সময়ের প্রতিশোধ

সময়ের প্রতিশোধ

– আমি ধর্ষিতা, এটাই বিয়ে ভাঙার একমাত্র কারণ? নাকি অন্য কিছুও আছে?
– এটাই কারণ (মাথা নিচু করে বলল নেহাল)
– তবে তখন কেন ভালবেসেছিলে? তখন কি জানতে না আমি ধর্ষিতা?
– তখন ভেবেছিলাম আমার মাকে বোঝাতে পারব
– এখন পারছ না তাই না?
– মা যে কিভাবে কথাটা জানতে পারল সেটাই বুঝতে পারছি না। আমি তো মাকে কিছুই বলি নি।
– তোমার আর আমার বাসা একই এলাকায়। জানতে পারাটা অস্বাভাবিক কিছু না।
– কিভাবে যে মাকে বুঝাব….

– ভাবনা অনেক সহজ নেহাল। বাস্তবতা খুব কঠিন। একটা কথার উত্তর দেবে?
– বলো
– তুমি যে পরিবারে জন্মেছ, বড় হয়েছ, তাদের চিন্তা ভাবনা কেমন সেটা তুমি ভালভাবেই জানো তাই না?
– হ্যাঁ জানি
– তাহলে তুমি কি এটা জানতে না যে ধর্ষিতা মেয়েদের তোমার মা নিচু দৃষ্টিতে দেখেন? এটা জানতে না যে উনি আমাকে মেনে নিবেন না?

– আসলে আমি ভেবেছিলাম যেভাবেই হোক মাকে রাজী করাব। কিন্তু মা তো…..
– থাক। কথা বাড়িও না
– আমাকে ক্ষমা করতে পারবে নিসা?
– পাঁচ বছরের সম্পর্ককে বিয়ে পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে তারপর বিয়েটা ভেঙে দেওয়া যদি যুক্তিসংগত হয়, অবশ্যই আমি তোমাকে ক্ষমা করব।
– এভাবে বলো না প্লিজ
– উঠছি তাহলে।

খুব ভাল থেক। ফ্রেশ কোন মেয়েকে বিয়ে করো। যেমনটা তোমার মা চান। তবে একটা অনুরোধ, পরিবারের সম্মতি না নিয়ে এভাবে আর কোন মেয়েকে কষ্ট দিও না। সবাই আমার মত শক্ত না।
কথাগুলো বলেই উঠে চলে আসলাম। পেছনে ফিরে তাকালাম না। প্রয়োজন বোধ করছি না। কোন কাপুরুষের চেহারা দেখার ইচ্ছা নেই আমার। একটা মেয়ের হাত ধরার আগে পরিবারের চিন্তা না করে ঠিক সময়ে যে মেয়েটির হাত ছেড়ে দেয় যখন মেয়েটি সবচেয়ে বেশি অসহায় বোধ করে, এমন ছেলে কখনওই আমার যোগ্য হতে পারে না। খুব ঘৃণা আসছে নিজের প্রতি। কেন নেহালের হাত ধরার আগে একবার ভাবলাম না? তাহলে হয়ত আজ স্বপ্ন ভাঙার কষ্টটা পেতে হত না।

তবে ভালই হয়েছে। এখনই এসব না বলে যদি বিয়েটা হয়ে যেত তাহলে হয়ত বিয়ের পর অনেক কষ্ট পেতাম। আল্লাহ যা করেন ভাল জন্যই করেন এটা সবসময় বিশ্বাস করি। একমাস হয়ে গেছে নেহালের সাথে বিচ্ছেদের। সেদিন আমি চলে আসার পর নেহাল আমার কোন খবর নেয় নি। হয়ত ও এটাই চেয়েছিল। হয়ত না, অবশ্যই এটা চেয়েছিল। সেটা না হলে ও একবার হলেও আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করত। কিন্তু ও সেটা করে নি। যেন আমি সবকিছু শেষ করে দেয়ায় ও হাফ ছেড়ে বেঁচেছিল। সেদিনের পর থেকে আমার যেন অনুভব শক্তিটা হারিয়ে গেছে। কিছুই অনুভূত হচ্ছে না। সুখ আনন্দ কিছুই বুঝতে পারছি না। শুধু এটুকু বুঝতে পারছি বুকের ভেতর কোথায় যেন খা খা করছে। একটা শূন্যতা কাজ করছে।

দুই বছর পর কোর্টে বসে আছি। খুব বেশি নাম ডাক না হলেও ছোটখাট উকিল হিসেবে আমাকে অনেকেই চিনে। সবার জুনিয়র হওয়ায় ‘পিচ্চি’ উকিল উপাধি পেয়েছি সিনিয়রদের থেকে। আমার চেয়ে কম বয়সী এখানে আর কোন উকিল নেই। আমার দক্ষতাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। অল্প সময়ে সবার প্রিয় হয়ে উঠেছি। এসব ভাবতে ভাবতে ডানদিকে ফিরে তাকাতেই চোখে পড়ল সেই চির চেনা মুখ। অবাক হয়ে গেলাম। তার এখানে কি কাজ? হঠাৎ সেও আমার দিকে তাকিয়ে পড়ল। খুব বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। হয়ত আমাকে এখানে এভাবে আশা করে নি। কথা বলবে কি বলবে না এসব চিন্তা করতে করতে আমার সামনে এসে দাঁড়াল।

– তুমি এখানে?
– কেন? আগে জানলে আসতে না?
– না এমনটা না। আসলে অনেকদিন পর দেখলাম তো। কি বলল ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাই ওভাবে বললাম
– আমার তো কাজই এখানে। কিন্তু তুমি কেন এসেছ?

উত্তর দেবার আগেই কোন ভদ্রমহিলার ডাক শুনতে পেলাম। নেহালকে ডাকছেন। ঘাড় ফিরিয়ে দেখলাম নেহালের মা। উনি ডাকতেই নেহাল চলে গেল। একটা কেসের ব্যাপারে আজ একটু জলদি আসতে হল। শরীরটা ভাল লাগছে না। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। কিন্তু এসব ছোটখাট কারণে তো আর কাজ আটকে থাকবে না। কোর্টের সামনে চায়ের দোকানে বসে চায়ের অর্ডার দিলাম। এর মধ্যেই পিছন থেকে ডাক শুনলাম,

– নিসা…
– আরে! নেহাল যে… বলো
– সেদিন তোমার সাথে কথা শেষ হয়নি তার মধ্যেই মা ডাক দিলেন
– শেষ বা শুরুর কি আছে? আমাদের মধ্যে বলার মত অবশিষ্ট কোন কথা নেই
– এভাবে বলো না প্লিজ। আমি এখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারি না।
– আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। যাকে নিয়ে আছো ভাল থাকো
– আমি ভাল নেই নিসা
– কেন কি হয়েছে?
– বছরখানেক আগে আমি বিয়ে করেছি
– হ্যাঁ জানি। শুনেছিলাম
– বিয়ের আগে আমার স্ত্রীর একটা ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে আমাকে জানায় নি।
– তাতে কি হয়েছে? তোমারও তো বিয়ের আগে একটা মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেটা দোষের না?
– হ্যাঁ ছিল। কিন্তু তোমার আমার সম্পর্ক পবিত্র ছিল। আমার কখনও অনৈতিক কিছু করি নি
– হুম
– কিন্তু আমার স্ত্রী বিয়ের পরও সেই ছেলেটার সাথে সম্পর্ক রেখেছে।

এমনকি আমি অফিসে থাকাকালীন সময়ে সে ছেলেটার সাথে বিভিন্ন হোটেলে গিয়ে সময় কাটায়। প্রথমে শোনা কথায় বিশ্বাস করি নি। তারপর যখন হাতেনাতে ধরলাম তখন বিশ্বাস করলাম।

– তাই নাকি! তারপর?
– যেই আমি এসব নিয়ে ওকে আর ওর পরিবারকে বললাম উল্টো আমার উপরেই ওরা প্রেসার দিল। যেন তাদের মেয়ের কোন দোষ নেই। যখনই ডিভোর্সের কথা বললাম উল্টো আমাকেই নারী নির্যাতন মামলায় ফাসিয়ে দিল। এখন হয়ত মামলা শেষ হলে আমাকে ওকে নিয়ে সংসার করতে হবে, নাহলে ডিভোর্স দিলে কাবিনের দশ লাখ টাকা দিতে হবে

– আমি কি কিছু বলতে পারি?
– না প্লিজ। তুমি কিছু বলো না। তোমাকে ঠকানোর শাস্তি আমি পেয়েছি। আর কিছু বলো না প্লিজ। আমি নিজেই অনুতপ্ত।

– বেশ তবে। কিছু বললাম না। আমাকে উঠতে হবে। আজাদ ভাই, চায়ের বিলটা নিন।
চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে আসলাম। পৃথিবীটা সত্যিই বড় অদ্ভুত। আবার অনেক রঙিনও। রঙের খেলা দেখায়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত