জানো রবিন, ‘আমি একবার একটা ছেলের অণ্ডকোষ থেঁতলে দিয়েছিলাম ইট দিয়ে।’ আমি হাঁটা থেমে একদম হাইড্রোলিক ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে গেলাম মুনার এই কথা শুনে। বিষয়টা কল্পনা করতেই আমার গা একদম শিউরে উঠলো। এই মেয়ে বলে কী, এটা কিভাবে সম্ভব? দেখে তো মনে হয় জীবনে চিৎকার করে কথা-ই বলে নাই। মুনাকে চিনি আমি ফেসবুকের কল্যাণে-ই। একদিন হঠাৎ টেক্সট করে আমার মেজাজ বিগড়ে দিয়েছিলো;
– আপনার কাছে আমার একটা আবদার আছে ভাইয়া। যদি রাখেন আমি খুব খুশি হবো। আমি বলেছিলাম;
– জ্বি বলেন।
– আপনার এই লিখাটি আমি একটা ম্যাগাজিনে প্রকাশ করতে চাই।
– ওহ্ এই ব্যাপার! ঠিক আছে আপু করতে পারেন। এটা তো সিম্পল একটি আবদার। আমার জন্য এটা একটা পাওয়া বলা যায়।
– আসলে ভাইয়া আরেকটা বিষয় আছে।
– কি?
– এই লিখাটি ছাপা হবে আমার নামে। আই মিন লেখকের নামের যায়গায় আমার নাম থাকবে। জাস্ট এতটুকুই।
– আপু কি মজা করছেন? এটা কিভাবে সম্ভব? আমার লিখা আমার সন্তানের মতো। যা-ই লিখিনা ক্যান। এখানে আমার সমস্ত আবেগ সমস্ত চিন্তাজগতের উপস্থিতি থাকে। এটা তো সম্ভব না। আপনি চাইলে আমি আপনার জন্য নতুন কিছু লিখে দিতে পারি। আপনি যে লিখাটি চাচ্ছেন এটা তো অলরেডি পাবলিশ্ড।
– পোস্ট করা লিখা আপনি জাস্ট ডিলিট করে ফেলবেন আপনার টাইমলাইন থেকে। তাহলেই হবে। প্লিজ ভাইয়া এই উপকারটা করেন। এটাই লাগবে আমার। এটা একটা ডকুমেন্টারি ফ্যাক্টের উপর বিগ কিছু রেফার করে। এটা আমাকে দেন ভাইয়া। আমি অনুমতি নিয়েই তো চাচ্ছি। আপনি চাইলেই এরকম লিখা সন্তান আরো জন্ম দিতে পারবেন। আপনার ক্ষমতা আছে।
– এই মেয়ে এখন কিন্তু বেয়াদবি করছেন আপনি। দুঃখিত আমি আপনাকে এটা দিতে পারছি না। ভালো থাকবেন।
– ঠিক আছে ভাইয়া আমিও দুঃখিত।
সেদিন প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়েছিলো। এটা যেনো মামার বাড়ির আবদার। এমনিতেই কোন একটা পোস্ট করতে না করতেই আজকাল ওটা চুরি হবেই হবে। পাঠকরা আমাকেই উল্টো চোরের পক্ষ নিয়ে কমেন্টে বকাঝকা করে। বলে; ‘মোতালিব ভাইয়ের লিখা কপি মারছেন মিয়া, শালা চোর।’ এই মোতালিব ভাইকে আর আমি হাজার চেষ্টাতেও খুঁজে পাইনা সার্চ করে। কারণ মোতালিব ভাই আমাকে ব্লক মেরে লিখা কপি মেরে দেন। অন্য কোন আইডি দিয়ে যখন সার্চ করে পাই তখন দেখি মোতালিব ভাই সেই লেভেলের সেলিব্রেটি মানুষ। উনার ফলোয়ার-ই দশ হাজার। শত শত পরিচিত লিখা উনার টাইমলাইনে ভরপুর। তখন মনে মনে বলি,
‘এটা উনার-ই লিখা। কিছু না বলি, থাক। আইডি খেয়ে দিতে পারেন। আর রিস্ক নিয়ে কিছু বলিনা। যাইহোক, পরে মুনার আইডিতে কী মনে করে যেনো ঢুকলাম। টাইমলাইন দেখে তো আমি অবাক। মেয়েটার টাইমলাইনে আমার অনেক লিখা শেয়ার করা। সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম ওর প্রোফাইল পিকচার দেখে। এতো মায়াবী একটা মুখ কখনো-ই লিখার মাধ্যমে প্রকাশ করার ভাষা নেই আমার। এটা কোন ফেইক পিকচার না এই বিষয়েও আমি হান্ড্রেট পার্সেন্ট শিওর। আরেকটা বিষয় দেখে চমকে গেলাম, ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যাস কমিউনিকেশন এন্ড জার্নালিজম’ বিষয়ের উপর পড়াশোনা করছে। ওর ক্রাইসিসটা আমার বুঝা উচিত ছিল। অনেক ভেবে আবারো নক করলাম;
– আপনি লিখাটা আপনার নামেই ছাপিয়ে নিতে পারেন। আমি আমার টাইমলাইন থেকে রিমুভ করে দিবো। সমস্যা নেই।
– ভাইয়া সত্যিই! থ্যাংকস থ্যাংকস থ্যাংকস ভাইয়া। এটা আমার খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো। কী যে উপকার করলেন।
– প্লিজ এতো ভাইয়া ভাইয়া করবেন না, শরীর জ্বলে।
– হাহাহা তো কি ডাকবো?
– আমার নাম ধরেই ডাকেন সমস্যা নেই।
– ঠিক আছে ভাইয়া। স্যরি ঠিক আছে রবিন।
– আপনাকে দেখে তো খুব শান্তশিষ্ট লাগে।
– কিন্তু লেজ বিশিষ্ট। ওয়েট, আমাকে দেখলেন কোথায়?
– ডিপিতে।
– ওহ্, আমি এরকম ভাব ধরে পোজ দিতে পারি আরকি।
– একটু অবাক হচ্ছি, আপনি চাইলেই ভালো একটা কলাম লিখে ফেলতে পারতেন, যেহেতু সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ছেন। আমার লিখা-ই কেন?
– জ্বি, তা পারতাম। বাট কেনো জানি মনে হয় আপনি আমার মনের কথাগুলো চুরি করে লিখে ফেলেন। এই অবধি যা কিছু লিখেছেন তা আপনি না লিখলে কোন একদিন আমি ঠিকই লিখতাম। মুনার সাথে এভাবেই সুন্দর এন্ট্রি দিয়ে একটা ভালো বন্ডিং হয়ে গিয়েছিলো। ভালো বন্ধু-ই বলা যায়। তবে আমার ধান্দা স্বাভাবিক প্রেক্ষাপটের মতোই ছিলো, আর সেটা হলো মুনাকে ভালোবেসে ফেলা। ওর সাথে আমি ওর ক্যাম্পাসে গিয়েই আড্ডা দিতাম। শান্তশিষ্ট লেজ বিশিষ্ট কিউট একটা মেয়ে। হাসলে দুপাশের ড্রাকুলা দাঁত দুটো যেনো আরো মায়ায় জড়িয়ে ফেলে।
আমাদের প্রথম দেখা হওয়াটা অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও করেছিলাম। মেয়েটা নাকি আমার লিখা সাবমিট করার পর একটা সিনিয়র আপু ওকে বকাঝকা করেছে। কারণ উনি এটা ফেসবুকে অনেক আগেই পড়েছিলেন। প্রচন্ড মন খারাপ করে আমাকে টেক্সট করেছিলো। সেদিন আমি নিজ থেকেই বলেছিলাম, ‘আপনাকে সান্ত্বনা দিতে ইচ্ছে করছে। আসবো ক্যাম্পাসে?’ মুনা প্রচন্ড খুশি হয়েছিলো। আমাকে দেখে বলেছিলো আমার কোন ছেলে ফ্রেন্ড নেই জানেন? আপনিই ধরে নিতে পারেন একান্ত একজন ছেলে বন্ধু। আমারও সেদিন নিজের উপর গর্ববোধ হচ্ছিল। ভেবে নিয়েছিলাম, আমি ইহাকে পেয়ে গেছি।
তারপরের সমস্ত সময় জুড়ে মুনা-ই ছিলো আমার। যখন তখন আমরা দেখা করতাম আড্ডা দিতাম। তখনও ভালবাসি বলার প্রয়োজন বোধ করিনি। কারণ সত্যিই আমি ব্যতীত অন্য কোন ছেলেকে ওর ধার কাছেই দেখিনি। আজকে মুনার জন্মদিন। অনেকগুলো মেয়ে আর আমিই একমাত্র ছেলে ছিলাম ছোটখাটো সেলিব্রেশনে। আজকে মুনা কালো রঙের একটা শাড়ি পরে এসেছে। আমি যেনো ওর দিকে তাকিয়ে বাতাসে ভেসে যাচ্ছি। কিন্তু তার চেহারায় মেঘের আভাস। ভেবেই এসেছিলাম আজ আমার মনের কথা বলে ফেলবো। এটাও ভেবেছিলাম আজকে বেশ প্রফুল্ল থাকবে মুনা। বলতে বাধা নেই।
বাট আজকের দিনটাতেই সে কেনো জানি অখুশি, গোমড়ামুখি হয়ে আছে। সাহস পাচ্ছিনা কীভাবে বলবো। ক্যাম্পাসের ভেতরেই জিমনেসিয়াম ভবনের কাছে হাঁটতে হাঁটতেই লম্বা একটা ব্রেথ টেনে বলে ফেললাম, ‘মুনা আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি’। একটা মুচকি হাসি দিয়ে মুনা বলেছিলো; জানো রবিন, ‘আমি একবার একটা ছেলের অণ্ডকোষ থেঁতলে দিয়েছিলাম ইট দিয়ে।’ আমি হাঁটা থেমে একদম হাইড্রোলিক ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে গেলাম মুনার এই কথা শুনে। বিষয়টা কল্পনা করতেই আমার গা একদম শিউরে উঠলো। এই মেয়ে বলে কী, এটা কিভাবে সম্ভব? দেখে তো মনে হয় জীবনে চিৎকার করে কথা-ই বলে নাই। পেছন ফিরে মুনা বললো;
– কি ব্যাপার দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
– আচ্ছা মুনা এটা বললা কেনো?
– কোনটা?
– অণ্ডকোষ থেঁতলে দিয়েছো।
– হুমম, সত্যিই থেঁতলে দিয়েছিলাম। তুমি জানোনা আমি পুরুষ মানুষ সহ্য করতে পারি না? কেনো জানি ঘেন্না লাগে। ভাবতেই পারিনা একটা পুরুষের নিশ্বাস আমার গায়ে কোনদিন লাগবে। এটা হতেও দিবো না কোনদিন।
তুমি জানো, ওই ছেলেটা তোমার মতোই একটা সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেছিলো?
– মুনা আমি তোমার কোন সুযোগ নেয়ার জন্য প্রপোজ করিনি। তোমাকে আমার ভিষন ভালো লাগে তাই আর ভেতরে চেপে রাখিনি। ভেবেছিলাম আজ বেশ ভালো দিন। তাই বলে ফেললাম। আ’ম স্যরি মুনা এটলিস্ট এটার জন্য অণ্ডকোষ থেঁতলানোর মতো জঘন্য হিস্ট্রির সাথে কম্প্যায়ার না করলেই পারো। আমি জানি ছেলে মানুষ সহ্য করতে পারোনা বাট আমাকে তো সহ্য করতা তুমি।
– আমার আজ মন ভালো নেই, কারণ আমার ভালোবাসার মানুষটি আমার জন্মদিনে আসে নাই। আর তোমাকে সহ্য করার কারণ তুমি অন্য ছেলেদের মতো না। তোমার চিন্তা ভাবনা কথাবার্তা আমার ভালো লাগতো। তোমার সঙ্গ নিয়ে আমার চিন্তা ভাবনা আমি ডেভেলপ করার চেষ্টা করতাম। জাস্ট এই। বাট তুমিও অন্যদের মতো করবা ভাবিনি। জানলে একাই থাকতাম।
– থাক ভালোবাসতে হবে না। আমি জানতাম না তোমার ভালোবাসার মানুষ আছে অলরেডি। এজন্য দুঃখিত। আজকে বরং চলেই যাই।
– চলে তো যাবা-ই রবিন। তুমি তো আমার বন্ধু ছিলে। একবারো মন খারাপের কারণটাও জানতে চাওনি যে? সেও আসেনি তুমিও তোমার আশা ভঙ্গ হওয়ায় চলে যাচ্ছো? স্বার্থ ছাড়া মানুষ আর কিছু বুঝেনা? বুঝতে চায়না?
কেনো জানি আমি দিন শেষে একা-ই হয়ে যাই। আমার ভেতরটা কেউ বুঝতে পারবে না। তুমিও কী না? চেষ্টাও করোনি রবিন? স্বাভাবিক ভাবেই প্রেমে পড়ে যেতেই হলো? আমার কোন চাহিদা থাকতে পারে না? একটু অন্যরকম, আলাদা, যেমনটা সৃষ্টিকর্তা আমার মাঝে দিয়েছেন? আমি কেনো জানি পাযলড হয়ে পড়ছি মুনার কথাবার্তা শুনে। কিছুই মাথায় ঢুকছে না। সত্যিই আমি এতোদিন ওর মনের কোন কথাই শুনিনি। আমি আমার লক্ষ্য নিয়েই ছিলাম সর্বক্ষণ। যাক, মুনাকে ঠিক কী বলবো বুঝতে পারছি না আপাতত। সত্যিই আশা ভঙ্গের কষ্টটা আমাকে দুমড়ে মোচড়ে দিচ্ছে। তাও মুনাকেই সান্ত্বনা দিচ্ছি;
– মুনা কেঁদোনা প্লিজ। আসলে আমি একটু অপ্রস্তুত ছিলাম। আমি স্যরি এগেইন। তুমি আমাকে সবকিছু শেয়ার করতে পারো। বন্ধু হিসেবে।
– আমি ছোটবেলা থেকেই পুরুষ মানুষ সহ্য করতে পারি না জানো? কেউ আমাকে কোলে নিলেও নাকি থাকতাম না কোলে। বড় হয়ে তো পুরুষদের চোখের দিকেই তাকালে বিশ্রী লালসা দেখতাম। জানো দুই বছর আগে আমি আমার মামার বিয়েতে গ্রামে যাই। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছে। আমি স্টেজের পাশে শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। একটা ছেলে খুব ডিস্টার্ব করছিলো। এতোটাই অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিল বুঝাতে পারবো না। হঠাৎ ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই টের পেলাম কেউ একজন পিছন থেকে মুহুর্তের মধ্যে এসে প্রচন্ড জোরে আমার বুকে চাপ দিয়ে কাছেই কোথাও পালিয়ে যায়।
বিশ্বাস করবেনা রবিন আমার মনে হয়েছিলো কেউ আমার কলিজা মোচড়ে কচলে দিয়েছে। আমি খুব ব্যাথা পেয়েছিলাম খুব। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে আসে। খুব কষ্টে সেম আগের জায়গাতেই টায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। মৃদু হাসির ভান করছি। চুলগুলো হাত দিয়ে সামনের দিকে নিয়ে আসলাম। একটু দুষ্টু হাসির ব্যার্থ আপ্রাণ চেষ্টা করতে করতেই টের পেলাম কেউ একজন আস্তে আস্তে আমার কাছে আসছে। তারপর চোখে একটু ইশারা দিলাম। ইশারা দিয়ে বাড়ির পেছনের বাংলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, কেউ একজন আমার পিছে পিছে আসছে। অন্ধকারে সবার আড়ালে আমি আর ওই ছেলে। ফিসফিস করে বললাম এই দুষ্টু এভাবে কেউ চাপ দেয়? বললেই তো পারতা।
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম উত্তেজনায় পশুটা কাঁপতেছিলো। তারপর বললাম শুয়ে পড়ো। শুইয়ে হালকা করে শাড়ির আঁচলে লুকানো ইট’টা বের করে যতটা জোরে সম্ভব একদম সেন্ট্রাল পয়েন্টে বসিয়ে দিলাম। মিউজিকের সাউন্ডে ওর চিৎকার কেউ শুনতে পায়নি। তারপর আমি ফ্রেশ একটা গোসল দিয়ে ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়লাম।
– বেঁচেছিলো?
– মরেনি। তবে এই কাজটা আমি করেছি এটাও কাউকে বলেনি। হাহাহা। হসপিটালে ছিলো অনেকদিন।
– ওহ্ এরপর থেকে আর পুরুষ মানুষ সহ্য করোনা তাহলে?
– নাহ্ এর আগ থেকেই করিনা। বললাম না ছোটবেলা থেকেই করিনা।
প্রচন্ড ঘৃণা করছিলো নিজের উপরেই যখন এই বর্বর কাহিনী মুনার কাছ থেকে শুনছিলাম। বাট এর পরের ঘটনা শোনে যেনো আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি।
– রবিন আমি একজনকে প্রচন্ড ভালোবাসি।
– হুমম জানি।
– তার নাম লিলি, আমার এক ব্যাচ জুনিয়র।
– এই প্রথম শুনলাম একটা ছেলের নাম লিলি হয়।
– লিলি একটি মেয়ে রবিন।
– মজা করছো?
– কসম
– মানে কি মুনা?
– এই মানেটাই আজ অবধি কাউকে বুঝাতে পারিনি আমি।
আমি মেয়েদের কাছেই একটা সুখ ফিল করি জানো রবিন? মানে এখানে বিষয়টা সেক্সুয়াল এট্রাকশন না। বাট আমার ভালো লাগে। শান্তি পাই। লিলি আমাকে খুব পছন্দ করতো। আমি যখন বললাম আমি তোমাকে ভালোবাসি লিলি। ও তারপর থেকেই আর আমার সামনে আসে না। এই ক্যাম্পাসের একটা ছেলেকেও ওর আশেপাশে আমি যেতে দেইনাই। এতো আগলে রাখি। কিন্তু ও বুঝেনা কেন রবিন? বিশ্বাস করো, আমি কোন পুরুষের নিশ্বাস আমার গায়ে পড়ার আগেই আমি মরে যাবো। আমি পারবো না রবিন। আমার পাশে একটা পুরুষ শুইবে এটা কল্পনা করলে মরে যেতে ইচ্ছে করে। আমি লিলিকেই চাই রবিন। তুমি আমাকে ভুলে যাও। আমার ফ্যামিলিও বিয়ের জন্য পাত্র দেখছে। আমি কী করবো বলো? সৃষ্টিকর্তা কেনো আমাকে এভাবে পাঠিয়েছেন? আমাকে বোঝাতে পারবা?
সেদিন আমি আর কিছুই বলতে পারিনি। চলে এসেছিলাম। খুব মাথা ধরেছিলো। ঘুমের ঔষধ খেয়ে টানা দু’দিন ঘুমিয়েছি। তারপর থেকে আমি আর মুনার সাথে মিশিনি। মুনা মেয়েটাকে আমি আমার মতো করে পাইনি। তো এখানে আর থাকার মানে হয়না। আর কাউকে ভালোবাসিনি। জানিনা কেমন আছে এখন মুনা। এতো মায়াবী আর সুন্দর মেয়েটাকে সৃষ্টিকর্তা এভাবে কেনো পাঠিয়েছেন তাও জানিনা। আজ কাটায় কাটায় এক বছর হলো। মুনার জন্মদিন। খুব বেশি মনে পড়ছে, ফেসবুকে আইডিটা ডিএক্টিভেটেড পেলাম। নাম্বারটা বের করে একটা কল দিলাম। তিনবার ডায়াল করার পর একজন পুরুষ কলটি রিসিভ করে;
– হ্যালো কে বলছেন?
– আমি রবিন। মুনা আছে?
– মুনা ওয়াশরুমে।
– আপনি কে বলছিলেন?
– মুনার হাজবেন্ড।
– ওহ।
– মুনা ফিরলে কল দিতে বলবো?
– নাহ্। ও ভালো আছে তো?
– হ্যাঁ, গত পরশু আমরা হানিমুন থেকে ফিরলাম।
– ঠিক আছে ভাইয়া ভালো থাকবেন।
নাম্বারটি ব্লক করে দিলাম। আসলে প্রকৃতি আমাকে বারংবার চমকে দেয়। এটা মুনার কাছ থেকে পাওয়া তৃতীয় শকড্। এর কারণ আমি জানি না। কলের কাটি যিনি নাড়েন উপরে বসে তিনিই জানেন। আর কিছু বলার নেই। সুখ ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা ভালোবাসা আর পাওয়া এসবের কোন আকার নেই কোনো সরলরেখা নেই। প্রকৃতির বন্টনপ্রণালী অদ্ভুত এবং অপ্রস্তুত।