ভার্সিটির ছাএ

ভার্সিটির ছাএ

রিকশা নিয়ে দাড়িয়ে আছি রাস্তায় এমন সময় দুইটা ছেলে ডাক দিলো এই মামা ভার্সটি যাবেন

আমিঃহ্যা যাব।ওঠেন

-ওকে মামা চলেন কিছুক্ষণ পর জানতে পেলাম একজনের নাম অনি আর একজনের নাম রানানা

অনিঃদোস্ত আজ ভার্সিটির ১ম দিন। খুব সুন্দর দেখে মেয়ে পটাতে হবে

রানাঃঠিক বলছিস রে গ্রামে থাকতে থাকতে গ্রামের মেয়ে দেখে বোর হয়ে গেছি

অনিঃঠিক আজ যে করেই হোক মেয়ে পটাতেই হবে

এসব কথা বলতে বলতে ভার্সিটি চলে এসেছি তাদের নামিয়ে দিয়ে চলে আসলাম। আমারো আজ ভার্সিটির ১ম দিন।কিন্তু না আজ আমি যাবনা।

আজ শুধু শুনবো ১ম দিন নিয়ে কার মনের ভাব কিরকম রিকসায় উঠেই বেশির ভাগ লোক এসব নিয়ে কথা বলে তাই এগুলো শোনার জন্যই রিকসা কে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে আমার কাজটাই হচ্ছে সকলের মনোভাব আর কাজকে সকলের সামনে তুলে ধরা জানিনা কতটুকু পাববো তবুও চেষ্টা করবো যখন আমি ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষ পড়ি তখন আমার গ্রামের এক কৃষক চাচা অাত্মহত্যা করেন তার ছেলের জন্য তিনি ছেলেকে পড়ানোর জন্য সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছিলেন কিন্তু তার ছেলে পায়নি অনার্স শেষ করতে তার আগেই পাগল হয়ে আত্মহত্যা করে যাই হোক সে গল্প আর একদিন করবো এখন গল্পে ফিরা যাক আমি সেদিন থেকে শপথ নিয়েছি এইসব ছেলে ও পেয়েকে শুধরে দিব আমি তাদের ভুল পথ থেকে সোজা পথে নিয়ে আসব সরি এখনো পরিচয় দেওয়া হয়নি আমি ইমরান অনার্স প্রথম বর্ষ বাবা ব্যাবসা করে ভাবছেন রিকসা চালাচ্ছি কি জন্য একমাত্র রিকশায়ালারাই সকল প্রকার মানুষের সাথে মিশতে পারে তাই আমার এ পদক্ষেপ। তো গল্পে ফিরা যাক বাজারে আসতেই এক মেয়ে ডাক দিলো

–ভাইয়া ভার্সিটি যাব

আমিঃওকে ওঠেন।

তারপর মেয়ে টাকে নামিয়ে দিলাম পুরা সকাল মিলে এরকম বেশ কয়েকজনকে ভার্সিটি পৌছায় দিলাম তাদের বেশির ভাগ মানুষের মনোভাব এরকম ছিলো যে তারা এবার থেকে চুটিয়ে প্রেম করবে তো এভাবেই প্রথম দিন শেষ পরের দিন ভার্সটি গেলাম আমার ক্লাসে প্রবেশ করলাম স্যার ও ছেলে এসেছে যারা আজ নতুন স্যার তাদের পরিচয় নিচ্ছে আমিও আমার পরিচয় দিলাম

স্যারঃতোমার নাম তাহলে ইমরান

আমিঃজি স্যার

স্যারঃকোথায় যেন শুনেছি

আমিঃকি জানি

স্যারঃআচ্ছা তুমি কি ১ম হইছিলা

আমিঃহুম স্যার

স্যারঃগুড বস

দেখলাম আগের দিনের রিকশায় চড়া মেয়েটিও আমার রুমে আর সে তো পুরাই শখড হয়তো ভাবতেছে একজন রিকশা চালক কিভাবে ভার্সিটি পড়তে পারে তাও আবারর ১ম না এর ব্যাপারে আমাকে জানতেই হবে। কে এই ইমরান কি তার পরিচয় ক্লাস শেষ করে বাসার দিকে যাচ্ছি এমন সময় মেয়েটি ডাক দিলো

মেয়েটিঃএই যে শুনছেন

আমিঃজি বলুন

মেয়েটিঃআমি সাদিয়া আপনি

আমিঃইমরান

সাদিয়াঃআপনি কি আসলেই রিকশাচালক

আমিঃকি মনে হয় আমাক দেখে

সাদিয়াঃমনে হয়না আপনি রিকশা চালান

আমিঃতাই

সাদিয়াঃআমরা কি বন্ধু হতে পারি

আমিঃএকজন রিকশা চালকের নাথে বন্ধুত্ব করবেন।

সাদিয়াঃরিকশাচালকরা কি মানুষ না।

আমিঃহুম মানুষ তো না।পথে ঘাটে যে পারে সেই মারে খারাপ কথা শোনায় মানুষ হলে কি এসব হতো

সাদিয়াঃযারা বলে তারাই অমানুষ

আমিঃহয়তো হ্যা হয়তোবা নাঃ

সাদিয়াঃবন্ধু হবেন না

আমিঃওকে এখন আমি যাই রিকশা নিয়ে যেতে হবে আবার

সাদিয়াঃওকে।

এভাবেই চলে যায় ২ দিন। ৩য় দিন ভার্সিটিতে দেখতে পেলাম যে এক ভাই সুইসাইড করার চেষ্টা করছে কিন্তু যে দড়ি দিয়ে ফাসি দিয়ে পড়তে চেয়েছিল সেই দড়ি ছিড়েই মাটিতে পড়ে কমরে ব্যাথা পেয়েছে(হাসবেন না কেউ) হায়রে মানুষ এদিকে ছেলে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছে অন্যদিকে তার বাবা ভাবতেছে এমাসে ছেলেকে কিভাবে টাকা পাঠাবে তার মায়ের যে ভিশন জ্বর ডাক্তার ডেখাতে হবে নাহলে কিছু একটা হয়ে যেতে পারে তার মা কে বলাতে তার মা বললো আমাকে ডাক্তার দেখানো লাগবেনা খোকাকে টাকা পাঠিয়ে দেন চাকুরি করলে সে আমাকে ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে তার একমাত্র ছোট ভাইয়ের ধারনা তার ভাই চাকুরি করে টাকা সাইকেল কিনে দিবে এত মানুষের আশা আকাঙ্খা শেষ করে সেই ছেলে প্রেমে ব্যার্থ হয়ে মরতে গেছিলো যে মা বাবা ভাই তার জন্য দিনের পর দিন ডাল ভাত খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতেছে আর সে কিনা তো সে পর্যায়ে বড় ভাই মৃত্যুর হাত থেকে বেচে যায় আর প্রেমে না জরিয়ে মাবাবা ভাইয়ের স্বপ্ন পূড়ন করতে যুদ্ধে নামে আমার মিশনটা হচ্ছে এই সব ছেলেদের জন্য যারা মা বাবার কষ্টের টাকা মেয়েদের পিছনে উরিয়ে জীবনটা শেষ করে দেয় |

সাদিয়াঃহেলো ইমরান।কোথায় তুমি

আমিঃএইতো বাসায়

সাদিয়াঃভার্সিটিতে আসো তারাতাড়ি

আমিঃনা আমার কাজ আছে যেতে পাবোনা এখন বলেই কল কেটে দিলাম রিকসা নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম আজ রিকসায় নাইম নামের আমার ব্যাচের এক ছেলে উঠেছে। আমি তাকে চিনলেও সে আমাকে চেনে না। তো হঠাৎ সে তার বাবাকে ফোন দিয়ে বললো বাবা আমি এ মাসে পরিক্ষা আছে ৩০০০ টাকা লাগবে আমি তো রিতিমত অবাক পরে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম যে কাল তার গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিন এজন্য টাকা নিবে আমি বললাম

আমিঃভাই এ মাসে তো ভার্সিটিতে কোনো পরিক্ষা নেই। তাহলে বাবাকে টাকার কথা বললেন যে

নাঈমঃওই মিয়া কে আপনি হে আপনার রিকসা চালার কাজ আপনি রিকসা চালান আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না আমি কিছু না বলে চুপ করে শুনলাম তার কাছে শুধু এটুকু জানতে চাইলামম তার বাসা কোথায়। সে জবাব দিলো রাজশাহি, সহেবগঙ্জ। তো আমি ওকে নামায় দিয়ে সাদিয়াকে ফোন দিলাম

সাদিয়াঃহুমম বলো কাজ কি শেষ হয়েছে (এতদিনে সাদিয়ার সাথে অনেক ফ্রি হয়ে গেছি। সে জানে আমি কি করতে চলেছি।শুধু আসল পরিচয় টুকু জানেনা।আপনারাও একটু পড়ে জানতে পাবেন আমি কি করতে চলেছি)

আমিঃকাজ তো কেবল শুরু।ক্যামেরা নিয়ে চলে আসো এখনি রাজশাহি যেতে হবে আমি আমার বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম সাদিয়ার সামনে যেতেই

সাদিয়াঃইমরান এত টাকার বাইক তুমি পেলে কোথায়।

আমিঃপরে সব জানতে পাবা এখন সময় নেই চলো

সাদিয়াঃকি তোমার আসল পরিচয় ইমরান আমাক না বললে যাবনা আমি তোমার সাথে

আমিঃওকে চলো যেতে যেতে সব বলছি।

সাদিয়াঃওকে চলো।

আমি সব খুলে বললাম তাকে তারপর আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা নাইমের বাসায়। গিয়ে তো আমি অবাক নাইমের মা বাবা শুধু লবন দিয়ে ভাত খাচ্ছে এখানে তাদের এ অবস্থা অন্য দিকে তাদের ছেলে কাল পার্টি করবে হায়রে ছেলে

আমিঃআসসালামু আলাইকুম চাচা

চাচাঃওয়ালাইকুম আসসালাম কারা তোমরা বাবা

আমিঃচাচা আমরা একটা রিপোর্ট তৈরি করতে চাচ্ছি

চাচাঃকিসের রিপোর্ট

সাদিয়াঃআসলে চাচা ভার্সটিতে এত টাকা লাগে আর সেই টাকা গুলো দিতে আপনার কিরকম কষ্ট হয় তাই আমরা আমাদের ক্যামেরায় ধারণ করতে চাচ্ছি

আমিঃচাচচা কাল যে আপনার ছেলের ৩০০০ টাকা লাগবে সেটা কেমন করে ম্যানেচ করবেন।

চাচাঃকি আর বলবো বাবা

ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে শুনে তার মা সেদিন অনেক খুশি হয়েছিল। আমরা কাজ করে খাই।হঠাৎ কোথায় পাবো ভর্তির ১০ হাজার টাকা ও চান্স পেয়েছে শুনে সেবার ওর মা তার গয়না বিক্রি করে আর আমি দিন রাত কাজ করে সেবারের মত সব সামাল দেই। দেখোনা বাবা হাতের আজ কি অবস্থা হয়েছে। ফোসকা গুলো এখনো যায়নি আজ আবার হঠাৎ করে সে বলল তার নাকি ৩০০০ টাকা লাগবে। বাসায় আছে শুধু ১০০০ টাকা।টাকা লাগবে জন্য আজকের বাজারো করিনি। আজ কালকের বাজার না করলে হয়তো ৫০০ টাকা সেভ হবে ভাবছি সামনের কাঠাল গাছ টা বিক্রি করবো একটাই তো ছেলে সে চাকুরি করলে সব হবে।

আমিঃআর কিছু বলার ভাষা নেই আমার। বাবা এত কষ্ট করতেছে অন্যদিকে তার ছেলে ফূর্তি করতেছে। একবারো কি তাদের সেই মুখটা সামনে ভেসে ওঠেনা। চাচা আমি কি আজকের আর কালকের বাজার টা করে দিতে পারি।

চাচাঃতুমি কেন দিবা বাবা।

সাদিয়াঃ আসলে চাচা আমার খুব ইচ্ছে হয়ছে চাচির হাতের রান্না খাইতে নাইম অনেক গল্প করে চাচিকে নিয়ে

চাচাঃঠিক আছে তোমরা বাজার করো আমি পুকুরে দেখি মাছ পাওয়া যায় কিনা। সেদিনের মত নাইমের বাবাকে ২ দিনের বাজার করে দিয়ে চলে আসি। পরের দিন অনেক কষ্ট করে নাইমের দেখা করি। সেও রিকশার জন্য অপেক্ষা করতেছে।

নাইমঃএই মামা টিইন হোটেল যাবো

আমিঃচলো মামা। আচ্ছা মামা সেখানে কোনো পার্টি আছে নাকি

নাইমঃহ্যা মামা। গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিন

আমিঃমামা আমার না খুব ইচ্ছা এরকম পার্টি দেখা।আমাক নিয়ে যাবেন আপনার সাথে

নাইমঃআজব মানুষ তো আপনি।

আপনকে নিয়ে গেলে আমার মান সম্মান থাকবে আমি আর কিছু বললাম না। সাদিয়াকে ফোন দিয়ে যেটুকু ভিডিও করার যোগ্য ছিল সেটুকু ভিডিও করলাম এভাবে শুধু নাইম না আরো ৮ জনের এরকম কষ্টের গল্পেের ভিডিও সংগ্রহ করি আমি আর সাদিয়া। অনেক হয়েছে তাদের খেলা।তাদের ভুলটা তাদের কে শুধরে দিতে হবে তাই এবারের নবিন বরণ অনুষ্ঠানে তাদেরর এই গল্প গুলো তুলে ধরবো। স্যারের কাছ থেকেও পারমিশন পেয়ে গেছি। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।এদের মাধ্যমমেই আমি অন্য সবাইকে সুধরে দিতে চাই জানিনা কতটুকু সফল হবো প্রেম করতে আমি মানা করছি না তবে প্রেমের নামে বাবা মায়ের টাকায় এরকম বিলাসিতা করা ঠিক না| আজ নবিন বরনের নতুনদের সাথে আমাদের ব্যাচের সকল শিক্ষার্থি ও তাদের মা বাবাকে আনা হয়েছে এখানে এই ৯ জনের গল্পের মধ্যে একজন মা বাবা মারা যাওয়া ছেলের গল্পও আছে| অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে আস্তে আস্তে সকলের বক্তত্য শেষ এখন আমার পালা স্যার আমাকে ডেকে নিয়ে গেলো মঞ্চে অনেকে ভাবতেছে এই রিকশাচালক এখানে কি করছে

স্যারঃতোমরা যারা ভাবতেছো এ একজন রিকশা চালক তাহলে তোমাদের ভুল হবে এ রিকশাচালক হয়েছে তোমাদের শুদ্ধ করার জন্য আজ তোমাদের মধ্যে অনেকের চরিত্র তুলে ধরা হবে। তোমাদের বাবা মা কষ্ট করে তোমাদের টাকা পাঠায় আর তোমরা কিছু অন্য ভাবে নষ্ট করো এসব টাকা ভার্সিটি পড়ো তোমরা দেশের সকল সেরা ছাত্রদের মধ্যে তোমরা আর তোমাদের এই অবস্থা চলো সবাই দেখি ইমরান কি রেডি করছে আমাদের জন্য আর ইমরান হচ্ছে এদেশের নাম করা ব্যাবসায়ি রিপন সাহেবের ছেলে।এ রিকশা চালক না তো ইমরান শুরু করো তুমি শুরু সেই রনির গল্প দিয়ে যার সাথে আমার প্রথম দিন দেখা হয়ছিল। আজ রনি ঠিক এই আছে কিন্তু তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে অনেক কিছুই চলুন রনির মুখেই শুনি তার জীবনের গল্প ।

রনিঃআমি রনি। ছোট বেলা থেকে বাবাই বড় করেন আমায়। বাবার কাছে শুনেছি আমায় পৃথিবীতে আনতে গিয়ে মা এই চলে গেছে এই পৃথিবি থেকে।কখনো ভাবতে পারিনি বাবাও আমাকে এভাবে ছেড়ে যাবে ছোট থেকে পড়াশুনায় ভালো থাকলেও অনেকটা বকে গেছিলাম।সুযোগ পেলেই পার্টি করতাম।তবে প্রেম করার স্বপ্ন টা ভার্সিটিকে ঘিরেই ছিল। ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল ভার্সিটিতে উঠে প্রেম করবো কখনো ভাবিনি এই স্বপ্নটাই আমার জীবনের কাল হয়ে দারাবে। আসলে শুধরে দেওয়ার মতো কেউ ছিলোনাতো।

আমারর বাবা ব্যাবসা করেন। ভালোই চলতো আমাদের দিন। আমার বাবা আমার কথা ভেবেই আর বিয়ে করেনি আমি পড়াশুনায় ভালো থাকায় ভার্সিটিতে চান্স পেতে তেমন কষ্ট হয়নি ভর্তি হয়েই শুরু হয় আমার রঙিন জীবন ভাবতেছিলাম এই জীবনটাই আসলে অনেক রঙিন কিন্তু কখনো এটা ভাবিনি যে বাবার সাথে কাটানো সময় টাই ছিল রঙিন। বাবা ছেলে মিলে কতই না আড্ডা দিয়েছি বাসার ছাদে কত রাতই না বাবাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাইছি। আজকে আবার ইচ্ছা করে বাবাকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমাইতে। কিন্তু এত ডাকি বাবা আর সারা দেয়না আমার ডাকে। বাবা ও বাবা তুমি আমায় শুধরানোর সুযোগ না দিয়েই চলে গেলা আমায় ছেড়ে আমি না তোমার মানিক হই বাবা তোমার মানিক কে ছেড়ে থাকতে পাবা তুমি আসোনা বাবা আমার কাছে।(কেদে কেদে) । এদিকে সকল শিক্ষার্থি স্যার রাও কেদে দিয়েছে বাবাদেরর অনুভূতি এসময় কেমন ছিল তা আমার জানা নেই হয়তে তারাও তাদের ছেলেদের আরালে চোখের জ্বল মুছতেছিলেন।।

আমিঃরনি কিভাবে কি হলো খুলে বলো।

রনিঃহুম বলতেছি। ভর্তি হওয়ার ১ মাস পড় আমার জীবনে চলে আসে দিয়া নামের এক মেয়ে অনেক ভালোই চলছিল আমাদের সম্পর্ক দিয়াও আমাকে যথেষ্ট সময় দিয়েছিল প্রতিদিন ঘুরে বেড়ানো আড্ডা দেওয়া রাত ২ টা ৩ টা পর্যন্ত ফেসবুকে থাকা এভাবেই চলছিল সব কিছু। কিন্তু কখনো ভাবিনি এই সম্পর্ক টা আমাকে আমারর বাবা থেকে দুরে সরিয়ে দিবে দিয়াকে সময় দিতে গিয়ে বাবার সাথে কথা বলা হয়ে উঠতো না বেশি একটা আমি ভুলেই গেছিলাম যে আমি ছাড়া বাবার খোজ নেওয়ার মত কেউ নেই প্রথমের দিকে দিনে ২ একবার কথা হতো কিন্তু তাও ছিল কোনদিন কত টাকা লাগবে সেটা নিয়ে একদিন তো বাবাকে ফোন দিয়ে বললাম

রনিঃহেলো বাবা

বাবাঃহুম বাবা বল।এখন তো তুই অনেক ব্যাস্ত বাবার কথা মনেই পড়েনা।

রনিঃকি করবো পড়ার চাপ অনেক। এই বন্ধুকে ওই বন্ধুকে ফোন দিয়ে নোট নেওয়া আরো কতো কি।

বাবাঃএকটু তো কথা বলতে পাররিস

রনিঃবাদ দাও ওসব।

আমার একাউন্টে ১ লক্ষ টাকা পাঠায় দাওতো। প্রতিদিন টাকা চাইতে ভালো লাগেনা। তুমি টাকা পাঠায় দেও ওখান থেকে নিয়ে খরচ করবো লাগলে

বাবাঃআচ্ছা(একথা বলেই বাবা ফোন কেটে দিলো)

হয়তো বিশ্বাস ছিল যে তার ছেলে আর যাই করুক খারাপ কাজে ব্যায় করবে না কিন্তু তার ধারোনা ছিলো ভুল তার ছেলে যে এর অর্ধেক টাকা মেয়ের পিছোনেই নষ্ট করছে বাবা টাকা পাঠানোর পর আস্তে আস্তে বাবার সাথে কথা বলা কমতে থাকে বাবা যখনে ফোন দেয় ব্যাস্ত পায় হয়তো ভাবে একটু পর আমি ফোন দিবো কিন্তু আমারো আর ফোন দেওয়া হয়না। আসলে যখন কেউ দুরে চলে যায় তখন এ তাদের ভালোবাসা টা বোঝা যায়।

বাবার সাথে এখন সপ্তাহে একবার কথা হয় তাও অল্প কিছুক্ষণ এভাবেই চলছিল দিন অনার্স প্রথম বর্ষ শেষ করে ২য় তে উঠছি তো সকালে ভার্সিটি যাচ্ছি হঠাৎ ডাক্তার ফোন দিয়ে জেনারেল হাসপাতালে যেতে বলবো আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম কি হয়েছে কার বাবার কিছু হয়নিতো উফ আমি আর ভাবতে পাচ্ছিনা ২ ঘন্টা পড়ে হাসপাতালে পৌছালাম। গিয়ে দেখি আমার বাবাকে ওরা সাদা কাপড়ে ঢেকে রেখেছে আর সহ্য করতে পারলাম না আমি আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেছে বাবা ও বাবা কি হয়েছে তোমার তুমি কথা বলছোনা কেন। বাবাগো কথা বলোনা কি বাবা কথা বলবানা আমার সাথে। অনেক আর্তনাত করে কেদেও সেদিন ফিরাতে পারিনি বাবাকে ডাক্তার এসে একটা চিঠি দিলো হাতে তাতে বাবার লেখা ছিল।

বাবাঃরনি জানিস বাবা তোকে আমি ছেড়ে যেতে চাইনি কখনো।

কিছুদিন থেকে শরির টা কিরকম জানি ভার ভার লাগতেছিল রাতে ঘুম হতো না কোনো কাজ ভালো লাগতোনা তোকে অনেক বার বলার জন্য ফোন দিছি কিন্তু পাইনি আমিও এগুলো নরমাল ভেবে চুপ করে ছিলাম। কিন্তু এসবের ৩ মাস পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার বলে আমার ব্লাড ক্যান্সার।আর একদম লাস্ট পর্যায়ে এসেছি জানিস বাবা সেদিন অনেক কেদেছিলাম।আমি আমার নিয়তির কাছে হেরে গেছি বাবা।

আজ ডাক্তার বললো আমার হাতে বেশি সময় নেই।তোকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তাই তোকে আসতে বলছিলাম তোর পড়ার কোনো ক্ষতি হবেনাতো এখানে আসলে আমি চিঠি পড়ে আরো কেদে ফেললাম।আমি মেরে ফেলেছি আমার বাবাকে মেরে ফেলেছি তার স্বপ্ননটাকে বাবা ক্ষমা করে দিও আমায় তুমি।সেদিন যদি একটু সময় দিতাম তোমায় তাহলে আজ এরকম হতোনা আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ইমরান ভাই আমায় সেটা করতে দেয়নি আজ দেখেন সব কিছুই আছে কিন্তু পাশে নেই বাবা বাবাকে দেওয়ার সময় আছে বাবা নেই পাশে এখন বাবার ফোনের জন্য অপেক্ষা করে থাকি কিন্ততু ফোন দেওয়ার মানুষটাই তো আজ নেই আমার কাছে বাবা কেন আমাকে এভাবে ছেড়ে গেলে বাবা একবারো আমার কথা ভাবলেনা তুমি এই ছিল আমার নিয়তি সকলের কাছে অনুরোধ প্লিজ কেউ বাবার কষ্টের টাকা অন্যায় ভাবে নষ্ট করবেন না বাবা কত কষ্টে টাকা ম্যনেচ করে বাবাই জানে

ইমরানঃএই ছিল রনির জীবন

এখন চলুন দেখি সাজিদের ভাইয়ের কথা সাজিদের ভাইঃভাইয়া জানিস তুই ভার্সিটিতে পরিস জন্য গ্রামের সবাই আমায় কত সম্মান করে স্কুলের স্যাররা রোজ তোমার খোজ নেয় আমার কাছ থেকে ভাইয়া তুই তো বাইরে থাকিস তাই বাসার খবর কিছু জানিস না।

বাবা মা কে ফোন দিলে বাবা মা তোকে বলে যে সবাই ভালো আছে কিন্তু আসলে আমরা ভালো নেই ভাইয়া অনেক কষ্টে আছি ভাইয়া জানিস ভাইয়া তোকে টাকা দিতে গিয়ে বাবা আমার কোচিংয়ের টাকা সময় মত দিতে পারেনা ভাইয়া কোচিংয়ে মাঝে মাঝে অনেক কথা শুনতে হয় আমার ভালো লাগে না ভাইয়া বাবা আর আগের মত অফিস থেকে আসার সময় আমার জন্য খাবার নিয়ে আসেনা ভাইয়া আমার না সন্ধে বেলা খুব খুদা লাগেমাকে বললে মা বলে যে একটু পড় ভাত খাবা এখন পড়তে বসো ভাইয়া ও ভাইয়া তুই ওখানে থাকিসনা ভাইয়া আমার কাছে চলে আয় তুই খুব মিস করি ভাইয়া তোর সাথে কাটানো দিন গুলো ভাইয়া তোর মনে পড়েনা প্রতিদিন সন্ধায় বাবা খাবার আনলে তুই আমিঝগড়া করতাম বাবাকে গিয়ে বলতাম বাবা কার জন্য এনেছে পরে দুই ভাইয়ে ভাগ করে খেতাম।ভাইয়া মনে পরে তোর তুই প্রতিদিন আমার জন্য বাদাম কিনে নিয়ে আসতি এখন কেউ বাদাম কিনে দেয়না ভাইয়া।

বাদাম কিনে দেওয়া তো দুরের কথা আমি আমার ভাইটার সাথেই কথা বলার সুযোগ পাইনা মাকে বললে মা বলে তোর ভাইয়া পড়া লেখা নিয়ে ব্যাস্ত আছে পড়ে কথা বলিস ভাইয়া এ ভাইয়া তুই তারাতাড়ি আয়না আমারর কাছে নাহলে কিন্তু আমি মরেই যাবো ভাইয়া ফিরে দেনা আমায় সেই আগের দিন গুলো শেষে একটা রিকুয়েস্ট করি ভাইয়া তোকে মা বাবার কষ্ট গুলো আমার কষ্ট গুলো ভালোবাসা গুলোকে সার্থক করে তুলিস ভাইয়া । (((এবার আসি ৯ নাম্বার ব্যাক্তির গল্প নিয়ে(পরিক্ষা তাই বাকি ৫ জনের গল্প আর একদিন বলবো।নাইমের গল্প তো সকলের জানাই আছে) ৯ নাম্বার ব্যাক্তিটা অন্য কেউ নয় আমার বন্ধু সাদিয়া।)।)))সেই গল্প নাহয় আর একদিন বলবো। ভিডিওটি শেষ হতে লেট হইলো কিন্তু সাজিদের হলে প্রবেশ করে ব্যাগ নিয়ে ফিরতে লেট হলোনা। ব্যাগে কি কি নিয়েছে সেই ভালো জানে সবাই শুধু তাক লেগে দেখতেছে মা বাবা নামক মানুষ গুলোর কষ্ট ।

ভিডিও দেখে সকল শিক্ষার্থি তাদের বাবাকে জরায় ধরে কাদতেছে কাদুক তারা আজ তো তাদের কাদার দিন।এমন সময় স্যার মঞ্চে এসে মাইক টা হাতে নিয়ে বললেন সত্যি আজ আমি নিজেই কেদে দিয়েছি।ভার্সিটির ৭০% শিক্ষার্থি আসে গ্রাম থেকে হয়ত তাদের প্রতিটা ঘরে ঘরে থাকে এরকম একটি করে ভালোবাসার গল্প সকলকে রিকুয়েস্ট করবো এই ভালোবাসার কষ্টের গল্প গুলো যেন তোমাদের সাফল্যের পিছনে পরে থাকে। বাবা মায়ের কষ্টেরে টাকা দিয়ে আর যাই করো সেই টাকা প্রেম করে বা অন্য কোনো ভাবে নষ্ট করিওনা মা বাবা এগুলো শুনলে অনেক কষ্ট পাবেন অনেকে হয়তো মারাও যাবেন। তাই রিকুয়েস্ট সকলের কাছে ভিডিও দেখে নিজেকে ঠিক করে নেবেন আর ইমরানকে অনুরোধ করবো এই রিপোর্ট গুলো প্রতি বছর তৈরি করতে। আর যাই হোক নতুনরা এই কাজ থেকে বিরত থাকবে প্রেম করলেও নিজের পড়া লেখার ব্যাপারে সচেতন হবে কাছের মানুষের ভালোবাসা গুলো বুঝতে পাবে

আমিঃনা স্যার। এতে আমি অনেকের শত্রু হয়ে যেতে পারি।আমি পাবোনা স্যার এই কথা বলতে দেরি হাজার হাজার জনতার মাঝ থেকে একটা কথাই ভেসে উঠলো ভাইয়া তোমাকে এই কাজ করতেই হবে।আমরা ছোট ভাইদের জন্য হলেও করতে হবে।

আমি আর কিছুই বলতে পেলাম চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো এটাইেহচ্ছে আমার সার্থকতা এখন সবাই শুধু কেদেই চলছে এমন সময় সাদিয়া কোথা থেকে কাদতে কাদতে উড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো ভালোবাসি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। নেবেনা তোমার সঙ্গি করে আমাকে আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না সবাই কাদছে আর তালি দিচ্ছে এটা কষ্টের কান্না না এটা সুখের কান্না শত শত বাবা তাদের ছেলেকে কাছে পাওয়ার কান্না শত শত সাজিদের ভাই সাজিদকে কাছে পাওয়ার কান্না নিজেকে সুধরে নেওয়ার কান্না। ভালো থাকুক সেই বাবা নামক ছাতার মত আগলে রাখা মানুষ গুলো ভালো থাকুক মা গুলো

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত