বাবার সাথে ডাক্তারের চেম্বারে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। যথারীতি ওয়েটিং রুমে বসে আছি আর আমাদের মত বয়সের কারো জন্য ওয়েট করা মানে মোবাইল টেপা, হয় গেইম না হয় ফেসবুক। আমার আবার আরো একটা কাজ আছে, গল্প কবিতা লেখা। আমি কিছুক্ষণ ফেসবুক ব্রাউজ করে নোটবুক এপ বের করে লিখতে বসলাম। কি লেখা যায় ভাবছি, ভাবতে ভাবতে জানলা দিয়ে বাইরে তাকালাম। আমার সোজাসোজি একটা ছেলে বসে আছে। দুরত্ব পাঁচ ফিট মতো হবে আমাদের। বেশ ভালই দেখতে, ব্রাউন টিশার্ট আর জিন্স, এক নজরে যা দেখা যায় তাতে এটুকুই বর্ণনা করা যায়। আমি আবার মোবাইলে মনোযোগ দিলাম। বাবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন হয়তো, বাতাস বেশি তাই। আশেপাশে আর তিন চারজন রোগী আছে আর সিরিয়াল লেখার লোকটা আছে।
কিছু সময় পর ছেলেটা প্রশ্ন করলো ” আপনি হিন্দু! তাই না? ” আমি মোবাইল স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে তাকালাম তার দিকে, কিছু সময় ভেবে বললাম “হ্যাঁ” প্রথমে ভেবেছিলাম কি করে বুঝলো, পরে মনে পড়লো আমার হাতে লাল সুতো বাঁধা দেখে বুঝেছে। খেয়াল করলাম তার হাতেও আছে। ” আমিও! আমি দীপ্ত, শুভদীপ মন্ডল দীপ্ত! ” বলে ছেলেটা হাত বাড়িয়ে দিলো। এই মুহুর্তে যদি আমি হাত না মেলাই তার সাথে তাহলে সে অপমান হবে আর হাত মেলালে আশেপাশের লোকেরা আমাকে খারাপ ভাবলেও ভাবতে পারে। কিছুক্ষণ ভ্যাবাচেকা মুখ করে ভেবে মোবাইলটা ডান হাত থেকে বাঁ হাতে নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলাম ” আমি শর্মিষ্ঠা মজুমদার ”
– নাইস টু মিট ইউ
– মি টু!
– নামটা সুন্দর, কাহিনী জানেন তো??
– জি জি! কারণ এ পর্যন্ত অনেক জায়গা ফেস করতে হয়েছে।
– হুম, বিসিএস বা চাকরি ক্ষেত্রেও এ নিয়ে ভাইবাতে প্রশ্ন করবে।
– কিসে পড়েন আপনি?
– পলিটেকনিক থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং করেছি।
– কোন সাবজেক্ট?
– ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং!
– বাহ ভাল সাবজেক্ট! চাকরির অনেক সুবিধা আছে।
– কিন্তু হচ্ছে টা আর কই! হাহাহা! আপনি কি করেন?
– খুলনা ইউনিভার্সিটি, বিবিএ!
– বাব্বাহ! আপনি তো বস!
– বস কেন?
– খুবি এর বিবিএ তো আইবিএ সিস্টেম। এখানে পড়ে বের হয় যারা তারা তো অনেক ট্যালেন্টেড পিস।
– হাহাহা, ওরকম মনেই হয়।
– তাই বুঝি!
– জ্বি!
– আচ্ছা জিজ্ঞেস করলেন না যে আপনি হিন্দু কি করে বুঝলাম?
– স্বাভাবিক, আমার হাতের লাল সুতো বাঁধা দেখে। যা আপনার হাতেও আছে।
– আপনি আসলেই অনেক ট্যালেন্টেড আর স্মার্ট। গোয়ান্দা বিভাগে আছেন নাকি আবার।
– আরে না না!
( কিছুক্ষণ চুপচাপ, কারণ মনে হচ্ছিলো আমাদের কথাতে আশেপাশের লোকের ডিস্টার্ব হচ্ছে। একটু পর বাবা এসে রুমে বসে। টেবিলে থাকা পেপার নিয়ে হেডলাইন দেখতে থাকে)
– বাইরে ভাবলাম বাতাস, কিন্তু সেখানেও গরম! (বাবা)
– তোমাকে কে বলছে বাইরে দাঁড়াতে, এখানে ফ্যানের নিচে বসলেই হতো। (আমি)
– যাই হোক (কিছুসময় পর) চশমা মনে হয় অফিসে ফেলে আসছি, এই খবরটা পড়ে দে তো! ছোট লেখা পড়তে পারছি না।
– হুম, কোনটা দেও (মোবাইল আবার বাঁহাতে নিয়ে পেপার নিয়ে পড়া শুরু করি) খবর পড়তে প্রায় পাঁচ মিনিট লাগে, অনেক দিন পর জোরে জোরে পড়লাম তাই কষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। পড়া শেষ করে পেপার ফিরিয়ে দিলাম।
– তুমি কি নিউজ প্রেজেন্টারে কাজ করো? (বয়স্ক একজন)
– জি না!
– তাইলে কি রেডিওতে কাজ করো?
– না না! কেন বলুন তো?
– নাহ অনেক সুন্দর করে খবর যেমন পড়ে সেভাবে পড়লে তো তাই!
– ওহ! নাহ আমি ওসব কিছুই না! তবে ইচ্ছা আছে।
– ট্রাই করেন হয়ে যাবে! (দীপ্ত)
– ওসব হয়ে আর কি হবে? শুধু শুধু দৌড়াদৌড়ি (বাবা)
– নাহ আংকেল এগুলো খারাপ না, অনেক ভাল ক্যারিয়ার
– তুমি কি করো বাবা! আংকেল বললে তো তুমি করেই বলি
( শুরু হয়ে গেলো বাবা আর দীপ্তের খোশগল্প। সিরিয়াল আসা না অদধি চলেছিল সে আলাপ। আমি আমার কাজে মন দিয়েছিলাম কারণ এখন এখানে আমার কাজ নেই… তবে ইচ্ছে ছিল তার ফেসবুক আইডি নেবার কিন্তু নেয়া হয় নি। কথায় কথায় জানা হয়ে গিয়েছিলো সে আমার তিন বছর জুনিয়র তাই হয়তো আগ্রহ হয় নি পরে, তবে সঙ্গ ভাল লেগেছে, আমার থেকে আমার বাবারই বেশি ভাল লেগেছে কারণ উনি গল্পপ্রিয় মানুষ।)