ফেক আইডি

ফেক আইডি

ভেরি ইয়াং বয়সের একটা হ্যান্ডসাম ছবি প্রোফাইলে দিয়ে ফেসবুকে একটা ফেক আইডি খুললেন মফিজ সাহেব। অনেক ভেবেচিন্তে খুব পুরুষালী একটা নাম দিলেন মুহিত রেজা।

তারপর তিনি একের পর এক সুন্দরী মেয়ে দেখে দেখে রিকু পাঠাতে লাগলেন। একদিন হঠাৎ সেইরকম সুন্দরী একটা মেয়ে মুহিতকে ( ওরফে মফিজকে ) রিকু পাঠালো। মেয়েটার চোখ দুটো কী সুন্দর, গোলগাল গালে টোলপড়া হাসি। আহা কী সুন্দরী গো। মফিজ সাহেব পাগল হয়ে গেলেন! রিকু একসেপ্ট করে নিলেন। ও, হ্যাঁ মেয়েটার নাম হলো নীরা। নামটাও মফিজ সাহেবের খুব পছন্দের। কলেজ জীবনে তিনি এক মেয়েকে দেখে ক্রাশ খেয়েছিলেন তো। তার নামও ছিলো নীরা। সেই থেকেই এই নামটা শুনলে উনি একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েন!

তারপর তিনি বহুবার ঝোঁক নিলেন যে মেয়েটাকে মেসেঞ্জারে হাই হ্যালো বলবেন, তাকে নক করবেন। এসব ভাবতে ভাবতে মেয়েটাই মানে নিরা মুহিতকে নক করলো। মুহিত (মফিজ সাহেব) তো মহা খুশি!

তিনিও হাই হ্যালো দিয়ে শুরু করলেন। কথোপকথনের গভীরতা বাড়তে লাগলো। রাত দিন শুধু চ্যাটিং চলছে তো চলছেই। বারান্দায় পায়চারি করার সময় চ্যাটিং, বাথরুমে গিয়ে চ্যাটিং, লেপের নীচে চ্যাটিং। এক মুহূর্ত ঠিক থাকতে পারেন না নীরার সঙ্গে চ্যাটিং না করে।

দুজনে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। একদিন নীরা মেসেজে লিখলো “বাবু কী করছো?” মুহিত বললেন “এইতো বেবি, তোমার কথা ভাবছি!” তারপর নীরার রূপের খুব করে প্রশংসা করলেন। এত সুন্দর চেহারা তিনি আগে আর দেখেননি, গালে টোল পড়া দেখলে উনার বুকের মধ্যে কাঁপন ধরে এইসব।
নীরা কয়েকটা স্বভাবসুলভ হাসির ইমোজি দিয়ে বললো “ এমন করে বলোনা তো বাবু! আমার লজ্জা করছে!”

“বেবি, মন চাইছে তোমার লজ্জা মাখা মুখটি একটু ছুঁয়ে দেই!” বলে কয়েকটি লাভ রিয়েক্ট দিলেন মুহিত (মফিজ সাহেব)।

কয়েকদিন ধরে শশুরের এমন রোমান্টিক ভাব লক্ষ্য করলো ঈশিতা। একদিন চুরি করে শশুর মশাইয়ের মেসেজগুলো সব পড়ে ফেললো। “ছিঃ! নীরা নামের একটা মেয়ের সঙ্গে আমার এই ভুড়িওয়ালা মধ্য বয়সী শশুর প্রেম করছে। ছিঃ ছিঃ মানুষের চরিত্র এত খারাপ হয়? মানুষ এখন বলবে তুই একটা চরিত্রহীনের ছেলের বৌ”! ঈশিতা আর ভাবতে পারছে না। অনেকক্ষণ বালিশে মুখ গুজে শুয়ে থাকলো।

এদিকে নীরা মুহিতকে বলে দিলো “বাবু, তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে পয়লা বৈশাখের দিন! রমনার বটমূলে!”

মুহিত (মফিজ সাহেব) তো মহা বিপদে পড়লেন। একেতো উনার বয়স পঞ্চাশের ওপরে তারপর আছে বিশাল একটা ভুড়ি। কীভাবে যে এখন সামলাবেন নীরাকে ভেবে পাচ্ছেন না।

অনেক ভেবেচিন্তে নীরাকে বলে দিলেন “ঠিক আছে বেবি। তুমি যা চেয়েছো তাই হবে। আমি পরবো পাঞ্জাবী আর হাতে থাকবে লাল গোলাপ তোমার জন্য! আর তুমি পরবে লাল পেড়ে শাড়ী, মাথায় রজনীগন্ধা।”

ঈশিতা আবারো দেখে ফেললো শশুর মশাই নীরা নামের মেয়েটার সঙ্গে দেখার করার ডেট ঠিক করেছে। সে মনে মনে কয়েকবার শাশুড়িকে বলতে চেয়েও কোনো ভাবে বলতে পারলো না। তবে কীভাবে শশুরকে ফেরানো যায় সেসব ভাবতে লাগলো সে।

এদিকে মুহিত (মফিজ সাহেব) তো খুব চিন্তিত হয়ে গেলেন। নীরার সামনাসামনি হবেন কীভাবে তিনি গভীরভাবে ভাবতে লাগলেন। তবে সাহস হারালেন না। ছোটবেলা থেকেই মফিজ সাহেব আবার একটু সাহসী প্রকৃতির! কোনোকিছুতেই ভয় টয় পান না।

তিনি মনে মনে ঠিক করলেন, নীরার সঙ্গে দেখা করতে তিনি যাবেনই। নীরা যদি তাকে দেখে খুব রেগে যায়, তাহলে বলবেন তিনি হলেন মুহিতের বাবা। আর যদি রাগ না করে, তাহলে বলবেন তিনি নিজেই মুহিত। প্রেমে পড়লে তো মানুষ অনেক কিছুই মেনে নেয়! এসব ভেবে সাহস পেলেন তিনি।
মুহিত (মফিজ সাহেব) প্ল্যান মতো পয়লা বৈশাখের দিন নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলেন হাতে একটা গোলাপ নিয়ে! নীরা আসবে। ভয় ও উত্তেজনা দুটোই চলছে! খুব করে একটা সিগারেট ধরাতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু না। প্রেমে অনেক সময় সিগারেট বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়!

কিছুক্ষণ আগেই নীরাকে তিনি মেসেজে বলে দিয়েছেন কোথায় তিনি আছেন! সো নীরা চলে আসবে।
ঘড়িতে ঠিক সকাল দশটা! উত্তরদিকের খোলা আকাশের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মুহিত (মফিজ সাহেব)।

নরম হাতের বেষ্টনীতে আবদ্ধ হলেন তিনি। এক পরম সুখে ছেয়ে গেলো মুহিতের হৃদয়। তিনি ঘুরে চোখে চোখ রাখলেন নীরার। ভুত দেখার মতো লাফিয়ে উঠলেন তিনি। “একি তুমি জোহরা (মফিজ সাহেবের স্ত্রী)? তুমি এখানে মানে এখানে কীভাবে এলে?”
“উহু!, জোহরা না গো, আমি তোমার বেবি গো বেবি।”
“এসবের মানে কী?” রেগে গেলেন মফিজ সাহেব।
“বলছি বাবু, বলছি। হাসতে হাসতে বললেন মফিজ সাহেবের বৌ জোহরা।
“আমিও ফেক আইডি করে নীরা নামে তোমাকে রিকু দিয়েছিলাম গো! শোন মফিজ, তুমি নীরা নামের অন্য কাউকে ভালোবাসালেও আমি কিন্তু তোমাকেই ভালোবেসেছিলাম। আমার ভালোবাসায় কোনো গলদ ছিলো না।“
“চলো বাবু, রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খেয়ে বাসায় গিয়ে ঘুমাই। আমি তোমার বেবি হয়ে থাকতে চাই মুহিত, আই মিন মফিজ!”
মফিজ সাহেব লজ্জা পেলেন। জোহরার ভালোবাসার কাছে হেরে গেলেন!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত