প্রেম হওয়ার সাত দিনের মাথায় বাচ্চার নাম ঠিক করে ফেললাম। আমার আবার মেয়েবাবুর শখ। নাম রাখলাম নুপুর। প্রেমিকার নাম্বার ফোনে সেভ করলাম “নুপুরের আম্মু” দিয়ে। এদিকে সেদিন ওয়ারড্রবের উপর মোবাইল রেখে গোসল করতে গেছি। ফোনে “নুপুরের আম্মু”র নাম্বার থেকে কল আসছে। আম্মা ফোন হাতে নিয়ে এটা দেখছে। তারপর আমি ওয়াশরুমের দরজা খোলার সাথে সাথে আমার দিকে আগায়ে আসতেছে। আমি ভাবতেছি, আজকে আমি শেষ!!! আম্মা এখন আমারে ফুটবল বানায়ে লাত্থাবে। তবে গুলি কানের উপর দিয়ে গেলো। আম্মা রাগী রাগী কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো, তিন তলার নুপুরের আম্মু তোরে কল দিছিলো কেন?
আমি মনে মনে নুপুরের আম্মু আন্টিকে প্রচুর ধন্যবাদ দিলাম। আল্লাহ বাঁচাইছে টাইপ ফিল নিয়ে আম্মারে বললাম, নুপুর মাঝেমধ্যে পড়া না বুঝলে আন্টি আমাকে কল দেয় নুপুরকে একটু দেখায়ে দেয়ার জন্য। একই বাসায় থাকি! বড় ভাই হিসেবে তো একটা দায়িত্ব আছে তাই না মা? আম্মা কিছু বললো না। কেমন একটু একটু সন্দেহ করলো। তবে ঠিক কারে নিয়ে সন্দেহ করলো এইটা বুঝলাম না। তার ঠিক দুইদিন পর আম্মার সন্দেহ আরও গাঢ় হলো। তবে এইবার আর আমারে নিয়া না, ডাইরেক্ট আমার বাপেরে নিয়া। আম্মা এখন আব্বারে সন্দেহ করা শুরু করছে। নিজেরে মনে হইতেছে বাপের মাথায় বন্দুক রাইখা কাঁঠাল ভাইঙ্গা খাইতেছি।
যাই হোক, সেদিন দুপুরের পর আম্মা ভাত টাত খাইয়া বিছানায় গড়াগড়ি খাইতেছে এমন সময় নুপুরের আম্মু এসে কলিং বেল টিপছে। আম্মা দরজা খুলেই দেখে আন্টির হাতে আব্বার সবুজ চেক চেক শার্ট। আম্মা মোটামুটি চিৎকার দিয়ে বললো, আপনার হাতে এই শার্ট কেন? তলে তলে এই কাহিনী? নুপুরের আম্মু সেই শার্ট আম্মার হাতে দিয়া বললো, ভাবী, প্লিজ ভুল বুঝবেন না। আসলে এই একই রকম একটা শার্ট আপনার ভাইয়েরও আছে। আমি ছাদ থেকে ভুলে এটা তুলে নিয়ে আসছি। পরে বাসায় নিয়ে এসে সাইজ দেখে শিওর হলাম এইটা আমারটার সাইজ না। আম্মা ছোঁ মেরে শার্ট নিয়ে নুপুরের আম্মুর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলেন। ভদ্রমহিলা পড়লেন ফাঁপড়ে। বেচারি জানলেনও না তাকে নিয়া আমাদের বাসায় কী কী চলতেছে। আমি এবং আমার বাবা দুইজনই আম্মার সন্দেহের তালিকায়। আম্মা নিজেও বুঝতেছে না ঘরে কী সতীন আসবে না বউমা।
এদিকে সেদিন বিকেলে ছাদে হাঁটতে গেছি। এমন সময় নুপুর এসে হাজির। ওকে দেখে আমি ভাবলাম সবকিছু খুলে বলি। আন্টি আর আম্মার মিলমিশ করায়ে দেই। কাছে গিয়ে বললাম, নুপুর! তোমাকে আমার কিছু বলার আছে। নুপুর বললো, আমারও আপনাকে কিছু বলার আছে। আমি বললাম, তুমি আগে বলো। নুপুর আমতা আমতা করে বলা শুরু করলো, আমি না আপনাকে পছন্দ করি। বাবার মাথায় কাঁঠাল ভাইঙ্গা খাইতেছিলাম। এখন আমার মাথায় কেউ একজন আকাশ ভাইঙ্গা ফেলাইতেছে। আমি বললাম, না না না। এ হতে পারে না নুপুর। নুপুর জিজ্ঞাসা করলো, কেন হতে পারে না? আমি বললাম, কারণ আমি তোমাকে মেয়ের চোখে দেখি। তোমাকে প্রেমিকা ভাবা আমার পক্ষে সম্ভব না।
আমি সরল সোজা মনে আমার মেয়ের নামের সাথে নাম মিল থাকায় এই কথা বলে ফেলছি। কিন্তু নুপুর উল্টাপাল্টা বুঝে গেছে। সে হন হন করে ছাদ থেকে নেমে গিয়ে সরাসরি তার আম্মাকে জিজ্ঞাসা করলো, বলো মা। সত্যি করে বলো আমার বাবা কে? নুপুরের আম্মু এই কথা শুনে নুপুরের গালে একটা বন চটকানা দিলো। সেই চটকানা খেয়ে নুপুর বললো, এজন্যই তোমরা আমাকে ভালোবাসো না। আমি আর এই বাসায় থাকবো না। এখনই আমার আসল বাবার কাছে চলে যাবো। এই কথা বলার সাথে সাথেই ব্যাগ গুছিয়ে নুপুর আমাদের বাসায় চলে এসেছে। ঘরে ঢুকেই আমার ফোন হাতে নিয়ে “নুপুরের আম্মু” লিখে সেভ করা নাম্বারটা ব্ল্যাকলিস্টে দিয়ে “আলহামদুলিল্লাহ্ ফর এভ্রিথিং” বলেছে।
এদিকে আমাকে ফোনে না পেয়ে টেনশনে আমার প্রেমিকা “নুপুরের আম্মু” আমাদের বাসায় চলে এসেছে। দরজার সামনে দাঁড়ায়ে আছে। আবার নুপুরের খোঁজে তিনতলা থেকে নুপুরের আম্মু এসে আমাদের দরজার সামনে দাঁড়ানো। ভাগ্য ভালো আব্বা আম্মা বাসায় নাই। একদিক দিয়ে বেঁচে গেছি। আমি ভুলেও আজকে আর দরজা খুলবো না। খুব ভয়ও লাগতেছে। মোবাইল টোবাইল বন্ধ করে রাখছি। আরও জোরে জোরে নক করতে থাকলো দরজায়।
আব্বা আম্মা যদি চলে আসে এই ভয়ে আমি একবার শুধু জিজ্ঞাসা করলাম, “বাইরে কে?” বলার সাথে সাথেই আমার হুঁশ হলো। যা হবার হয়ে গেছে, এইবার সব খেলা শেষ। দরজার ওপাশ থেকে দুজনেই এই প্রশ্ন শুনে একসাথে বলে উঠলো, দরজা খোলো “আমি নুপুরের আম্মু”। এই কথা বলে তারা দুজন দুজনের দিকে তাকালো। থমথমে পরিবেশ। একটু পরেই দরজার বাইরে কালবৈশাখী শুরু হবে। পরিস্থিতি আর আমার হাতে নাই। আমার আর কিচ্ছু করার নাই। যা হওয়ার এখন হবে দরজার ওপাশে…
সমাপ্ত