আমি আমার বউকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসি। এই নিয়ে অনেকের হিংসে হয়। আবার কেউ কেউ আমাকে বউ পাগল বলে খোটা দেয়। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। মানুষের কথা শুনে আমি বউকে ভালোবাসবো না এটা কি করে হয়।
আসলে আমি আমার বউকে প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই ভালোবাসি। ২৫ বছরের জমানো ভালোবাসা বউকে একসাথে সোপে দিয়েছি। এতো ভালোবাসারও একটা কারণ আছে। বউ আমার হাজারে একটা।
এবার বউয়ের সম্পর্কে একটু বলি,
বউয়ের নাম জাহানারা তাবাচ্ছুম নীলা।
নীলা যেমন সুন্দরী তেমনি গুনবতী, সুশ্রী, সুকন্ঠী, লাবন্য, তারন্য, রূপতে অনন্য। তার কাজল কালো চোখের দিকে তাকিয়ে আমি বিমোহিত হয়ে যায়। তার কঞ্চির মতো নাক, ইঁদুরের মতো দাঁত আর শ্রুতিমধুর সুরে আমাকে পাগলপারা করে তোলে। তার রেশমি চুলের মিষ্টি সুভাস মন মাতানো ঘ্রান, আমার হৃদয়ে প্রতিটি ক্ষনে ক্ষনে প্রেমের ঝড় তোলে। সে ঝড়ের উত্তাল গহ্বরে পরে আমি টালমাটাল হয়ে যায়।
কবির ভাষায়- কুসুমের সৌকুমার্য, চন্দ্রের চন্দ্রিকা, মধুর মাধুরী, যুথিকার সৌরভ, সুপ্তির নীরবতা, ভূধরের অচলতা, নবনীর কোমলতা, সলিলের তরলতা। এককথায় পৃথিবীর সমুদয় সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধতা যেন তাহার অঙ্গে প্রবহমান। যার হাসির ঝলক আপেলের রক্তিম আভার মতো ছড়িয়ে পড়ে মুখের সর্বত্র।
মাঝে মাঝে আমি ডিপ্রেশন এ পড়ে যায়,
এমণ অময়াসিক্ত রমনী বিদাতা আমার জন্য গড়িয়াছেন এতো যত্ন করে। এমন বউকে ভালো না বেসে থাকা যায়।
নীলা মেয়েটা একেবারে হাসি,খুশি,প্রাণবন্ত ও মার্জিত স্বভাবের। আমার প্রতি সে কখনো রাগ বা বিরক্তি প্রকাশ করেনি। বিয়ের পর থেকে প্রতিদিন তাকে জড়িয়ে ধরে না ঘুমালে আমার ঘুম আসে না। এটা অভ্যাস নাকি ভালোবাসা আমি নিজেও জানি না।
প্রথম যেদিন শুশুর বাড়িতে যায় নতুন পরিবেশে আমার অবস্থা একেবারে নাজেহাল। বউ বিভিন্ন কাজে সারা বাড়ি ছুটাছুটি করছে। এক মূহুর্তের জন্যেও বউ কে কাছে পাচ্ছি না। এদিকে বউয়ের সঙ্গ না পেলে আমার মনটা আনচান করতে থাকে।
রাত তখন অনেক গভীর। বউ পারিবারিক আড্ডায় মেতে উঠেছে। এখন বউ ছাড়া কি আমার একা একা আমার ঘুম আসে। দরজায় উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখতে লাগলাম নীলা আসছে কিনা। না নীলা আসার কোনো নামগন্ধ নেই। নীলা আসছে না কেনো? সে কি জানে না তাকে জড়িয়ে ধরে না ঘুমালে আমার ঘুম আসে না। এখন কি আমার সবার সামনে গিয়ে এটা বলা উচিৎ, নীলা কি তুমি জানো না তোমাকে জড়িয়ে ধরে না ঘুমালে আমার তন্দ্রা আসে না। নতুন জামাই এর মুখে এমন কথা শোনা কতোটা লজ্জাকর হতে পারে তা বলা বাহুল্য।
অতঃপর এই চিন্তা মস্তিষ্ক থেকে বাদ দিলাম।
ধৈর্য্যের মাত্রা ছাড়িয়ে নীলাকে ডাক দিলাম “ওগো শুনছো”। মূহুর্তেই ভরা মজলিসে হাসির রোল পড়ে গেলো। তাদের হাসির বিপরীতে আমি লজ্জায় মরিমরি অবস্থা। শালিকা অর্পিতার হাসি যেন থামছেই না। মেয়েটা আমাকে বিয়ের পর থেকেই জ্বালিয়ে মারছে। কোনোমতে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচলাম।
এখনো শালিকা অর্পিতা আমাকে দেখলে মুচকি মুচকি হাসে আর “ওগো শুনছো” বলে ক্ষেপায়।
এর পরবর্তী ঘটনা আরো বেশি চাঞ্চল্যকর।
অফিস থেকে ফেরার পথে বউ কল করে বলল,
আসার পথে যেন দুটো শাড়ি নিয়ে আসি। একটা তার জন্য আরেকটা শাশুড়ি জন্য। কাল আমরা শুশুর বাড়ি যাবো সে খুশিতে আমি শাড়ি কিনতে একটা ভুল করে ফেলি, আমি দুটো শাড়িই হলুদ রং এর কিনে ফেলি। একেবারে কাঁচা হলুদ যেটা মেয়েরা গায়ে হলুদে পড়ে।
কালবিলম্ব না করে আমি আর নীলা পরেরদিন সকালে শুশুর বাড়িতে রওনা হই। লোকে বলে- শুশুর বাড়ি মধুর হাড়ি, কথাটা মন্দ বলেনি।
আজ জব্বর খানাপিনা হয়েছে।
পরেরদিন সকালে নীলা আমাকে টানাটানি করে ঘুম থেকে উঠালো। নীলা আবদার করলো তাকে যেন আজ আমি নিজ হাতে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।
আমি আবার বউয়ের আবদার ফেলতে পারি না।
যথারীতি বউয়ের অঙ্গে শাড়ি পেঁচিয়ে শাড়ির কুঁচিটা কোমরে গুঁজে দিতেই বউ লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো। এই রোমান্টিক মূহুর্ত মিস করার পাত্র নয় আমি। কোমর ধরে একটানে বুকে টেনে নিলাম নীলাকে। কাঁচা হলুদ শাড়ি আর হালকা সাজে নীলাকে আজ অপরুপা লাগছে। ইচ্ছে করছে তার ভিতরে হারিয়ে ফেলি নিজেকে। অনন্তকাল তাকে এভাবে জড়িয়ে রাখি নিজের আলিঙনে। আলতো করে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম নীলার ঠোঁটে। অমনি নীলা ইশশশ বলে একধাক্কা দিয়ে ছুটে পালালো। খাটে চিৎ হয়ে পড়ে রইলাম আমি।
একটু পর আমিও তার পিছু নিলাম। কিচেন রুমে উঁকি দিতেই দেখলাম নীলা কি যেন রান্না করছে।
রান্না করার সময় মেয়েদের দেখতে কি অনবদ্য সুন্দর লাগে তা হয়তো মেয়েদের জানা নেই। নতুন করে আবার তার প্রেমে পড়ে গেলাম। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরার মন বাসনা টা অপূর্ণ রাখতে চাই নি। মনে মনে মাহতামিম সাকিবের গানটা গেয়ে উঠলাম- ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে আমি হয়ে গেছি তারা।
চুপি চুপি নীলার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। পিঠের উপর হালকা ঠোঁট লাগিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। নীলা পেছন ফিরতেই আমি ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম। এটা নীলা না সাক্ষাত আমার শাশুড়ি আম্মা দাঁড়িয়ে আছে। মূহুর্তেই আমার শরীরে যেন কারেন্ট প্রবাহিত হলো।
লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। ভয়ে কিছু না বলে একদৌঁড়ে সেখান থেকে ছুটে পালালাম। লজ্জায় কয়েক বছর শাশুড়ির সামনে যাওয়া হয়নি। তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন, এটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিলো। নিজের প্রতি নিজেরই রাগ উঠছে। কেনো যে দুজনের জন্য দুটো হলুদ রঙের শাড়ি কিনতে গেলাম।
ভাগ্যিস ঘটনাটা কেউ জানতো না, তা না হলে অনেক বড় কেলেংকারী হয়ে যেতো।
কিছুদিন আগে আমাদের বাসায় একটা অকেশন উপলক্ষ্যে অনেক মেহমান আসছিলো। সমস্যা হলো রাতে ঘুমানো নিয়ে। ভদ্রতার খাতিরে বাধ্য আমাদের রুমটা ছেড়ে দেই।
শালিকা অর্পিতা বলল: আজ আমি আর আপু একসাথে ঘুমাবো। অকেনদিন একসাথে ঘুমাই না।
অমনি বজ্জাত মেয়েটা ডেং ডেং করে বোনের সাথে ঘুমাতে চলে গেলো। সে কি জানে না, তাকে ছাড়া আমি রাতে ঘুমাতে পারি না।
আমি ঘুম যন্ত্রণায় ছটপট করছি আর উনি নাকে ডেকে ঘুমাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।
তড়িঘড়ি করে তাদের রুমে ডুকে নীলাকে কোলে তুলে একদৌঁড়ে ছাদে চলে গেলাম। ছাদে উঠে বুঝতে পারলাম এটা নীলা না। নীলা তো শাড়ী পড়ে। আর এই মেয়েটা সালোয়ার কামিজ পড়া।
আমি অন্ধকারে ভুলবশত নীলার বদলে শালিকা অর্পিতাকে কোলে করে নিয়ে আসলাম।
ছি্ ছি্ কি লজ্জার বিষয়। এটা লোক জানাজানি হলে আমার ইজ্জতের ১৩টা বাজবে। আর নীলা তো নির্ঘাত আমাকে ডির্বোস দিবে। এই মূহুর্তেই আমি বড্ড দোটানায় পড়ে গেলাম।
কি করবো ভাবতে ভাবতে শালিকা অর্পিতা ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল: আমার খুব শীত লাগছে, আমায় আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরো আপু।
একথা শুনার পর হঠাৎ হাতফসকে অর্পিতা আমার কোল থেকে পড়ে গেলো।
ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠলো অর্পিতা,
অর্পিতার কণ্ঠে উৎকণ্ঠা, সহসা, সশব্দে, সপ্রশ্নে,
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমায় বলল: আমি এখানে কেনো দুলাভাই।
আমি নির্লিপ্ত গলায় বললাম: শান্ত হও অর্পিতা।
তুমি তো জানোই আমি নীলাকে অনেক ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমি রাতে ঘুমাতে পারি না। তাই আমি ভাবলাম নীলা আর আমি আজ সারারাত গল্প করেই কাটিয়ে দিবো। এবার বুঝতেই পারছো এটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিলো। প্লিজ তোমার আপুকে কিছু বলো না।
সে ভীষন মন খারাপ করবে, এবং আমাকে বাজে চরিত্রের লোক বলে ঘৃণা করবে।
আমার কথা শুনে অর্পিতা খিলখিল করে হেসে উঠলো এবং বললো,
আচ্ছা বলবো না তবে একটা শর্তে?
কি শর্ত(আমি)
আপনি আজ সারারাত আমার সাথে গল্প করবেন আর?
আর কি?
আমি যা চাই তা দিবেন বলেই মুচকি মুচকি হাসতে শুরু করলো।
আমি মিনতির সুরে বললাম: না এটা সম্ভব না, কেউ দেখলে কেলেংকারী হয়ে যাবে। আর আমি নীলাকে প্রচন্ড ভালোবাসি। আমি তাকে ঠকাতে পারবো না। আর তুমি তো জানোই নীলাকে ছাড়া আমি একটা রাত কাটাতে পারি না তাহলে একটা জীবন কিভাবে কাটাবো। নীলা এসব দেখলে বা জানলে সহ্য করতে পারবে না। একথা বলেই পিছন ফিরতেই দেখি নীলা ছলছল নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছু বলার আগেই হুঁমড়ি খেয়ে আমার বুকে এসে পড়ল। ঐদিকে অর্পিতা হাসতে হাসতে বলল, আপু দুলাভাই কিন্তু পরীক্ষায় ১০০ তে ১০০ পেয়েছে।
আমি অবাক হয়ে বললাম কিসের পরীক্ষা নীলা?
প্রতুত্তরে নীলা আমায় শক্ত জড়িয়ে ধরে বলল,
ইট ইজ লাভ এক্সাম মিরাজ সাহেব।
আমি নীলার নাকটা আলতো টেনে দিয়ে বললাম,
তাহলে এসব দুবোনের কারসাজি ছিলো আর আমি কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম।