বিফোর ম্যারেজ

বিফোর ম্যারেজ

– ওয়াশরুম খুঁজছেন?
– হুম? হ্যাঁ। কোনদিকে? আচ্ছা আমার রুমালটা খুঁজে পাচ্ছি না কেন! আশ্চর্য তো! পকেটেই রেখেছিলামকিন্তু।

– নিন, টিস্যু নিন। কপালের ঘামটা মুছুন।
– থ্যাংকস মিস..
– নোভা। নোভা আফরিন।
– আচ্ছা। আর আমি…
– জানি। ইশতিয়াক আহমেদ।
– কিন্তু আমি তো আপনার নামটা জানতাম। হঠাৎ করে ভুলে গিয়েছিলাম কেন বুঝতে পারলাম না।

– ওয়েটারকে জিজ্ঞেস করুন ওয়াশরুমটা কোথায়।
– নাহ্ থাক। দরকার নেই।
– শিওর?
– হ্যাঁ, হ্যাঁ শিওর। কয়েক সেকেন্ড নীরবতার পর…
– এখন বোধহয় কিছু একটা অর্ডার করা উচিৎ। অনেকক্ষণ হয়েছে এসেছি।
– তাই তো। কি খাবেন বলুন? আমি ম্যানেজারকে ডাকছি।
– ম্যানেজার কেন? ওয়েটার…
– ওহ্ স্যরি, ওয়েটারকে ডাকছি। খাবার অর্ডার করা হয়ে গেলে…

– আপনি এত নার্ভাস ফিল করছেন কেন? আমাকে কি আপনার অনেক বেশি পছন্দ হয়ে গেছে? আজই বিয়েটা সেরে ফেলতে চান? মেয়েটির প্রশ্ন শুনে ছেলেটি ভড়কে যায়। মেয়েটি মুচকি হেসে ছেলেটিকে স্বাভাবিক করে।

– জোকস এ্যা পার্ট। বলুন, সমস্যা কি? আর এভাবে পানাড়াবেন না প্লিজ। দেখতে বাজে লাগছে।

– স্যরি। রেস্টুরেন্টের আরামদায়ক ভারী সোফাটায় হেলান দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ছেলেটি।

– আজ আমার মেহেকের সাথে দেখা করার কথা ছিল। মেয়েটির ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– গার্লফ্রেন্ড?
– বেস্টফ্রেন্ড।
– তারপর?
– ওর ব্রেকআপ হয়েছে কিছুদিন আগে। মেন্টালি আপসেট হয়ে আছে খুব।
– আপনি সময় দিচ্ছেন না ওকে? ছেলেটি সোজা হয়ে টেবিলের উপর দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে মেয়েটির সামনে ঝুঁকে বসে এবার।

– আমাদের ফ্রেন্ডশিপ কতদিনের জানেন? সেই ছোটবেলা থেকে। প্রায় ১৮ বছর। একই পাড়ায় থাকতাম। একসময় ঠিকানা বদলে গেলো কিন্তু বন্ধুত্বটা বদলালো না। মাঝখানে অবশ্য কয়েক বছর যোগাযোগ ছিল না৷ ও ওর লাইফে বিজি হয়ে গেলো আর আমি আমার লাইফে। তারপর একদিন হঠাৎ ফেসবুকে কথাবার্তা শুরু হলো। ওয়েটার খাবার সার্ভ করে যাওয়ার পর…

– আপনারা ব্যাচমেট? ছেলেটি প্লেটে খাবার তুলে নিতে নিতে উত্তর দেয়,

– উঁহুম, না। ওর থেকে আমি তিন বছরের সিনিয়র কিন্তু দুজন যখন একসাথে থাকি তখন এই সিনিয়র- জুনিয়রিটির ব্যাপারটা মাথায় থাকে না কারোর। এখানের ফ্রাইড রাইসটা দারুণ। টেস্ট করে দেখুন।

– আপনি এখানে আগেও এসেছেন?
– রেগুলারই আসা হয়। এখানকার সব কিছু আমার মুখস্ত। এমনকি এই খাবারগুলোর বিল কত আসবে তাও আমি জানি। মেয়েটি ঠোঁট চেপে হাসে।

– অথচ সেই সময় ভুলে গেলেন এখানকার ওয়াশরুমটা কোথায়।
– কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে থাকলে এমন হয় আমার৷ জানা জিনিস ভুলে যাই, চেনা জিনিস অপরিচিত হয়ে যায়।

– কি নিয়ে টেনশনে ছিলেন? আজ মেহেকের সাথেদেখা করতে পারবেন কিনা, এ নিয়ে?

– দেখা করতে যাবো কিনা, এ নিয়ে। ঝগড়া চলছে আমাদের। ড্রিংক্সে চুমুক দিয়ে মেয়েটি বলে,

– মেয়েটার সদ্য ব্রেকআপ হয়েছে। কোথায় এখন আপনি ওকে সাপোর্ট দিবেন। তা না, উল্টো ঝগড়া বাঁধিয়ে বসে আছেন?

– সবসময় এমনই হয়ে এসেছে জানেন? যে সময় আমাদের একে অপরকে প্রয়োজন হয়েছে, ঠিক সে সময়ই আমরাএকে অপরের থেকে দূরে সরে গেছি।

– ফলাফল?
– এই যে, অন্তর্দহনে পুড়ছি এখন।
– আজ দেখা করার প্রস্তাবটা কে দিয়েছে? মেহেক নাকি আপনি?
– কেউই না। ওর একটা গল্পের বই আমি ধার নিয়েছিলাম। ওটা আজ ফেরত দেবার কথা। সামনেএকটা লাইব্রেরী আছে৷ প্রতি শুক্রবার বিকেলে ও এই লাইব্রেরীতে আসে। ওখানেই যাওয়ার কথা আমার।

– এক কাজ করুন তাহলে। বইয়ের ভেতরে একটা ক্যাডবেরী সিল্ক ঢুকিয়ে নিয়ে যান।
– তারপর?
– তারপরের কাজ আপনার না, মেহেকের। আপনার ফ্যামিলি ওকে পছন্দ করে?
– খুব। মা তো ওকে নিজের মেয়ের মতো দেখেন।
– ওকে বিয়ে করার কথা ভাবেন নি কখনো?
– যখন ভেবেছিলাম তখন ও ওই বদমাইশটার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলো। কি লাভ হলো এই বদমাইশটার ব্যাপারে এত সিরিয়াস হয়ে? শেষমেশ কিন্তু ঠিকই ছেড়ে চলে গেলো। ছ’টা মাসও হাতটা ধরে রাখতে পারলো না। ছেলেটি আরো কিছু বলতে যায় কিন্তু মেয়েটি তাকে থামিয়ে দেয়।

– কারণ এই হাতটা আপনি ধরবেন বলে।
– মানে? মেয়েটি এবার মুচকি হাসে।
– তাড়াতাড়ি যান, দেরি হয়ে যাচ্ছে।

পরে দেখা যাবে এই দেরি হওয়া নিয়েও একদফা ঝগড়া লেগে যাবে। কিন্তু এই সময়টা খুব মূল্যবান। ফালতু ঝগড়া করে এই সময়টা নষ্ট করবেন না প্লিজ। ছেলেটি ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে বিল পে করার জন্য। তখন আচমকা কিছু একটা মনে পড়তেই সে মেয়েটিকে বলে,

– কিন্তু আমরা তো এখানে এসেছিলাম…
– যে কারণে এসেছিলাম, এখন সেই কারণটা আর নেই। আপনি নিশ্চিন্তে যেতে পারেন।
– আমি কি আপনার হাতটা একটু ধরতে পারি?
– না, তবে চোখে চোখ রাখতে পারেন।
– চোখের ভাষা কিন্তু সবাই বুঝতে পারে না।
– আমি পারি কিন্তু আপনি পারেন না৷ এই যেমন, এই মূহুর্তে আপনার চোখজুড়ে আমার প্রতি যে কৃতজ্ঞতাটুকু খেলে যাচ্ছে তা আমি দেখতে পাচ্ছি অথচ তার চেয়ে দ্বিগুণ কৃতজ্ঞতা যে আমার চোখও প্রকাশ করছে সেটা কিন্তু আপনার নজরে পড়ছে না।

– আমার প্রতি? কিন্তু কেন? এর মধ্যে ছেলেটির ফোন বেজে উঠে। মোবাইলের স্ক্রিনে “মেহেক” নামটা ভেসে উঠতেই সে কোনোরকমে বিলটা পে করে তাড়াতাড়ি করে উঠে চলে যায়। ছেলেটি চলে যাওয়ার পর মেয়েটি আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে ভ্যানিটিব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে কাকে যেন কল দেয়। ওপাশ থেকে কল রিসিভ হওয়ার সাথে সাথে মেয়েটি একনাগাড়ে বলতে থাকে,

– হ্যালো সোহান। তুই কি রে? তোর আর আমার ফ্রেন্ডশিপ ১৮ বছরের না হলেও, ৫ বছরের তো নাকি? তুই কেন এখনো আমাকে বুঝতে পারিস না? আরেকটু হলেই তো বিয়েটা হয়ে যেতো। আর শোন্…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত