ডাক্তার মুচকি হাসি দিয়ে বললো-মেয়ে বাবু হবে।ডাক্তারের মুখে হাসি দেখলেও কিন্তু আমার স্বামীর মুখে হাসিটুকু নাই অনেকটা কষ্ট পেয়েছেন উনি এই কথা শুনে।কি করে খুশি হবে সেই?উনি তো চেয়েছিলো এবার ছেলে হবে কিন্তু না দুটা মেয়ের পরে আবারো মেয়ে।ক্লিনিক থেকে বাহির হয়ে আমার স্বামী রাগী সুরে বলে-
_রিক্সা নিয়ে তুমি চলে যাও বাসায়!
_আমি একা যেতে পারবো না আমার ভয় লাগে তুমি চলো না আমার সাথে।
_না আমি এখন যাবো না,দোকানে যেতে হবে তুমি একা যেতে পারবে সমস্যা হবে না।
এই কথা বলে সেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কোনো কথা বলছে না।আগে কোথাও বাহিরে গেলে সেই আমাকে আমার পছন্দের ফুচকা খাওয়াতো কিন্তু আজ কিছু বলছে না আজ আমার অনেক ইচ্ছা ছিলো একসাথে ফুচকা খাবো কিন্তু রিজিকে ছিলো না।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে একটা রিক্সা আসলে সেই আমাকে উঠিয়ে দিয়ে চলে গেলো।একবার ও বললো না সাবধানে যাও।আচ্ছা আমার কি দোষ মহান অাল্লাহ্ যদি মেয়ে দেন আমার কি করার আছে?
কিন্তু আমি অালহামদুলিল্লাহ্ খুশি আমার দুই মেয়ে রাত্রি আর রিতু’কে নিয়ে।অনেক সুন্দর আমার মেয়েরা। একা একা বাড়িতে আসি,আমার স্বামী রাতে যখন বাড়িতে ফিরে খাবার টেবিলে খেতে বসলে তখন সেই আমাকে বলে-
_সকালে বাড়ি যাবো এখন থেকে তুমি গ্রামে থাকবে।
_কিসের জন্য?
_এখন তুমি প্যাগনেন্ট তোমাকে কেয়ার করার মতো কেউ নাই বাড়িতে সবাই আছে ওখানে ভালো হবে।
_আর তুমি একা থাকবে কি করে রান্না করবে কেমন করে?
_আমার চিন্তা করতে হবে না আমি হোটেলে খেয়ে নিবো।
_না এটা হবে না তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে। অামার স্বামী রাগী কণ্ঠে আমাকে বলে-
_আমি বলছি তুমি গ্রামে যাবে তো সকালে রেডি হয়ে থাকবা আর কিছু শুনতে চাই না।
আমার প্রথম মেয়ে দুনিয়াতে আসার সময় আমার স্বামী আমার অনেক কেয়ার করছে,দ্বিতীয় মেয়ে দুনিয়াতে আসার সময় তেমন কেয়ার না করলেও কিন্তু পাশে পাশে ছিলো কিন্তু এখন আমি এখন প্যাগনেন্ট এই সময়ে সে পাশে থাকা আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কারণ সেই ভরসা দিলে আমার আর ভয় লাগে না,কিন্তু সে ভাগ্য আমার আর হলো না।
আমার স্বামী আমাকে গ্রামে পরিবারে কাছে রেখে চট্টগ্রাম চলে যায়,চট্টগ্রাম চলে যাওয়ার পর থেকে সে কেমন জানি দিনদিন বদলে যাচ্ছে। যে কোনো কথায় রাগ করে কথা বলে তবে আমি হাসিমুখে মেনে নিই।কারণ কেউ একজন বলেছে- যে সম্পর্কে ভালেবাসা বেশি সে সম্পর্কে নাকি রাগ ঝগড়াও বেশি। কিন্তু না আমার স্বামী প্রায় এমন করে আমার সাথে অবহেলা দিন যাচ্ছে আমার।আমার পেটে ধীরেধীরে বড় হচ্ছে আমার মিষ্টি মেয়েটা।আমার দুই মেয়ে অনেক খুশি তাদের আরেকটা বোন আসবে যোগ হবে আরেকটা খেলার সাথী।স্বামী খরচের টাকা পয়সা সব দিচ্ছে কিন্তু কিসের জন্য এমন ব্যবহার করে বুঝতে পারি না।কিছুদিন পরে জানতে পারি সেই নাকি আমার চাচাতো বোন অারশি’কে বিয়ে করে।
অারশি বিবাহিত মেয়ে চট্টগ্রাম ভূমি অফিসে জব করে যদি তার স্বামীর সাথে ঝগড়া হয়ে ডিভোর্স হয়ে যায় তার।ডিভোর্স হওয়ার দুই মাস পরে সেই আমার স্বামীকে বিয়ে করে।আরশি আমার চাচাতো বোন হয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে, হয়তো আমার স্বামী তাকে বিয়ে করছে ছেলে সন্তান দুনিয়াতে আসবে।কিন্তু ছেলে মেয়ে অাল্লাহর দান যেটা আমার স্বামী বুঝলো না। আমার স্বামী অারশি’কে বিয়ে করার আগে প্রতি সপ্তাহে বাড়ি আসতো মেয়েদের দেখার জন্য যদি এখন প্রতি মাসে বাড়িতে আসে।আমার বড় মেয়ে রাত্রি তার বাবা দেরিতে আসে তাই আমাকে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে-
_মা বাবা কি এখন আমাকে ভালোবাসে না?
_হ্যাঁ ভালোবাসে।
_মা বাবা কি তোমাকে এখন আগের মতো ভালোবাসে না?
_হ্যাঁ অনেক ভালোবাসে।
একমাস হয়ে গেছে অথচ সেই এখনো বাড়িতে আসে নাই আমি তার অপেক্ষায় সকাল সন্ধ্যায় বসে থাকি।আমার মিষ্টি মেয়েটা আর কিছুদিন পরে দুনিয়াতে আসবে অদৌ কি থাকে এক নজর দেখতে উনি গ্রামে আসবে.?