ক্লান্তি

ক্লান্তি

অফিস করে শেষ বিকালে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করা খুব একটা ধৈর্য্য থাকতে হবে। নইলে আপনি দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে পারবেন না। বেলা প্রায় সন্ধ্যায় ছুই ছুই অবস্থা। হবিগঞ্জ শহর টা অনেক জ্যাম থাকে। এখানে টমটম করে শহর টা ঘুরাঘুরি করতে মন চায় না। বাস স্টেশনে বসে রইলাম। প্রতিদিনের মতো একটা মেয়ে আসল। মেয়েটা এসে চুপ করে বসে তাকল। আমার দিকে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে চেয়ে রইল।

মেয়েটার নাম অতিথি। সম্ভবত অনার্স পড়ে। আচ্ছা ভালোবাসা কি সেটা আজও জানি না। শুধু জানতে ইচ্ছে করে। বাস আসল। ১ মিনিট হতে না হতেই বাস টা বড়ে গেল। আমিও উঠলাম মেয়েটাও উঠল। একটা সীটে বসলাম। মেয়েটা দাঁড়িয়ে তাকল। মেয়েটা আমার সীটের পাশে দাঁড়িয়ে তাকল। সব সীটের দিকে তাকালাম। দেখতে পেলাম সব জায়গা মানুষ বসে আসে। আমার মাথায় খুব চিন্তা হলো মেয়েটার জন্য। খুব চিন্তা। মেয়েটা কে বললাম ” আপনি বসেন এই সীটে আমি দাঁড়িয়ে থাকি। মেয়েটা অনেকবার না না করল। কিন্তু আমি অনেক জোর করলাম মেয়েটা বসতে রাজী হলো। আমি সীট থেকে উঠে একদম পিছনে দাড়িয়ে তাকলাম।

বৃন্দাবন কলেজের পাশ দিয়ে একটা টমটমে উঠলাম। ইশ! মেয়েটা। খুব ভালো লাগছে। মেয়েটা আজ শাড়ি পড়েছে। হয়তো কলেজে কোনো অনুষ্ঠান। খুব ভালো দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। আমাকে মেয়েটা দেখে ফেলেছে। কিছু বলতে চায়। কিন্তু পারবে না। টমটম তার গন্তব্যের যাওয়ার জন্য খুব চিন্তায় পড়ে গেল। তাইতো এখানে দাঁড়াচ্ছে না। আচ্ছা মেয়েটা আমাকে ডাকতে চাইল কেন? আমি একটু ভাবতে লাগলাম। ইশ! মেয়েরা পারেও বটে। চেনামুখ দেখার আনন্দ আলাদা। সব কিছু অজানা চেহারার মাঝে যখন চেনা মুখ থাকে। তখন অনেক ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। আমিও আমার গন্তব্য গেলাম। ইশ! ব্যাগ টা ভিজে গেল। একটা মার্কেটের ভিতরে গেলাম। খুব খারাপ লাগল। কাগজপত্র প্রায় ভিজেই গেছে। ব্যাগ টা একটা চেয়ারে রেখে মাথা টা মুছতে লাগলাম। ও মা মেয়েটা।

হাত দিয়ে মুছলে পানি পড়বে না আর মাথাও শুকাইবে না। তাই এই রুমাল টা রাখেন। ” এই কথা টা বলে মেয়েটা চলে গেল। কি অদ্ভুত রকমের মেয়েটা। মেয়েটা ছাতা দিয়ে বাহিরে বের হলো। আমি রুমাল দিয়ে মাথাটা মুছলাম না। রুমাল ব্যাগে রেখে দিলাম। সবশেষ করে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। মানুষ অনেক রকমের হয়। কেউ কেউ মাংস ছাড়া ভাত খেতে পারে না আবার কেউ কেউ ডাল ছাড়া ভাত খেতে পারে না। আবার কেউ কেউ শাকসবজি ছাড়া ভাত খেতে পারে না। কিন্তু আমি শাকসবজি দিয়ে প্রচুর ভাত খেতে পারি। বাকী দুই টা আমার এলার্জি। টাকা দিতে যাব ঠিক তখন মেয়েটা এসে বলে ” আমার রুমাল দেন। আমি চুপ করে তাকলাম। টাকা দিয়ে একটা টমটমে উঠতে যাব। তখন বললাম ” নেন আপনার রুমাল। ” মেয়েটা বুঝতে পারল রাগ করছি। রাগ করার কারণ আছে। এতো গুলা মানুষের সামনে বলল কেন?
তাই রাগ টা বাড়তেই তাকল।

অনেক ক্লান্তি নিয়ে বাস স্টেশনে বসে তাকলাম মৌলভীবাজার যাব। সব কিছু প্যারা আমি নিয়ে বসবাস করি। একজন মানুষ একটা ময়ূর নিয়ে বসে আছে। ময়ূর টা ঘুমাতে চায়। খুব ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু সে কি ঘুমাতে পারবে না। না সে ঘুমাতে পারবে না। তার চোখে ঘুম তাকলেও সে ঘুমাতে পারবে না। ঐ যে সাথে বালক নামক একজন লোক আছে। সে ঘুমাতে দিবে না। ময়ূরও হাটতে চায়। খুব স্বাধীন ভাবে। সে দরজায় উঁকি দিবে। জানালা দিয়ে সাদা – নীল আকাশ টা দেখবে। অতিথি আসল। ” রাগ করলেন বুঝি? এই কথা বলে সামনের দিকে চেয়ে রইল। আচ্ছা মানুষ এতো অদ্ভুত রকমের আচরণ কেন করে? আমাকে প্রশ্ন করছে সেহেতু আমার দিকে তাকিয়ে ঐ প্রশ্ন করবে। না। অন্য দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করার কোনো দরকার আছে?

আমি চুপ করে রইলাম। আবার সে বলল ” কথা বলবেন না? ” আমি ময়ূরের দিকে তাকিয়ে বললাম ” এ রকম না করলেও পারতেন। ” মেয়েটা বুঝতে পারল। মেয়েটা বাদাম খাচ্ছে। একসময় আমাকে বলল ” বাদাম খাবেন? ” আমি ” না ” বললাম। মেয়েটা নিজ রূপে সুন্দর। কোনো আলাদা রূপ লাগাতে হয় না। এই সুন্দরে মেয়েটা লাবণ্যময়ী। কি অদ্ভুত রকমের কন্ঠ। ইশ! কতই ভালো লাগে। আকাশ এখন যদি বৃষ্টি আসে তাইলে ঝনঝন করা শব্দ টাও মেয়েটার কন্ঠর কাছে হার মানবে। মেয়েটা প্রজাপতি না। তবুও দু’টা ডানা তাকলে ভালো হতো। প্রজাপতি আর মেয়েটা এক সাথে উড়ত। সবুজ ঘাসের উপরে গিয়ে দু’জন বসে থাকত। বাস আসতেই আমি বাসে উঠে চলে গেলাম। মেয়েটা আজ যাবে না। শুধু নাকি আমাকে দেখার জন্য এসেছিল। আমাকে দেখার কি আছে? আমার নেই কোনো গুন। নেই কোনো আলো। তবুও মেয়েটা আসে।

৫ দিন জ্বর ছিল। আজ স্টেশনে বসে আছি। কিন্তু আমার কাছে মনে হলো অনেক দিন আসে নি। মেয়েটা কেও আজ কোথাও দেখছি না। বৃষ্টি এসে নামল। চারদিকে অন্ধকার। এক দুই দিন চার জন্য মেয়ে কে দেখলাম । হ্যা। মেয়েটা আসল। পাঁচ নাম্বার। আমার কাছে এসে বসল। মুখের দিকে তাকাতে দেখতে পেলাম মুখ টা ফুলিয়ে বসে আছে। কিছু বলছে না । হয়তো অভিমান করেছে। আমি বললাম ” জ্বর ছিল। ” তো আমাকে বলা যেত না। ” মেয়েটা আসলে পাগল। মেয়েটার নাম্বার আমার কাছে নাই। তাইলে আমি কি করে বলব। দু’জন চুপ করে বসে রইলাম।মেয়েটা বলল ” নাম্বার নেন। ” আমি চলে আসলাম। নাম্বার আনি নি। হিমুরা চলতে ভালবাসে। আমিও না হয় একটু চললাম।

মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ছে। ইশ! মেয়েটা কে কি আমি ভালবাসি? খুব জানতে ইচ্ছা করে। নিজেকে জিজ্ঞাস করলাম। উত্তর টা পেয়ে গেলাম। আজকে মেয়েটা কে ভালোবাসার কথা বলে দিব। বলে দিব আজ সত্য কথা। হ্যা। আমি ভালবাসি মেয়েটা কে। মনে সাহস হচ্ছে না । সাহস কি করে পাই। কি করে তাকে বলব। অনেক চিন্তায় পড়ে গেলাম। একটা কাগজে লিখলাম ” ভালবাসি। ” অতিথি আসতেই তার কাছে দিয়ে আমি চলে গেলাম। মেয়ে টা অনেক দিন পর আমার সাথে দেখা করল। তার প্রথম প্রশ্ন ছিল ” আমাকে মিস করেন নি? ” আমি বললাম ” অনেক। ” মেয়েটা বলল ” আমি ইচ্ছা করে ঐ দেখা করে নি। আসলে আমিও আপনাকে ভালবাসি। খুব ভালবাসি। ” দু’জন হাসলাম। অতিথি কে নিয়ে বসে আছি।

” আচ্ছা অতিথি তুমি আমাকে বটগাছের মতো করে ছায়া দিবেন? ” অতিথি হাসল। হাত দিয়ে ছায়া দিল। আমি ব্যাগ থেকে একটা জিনিষ বের করলাম। খুব যত্ন করে নিয়ে এসেছি। অতিথির হাতে দিলাম।

” এইটা পড়ে কাল আমার সামনে আসবেন। ”
” কিন্তু কি আছে? ”
” বাসায় গিয়ে দেখবেন। ”
” ঠিক আছে। ”

রাতে ঘুম হয় নি। অতিথি কি পড়ে আসবে ? মনে অনেক প্রশ্ন হলো। উত্তর মনের ভিতর রয়ে গেল। সকালবেলা সেই জায়গায় বসে রইলাম। না। অতিথি পড়ে আসে নি। খুব খারাপ লাগল। অতিথির হাতে একটা ব্যাগ। কিন্তু কি আছে এই ব্যাগ।

অতিথি এসে ব্যাগ টা আমার হাতে দিয়ে চলে গেল। কোনো কথা বলে নি। সত্যি খুব খারাপ লাগল। বাসায় এসে ব্যাগ খুলতে ইচ্ছা করে নি। দু’দিন খুলে নি। দু’দিন দেখাও করে নি। তিনদিন পর ব্যাগ টা খুললাম। ওয়াও ব্যাগে একটা পাঞ্জাবি।” এইটা পড়ে কাল দেখা করবে। ” কিন্তু কাল তো গেছে দু’দিন হয়েছে। খুব চিন্তা হলো মেয়েটার জন্য। আমি পাঞ্জাবি টা পড়ে গেলাম। মেয়েটা আমাকে দেখেই কান্না করতে তাকল। চোখের কোণে পানি এসে জমা হলো। ইশ! মেয়েটার চোখে পানি মানায় না। মেয়েটা অপরূপ। মেয়েটা সুন্দর। মেয়েটা লাবণ্যময়ী। মেয়েটা মায়াবতী। মেয়েটার চোখের পানি মুছে দিলাম। দু’জন হাতে ধরে হাটলাম। নিজ গন্তব্যে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত