অদৃশ্যমান হয়ে দৃশ্যমান

অদৃশ্যমান হয়ে দৃশ্যমান

ওয়েটিং রুমে বসে আছি। অতিথির সঙ্গে দেখা করব। অতিথি একটা ছোটখাটো অফিসে চাকরি করে। আপনারা বলতে পারেন একজন চাকুরীজীবী। অফিসের কর্মকর্তারা দেয়ালের সাথে একটা ছবি লাগিয়ে রেখেছেন। দেখতে খুব অদ্ভুত রকমের সুন্দর। একটা সমুদ্র। একটা দোলনা। একটা মেয়ে। মেয়েটা দোলনায় বসে আছে। মাথায় একটা টুপি। মেয়েটির হাতে পাখি। খুব রাগ হলো। সব জায়গায় মেয়ে কেন? একটা ছেলের ফোটো ওত্ত লাগাতে পারত। ইশ! ইচ্ছে হলো কষে একটা থাপ্পড় মারতে।

অনেক সময়পর অতিথি আসল। আমাকে এসে সালাম দিল। আমি উত্তর দিলাম। ” বিয়ের আগে দেখা করা ঠিক না। একটা ভদ্র মেয়ে এসব পছন্দ করে না। অফিসের লোকজন খারাপ ভাববে। ” এই বলে মাথায় উড়নো দিল।
” দেখেন আমি বিয়ে করব না। বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নাই। মা- বাবা ভাই ভাবী আপনাকে আমার ঘাড়ে তুলে দিচ্ছে। এটা কিন্তু ঠিক না। ” এই বলে মেয়েটার দিকে চেয়ে রইলাম। মেয়েটা কালো মুখ করে আমার দিকে চেয়ে রইল।

কোনো মেয়ে ভাবে না তাদের সামনে কোনো ছেলে এ রকম উত্তর দিবে। মেয়েদের কে ভালবাসতে হয়। তাতেই তারা খুশি হয়। তাদের মন কে জয় করে নিতে হয়। তাদের কে নিয়ে বেঁচে তাকার স্বপ্ন দেখতে হয়। কিন্তু আমি অদ্ভুত রকম কথা বললাম। মেয়ে টা দুই পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার কেন যেন মনে হলো মেয়েটার একটা পা ত্যাড়া হয়ে গেছে। হয়তো আমি ভুল। মেয়েটা খুব সুন্দর করে বলল ” অফিসের ছাদে যাবেন? ” আমি একটা চড়ুইপাখির দিকে তাকালাম। অফিসের দেয়ালে ঝুলানো আছে। কি যেন খাচ্ছে। চড়ুইপাখি যে পরিমাণ খাবার খায় তবে মোটা হয় না। ফোটো টার মধ্যেও খায়। সব জায়গায় খায়।

মেয়েটা আবার বলল ” যাবেন। হা। করে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? মনে হচ্ছে ছাদে নিয়ে আপনাকে ফেলে দিব। এমন ভয় তাকলে দূর করে দেন। আমি এমন মেয়ে না। খুব সহজসরল। অল্পতেই মানুষ কে ভালবাসি। ” মেয়েটা সম্পর্কে আমার অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন জাগল। মেয়েটার মাথার চুল খাটো কেন? মেয়েটা কথা বলতে গেলে গালে মুখ বাঁকা করে কেন? মেয়েটা চশমা পড়ে কেন? মেয়েটা আমি আসার আগে মাথায় উড়নো না দিয়ে আসল কেন? মেয়েটা এই অল্প বয়সে চাকরী করে কেন? আর অনেক প্রশ্ন। আমি মেয়েটা কে বললাম ” আগামী শুক্রবারের পরের শুক্রবার দেখা করা যাবে?

মেয়েটা হাসল। মেয়েটার দাঁত দেখতে সাদা। সাদা না। অনেক সাদা তারপর একটা দাঁতের উপর আরেকটা দাঁত। ইশ! মেয়েটার দাঁতও সমস্যা। আজকালকের ছেলেরা তো এ রকম দাঁত দেখলে প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু আমার মনের মধ্যে প্রেম জাগে না কেন? অনেক প্রশ্ন মনের মধ্যে সৃষ্টি হয়। আমি একটা বাদাম খাইলাম। রাস্তা থেকে আসার সময় ২ টাকার বাদাম কিনেছিলাম। অতিথি কে বললাম ” পানি পাওয়া যাবে? ” অতিথি ” হা ” করে তাকিয়ে আছে। ওই যে আমি একটু ভিন্ন মনের মানুষ। একা একা খাইলাম । তারপর আবার পানির কথা জিজ্ঞাস করলাম।

মেয়েদের মধ্যেও অনেক লজ্জা আছে। যেই মেয়েটা চটপট করে অনেক প্রশ্ন করে। সেই মেয়েট যেকোনো একজন কে ভয় পায়। যেমন অতিথি আমাকে যেমন করে ভয় পাচ্ছে তেমন লজ্জাও পাচ্ছে। আমার ঘড়িতে এলার্ম বেজে উঠল। এই সময় টা শুধু আমার। আমি একাএকা থাকি। একা একা সব চিন্তা করি। মেয়েটার দিকে একটা হাসি দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে আসলাম। মেয়েটা আমাকে নিয়ে অনেক কিছু ভাবতে শুরু করেছে। ভাবুক। তামিম আহমেদ হিমু কাউকে স্বপ্ন দেখায় না তেমনি দেখেও না। স্বপ্ন সবার দেখা উচিৎ না। যারা স্বপ্ন নিয়ে বাঁচতে পারে তারাই স্বপ্ন দেখতে হয়।

বাসায় বসে বসে টিভি দেখতে নেই। বাসায় আপনি টিভির দিকে চেয়ে তাকবেন ঠিক আছে কিন্তু রিমোট তাকবে নারীদের হাতে। কারণ মেয়ে জাতটাই জেদি। একজন বিখ্যাত ব্যক্তি বলেছিলেন নারীদের কে বুঝতে যাবেন না। আপনি বুঝতে হলে শিশু বয়সে যেতে হবে। তখন আপনার হাতে রিমোট কেন মোবাইল টা পযর্ন্ত দিতে হবে।
আপনার কান্না থামানোর জন্য। ভাবী কাছে এসে বললেন ” মেয়েটা দেখতে কেমন ছিল? মেয়েটার সাথে কি ভালো ভাবে কথা বলেছ ? মেয়েটা কে নিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরতে গেলে ? এরপর আর প্রশ্ন করতে পারেন নি। রিমোট টা মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিলাম। এখন শুধু ভ্যাএএএএএ ভ্যাএএএএএএ শব্দ শুনা যায়। মা কাছে এসে বললেন ” হারামজাদা বিয়ে তো করবি না সেটা ভালো করে জানি কিন্তু বেয়াদবি করিস কেন ? ”

মা কে আপনারা চিনেন নাতো। একটা ভালো মানুষ। বেশি করে ভালো মানুষ বললাম। ভাবী হলেন মায়ের বান্ধবীর মেয়ে। ভাবী কে বেশি মায়া করেন। মা আমাকে ছোট বেলা থেকে নারকেল গাছের পাতা দিয়ে বেধে রাখতেন। যাতে করে আমি কামড় দিয়ে পাতা টা ছিঁড়ে দৌড় দিয়ে পালাতে পারি। এটাই আমার মা। হঠাৎ করে বৃষ্টি আসল। আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকি নি। জানালার কাছে চলে আসলাম। ইশ! জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে। একটা পাখির বাসা ভিজে যাচ্ছে। পাখি টা তার সমস্ত দেহ দিয়ে বাচ্চাদের ঘুরে রাখছে। কিছুতেই বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে পারছে না। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি।

আমার পকেটের ভিতর একটা হনহন শব্দ হলো। বুঝতে পারলাম না কিসের শব্দ। এখন কিছুই বুঝতে পারি না। শুধু বুঝার চেষ্টা করি। এখন মনে পড়ল। পকেটের ভিতর ১১০০ টাকার একটা মোবাইল ফোন আছে। মোবাইল নিয়ে অনেক ইতিহাস। সেটা এক বন্ধু বান্ধবীর ছেলের মোবাইল। পিচ্চি ছেলে সারাদিন গেইম খেলত তারপর পিচ্চি ছেলের মা আমাকে মোবাইল টা দিয়ে দেন। টাকা নিতে চায় নি। কিন্তু আমিও ১১০০ টাকা দিয়ে বললাম সব টাকা দিয়ে ছেলেটা কে চকলেট কিনে দিবেন।

মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখলাম একটা অচিন নাম্বার। তাও ০১৩। আমি কোনো দিন এ রকম নাম্বার দেখে নি। আমি ভাবলাম আমার কোনো মামা হবেন। মামা বিদেশে থাকেন। তাই বিদেশি নাম্বার ভেবে কল ধরলাম। সালাম দিলাম। কিন্তু একটা চিকন বাঁশের মতো কন্ঠ আসল। আমার বুঝতে বাকী রইল না এটা একটা মেয়ে কন্ঠ । মেয়েটা চুপ করে রইল। একসময় খুব জোরে বলল ” আপনি এতো নিষ্ঠুর কেন? ”

এই কথা টা বলে ফোন টা কেটে দিল। আমি বুঝতে পারছি অতিথি কল দিয়েছিল। আসলে নিষ্ঠুর হওয়া ভালো। আমার একটা বন্ধু ছিল। দু’জন খুব একসাথে তাকতাম। সে ঢাকায় জব করে। তার একটা গফ ছিল। মেয়েটা কে খুব ভালবাসতো। কিন্তু মেয়েটা কি করল। ফ্রান্সের জামাই বিয়ে করে ফ্রান্স চলে গেল। কি অদ্ভুত রকমের কাহিনী।
আমি কিছু বললাম না। রাত যদি শেষ না হয় তখন আপনি কি করবেন?

অবশ্যই গফ কে কল দিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু আমি রাতের আধারে ” তারা ” দেখি। সব দেখা যায় না। আমার মনে হয় আমি সব দেখি। ” তারার ” দিকে চেয়ে তাকবেন অনেক সময়। দেখবেন মনের ভিতর এক ধরণের সুখ আসবে। সুখ এসে আপনার মন কে ছুঁয়ে দিয়ে যাবে। আবার হনহন শুব্দ হলো। আমি ধরলাম। ” আপনি কাল দেখা করতে পারবেন ? ” এই কথা বলে নাকের পানি মুছল। আমি শব্দ শুনতে পাইছি। আমার খুব মায়া হলো। মেয়েটা খুব কান্না করেছে। মেয়েরা কান্না করা ভালো। কান্না করলে মনের কষ্ট দূর হয়। যদি দূর না হতো তাইলে মানুষ কান্না করে কেন?

আমি পরের দিন মেয়েটার অফিসের সামনে গেলাম। অফিসের সামনে অনেক ফুল গাছ। ফুলের ঘ্রাণ টা অনেক মধুর। তবে মধুর মতো মিষ্টি না। কিন্তু মানুষ যে বলে মধুর মতো মিষ্টি তাই বললাম। মেয়েটা অনেক ব্যস্ত ছিল। মুখ দিয়ে ঘাম বের হচ্ছে। মেয়েটা অনেক কাজ করছিল । দেখেই বুঝা যাচ্ছে। অতিথি বলল ” রিক্সায় উঠেন। ” এই কথা বলে একটা রিক্সা ডাক দিল। আমি উঠলাম। তবে একদম ভদ্র ছেলের মতো বসলাম। কোনো দিন মেয়েদের পাশে বসে নি। মানুষ জন আমাকে দেখছে। আমার খুব লজ্জা হচ্ছে। মেয়েটা একটা নির্জন জায়গায় বসল। মেয়েটার প্রথম কথা ছিল ” আমার মা – বাবা কেউ নেই। ”

আমি চুপ করে রইলাম। কিছু বললাম না। ইশ! কত কষ্ট করে মেয়েটা বড় হয়েছে। মা- বাবা না তাকলে পৃথিবীর কোনো সুখ ” সুখ ” মনে হয়। মা- বাবা না তাকার কষ্ট আমি বুঝি। আমার এক বন্ধু ছিল অল্প বয়সেই তার মা – বাবা মারা যায়। তারপর থেকে একা একা বড় হয়েছে। সে এখন ” কাতার ” থাকে। মাঝে মাঝে আমার খুজ খবর নেয়।
আমি মেয়েটার দিকে চেয়ে রইলাম। কি মায়া! ইশ! মেয়েটার দিকে আমি মায়ার চোখ দিয়ে কোনো দিন তাকায় নি। যদি তাকাতাম তাইলে মেয়েটার অপূর্ব চোখের প্রেমে পড়ে যেতাম। মেয়েটা উঠে যেতে চাইল। আমার মনের চোখ দিয়ে মেয়েটার কষ্ট বুঝতে পারছি। মেয়েটার কষ্ট অন্য রকম। আমি যখন ছোট বেলায় শয়তানি করতাম। তখন মা আমাকে অনেক মারতেন। মা কে একদিন রাগ করে বলেছিলাম ” যত পারো মারতে তাকো আমি সব মার সহ্য করে নিব। ” মেয়েটাও হয়তো মনে মনে বলছে ” যত পারো কষ্ট দিতে তাকো সব কষ্ট সহ্য করে নিব। ” মেয়েদের মন টাই এমন।

আমি অনেকদিন পর মেয়েটার কথা স্মরণ করলাম। খুব মনে পড়ছে মেয়েটা কে। মেয়েদের কে আপন করে নিতে চাইবেন তখন এরা সব কাজের বাধা হয়ে দাঁড়াবে। খেতে, ঘুমাতে, হাঁটতে, বসতে, ঘুরতে সব খানে মেয়েদের কথা মনে হবে। মেয়েরা নিত্যদিনের সঙ্গি হয়ে দাঁড়াবে। মেয়েটার অফিসের সামনে গেলাম। মেয়েদের সব কথা শেষ হয়ে যায় না। মেয়েরা অনেক কথা জমা রাখে। আমি অতিথি কে কল দিলাম। প্রথমে আসতে চায় নি। আমি জোর করলাম। কিছু সময় পর মেয়েটা আসল। চোখের কোণে কালো দাগ পড়েছে হয়তো মেয়েটা ঠিক মতো করে ঘুমায় না। ” ফুচকা খাবেন ” এই কথা বলে মেয়েটার দিকে চেয়ে রইলাম। মাথা নিচের দিকে করে রেখেছে। মাথা টা কিছুতেই তুলছে না। তুললে এমন কি হয়? মনে মনে ভাবতে লাগলাম। ” আমি ফুচকা খাই না ” এই কথা বলে অসহায় দৃষ্টিতে মেয়েটা আমার দিকে চেয়ে রইল।

ইশ! কি মায়াবী চেহারা। সব মায়ায় পড়তে নেই। তবে যারা আপন হয়ে যায় তাদের মায়াবী চেহারা টা আপন করে নিতে হয়। দু’জন হাঁটছি শহরের লাল নিল হলুদ বাতির নিচ দিয়ে হাঁটতে কার না ভালো লাগে। এ সময় টায় মনের ভিতরের অনেক স্বপ্ন জাগে। পথ চলতে ভালো লাগে। আমি অতিথির হাত টা ধরলাম। খুব শক্ত করে। এ হাত ধরা অনন্তকালের জন্য।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত