বিয়ে

বিয়ে

রাতের তখন বারোটা। ছোট ভাই পলাশ কাতার থেকে ফোন দিয়ে বললো, কংগ্রেচুলেশন ভাই, খুব খুশি হয়েছি!
আমি বললাম, খুশি হয়েছিস কেন? কি করেছি? পলাশ বললো, আপনার উপর রাগ করেছিলাম,মাফ চাই। বলেই ফোন কেটে দিল। আধা ঘণ্টা পর বড়বোন ফোন দিয়ে বললো, যা শুনলাম, সত্যি? আমি বললাম, কি শুনেছো? আর ন্যাকামি করিস না,বহু করেছিস।যাক,যা করেছিস ভালোই করেছিস। মা বাবার দিকে খেয়াল রাখিস। কালই আমি তোর দুলাভাইকে নিয়ে আসছি।বলেই সেও ফোন রেখে দিল। সকাল বেলা মোবাইলের আওয়াজে ঘুম ভাংলো। মামাতো বোন মিতু তের বার কল দিয়েছে। ফোন ধরতেই কান্না শুরু করে দিল।আমি বললাম, কি হয়েছে মিতু?

মিতু কাঁদতে কাঁদতে বললো, কি হয়েছে মিতু? এই তোমার প্রেম? এই ভালবাসা? তুমি আমাকে এভাবে ধোঁকা দিতে পারলে? আমি এতোটাই ফেলনা? আমি অবাক হয়ে বললাম, কি হয়েছে বলবে তো? মিতু রেগে গিয়ে বললো, তুই আর আমার সাথে কথা বলবি না হারামজাদা! কি ভেবেছিস? মিতু মরে যাবে? এতো সহজ মেয়ে মিতু নয়। তুই আমার সাথে প্রতারণা করেছিস,এর শাস্তি তুই পাবি,এখন তুই জানবি মিতু কি চিজ! তোর পিছনে আমি মাস্তান লাগাবো, তোকে আমি খুন করবো। ফালতু, বদমাশ কোথাকার!

আমি ঝিম মেরে বসে রইলাম। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। বাসায় কেউ আমার সাথে কথা বলছে না,মায়ের রুমে ঢুকলাম, মা আধমরা হয়ে শুয়ে আছে। বাবা কম কথার মানুষ, সে সোফায় বসে টিভি দেখছে। তার মুখটাও মলিন। বাসা থেকে বেরুতে যাবো, ছোট বোন কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ঢুকলো, আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কান্নার পরিমান বাড়িও দিল। হেঁচকি তুলতে তুলতে বললো, এই তোর মনে ছিল ভাইয়া?মা বাবাকে এভাবে অপমান করতে পারলি? তোকে কি আমরা নিষেধ করতাম?তোর উপর রাগ করে পলাশ ভাই বিদেশ চলে গেল। আগে করলেই পারতিস, তাহলে আর পলাশ ভাইকে এভাবে চলে যেতে হতো না! আমি বললাম, আমি কি করেছি?

আমি কি করেছি? তুই জানিস, মিতু আজ তোর কারনে মরতে গিয়েছিল? মেয়েটাকে এভাবে মারতে পারলি? ও তোকে কত ভালবাসে তা জানিস?আমরা কত বললাম, তোকে বিয়ে করতে, তখন রাজি হলি না। তোর কারনে পলাশ ভাই রিয়াকে বিয়ে করতে পারলো না,রিয়ার অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেল! ভাবি কে কোথায় রেখেছিস?কেমন আছে?
আমি বললাম, কার ভাবি? ছোট বোন রেগে গিয়ে বললো, আর ঢং করিস না,মা বাবার যে কি অবস্থা আল্লাহ ভালো জানে!নাম কি? কার নাম? ভাবির নাম কি? কি মুশকিল! তোর ভাবি আসলো কখন, আর আমি বিয়ে করলাম কখন? ফাজলামো করিস না,ভাইয়া! তুই ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে বলিসনি তুই বিয়ে করেছিস?

নতুন যখন ফেসবুক এসেছে, এ সম্পর্কে কিছুই বুঝতাম না।ছোট ভাইয়েরা তখন আইডি খুলে ফেলেছে। আমি ও শখ করে একদিন গ্রামীন ফোনের অফিসে গিয়ে ফেসবুক আইডি খুলে আনলাম। ভালো করে কিছুই পারিনা। নতুন কিছু শেখার জন্য প্রতিদিনই টিপাটিপি করি। একদিন টিপতে টিপতে I got Married এ চাপ পড়ে গেলো, তারপর যা হবার হলো! মায়ের রুমে বসে আছি, সব বোনেরা চলে এসেছে। মা কঠিন মুখে তাকিয়ে আছে। বন্ধুরা সব বাইরের রুমে বসে আছে। শালাদের মুখে আজ ঈদের আনন্দ। ফাও খাওয়ার ধান্দা করছে।পারে তো তক্ষুনি আমাকে কোলে করে চাইনিজে নিয়ে বসিয়ে দেয়!

মা বললেন, তুই যে সত্যি বলছিস এটা বিশ্বাস করবো কি করে? কোন লুকোচুরি করবি না, সত্যি কথাটা বল! আমি বললাম, সত্যি বলছি মা, আমি যদি মিথ্যা বলি তাহলে যেন মিতু মারা যায়। মা অবাক হয়ে বললেন, মিতু মারা যাবে কেন? তা না হলে মিতু আমাকে মেরে ফেলবে,যা পাঁজি মেয়ে! ওকে দেখলেই আমার,,,,, তোর নানা ফোন দিয়েছে, কথা বল। আমি ফোন ধরতেই নানা ভাই বললেন, আমি খুব খুশি হইছি নাতি। বিয়া না করলে কি আর পুরুষ মানুষ পুরুষ মানুষ থাহে? আমি বললাম, সত্যি খুশি হয়েছো,নানা ভাই? আরে কি কতা কস নাতি? অবশ্যই খুশি হইছি। তোর গর্বে আমি গর্ভবতী! নানার কথা শুনে সাথে সাথেই আমি অজ্ঞান!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত