আমার সোনার বাংলা

আমার সোনার বাংলা

১৯৭১ সন, আহাদ সাহেব যাচ্ছেন কিশোরগঞ্জের জেলার এক বিখ্যাত গ্রামে । সেই গ্রামের হাবিলিতে আছেন তার নবপরিণীতা কিশোরী স্ত্রী রুনু ।

আহাদ সাহেবের কাঁধে হোল্ডঅল । এক হাতে সুটকেস আর একহাতে ফলের ঝুড়ি । প্রথম শ্বশুরবাড়ি যাওয়া বলে কথা ! এক হাঁড়ি মুক্তাগাছার মণ্ডাও নিতে হবে। কিশোরগঞ্জেও না-কি মণ্ডা তৈরি হয়। মিষ্টি, রুনুর প্রিয় খাবার। যে করেই হোক স্ত্রীর মন পেতেই হবে । রাত দুটোয় মেইল ট্রেন এসে কিশোরগঞ্জ থামলো । এবার অনেকটা পথ যেতে হবে নৌকায় । উনি ষ্টেশনে নামা মাত্র উনার ব্যাগ আর হোল্ডঅল কেউ একজন ছিনিয়ে নিলো । আর একজন নিলো ঝুড়ি । উনি অবাক হয়ে তাকাতেই দেখলেন, পাশের ধুতি পড়া যুবক টি হাসছে ।

–অনেক দিন পর এলেন দুলাভাই ।

আহাদ সাহেব যুবকটিকে চিনলেন । এই যুবক উনার বর যাত্রার সময় সাথে ছিলো । যুবকটি ঢাকা কলেজে পড়ে, নাম ‘অসীম পাল । ‘

— ও তাহলে তোমরাই আমার সব ছিনিয়ে নিলে?

আর আমি ভাবলাম কে না কে !যুবক হাসতে হাসতে বললো। সেই রাত নয়টা থেকে আপনাকে দেখে দেখে রাখছি। এখন চলুন যাওয়া যাক, আসুন নৌকা তৈরি আছে ।

— সে কী! সব আয়োজন তাহলে আগেই শেষ?

— হবেনা ! আপনি এ দেশের নতুন জামাই । এটুকু সম্মান না করলে ময়মনসিংহ জেলার ইজ্জত থাকে না।

আহাদ সাহেব হৃষ্ট চিত্তে নৌকায় উঠলেন । ভাটির টানে নৌকা এগিয়ে চললো । এই শীতের বাতাসের মাঝেও নৌকায় ভালো ঘুম হলো । নৌকা যখন হাবিলির ঘাটে, তখন পুরোপুরি সকাল । সকালের সোনা রোদ ঘাটের শ্যাওলা পানির উপরে নিশ্চিন্তে খেলা করছে। বেশ কিছু ছেলে মেয়ে ঘাটে দাঁড়িয়ে আছে। নৌকা ঘাটে ভেরার আগেই তারা চিৎকার জুড়ে দিল, ‘ দামান আইছে, দামান আইছে গো। ‘ আশেপাশের বাড়ি থেকে বৌ ঝি’রা উঁকি ঝুকি দিচ্ছে । জমিদার বাড়ির জামাই এসেছে । উনি না-কি আবার পুলিশ অফিসার । কেউ একজন বলে উঠলো। ‘কত্ত লাম্বা আমরাই জামাই, বাক্কা ব্যাডার চাক্কা।’

বড় চাচা শ্বশুর হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলেন। বাড়ির কামলা বড় মোরগটা ধরার জন্য ছোটাছুটি শুরু করে দিল। এই শীতেও দুই রকমের শরবত এলো। আহাদ সাহেব শরবত খেতে গিয়ে হেসে ফেললেন। একটা শরবতের গ্লাসে মরিচের বিঁচি দেখা যাচ্ছে। তাড়াহুড়ায় বিঁচি ফেলার কথা হয়তো মনে আসেনি। উনি হাসতে হাসতে দ্বিতীয় গ্লাসের শরবত মুখে দিলেন। সেই সকালেই অনেক পিঠেপুলি দিয়ে নাস্তা তো হলো । তবে আট বছর বয়সী শালিকার কাছে খবর পাওয়া গেল, বর আসার সংবাদ পেয়ে উনার কিশোরী স্ত্রী পালিয়েছে।

সন্ধার পর পাল পাড়ার শোভা’দি* রুনুকে ধরে নিয়ে এলো । সে নাকি কাটাদীঘীর পাড়ে জঙ্গলের মাঝে একা একা বসে ছিল । সন্ধায় ভয় লাগছিলো বলে বের হয়ে আসতেই শোভার* চোখে পড়ে । তারপর অনেক অনুরোধ করে শোভা তাকে বাড়িতে ধরে নিয়ে এসেছে । শোভা রুনুর কাছে দিব্বি কেটেছে, রুনুর বর যদি ওকে সাথে নিয়ে ঢাকা যায়। তাহলে শোভা অবশ্যই ওদের সাথে ঢাকা যাবে।

রাতে খাশি জবেহ হয়েছে। আফরানি পোলাউ, মোরগ মুসাল্লাম, বিলের মাছ ভাজি, সাথে খাশির রেজালা। আজ অনেক খাওয়া হয়ে গিয়েছে। বিছানায় শুয়ে এপাস ওপাস করছেন আহাদ সাহেব। রুনু আসেনি। অভিমানী রুনু, মিষ্টি রুনু, প্রিয়া রুনু, কোন রুনুর দেখাই এখনো মেলেনি। দেশের যা অবস্থা, এবারই রুনুকে ঢাকায় না নিয়ে যেতে পারলে সমস্যা হবে। সামনে কবে আবার ছুটি মিলবে কে জানে? প্রায় মাঝরাতে শাড়ির খসখস আর চুড়ির রিনঝিন শব্দে আহাদ সাহেব বুঝলো ‘রুনু’ এসেছে । রুনু ঘরে ঢোকা মাত্র কেউ হয়তো বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। তাই ও চাপাচাপি করেও দরজা খুলতে পারছেনা । আহাদ সাহেব সজোরে হেসে দিলেন । তারপর রুনুর হাত ধরে নিয়ে এসে বিছানায় বসালেন । এই ছ’মাসে রুনু আরো সুন্দর হয়েছে ।

— কি খবর রুনু, আমার উপরে তোমার খুব রাগ তাইতো !

— হুম ।

— ঢাকা যাবেনা আমার সাথে ?

— না !

–সে কি! তুমি যাবে না ! আমি ভাবলাম তুমি ঢাকা গেলে, তোমাকে নিয়ে বলাকা সিনেমা হলে একটি সিনেমা দেখবো। রুনু চুপ করে থাকে। আহাদ সাহেব আবার বলে। জানো! ঢাকায় একটা মস্ত পার্ক আছে। সবাই বিকেলে বেড়াতে যায় । ভেবেছিলাম একদিন সেই রমনা পার্কে বেড়াতে যাবো । তা তুমি যখন যেতে চাও না। কী আর করা ! আমারো যাওয়া হবে না।

‘- আপনি একা যান। আমি বাড়ি ছেড়ে কোত্থাও যেতে চাই না।

— আচ্ছা, ঠিক আছে। বলধা গার্ডেনে নতুন অনেক ফুলের গাছ আছে । সেখানে নীল পদ্ম আছে। কী যে সুন্দর !

— কাঁঠালচাঁপা গাছ আছে ?

— হুম, আছেই তো !

— আর ঢাকায় গেলে রাজ্জাক কবরী কে দেখা যায়?

— খুব যায় । তুমি যাবে ঢাকা ?

— না !

— আচ্ছা তুমি কুলফি খেয়েছো কখনো ?

— না তো, আপনি খেয়েছেন ?

— অনেকবার খেয়েছি, লালবাগকেল্লার কাছে, মৌচাক মার্কেটের সামনে। তুমি যাবে?

— আপনার সাথে গেলে কী হয় ?

— গেলে ঘর হয়, তোমার আমার খোকাখুকু হয় ।

— যাহ, আপনি না খুব বাজে !

— হুম, তাতো একটু আছিই, জানো তোমার জন্য এবার কী এনেছি?

— কি !

— রেডিও দেখো কী সুন্দর রেডিও !

— ও আল্লাহ রেডিও! এটা দিয়ে গান শোনা যায় ?

— হুম যায়, সব সময় শোনা যায় । শুধু মাঝেমাঝে ব্যাটারি ভরতে হবে ।

বলেই আহাদ সাহেব রেডিও চালু করলেন । ‘ফেরদৌসি বেগম’ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের ছাত্রীর কিন্নর কন্ঠে গান বেজে ওঠে । ‘ও কী গাড়িয়াল ভাই, কতো রবো আমি পন্থের দিকে চাহিয়া রে।’ দরজায় যারা এতক্ষণ আড়ি পেতে ছিল, এবার তারা ঘুমাতে যায় । যাক মিল হলো তাহলে!

রুনু ঢাকায় এসে পাকা গৃহিণী । সারাক্ষণ ঘর গুছায় । প্রায়ই উঁচু করে খোপা বেঁধে স্বামীর সাথে সিনেমা দেখতে যায় । নতুন শাড়ি পড়তে শেখা এই সুন্দরী কিশোরীকে পাশে নিয়ে রিক্সায় ঘুরতে আহাদ সাহেবের ভারী ভালো লাগে।

গোণা বেতনের চাকরি, তবু শখ করে স্ত্রীকে একটা সেলাই মেশিন কিনে দেন। রুনু রাত জেগে সেলাই করে চেয়ারের ঢাকনি, বিছানার চাদর। আহাদ সাহেব মুগ্ধ চোখে দেখেন। আরো অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করে তার রুনুর জন্য। সাধ আছে, কিন্তু সাধ্য যে বড্ড কম।

২৫ মার্চ রাতে আহাদ সাহেবের সব স্বপ্ন, সাধ আগুনের হুল্কা হয়ে উড়তে থাকে । ভারী কামানের শব্দে কানে তালা লাগার জোগাড় । রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সেদিন যে কজন পুলিশ ডিউটিতে ছিলো আহাদ সাহেব তাদের একজন । উনারা প্রথমে অপেক্ষা করেন কোনো নির্দেশনার জন্য । পরে , যার যার অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নামেন । এই দেশের অসহায় ঘুমন্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ।

উনার সাথে আরো বেশ কয়েকজন পুলিশ ছিলেন । তপন কর্মকার, আলি হোসেন, অজয় সাহা । ভারী ট্যাংকের সামনে উনাদের সামান্য গাদা বন্দুক বেশিক্ষণ টিকে থাকেনি । কিছুক্ষণ এর মাঝেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন । অজয় সাহা আর আলি হোসেন ।

দুজনেই এই দেশের মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেদের প্রাণ বিলিয়ে দেন । উনারা যেমন সেদিন বেছে আলাদা করেননি কে হিন্দু কে মুসলিম, তেমনি মৃত্যুও তাদের আলাদা করে আসেনি। সকাল হতেই কারফিউ । গুরতর আহত হয়েছেন আহাদ সাহেব । উনাকে পাঁজাকোলা করে কারফিউয়ের মাঝেই ছোটাছুটি করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন তপন কর্মকার । আহাদ সাহেবের হিন্দু সহকর্মী।

এদিকে আহাদ সাহেবের শাহজানপুরের বাসায় তখন আর এক তাণ্ডব । পুরো রাত কাজের ছেলেটাকে নিয়ে ভয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে ছিলো রুনু । সকালে কাজের ছেলেটা সেই যে বাইরে গেলো, আর ফিরলো না। রুনু প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ আর আগুন দেখে প্রথমে জ্ঞান হারিয়েছিল। দশ বছরের কাজের ছেলেটাই চোখে মুখে পানি দিয়ে রুনুর জ্ঞান ফিরিয়েছে। তারপর থেকেই সে খাটের নিচে লুকিয়ে আছে। বারবার ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে। প্রথম প্রথম খুব কাঁদছিল এখন ভয়ে আর কান্নাও আসছে না।

২৬ মার্চ বিকেলে একটি ছেলের সাথে দেখা হোলো আহাদ সাহেবের । উনি ছেলেটিকে দেখে কেঁদে ফেললেন

— অসীম….! অসীম তার দুই বন্ধুকে নিয়ে লুকিয়ে ডাক্তারখানায় এসেছে । তারাও গুরুতর আহত । দেখেই বোঝা যাচ্ছে আহত দুজনেই ছাত্র । উনি শুধু কোনমতে একবার বললেন ।

— অসীম আমি তোমার দুলাভাই । অসীম চমকে উঠে বললো–সে-কী দুলাভাই আপনি এখানে?

— অসীম কাল রাতে আমি আহত হয়েছি । পায়ে গুলি লেগেছে। অসীম ….. রুনু বাসায় একা ।

–বলেন কী দুলাভাই! আপনি ঠিকানা দিন। আমি এখুনি খোঁজ নিচ্ছি। এখানে আমার লোক আছে । ওরাই আপনাকে দেখবে ।

মাথার উপরে ভগবান আছেন । আমি কথা দিচ্ছি আমার বোন রুনুকে আমি কিশোরগঞ্জ পৌঁছে দেবো। ২৬ মার্চ রাতে রুনু পুরো একা। সারাদিন ও ঘর ছেড়ে বের হয়নি। কাজের ছেলেটি বাইরের দরজায় তালা দিয়ে গিয়েছিল । তাই রুমের বাইরে বের হলেও কোন উপায় নেই কোথাও যাওয়ার ।

২৭ মার্চ আহাদ সাহেবের বাসার সামনে টুপি মাথায় তালেবুল মাদ্রাসার এক ছাত্রকে দেখা যায় । সে আস্তে ডাকে-

— রুনু রুনু ? দরজা খোলো । রুনু ভয়ে প্রথমে জবাব দেয়না । একটু পর আবার শোনা যায় ।

— ইকটু খুলবাইন আফা, ইকটু ফানি কাইতাম ।

রুনু ভাষা শুনে খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আসে। জানালা দিয়ে ভয়ে ভয়ে উঁকি দিয়ে দেখে অসীম দাঁড়িয়ে । সে ভয়ে ভয়ে বলে — আ আমার কাছে চাবি নেই অসীম দাদা। বলতে গিয়ে রুনুর কান্না এসে যায়। পুরোনো টিপ তালা মোচড় দিয়ে ভেঙ্গে ঘরে ঢোকে অসীম ।

ওকে দেখে এবারে ডুকরে কেঁদে ওঠে রুনু । ‘অসীম দাদা সে কই !’ রুনুর হাহাকার ভরা কান্নায় অসীমের চোখেও জল আসে। কোনমতে বলে — দেরি করিস না। শুধু একটা হাত ব্যাগে যা পারিস গুছিয়ে নে। এখুনি রওনা হতে হবে। আর এই নে দুলাভাইয়ের চিঠি । ” প্রিয় রুনু অসীমের সাথে কিশোরগঞ্জ চলে যেও । আমি ভালো আছি, ছুটি পেলেই তোমার কাছে যাবো।ইতি,আহাদ ।”

ফ্লেক সিগেরেটের প্যাকেট ছিঁড়ে তাতে চিঠিটি লিখা। রুনুর বুক ভেঙ্গে যেতে থাকে। মানুষটাকে ঢাকায় ফেলে সে বাড়ি যায় কী করে! অসীম সান্তনা দেয়। অফিস ছুটি হলেই দুলাভাই চলে আসবে। তুই ভাবিস না।

রুনু দ্রুত একটা সুতি শাড়ি ওর হাত ব্যাগে ভরে নেয় । শাড়ির ভাঁজে গুঁজে নেয় গহনা। তারপর বোরকা পরে অসীমের সাথে রিক্সায় ওঠে। সময় খুব কম। যে কোন মুহূর্তে আবার কারফিউ শুরু হবে।

ঢাকা শহর যেন আজ মৃতের শহর। রাস্তায় একটা নেড়ি কুকুর ও নেই। হঠাৎ দু একটা রিক্সা যাত্রী নিয়ে প্রাণপণে ছুটছে। যেন ভূতে তাড়া করেছে তাদের।

রাস্তায় একটা নড়বড়ে বাস। যাবে গাজিপুর পর্যন্ত। তাতেই রাজি। হুরমুর করে ওরা বাসে ওঠে। বাসের জানালায় মাথা রেখে কাঁদে রুনু। সুখের ঘর আজ কচুরিপানার সংসার হয়ে গেল। কোনদিন কী আর ও ভাসতে ভাসতে আহাদের কাছে ফিরতে পারবে?

*প্রথমে বাস,পরে ট্রেন, তারপর বেশ কয়েক মাইল হেঁটে অসীম রুনুকে তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয় । রাস্তায় বিস্তর চেকিং। নানান প্রতিকূল অবস্থা। পরের ঘর থেকে চেয়ে এনে খাওয়ানো । হাঁটতে না পারলে কোন বাড়িতে একটু বিশ্রামের ব্যবস্থা করা । অশেষ নিষ্ঠার সাথে যে পালন করেছে, সেই ছেলেটির নাম “সঞ্জয় পাল অসীম।” তার বোনের নাম ‘শোভা।’

‘সঞ্জয় পাল অসীম’ একজন বাঙালি ভাইয়ের নাম । একটি দেশের গর্বের নাম । ইতিহাসের পাতায় তার নাম লেখা আছে কী না আমি জানি না । তবে সেই ফ্লেক সিগেরেটের খাপে লেখা চিঠিটি আজো আছে । আহাদ সাহেব আমার নানা। রুনু নামের সেই কিশোরীর নাতনি আমি ।

আমরা যতোদিন বাঁচবো ততদিন মনের গহীনে বাঁচিয়ে রাখবো অসীম’কে শোভা’দি’র মতন নারীকে । এই দেশে জন্মেছি । অন্যকে সন্মান দিয়ে অন্তত দেশের মাণ রাখি । মানবতার জয় হোক।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত