আহ্বান

আহ্বান

আমার স্ত্রী’কে দেখলে ই আমার রাগ উঠে। ওর প্রত্যেকটা কাজে যেন আমার গা ঘিনঘিন করে কেন জানি না। অন্যদের দেখেছি নতুন বিয়ে হলে কত সুন্দর সময় কাটায় কিন্তু তা আমার জন্য না। না আছে গুণ না জৌলস। একদম গাইয়া। বিয়ের দু দিন পরে ই শহরে চলে আসি চাকরির জন্য। ওকে সাথে নিয়ে আসতে চাইনি বাবা মা জোর করে পাঠিয়ে দিল। বরাবর ই আমার রাগ বেশি মা বাবার জন্য কিছু বলতে পারিনি। নিয়ে আসা লাগল। শহরে এসে ওকে বলে দিয়েছি যতটা সম্ভব আমার থেকে দূরে থাকতে। বিয়েতে মত ছিল না আমার মামা মৃত্যু শয্যায় বাবা আর মৃত্যু পথযাত্রী মামার কথা রাখতে গিয়ে এই বিয়ে। নিজের প্রেমিকার বিয়ে হওয়ার পর থেকে ই আর কোনো মেয়েকে ই সহ্য করতে পারি না আমি।

অনেক সময় অনেক রাগ করি আমি। নাস্তা দেরি করে দিলে, খাবার বা তরকারি ঠান্ডা হয়ে গেলে হাতের প্লেট পর্যন্ত ভাঙতে দ্বিধা করি না। অফিসের একটা দরকারি কাগজ প্যান্টের পকেটে ভুল করে রয়ে যায়। সেটা না পেয়ে বাসায় এসে খোঁজতে গেলে অবশেষে সেটা আবিষ্কার করলাম সাবানের পানিতে ডুবানো একদম নিশ্বেষ অবস্থা। রাগে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। এত দরকারি একটা কাগজ যার জন্য আমার অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে সেটা এই অবস্থায় পেয়ে আমি ওর উপর হাত তুলতেও দ্বিধা করি না। বেশ কয়েকটা চড় বসিয়ে দেই গালে । তারপর কোনো রকম ভেজা কাগজটি নিয়ে চলে যাই।

ঐ দিন আর কোনো কথা হয়নি। আর তেমন কথাও হয় না ওর সাথে দরকার ছাড়া। সেদিন বিকেলে একটু তাড়াতারি বাসায় ফিরলাম একটা বন্ধুর বাসায় যাব বলে। বাসার গেইটের সামনে আসতে ই দেখলাম রাইমাকে একটা ছেলের সাথে কথা বলছে। তা দেখে আমার আগুন ধরে যায় মাথায়। এ জন্য ই আমি এসব মেয়ে জাতিকে দেখতে পারি না। একজনে হয়না ওদের। বাইরে থেকে টেনে ঘরে নিলাম। ইচ্ছামত মারলাম ওকে বেল্ট দিয়ে। হাতে কিসের ব্যাগ ছিল তা মেজে তে সেই অবস্থায় পরে রইল।

পরদিন ই মা বাবা শহরে আসেন আমাদের বাসায় ডাক্তার দেখাতে। অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থা।আগের দিনের সব চাপা পরে গেল। নাস্তা করতে ই হঠাৎ মা বললেন, এই গরমে ফুলহাতা ব্লাউজ পড়েছ যা গরম পরেছে এখন বউমা। আমি ওসবে খেয়াল না করে ই নিজের মত নাস্তা করে চলে যাই। বাবা আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও বলেন না। ২/৩ যাওয়ার পর কেউ কিছু না বললেও রাইমার লাল ফুলা চোখ হয়ত বাবার দৃষ্টি এড়ায় নি। তারপরও বাবা চুপ। কারণ আগের থেকে জানা এখানে আমার মত ছিল না।

বিকেলে বসে আছি ছুটির দিন। হঠাৎ কিছু একটার আওয়াজ পেলাম। ভালো ভাবে খেয়াল করতে ই দেখলাম বাবা মা কিছু একটা নিয়ে ঝগড়া করছে। এমনকি এক পর্যায়ে বাবা মা কে চড় মারেন। তা দেখে আমি অনেক টা অবাক হই। কারণ এখন অব্দি আমি বাবা কে মায়ের উপর হাত তুলতে দেখিনি। তারপরও কিছু বললাম না। উনাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার। কিন্তু এখানেও শেষ হয়নি। পরদিন ই বাবার ঔষধের বাটি না পাওয়ায় এক পর্যায়ে বাবা মাকে চড় মেরে চুলের মুঠি ধরেন। কি এক বিভৎস অবস্থা আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি।

নিজে গিয়ে বাবা কে আটকাই। কারণ কোনো সন্তান ই চাইবে না তার মার সাথে এমন কিছু হোক। একটা সন্তানের ভিতর কেমন করতে পারে এমন দৃশ্য দেখার পর তা কেবল সন্তানরা ই জানে। হোক সে বয়সে ছোট কিংবা বড়। বাবাকে আটকাতে গিয়ে অনেক কিছু ই বললাম। তখন ই বললেন, কি কেমন লাগে এখন। তুমি ছোট নও সবকিছু বুঝো এখন বুঝানোর মত কিছু ই নেই একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ শুধু শিক্ষায়। কিন্তু তোমাকে উপলব্ধি করানোর প্রয়োজন ছিল। আমি সবকিছু দেখি বুঝি কিন্তু সম্পর্ক সব সময় সব কথা অবাদে বলতে দেয় না।

তাই তোমাকে বুজানোর জন্য এত কিছু করা। আমি আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছি সেটা তোমার খারাপ লাগছে কারণ সে তোমার মা বলে। আর তুমি যার উপর হাত তুলেছ সে কি কারো কিছু হয় না! সে কি কারো মেয়ে বোন নয়! তার সাথে এরকম আচরণ করার জন্যে তো তোমার সাথে বিয়ে দেওয়া হয়নি। ভালো তোমার না ই লাগতে পারে তাই বলে তার উপর হাত তোলার অধিকার কে দিয়েছে।

তোর মামা আমাকে দেখে ই কিন্তু তার মেয়েকে তোর হাতে তুলে দিয়েছেন। আর সেখানে তুমি এরকম আচরণ করছ..! বউমার ভাইরা এসে যদি এরকম কিছু দেখে তখন ভাবো তার কেমন লাগবে। কেউ উপযুক্ত হয়ে আসে না তাকে উপযুক্ত করে নিতে হয় নিজের মত করে। তোকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ই এত কিছু করা। মেয়েদেরকে ভালোবাসতে হয় সম্মান দিতে হয় তখন দেখবে সে তোমায় কোথায় নিয়ে রাখে। যে নারী আসবে তোমার জীবনে সে এর থেকে বেশি কিছু ই চাইবে না নিশ্চিত থাকো। এই বলে বাবা মার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন।

মা জল চোখে বাবার পায়ের কাছে বসে পড়লেন আমি বুঝলাম এটা নিচু হওয়া নয় বরং সম্মান আর শ্রদ্ধা। নিজের ভুলের উপলবদ্ধিতে আজ নিজে ই লজ্জিত। সেদিন থেকে বুঝলাম কেউ নারী কে দাসী বানায় আর কেউ রাণী। যে দাসী বানায় সে নিজে দাস হয় আর যে রাণী বানায় সে ঐ নারীর জীবনে রাজা হয়ে থাকে তার রাজ্য জুরে। সেখানে সম্মান শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় পূর্ণ থাকে। শুধু আমাদের একটু চিন্তাধরার পরির্বতন প্রয়োজন। রাইমার (স্ত্রী) কাছে এই পুরুষত্বের লজ্জা কই রাখি…!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত