অদলবদল

অদলবদল

ফোন রিসিভ করতেই প্লাবন বললো, “আচ্ছা, বাবুকে ডায়াপারটা কীভাবে পরাবো বলোতো? এটা তো সামনে, পিছনে সবদিক দেখতে একইরকম!” আমি ফিক করে হেসে বললাম, “থাক! ওকে ডায়াপার পরাতে হবে না।”

– আচ্ছা, দাঁড়াও দাঁড়াও। ফোন কেটো না! সুজি বানাতে কয় চামচ চিনি লাগে?
– সুজি আমি বানিয়ে রেখে এসেছি। টেবিলে বাটিতে ঢেকে রাখা আছে, দেখো।

প্লাবন বিরক্তকণ্ঠে বললো, “তুমি যদি সব করেই রাখো তবে আমি আর কী করবো?” আমি হাসি চেপে বললাম, “তুমি শুধু বাবুর দিকে আর ঘরের দিকে খেয়াল রাখো। তাহলেই হবে।” বলে ফোন কেটে দিলাম।

রায়লা টিপ্পনী কেটে বললো, “কী হয়েছে রে?” আমি হাসতে হাসতে বললাম, “আর বলিস না! গতকাল প্লাবনের সাথে মারাত্মক একটা ঝগড়া হয়েছে। অফিস থেকে ফিরে বলে, “এখনও কাজ শেষ হয় নাই তোমার? সারাদিন বাসায় বসে কী করো?” কথাটা শুনে যা মেজাজ গরম হলো না! সারাদিন বাবুর খেয়াল রাখা, রান্নাবান্না, ঘর গুছানো, কাপড় ধোয়া এগুলো কি কম কাজ? ও তো তাও সপ্তাহে একদিন ছুটি পায়। আমার কি কোন ছুটি আছে, বল? এগুলো শুনে ও জেদ করে বলল, “ঠিক আছে৷ কালকে শুক্রবার। আমার ছুটি, তোমাকেও ছুটি দিলাম। কাল সারাদিন ঘরে থাকবো, বাবুকে সামলানো আর ঘরের কাজগুলো আমিই করবো। তুমি কাল তোমার ইচ্ছামতো কাটাবে, যাও!” আমিও আর কম যাই কিসে! বেড়াতে এসেছি তোর বাসায়।”

– “খুব ভালো করেছিস। আজ ভাইয়া বুঝবে কতো গমে কতো আটা!” রায়লা মুখ চেপে বললো। ঠিক তখনই মোবাইলে টুং করে মেসেজের শব্দ হলো। দেখলাম, প্লাবন একটা ভিডিও পাঠিয়েছে মেসেঞ্জারে। সাথে লেখা “এখন ঠিক তখনই মোবাইলে টুং করে মেসেজের শব্দ হলো। দেখলাম, প্লাবন একটা ভিডিও পাঠিয়েছে মেসেঞ্জারে। সাথে লেখা “এখন কী করবো?” ভিডিও ওপেন করে দেখি, রান্নাঘরের অবস্থা সয়লাব! ভাতের মাড় পড়ে চারদিক থৈথৈ করছে। মুরগির গোশত রান্না করেছে, কিন্তু লবণ দিয়েছে তিন চামচ! আলু-পটলের খোসা, ময়লা পানি সবকিছু দিয়ে মেঝে মাখামাখি হয়ে আছে! সর্বনাশ! প্লাবনকে রিপ্লাই দিলাম, “কী আর করবে? রান্নাঘরটা পরিষ্কার করে ফেলো। কাপড় দিয়ে মেঝেটা মুছে ফেলো। পারলে ঘরের মেঝেও মুছে ফেলো ভালো করে।”

রিপ্লাইটা দিয়ে মনে মনে ভাবলাম, আজ ও একদিনের জন্য সিন্ডারেলা হয়ে দেখুক, প্রতিদিন সিন্ডারেলা হতে আমার কতো মজা লাগে! রায়লার সাথে শপিংমলে গিয়ে এক ঘন্টার মতো ঘুরে ঘুরে কিছু কাপড় কেনাকাটা করলাম। বাবুর জন্য একটা খেলনা জীপগাড়ি বেশ পছন্দ হয়ে গেল। কিনে নিলাম ছেলের জন্য। এই একঘন্টায় প্লাবন গুনে গুনে পনেরোবার ফোন করেছে আমাকে। “বাবুকে কিছুতেই ঘুম পাড়াতে পারছি না। আমি ঘুম পাড়ানি গান গাইলে ও ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদে। আচ্ছা, কাপড় ধুয়ে শুকাতে দিবো, কিন্তু ক্লিপ খুঁজে পাচ্ছি না। আমার সাদা রঙের মোজাটা কোথায় রেখেছো? আচ্ছা শুনো, ডালে হলুদ আগে দিতে হয় নাকি মরিচ আগে?” আরও কতো কতো প্রশ্ন!

বিকেলে পার্ক থেকে হেঁটে বাসায় ফেরার সময় প্লাবনকে আমি নিজেই ফোন দিলাম। বেচারার উপর এতো চাপ দিয়ে বাবুকে বাসায় রেখে নিশ্চিন্ত মনে ঘুরে বেড়ানো ঠিক হচ্ছে না! প্লাবনকে জিজ্ঞেস করলাম খেয়েছে কি না! ও জানালো, নিজে তো খেয়েছেই এমনকি বাবুকেও সুজি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। বাবুর ঘুমন্ত ছবি তুলে পাঠালো। আমি হেসে বললাম, “গুড বয়। এইতো স্বামীর মতো স্বামী। বাসায় ফেরার সময় তোমার জন্য কিছু নিয়ে আসবো?”
ওপাশ থেকে প্লাবন বলল, “কিছু লাগবে না৷ শুধু ‘মুভ’ কিনে এনো। শরীরটা খুবই ম্যাজম্যাজ করতেছে।”
আমি “আচ্ছা” বলে মুচকি হেসে ফোন কেটে দিলাম।

বাসায় ফিরে বেশ কয়েকবার কলিংবেল বাজালাম, প্লাবনের খোলার নাম নেই। ফোন বের করে কয়েকবার কল দিলাম, ফোন বেজেই চলছে। তার মানে ও ঘরেই আছে। কিন্তু প্লাবন ফোন রিসিভ করছে না। চিন্তা বেড়ে গেল মনে। দরজার নক ঘুরাতেই দেখি দরজা ভেতর থেকে খোলা। আশ্চর্য! দরজা খুলে রেখে ভেতরে কী করছে ও! দরজা খুলে আমি ভিতরে ঢুকে বেডরুমে ছুটে গেলাম। প্লাবন বিছানার উপর হাত পা ছড়িয়ে হা করে ঘুমাচ্ছে। পায়ের বালিশ মাথার পাশে আর মাথার বালিশ খাটের নিচে পড়ে আছে। আমার ছেলেটা ওর বুকের উপর বসে
ছোট্ট দুইহাতে চাপড় দিয়ে বলছে, “গুম্মি পাপা, গুম্মি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত