনা। হামিদ রিনার পাশে যেতেই রিনা বললো,

~ ছেলেকে বলেছো আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যেতে? অথচ একসময় আমিও তোমার সাথে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আমি একটা মেয়ে হয়ে সারারাত স্টেশনে বসে পার করেছিলাম তোমার অপেক্ষায়। অথচ তুমি এলে না হামিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

— আমি সেদিন এসেছিলাম স্টেশনে তবে তোমায় নিয়ে পালিয়ে যেতে নয় তোমায় পাহারা দিতে। সেই সময় তোমায় নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সাহস আমার ছিলো না কিন্তু আজ আমি আমার ছেলের ভালোবাসার মানুষকে পেতে ঠিকিই ছেলের মনে সাহস যোগাতে পেরেছি। হতে পারে আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পায় নি কিন্তু আজও আমার ভালোবাসা মিশে আছে একটা কলা পাতা রঙের শাড়িতে…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত