নোবেল করোনা ভাইরাস নিয়ে কিছু কথা

নোবেল করোনা ভাইরাস নিয়ে কিছু কথা

নোবেল করোনা ভাইরাস এখন আতঙ্কের সমার্থক শব্দ হয়ে গেছে। সারা বিশ্বে এখনো পর্যন্ত এক লক্ষের বেশি লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই ভাইরাস এখন ভারতবর্ষেও থাবা বসিয়েছে। করোনা ভাইরাস পৃথিবীতে বহু বছর ধরেই আছে। এটি আগে এত ভয়ানক ছিল না। কিন্তু ভাইরাসটা নিজের কিছু রদবদল করে ভয়ানক হয়ে উঠেছে। তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘নোবেল করোনা ভাইরাস।’

আমরা অবশ্য সুবিধার জন্য শুধু করোনা ভাইরাস বলব।করোনা ভাইরাস কিভাবে মিউটেশনের (mution) মাধ্যমে নোবেল করোনা ভাইরাস হল সেটা গবেষণাসাপেক্ষ বিষয়। এ বিষয়ে তেমন কিছু এখনো জানা যায়নি। আমরা এখানে কিছু দরকারী কথা সংক্ষেপে আলোচনা করব। আমরা প্রথমে আলোচনা করব কিছু গুজবের ব্যাপারে। কারণ এটা করোনা ভাইরাস এর থেকে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। তারপর কিছু প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে জেনে নেব এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে কি করতে হবে। এবং করোনা ভাইরাস এ আক্রান্ত হলে কি করবেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করা যাক।

গুজব১- মুরগির মাংস খেলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হবে:- এটা এমন এক গুজব, যার ধাক্কায় মুরগির মাংসের দাম ৭০টাকা/কেজিতে এসে ঠেকেছে। কার মাথা থেকে এটা এসেছে জানি না, কিন্তু মুরগির নামে এভাবে মানুষকে মুরগি করা ঠিক নয়। মুরগির মাংস নিশ্চিন্তে খান। মুরগির মাংস বা ডিম থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কোন ভয় নেই। তবে হ্যাঁ মাংস/ ডিম অবশ্যই ভালো করে রান্না করে খাবেন। নয়তো অন্যান্য অসুবিধায় পড়তে পারেন।
গুজব২- চীনাদ্রব্য কিনলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হবে:- না আলাদা করে চীনাদ্রব্যকে কাঠগড়ায় তোলার দরকার নেই। এখনো পর্যন্ত তথ্য যা বলছে তা হল করোনা ভাইরাস কোন ধাতব/ প্লাস্টিক পণ্যের ওপর ১০-১২ঘন্টা পর্যন্ত বাঁচে। আর এই ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় সেটা পরে বলছি।

গুজব ৩- করোনার সংক্রমণ হলে অনিবার্য মৃত্যু:- আজ্ঞে না, পরিসংখ্যান অনুযায়ী করোনা ভাইরাস আক্রান্তের মৃত্যুর হার ৩%‌। যারা মারা গেছেন তাদের বয়স ৬০বছরের ওপরে এবং এনারা প্রত্যেকে অন্য রোগে ভুগছিলেন।

গুজব ৪- করোনার কোন চিকিৎসা নেই:- কথাটা ঠিক আবার ঠিক নয়। করোনা ভাইরাস এর নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই, কিন্তু রোগ লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয় এবং তাতে খুব ভালো কাজ হয়েছে ও হচ্ছে।

গুজব ৫:- করোনা ভাইরাস এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে- না এখনো পর্যন্ত নোবেল করোনা ভাইরাস এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি।আমরা ফেসবুক/ হোয়াটসঅ্যাপ এ করোনা ভ্যাকসিন এর ছবি দেখছি সেটা সাধারণ করোনা ভাইরাস এর ভ্যাকসিন।

এবার আমরা করোনা ভাইরাস ও তার রোগ সংক্রান্ত কিছু সাধারণ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করব।
প্রথম প্রশ্ন যেটা আপনাদের মনে এসেছে সেটা হলো রোগের যখন চিকিৎসা আছে তখন সবাই একে এত ভয় পাচ্ছে কেন? এর মূল কারণ দুটি। প্রথমত রোগটি খুব সহজেই সংক্রামিত হয়। দ্বিতীয় কারণ হল এই রোগ সংক্রান্ত গুজব আরো দ্রুতবেগে সংক্রামিত হয়েছে। তাই অনুগ্রহ করে এবার থেকে কোন খবর পেলে সেটা যাচাই করে তবে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করবেন।

দ্বিতীয় প্রশ্ন: এই রোগের লক্ষণ কি?
উঃ-জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট। তবে এই রোগে সাধারণত সর্দি হয় না। সাধারণত ২ সপ্তাহ এই লক্ষণ থাকে। তবে critical case এ ৩-৬ সপ্তাহ পর্যন্ত এইসব লক্ষণ দেখা যায়।

৩য় প্রশ্ন:- এই লক্ষণ গুলো দেখলেই কি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ধরে নিতে হবে?
উঃ- না, যেকোনো সাধারণ সর্দি কাশিতে এসব লক্ষণ দেখা যায়। আপনি যদি গত কয়েকদিনের মধ্যে চীন বা করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে ঘুরে আসেন বা ঐসব দেশ থেকে আসা লোকের সাথে নিকট সংস্পর্শে এসে থাকেন এবং তারপর এই সব লক্ষণ দেখা যায় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। উনি অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা করবেন।

৪র্থ প্রশ্ন:- বাচ্চাদের কি এই রোগ দেখা যায়?
উঃ- খুব কম এখনো পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২% কমবয়সী শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে হ্যাঁ, এর মানে এটা নয় যে বাচ্চারা রোগগ্রস্ত হবে না। আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

৫ম প্রশ্ন:- খাবার এর মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়?
উঃ- আজ পর্যন্ত এরকম কিছু ঘটে নি।

৬ষ্ঠ প্রশ্ন:- তাহলে কি ভাবে রোগটি ছড়ায়?
উঃ- রোগাক্রান্ত লোকের মাধ্যমে (হ্যাঁ লোক, কোন পশু বা পাখির মাধ্যমে নয়)। কোন অসুস্থ মানুষের থেকে হাঁচি বা কাশির বা অন্য কিছুর মাধ্যমে করোনা ভাইরাস যদি কোন ভাবে সুস্থ মানুষের নাক, মুখ বা চোখের সংস্পর্শে আসে তবে সুস্থ মানুষটি অসুস্থ হয়ে যাবে।

৭ম প্রশ্ন:- করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে কি করব?
উঃ- প্রথমত গুজবে কান দেবেন না।
দ্বিতীয়ত নিজের হাত মাঝে মাঝেই hand sanitizer দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করুন। স্যানিটাইজার না থাকলে ঔষধের দোকান থেকে স্পিরিট (sprit) কিনে সমপরিমাণ জল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়াও-

* চোখে মুখে হাত দেওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। (কিন্তু সমস্যা হল যখনই ভাববেন চোখে হাত দেব না, তখনই দেখবেন চোখটা খুব চুলকাতে শুরু করেছে। কি আর করবেন? একটু সহ্য করুন)
*অসুস্থ লোকের থেকে ১মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন। এবং যথাসম্ভব ভীড় এড়িয়ে চলুন। (বলে তো দিলাম ভীড় এড়িয়ে চলুন। কিন্তু আপনি যদি অফিসযাত্রী হন এবং/ অথবা বনগাঁ লোকালে যাতায়াত করেন, তবে এ নিয়ম মেনে চলা অসম্ভব। বনগাঁ লোকালে এক মিটার তো দূর অস্ত! এক মিলিমিটার জায়গা পাওয়া যায় না। তাই বললাম ‘যথাসম্ভব’)।

* বিদেশ যাত্রা বাতিল করুন। একমাত্র আন্টার্টিকা ছাড়া সব দেশেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের খবর/সম্ভাবনা আছে।
* প্রচুর জল পান করুন। বাইরের খাবার আপাতত এড়িয়ে চলুন।
* জামাকাপড় রোদে শুকিয়ে তারপর ব্যবহার করুন।
* হাঁচি কাশির সময়ে হাতের তালু নয়, বাহু দিয়ে মুখ ঢাকুন অথবা রুমাল ব্যবহার করুন ও সেটা রোজ পরিবর্তন/পরিস্কার করুন।
* যথাসম্ভব গরম জল পান করুন।
* Hand shake বাদ দিন। নমস্কার করে সম্ভাষণ জানান।
* দিনের বেশ খানিকটা সময় সূর্যের আলোয় কাটান।

৮ম প্রশ্ন:-মাস্কের ব্যবহার করব কি?
উঃ-সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে তবে যারা অসুস্থ তাদেরই এটা ব্যবহার করা উচিত। সুস্থ মানুষের এটা ব্যবহার করতে পারেন নাও ব্যবহার করতে পারেন। তবে সমস্যা হল মাস্ক পড়লে বারবার চোখে মুখে হাত চলে যায়। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৯ম প্রশ্ন:- সাধারণ ল্যাবে কি এর পরীক্ষা হয়?
উঃ- না, একমাত্র BSL4 lab এ করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা হয়।

১০ম প্রশ্ন:- কাদের এই ভাইরাস থেকে ভয় বেশি?
উঃ- যাদের অনাক্রম্যতার (Immunity) ক্ষমতা কম তাদের ভয় বেশি। তাই যথাসম্ভব শাকসবজি টাটকা ফল খান। পরিস্কার জামা পড়ুন ও পরিস্কার থাকুন।

১১তম প্রশ্ন:- যদি পরীক্ষা করে দেখা যায় আপনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তাহলে কি করবেন?
উঃ- আতঙ্কিত হবেন না বা আবেগপ্রবন হয়ে ‘ হে পৃথিবী বিদায় তোমায়’ / ‘ আমারো তো সাধ ছিল’ এই জাতীয় গান গাইতে শুরু করবেন না। সময় নষ্ট না করে সোজা হাসপাতালে চলে যান।

১২তম প্রশ্ন:- পোষ্য থেকে এ রোগ হতে পারে?
উঃ- না, এখনো পর্যন্ত এরকম কিছু ঘটে নি। সুতরাং বাড়ির কুকুর/বিড়াল কে না তাড়ালেও চলবে।

পরিশেষে একটা কথা বলা দরকার। আমাদের দেশে ডাক্তারদের অপমান করা একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। কিন্তু আজ দেখুন স্কুল-কলেজ , অফিস সব বন্ধ। শুধু খোলা আছে হাসপাতাল । ডাক্তার সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছেন। ভারতের মত over-populated দেশে যেখানে সংক্রমণ আটকানো প্রায় অসম্ভব সেখানে করোনা ভাইরাস এর সংক্রমণ যে এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে তার বড় কারণ এই ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তৎপরতা। সময় পেলে একটু এই বিষয়টি নিয়ে ভাববেন। সবাই সতর্ক থাকুন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সবাই চেষ্টা করলে এই ভাইরাস ঠেকানো সম্ভব হবে। আরো কিছু জানতে হলে নীচে দেওয়া

Ministry of health and family welfare এর হেল্প লাইন নম্বরে ফোন করুন
+৯১-১১-২৩৯৭৮০৪৬

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত