আমার হবু শ্বশুরআব্বার সাথে আমার সম্পর্ক খুব খারাপ। তিনি তার ছেলেকেও কঠিনভাবে মানা করে দিয়েছেন যেন সে আমার সাথে না মেশে। দোষটা আমারই। শ্বশুরআব্বা বাসার নিচে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আমি ওপর থেকে এক বালতি সাবান গুলানো পানি তার গায়ে ঢেলে দিয়েছি। তখন থেকেই তার আমার ওপর রাগ। তখন তো আর আমি জানতাম না তার এত সুন্দর ছেলে!
সেটাই একদিন তাকে গিয়ে বললাম। সে বাগানে বসে ছিল। আমি তার সামনে গিয়ে বললাম, আব্বা! মাফ করে দেন।
তিনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কে কার আব্বা! আমি লাজুক স্বরে বললাম, সেদিন আপনার গায়ে ইচ্ছা করে পানি ফেলিনি। যদি জানতাম আপনার ছেলে এত সুন্দর তাহলে তো আরো ফেলতাম না। তিনি চোখ কপালে তুলে বললেন, এ মেয়ে বলে কি! আমি গলার স্বর আরো লাজুক করে বললাম, দয়া করে মনে কিছু পুষে রাখবেন না। বুড়োকালে আমি ছাড়া আপনার সেবা করবে কে বলেন? খামাখা হবু বৌমার ওপর রাগ পুষে রাখলে সংসারে অশান্তি হবে! এটুকু বলেই আমি চলে আসলাম। তারপর শ্বশুরআব্বা তার ছেলেকে ডেকে কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিলেন,
-লাবণ্য নামের ঐ বাড়ির যে মেয়েটা আছে ওর সাথে মিশবি না। কথাও বলবি না। ওকে দেখলেই উল্টোদিকে ঘুরে চলে আসবি। আমি দেয়ালের আড়াল থেকে সবই শুনলাম। তারপর বাসায় চলে এলাম।
সমস্যা হচ্ছে শ্বশুরআব্বা যে ছেলেকে আমার সাথে মিশতে মানা করলেন সে আমার সাথে না মিশলেও আমার কিছু যায় আসে না। আমি তার ওপর ক্রাশ খাইনি। আমি ক্রাশ খেয়েছি তার ছোট ছেলের ওপরে। শ্বশুরআব্বা এখন সর্বক্ষন তার বড়ছেলের বিয়ে নিয়েই চিন্তা করেন বিধায় ছোটছেলের বিষয়টা তার মাথায় আসেনি। যাইহোক, হবু শ্বশুরের বড় ছেলে তার বাপের কথামতো আমাকে এড়িয়ে চলে। এদিকে আমি তলে তলে লক্ষ্য রাখি তার ছোটছেলের দিকে। আমার ঘরের জানালা আর তার ঘরের জানালা এখন পাশাপাশি। আগে ওখানে বড় ছেলের ঘর ছিল। যেহেতু তার ওপর আমার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ তাই সে ঘর পরিবর্তন করেছে। শ্বশুরআব্বার ছোট ছেলেও আমার প্রতি দুর্বল সেটা আমি এখন বুঝতে পারি। প্রায়ই জানালার ধারে বসে তাকে গান শুনতে দেখি। আমাকে দেখলে সে হাসে।
এরমধ্যে তিন নাম্বার ফ্লাটে দারুন সুন্দরী এক মেয়ে এসেছে। মেয়েটার চেহারার সাথে বলিউড হিরোইন উর্বশীর চেহারার সাদৃশ্য আছে। শ্বশুরআব্বার বড় ছেলের নজর এখন সেই বলিউড অভিনেত্রী উর্বশীর ওপর। তাদেরকে প্রায়ই ইশারায় ইশারায় কথা বলতেও দেখি। বড় ভাই আবার আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ঐ মেয়েকে ইশারা করে। কারণ সে তো জানে যে আমি তার ওপর লাড্ডু। সে ভাবে হয়তো আমার ভেতরে ভেতরে জ্বলে যায়। এদিকে ওদের দুজনের ইশারা ইঙ্গিত চলতে চলতেই যে আমার আর তার ছোটভাইয়ের মধ্যে প্রেম হয়ে গেছে এটা তিনি জানেন না। ছোটছেলে আমার হাত ধরে প্রায়ই গদগদ কন্ঠে বলে, “তোমাকে না পেলে আমি বাঁচবো না।” আমি লাজুক স্বরে জবাব দিই, আমাকে কবে বিয়ে করবা! সে বলে, আগে বড় ভাইয়ার বিয়ে হবে তারপর তো!
এভাবেই আরো কয়েকমাস কেটে গেল। শ্বশুরআব্বা কড়া নজর রাখেন তার বড় ছেলে আমার সাথে কথাটথা বলে কি না। তারপর খুশী হয়ে লক্ষ্য করেন,তার নির্দেশ অনুযায়ী তার বড় ছেলে আমাকে এড়িয়েই চলে। এরমধ্যে আমি একদিন শ্বশুরআব্বার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বললাম, আব্বা! আপনি কি কি খেতে ভালোবাসেন? তিনি ভুরু কুঁচকে বললেন, কেন? তা দিয়ে তোমার কি দরকার? আমি লাজুক স্বরে বলি, শিখে রাখবো। বিয়ের পর রান্না করে খাওয়ানো লাগবে তো! তিনি বিরক্ত স্বরে বলেন, বিদায় হও! বিদায় হও। আমি তবুও বিদায় হই না। বিনয়ী গলায় বলি, আব্বা! আপনি কিন্তু ভাববেন না এখনকার বউমাদের মতো আমি আপনার দেখাশোনা করবো না। বুড়ো হলেই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবো। আমি সারাজীবন আপনার সেবা করবো।
-বিদায় হও। গেট লস্ট!
এক সুন্দর সকালে শ্বশুরআব্বা বাগানে বসে ছিলেন। তার বড় ছেলে উর্বশীকে নিয়ে হাজির হয়ে মাথা নিচু করে শ্বশুরআব্বাকে সালাম করলো। তারপর লাজুক স্বরে বলে, বাবা! আমি এই মেয়েকে ভালোবাসি। একে বিয়ে করতে চাই। শ্বশুরআব্বা খুশী হন। হাসিমুখে তাদের দোয়া জানিয়ে বলেন, বাঁচলাম!
আমারতো ভয় ছিল লাবণ্য নামের ঐ মেয়েটা তোরে বশ করে ফেলে কি না! যাক তবুও ওর থেকে শ্বশুরআব্বা কথা শেষ না করে তোতলাতে থাকেন। কেননা ততক্ষণে আমার হাত ধরে তার ছোটছেলে প্রবেশ করেছে, আমরাও মাথা নিচু করে তাকে সালাম করি। তারপর তার ছোটছেলে লজ্জামাখা গলায় বলে, আব্বা! আমাদের অনেকদিনের প্রেম। ভাবছিলাম বড় ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেলে আপনারে জানাবো। বড় ভাইয়ার তো বিয়ে ঠিকই হয়ে গেল। ওদের বিয়ে হয়ে গেলেই আমরা বিয়ে করে নেবো। শ্বশুরআব্বা জবাব দিলেন না। বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইলেন। আমি হাসিমুখে প্রশ্ন করলাম, আব্বা! প্রেশার বেড়েছে? তেঁতুল পানি এনে দিই?