প্রিয়ন্তির সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর জানতে পারলাম ওর আরেকটা বোন আছে নাম অবন্তী ঠিক তার মত দেখতে। প্রথমে বিশ্বাস করিনি কিন্তু সামনাসামনি আসার পর বিশ্বাস না করে পারলাম না। হুবুহু দুজনের ফেইস একরকম। এতদিন সিনেমায় দেখতাম দুজনের চেহারা একরকম এখন বাস্তবে দেখলাম। যদি কোনোদিন অবন্তী এসে বলে আমি প্রিয়ন্তি তখন আমার বুঝা মুশকিল হবে। তারপর প্রিয়ন্তি ভেবেই সবকিছু হবে।
ঐদিনের পর থেকে খুব চিন্তিত ছিলাম। তার থেকে বড় আশ্চর্যের কথা হলো অবন্তী নাকি আমাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করে। কিন্তু বলবে বলবে করে আর বলতে পারেনি। বুক ফুটে তো মুখ ফুটে না কথার মত। আজ সুযোগ পেয়েই সব কথা খুলে বললো। কিন্তু সম্পর্ক প্রিয়ন্তির সাথে করে ফেলছি বলে অবন্তীকে না করে দেই।
– তুমি অন্য কাউকে পছন্দ করে সম্পর্ক গড়ো।
– কখনো সম্ভব না। যাকে একবার ভালো লাগে তাকে ছাড়া অন্যকারো সাথে চাইলেও সম্পর্ক করা যায় না।
– তাহলে এখন কি করবা?
– আপনার সাথেই সম্পর্ক করবো।
– কি বলো এসব? দুইবোনের সাথে সম্পর্ক? এটা কি পসিবল?
– কেনো পসিবল না। দুইটা বিয়ে করতে পারলে দুইটা প্রেম করা যাবে না কেনো? অবন্তির কথায় তো যথেষ্ট যুক্তি আছে। বললাম।
– আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাজি।
শেষমেশ অবন্তীর সাথেও সম্পর্ক হয়ে যায়। কিন্তু পরে টের পেলাম দুইবোনের সাথে সম্পর্ক করে জীবনটা ত্যানা ত্যানা হয়ে যাচ্ছে। সকালে অবন্তীকে সময় দিলে বিকালে প্রিয়ন্তিকে সময় দিতে হয়। মানুষ একটাই পায় না আর আমি দুইটার সাথে। তাও যমজ দুই বোনের সাথে। এটা যদি সিঙ্গেলরা জানতে পারে তাহলে আমাকে আস্ত রাখবে না। দৈনিক হাজার হাজার মিথ্যা বলে দুইবোনের সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখছি। অবশেষে একদিন প্রিয়ন্তি জেনে যায় যে অবন্তীর সাথেও আমার সম্পর্ক আছে। প্রথমে ভাবছিলাম প্রিয়ন্তি আমার সাথে ব্রেকাপ করবে কিন্তু না প্রিয়ন্তি আমাকে কিছুতেই অন্যকারো হতে দিবে না বলে প্রতিজ্ঞা করে।
প্রিয়ন্তি আমাকে বশ করার জন্য কবিরাজের কাছে আমাকে নিয়ে যায়। একটা তাবিজ দিলো আর সেটা প্রিয়ন্তি আমার বাম হাতে বেঁধে দিলো। এটা জানতে পেরে অবন্তীও কবিরাজের কাছ থেকে তাবিজ এনে আরেক হাতে বেঁধে দিলো। আমার কাছে মনে হয় দু’জনই আমাকে নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামছে। আর পুরস্কার হলো আমি। আমার বেশ ভালোই কাটছে দুজনের সাথে সম্পর্ক করে। আবার খারাপও লাগছে শেষ পরিনতি কি হবে ভেবে। একবার টাকার খুব প্রয়োজন হয়। বাবার কাছে গেলে দেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে প্রিয়ন্তির কাছে গেলাম। একহাজার টাকা দিলো। এটা জানতে পেরে অবন্তী আমাকে দুই হাজার টাকা দিলো। অনুভব করলাম টাকায় পকেট আগুনের মত গরম। ধারের টাকা মাত্র দুইশো এদিকে দুই বোনের থেকে সব মিলিয়ে তিন হাজার টাকা পাইছি। আয়নার সামনে গিয়ে একটা কথাই ভাবী এই দুনিয়াতে আমার মত ক্রিমিনাল আর একটাও নাই।
যাইহোক ক’দিন দুইবোনের টাকায় উরাধুরা চললাম। এইভাবে অনেক টাকা দুইবোন আমাকে দেয়। যদি একজন দেয় একশো তাহলে অপরজন দেয় দুশো। যদি অবন্তী দেয় একটা কিস তাহলে প্রিয়ন্তি দেয় দুটো কিস। বেশ সুখেই কাটছিলো যমজ দুইবোনের সাথে সম্পর্ক করে। সবকিছু মিলিয়ে বেশ সুখেই কাটছিলো। হঠাৎ একদিন সম্পর্কের মাঝে ঝড় বয়ে আসে। মানে অবন্তী আর প্রিয়ন্তি দুজনে চাপ দেয় বিয়ের জন্য। মনে হয় বাসা থেকে ওদেরকে চাপ দিছে তাই এখন আমার কাছে আসছে। কিন্তু আমি তো যেকোনো একজনকে বিয়ে করবো। এবার ডিসাইডের পালা। অনেক ভাবার পরও দুজনের কাউকে বাদ দিতে পারলাম না। কেমনেই বা দিবো দু’জনই আমাকে ভালোবাসে। কারো ভালোবাসা থেকে কারো ভালোবাসা কম নয়। বাসায় এসে বাবাকে বললে।
– ঐ হারামজাদা এইটা তুই কি করছিস? আমি একটা বিয়ে করেই পস্তাই আর তুই দুইটাকে বিয়ে করবি। পাশে আম্মু ছিলো বাবা সেটা খেয়াল করেনি। আম্মু বাবার উপর চরম রেগে গিয়ে বললো।
– বিয়ের আগে যে আমার পিছন পিছন বেহায়ার মত ঘুরতেন সেইদিনের কথা কী ভুলে গেছেন। বাপ যেমন ছেলে তো এমনই হবে। বাপে করছে একটা বিয়া ছেলে করবে দুইটা। আগের যুগ নাই আপডেট হইছে। আম্মুর কথায় বাবা ফুটা বেলুনের মত চুপসে গেছে। আম্মু এবার চোখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো।
– আসলে আম্মু ওরা দুজন যদি আমাকে ভালোবাসে তাহলে আমি কি করবো?
– যেকোনো একজনকে বেছে নিবি।
– কিন্তু আম্মু ওরা যমজ বোন। দুজনের চেহারা দেখে কে অবন্তী আর কে প্রিয়ন্তি চেনা যায় না।
– তাহলে যাকে প্রথমে ভালোবাসতি তাকে একটা সিল মেরে দিতি।
– কি বলো আম্মু সিল কোথায় মারবো?
– আচ্ছা ঠিক আছে যা ভালো মনে হয় তাই কর।
অবশেষে দুই বোনকে বিয়ে করতে হয়। মাস শেষে হাতে টাকা নিয়ে গুনে গুনে অবন্তীর কাছে গেলাম। টাকা দেখেই অবন্তী বললো।
– আমার দুহাজার টাকা লাগবে। বিয়ের আগে অবন্তীর কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছি এই ভেবে অবন্তীকে দুহাজার টাকা দিয়ে দিলাম। এটা লুকিয়ে দেখে প্রিয়ন্তিও চেয়ে বসলো।
– ওরে দিছো দুহাজার এখন আমাকে দিতে হবে চারহাজার। প্রিয়ন্তির কাছ থেকেও অনেক টাকা নিয়েছি তাই ওরেও দিয়ে দিলাম ডাবল টাকা। কিন্তু ওরা থেমে নেই। মাসে দু-তিনবার টাকা চেয়ে বসে। যে টাকা বিয়ের আগে আনছিলাম সব টাকাই সুদেআসলে নিবে মনে হয়। তারা দুইবোন মিলে মাসুল তুলতেছে। যে টাকা মাইনে পাই তার সব টাকা ওদের দুজনের পিছনেই চলে যায়। বিয়ের আগে দুইবোন যে টাকা ছ’মাসে দিছিলো সেই টাকা ওরা দুবোন দুইমাসেই নিয়ে যায়। অবশেষে আমাকে ফকির বানিয়ে দেয়। বাস্তবের সাথে পুরোটা মিল নেই।