মাত্র কলেজে উঠেছি।আমার ফ্রেন্ড গুলার মধ্য মোটামুটি সবাই কমবেশি টিউশনি করায়। কখনোই ভাবি নি আমিও টিউশন করাবো।কিন্ত সবার দেখি দেখি আমিও পড়াইতে চাইলাম,এতে মোটামুটি মাস শেষে ভালো ভাবে পকেট খরচ চালানো যায়।তো সবাই রে বইলা রাখলাম আমার যেন একটা ছোট-খাট টিউশনি ম্যানেজ কইরা দেয়।এক ফ্রেন্ড ম্যানেজ কইরাও দিল।ছোট বাচ্চা,ক্লাস ওয়ান টুর হবে। সে যাই হোক,ফাস্ট টিউশনি করাইতে যাব,আগের কোনো এক্সপ্রিয়েন্স নাই।নিজেকে ভাল ভাবে মাঞ্জা মাইরা ছকছকা বানাইলাম।বন্ধুর সাথে গেলাম পরিচয় পর্ব সেরে নিতে।বন্ধুগণ আমারে অনেক ভালো ভালো বুদ্ধি দিয়া দিলো টিউশন ট্যাকনিক যেটারে বলে।
এই যেমন ৪০মিনিট করে পড়াবো,একটা একটা করে বিষয় একদিন একদিন করে পড়াইব,অল্প অল্প পড়া দেওয়া নেওয়া করব,এতে স্টুডেন্ট খুব খুশি আর নিজেরও লাভ।মাঝে মধ্য পানি পান করতে চাইলে নাকি আবার নাছতা আসার সম্ভাবনাও বেশি।সবচেয়ে বড় কথা বাচ্চা স্টুডেন্ট যেহেতু তো এদের বেশি প্রশয় দেওয়া যাইবে নাহ।আমি শুধু হুহা বলে মাথা নেড়ে বন্ধুদের বুদ্ধি নিচ্ছি। প্রথম স্টুডেন্ট এর বাসায় বসার ঘড়ে নিয়ে বসালো, এই বাচ্চা নাকি সেই লেভেলের টাউট।পড়তে চায় না। ভাল কথা,অনেক টাইম লাগবে এরে পড়াইতে।বাচ্চার মায়ের আদেশ,না পড়িলে ভয় দেখানো যাইবে না। মারার তো প্রশ্নই আসে না।আমিও বললাম,আরে আন্টি কি বলেন,এত সুন্দর বাচ্চারে কেমনে মারুম।
আদর দিয়ে বুঝাইয়া পড়ামু যদিও আমার ছোট বোন বাসায় গেলে মাঝে মাঝে আমার কাছে পড়তে বসলে দুইগাল লাল হইলে পড়া শেষ কইরা উঠে,থাক সেই কাজ কি আর এইখানে করান যায়। আমারে বসতে বইলা আন্টি গেলেন তাহার বাচ্চারে ডেকে আনতে।যেহেতু প্রথম টিউশনি,আগে কোনো দিন কারো বাসায় যাইয়া এইরাম পড়াইও নাই,বসে আমার পা কাপাকাপি শুরু হইয়া গেছে।এরি মধ্য লাফাইতে লাফাইতে আমার স্টুডেন্ট এসে গেছে। আন্টি বাচ্চারে আমার কাছে বুঝাইয়া দিয়া চইলা গেলেন।স্টুডেন্ট আমার কাছে এসে আমার নাকে টান দিয়া কয়,কই পড়েন? এই মেয়ে(আমার স্টুডেন্ট ছাত্রী) বলে কি! কোথায় আমি জানতে চাইবো তা না,সে আমার উল্টা ইন্টার্ভিউ নেওয়া শুরু কইরা দিছে।আমিও নতুন টিচার।
সুবোধ বালকের মত উত্তর দিতাছি,,বাচ্চার মা আবার আসিলেন,,বন্ধুগণ আমারে যে বুদ্ধি দিয়াছে সব বিফলে গেলো,,,ছাত্রীরে সপ্তাহে ৫দিন পড়াইতে হবে,,ক্লাসের সব পড়া কমপ্লিট কইরা তবেই ছুটি।এতে যদি রাত পেরিয়ে সকাল হয়েও যায় তবুও পড়াইতে হইবে। আন্টিরে কইলাম ঠিক আছে আন্টি,,,আমার মুখ থেকে আন্টি বলা শেষ হয়নি ছাত্রী আমার নাকে হাত বুলাইয়া হোহোহো কইরা সেই লেভেলের হাসি।আমি পুরাই তাজ্জব।পরে আন্টিই বইলা দিলো,তুমি আমারে আপু ডাইকো,,,মাথা নেরে হ্যা বললাম। আপুরে কইলাম,আপু আমার ছোট বোনতো আপনার মেয়ের সমবয়সী তাই ভাবছিলাম,,,ছাত্রী আবার হেসে উঠলো।আমি আর কিছু কইলাম না।
আন্টি থুক্কু আপু চলে গেল,, ছাত্রীরে বললাম কি কি পড়ছো এতদিনে? ছাত্রী বলে,আপ্নেরে ক্যান বলব?আপনি আজ থেকে আমারে পড়ানোর দায়িত্ব নিছেন,,ফাস্ট টু লাস্ট পড়াইবেন।স্টুডেন্টের কথা শুইনা আমি পুরা বোকা সেজে গেলাম।হুম বইলা পড়ানো শুরু করলাম।আমার এমন কোন দিন নাই স্টুডেন্ট কে পড়াইতে গেছি অথচ স্টুডেন্ট আমারে না পচাইয়া ছারে নাই।একেক দিনের কথা একেক রকম।পড়াইতে বসলে ৩০মিমিট গল্প করা লাগছে,,,এই ৩০মিনিটে জীবন ত্যানা ত্যানা করে ছেরে দিছে।আর পড়ানোর সময় তো আছেই।কিছু লিখতে দিলাম,সেইটা আগে আমারে লিখতে হইছে,তারপরে ছাত্রী লিখছে।যদি বলি আজকে এইটা পড়াবো তো আমারে আগে মুখস্থ করে নিছে তারপরে নিজে হোম ওয়ার্ক হিসাবে নিছে।
ছোট বাচ্ছা,বাট দুষ্টমিতে সেই পাকনা।টেবিলের নিচ দিয়ে আমার পায়ের সাথে ৩য় মহাযুদ্ধ চালাইতো।আমি তো আর কিছু বলতে পারতাম নাহ।বললেই আম্মু কইরা চিল্লানি দিত।আর আমার নাকের কথা, সেতো আর নাই বল্লাম।খাতায় লিখতে দিলে আগে আমার দুইহাত খাতা হিসাবে ব্যবহার করত।তারপর তো কলম দিয়া গুঁতাগুঁতি কইরা কত যে হাত কানা করে দিছে হিসাব নাই।আবার আমার জন্য নাশতা আনলে আগে আমারে খাওয়াইয়া ছাড়তো।তারপর পড়ত।অবশ্য আপুরে আপু ডাকলেও আমি স্টুডেন্ট রে বোনের মতই দেখতাম।আমার বোনের সাথে যেমন ফাজলামি চলত ঠিক সেইরকম।
শুধু স্টুডেন্ট এর গাল দুইটা লাল করতে পারিনি।তবে আমি খুব ইনজয় করতাম। পড়া না পারলে রাগ দেখালে আমাক হাসানোর সেকি চেষ্টা টাই নাহ করত।ভয় বলতে কিছু ছিল না। একবার বর্ষাকালে স্টুডেন্ট এর বাসার সামনে পিছলিয়ে পড়ে গেছিলাম।সেইদিন আমার স্টুডেন্ট এর যে কি হাসি তার দুইদিন পরেও সেই বিষয়ে আমারে নিয়ে হাসতে হাসতে পেট ফুলাইয়া ফেলত। পড়াশোনা মোটামুটি ভালোই করত।ভালোই রেজাল্টও ছিল।টিউশনি টা বাদ দিতে হইছিলো কিছু সমস্যার কারনে।
অনেক দিন আর স্টুডেন্ট কে পড়ানো হয়নি। দেখাও হয়নি,কথাও হয়নি।গতকাল হঠাত করেই স্টুডেন্টের সাথে দেখা হইতেই স্যার স্যার বলে সে কি জোরে চিল্লানি।দেখে খুব খুশি মনে হয়েছিলো।কাছে গিয়ে কথা বললাম।আমারো খুব ভালো লেগেছে এতদিন পর আমার পিচ্চি স্টুডেন্ট টা কে দেখে।তারপর থেকেই আগের কথা গুলো মনে পরছে আর আমি হাসতাছি।সেই হাসিখুশি মেয়েটা,সন্ধ্যার সেই ফাজলামো শাষন ময় দিনগুলা। খুব মিস করছি রে তোকে পিচ্চি।ভালো করে পড়াশোনা করিস আর সব সময় এমন হাসিখুশি থাকিস।আমি চাই তুই আরো অনেক বড় হ।আর হঠাত এভাবে দেখা হলে আমাকে স্যার স্যার বলে চিল্লাইয়া আমার কাছে ছুটে আসিস।খুব ভালো লাগবে,,