প্রবঞ্চনা

প্রবঞ্চনা

রুপন্তির বাসার কলিংবেল যখন বেজে ওঠে, ঘড়িতে দুপুর প্রায় দেড়টা। সে গোসল করছিলো। এমন অসময়ে কেউ এলে তার বড্ড বিরক্তি ধরে। প্রথমে ভেবেছিল দরজা খুলবে না। দ্বিতীয়বার, এমনকি তৃতীয়বার যখন বেলটা চিৎকার করে উঠলো তখন না খুলে আর উপায় রইলো না। সে দ্রুত একটা শুকনো কাপড় গায়ে জড়িয়ে নিল। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কে?’ ওপাশে উত্তর নেই।

সে আবারও অধীর গলায় জানতে চাইল, ‘কে ওখানে?’ ‘হু’। এবার দরজা খুললো রুপন্তী। ‘কে ওখানে’ প্রশ্নের উত্তরে ‘হু’ বলতে পারে একমাত্র কবীর। রুপন্তী অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো, ‘এই সময়ে?’ উত্তরের অবশ্য অপেক্ষা করলো না। শুকনো একটা টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের দিকে গেল সে। কবীরের বেশ ক্লান্ত লাগছে। একটু ঘুমুতে পারলে ভালো লাগতো। তবু সে শু’লো না। অসময়ে ঘুমানো তার পছন্দ না।

রুপন্তী বেরিয়ে এসে দেখে কবীর বিছানার একেবারে ওপাশে বসে আছে দেয়ালে হেলান দিয়ে। তার চোখ বন্ধ। ঘুমাচ্ছে, না জেগে আছে- বোঝা যাচ্ছে না। অন্য সময় হলে রুপন্তী ডেকে দিতো। এখন ডাকতে ইচ্ছে করছে না। মুখ দেখে বড় ক্লান্ত লাগছে। আর রুপন্তীর লাগছে মায়া। দুপুরের রোদের মধ্যে না জানে কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়িয়েছে মানুষটা। সে আলতো করে তার মেলে রাখা পায়ে হাত রাখতেই কবীর চমকে তাকায়। পা সরিয়ে নেয়। মুখ টিপে মৃদু হাসে সে। এমন হাসিতে রুপন্তী প্রতিবারই লজ্জা পায়, কেন যেন। ‘ঘুম পাচ্ছে তোমার? দেখলাম চোখ বন্ধ করে আছ।’

‘একটু। রান্না শেষ?’ ‘সেই কখন!’ রুপন্তী ভাত বেড়ে দেয়। কবীর তাকিয়ে থাকে। দেখে, কী যেন। ঢেঁড়স ভাজা, পুইশাক আর মুগডাল। এই সামান্যই খাবার। রুপন্তী প্লেট এগিয়ে দেয়। কবীর তার ব্যস্ত হাতখানা স্পর্শ করে। পূর্ণ চোখে তাকায়। বলে, Sometimes that you serve are not the food, all are love. The food can be eaten, love can’t. Love is eating me. Love eats me. ‘কোত্থেকে চুরি করা?’ রুপন্তী হেসে প্রশ্ন করে।

‘মাথা থেকে। মস্তিষ্ক থেকে। এই যে একটা ঝাঁকড়া চুলের মাথা দেখছো, এইখান থেকে।’ নিজের মাথায় হালকা দুটো চাপড় দেয় কবীর। ‘হাত ধরে ইংরেজি শেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে খাবার কিভাবে দেব?’কবীর হাত ছেড়ে দেয়। তার মাথায় এক লাইন ঘুরছে। ‘Food can be eaten, love can’t’. ভালবাসা খাওয়া যায় না, এই হলো সমস্যা। এই সমস্যার জন্যে দুপুরে খেতে বসে রাতের খাবার নিয়ে ভাবতে হয়। রুপন্তী অবশ্য অনেকটা রেহাই দিয়েছে তাকে, এমন ভাবনা থেকে। সে কী করে যেন কিছু একটা করে ফেলে। খিদে পেটে তা-ই খেতে অমৃতের মতো লাগে।

‘ওখানে টাকাটা দেয়নি, তাই না?’ রুপন্তী আগ্রহ নিয়ে জানতে চায়।

কবীর ভাত মাখে। মাথা নিচু করে এত মনযোগ দিয়ে ভাত মাখে, মুখে দেয়- রুপন্তী স্পষ্ট বুঝতে পারে, সে অন্য কিছু ভাবছে। কিংবা মাথা নিচু করে উত্তরটা এড়িয়ে যেতে চাইছে। সে-ও কিছু বলে না আর। মানুষটাকে বিব্রত করতে তার মন সায় দেয় না। রাতে কী খাবে, এটা নিয়েই একটু চিন্তা। তা সে ঠিক ম্যানেজ করে নিতে পারবে। এজন্যে এই মানুষটাকে অপ্রস্তুত করবার কোনো মানে হয় না। ‘তোমাকে আরেকটু ডাল দিই?’ কবীর মাথা নাড়ে।

‘কেন? ভাল হয়নি?’ রূপন্তীর গলায় খানিক বিষণ্ণতা।

কবীর চোখ তুলে তাকায়। ওর হাত থেকে ডালের চামচটা নেয়। গুণে গুণে তিন চামচ ডাল তুলে নেয়। এরপর রুপন্তীর দিকে তাকায়। হাসিমুখে চোখ ফিরিয়ে নেয়। তবে রুপন্তী ফেরাতে পারে না। সে তাকিয়ে থাকে। তার চোখ ছলছল করে ওঠে। সে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এত ভালো মানুষটাকে সে আর কখনোই টাকার কথা জানতে চেয়ে বিব্রত করবে না।

‘ওখানে টাকাটা দেয়নি, জানো।’

”সমস্যা নেই। খাও তো।’ রুপন্তী অভয় দেয়।

‘চিত্রনাট্য লেখার সময় কত অনুরোধ, লেখা শেষ হয়ে গেলে কেউ এক টাকাও ছুঁইয়ে দেখে না। এর চেয়ে কী মনে হয়, জানো? পাড়ার মোড়ে ফুটপাতে এক ঝুড়ি পেয়ারা নিয়ে বসে থাকি। নগদ টাকা।’ রুপন্তী বা হাতে কবীরের বা হাতটা স্পর্শ করে। ‘সমস্যা নেই তো। ঠিক হয়ে যাবে সব।’ সব ঠিক হয় না। কবীর জানে, সব ঠিক হওয়া এত সহজ ব্যাপার নয়।

সাখাওয়াত সাহেবের স্ত্রী শৈলী হোসেন প্রচন্ড অধৈর্য রকমের মহিলা। ভদ্র, চুপচাপ স্বভাবী পুরুষের বউ বোধহয় প্রকৃতিগত ভাবেই চঞ্চল, কখনো কখনো মুখরাও হয়ে থাকে। তিনি কলিংবেল একবার টিপে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। বাজাতে থাকেন, বাজাতেই থাকেন- যতক্ষন না দরজা খোলা হচ্ছে। কলিংবেল যখন বাজলো, রুপন্তী শুয়ে ছিলো। বিকেলের দিকে তার কিছু করার থাকে না। শুয়ে কখনো কখনো টিভি দেখে, আর কখনো বই। বই পড়তে পড়তে আজ চোখ দুটি লেগে এসেছিল তার। আচমকা একটানা কলিংবেলে সে প্রথমে চমকে উঠলো, এরপরই বুঝতে পারলো- কে এসেছে। এমন কাজ সমগ্র পৃথিবীতে কেবল শৈলী ফুপু করতে পারেন। দরজা খুলে দেবার পর প্রথম যে কথাটা তিনি বললেন, সেটা সাধারণত প্রথম কথা হিসেবে কেউ বলে না।

‘কী রে, ঘুমিয়ে ছিলি বুঝি? ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এ কী হাল করেছিস চেহারার? চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলেছিস।’ এরপর স্বামীর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলেন, ‘রাতে কষ্ট করিস বুঝি? জামাই ঘুমোতে-টুমোতে দেয় না?’ লজ্জায় রুপন্তীর দুই কান ঝি ঝি করে উঠলো। রুপন্তী কোথায় যেন পড়েছিল, একটা বয়স সময় পর, বিবাহিত সকল মেয়েরা নিজেদের পরস্পরের সমবয়সী মনে করে। তার শৈলী ফুপুকে তা-ই মনে হচ্ছে। তিনি রুপন্তীকে কেবল তার সমবয়সী নয়, ব্যাচমেট বন্ধু মনে করছেন। ‘কবীর কোথায়?’ সাখাওয়াত সাহেব প্রশ্ন করেন।

‘ও তো এই সময়ে বাসায় থাকে না ফুপা। দুপুরে খেয়ে বেরিয়ে যায়।’

‘কেন? বেরিয়ে যায় কেন? বাইরে গিয়ে করে-টা কী? ওর কি কোনো চাকরী-বাকরি আছে, যে বেরিয়ে যেতে হবে?’ শৈলী ফুপুর কথায় রুপন্তী একেবারে চুপসে যায়। তবু খোঁচাটা হজম করে নেয় সে, হাসিমুখ ধরে রেখে। জগতের সকল অপ্রিয় সত্যগুলো শুনতে হয় হাসিমুখে।

কবীর ফিরে আসে সন্ধ্যার একটু আগে আগেই। সাখাওয়াত সাহেব ছোট্ট বারান্দামতো জায়গাটাতে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলেন। ওঘরের জানালা দিয়ে একটুখানি আলো গলে পড়ছিলো। সেই আলোতে তিনি ধরে রেখেছেন একটা বইয়ের খোলা পাতা। ঘরের ভেতর কবীরের পায়ের শব্দ বুঝতে পারেন তিনি। ‘কবীর, এদিকটায় এসো তো একটু।’ কবীর সালাম দেয়। বারান্দাটা ছোট। তার উপর পুরোনো বাতিল কিছু জিনিস ফেলে রাখা হয়েছে একপাশে। দুটো চেয়ার নিয়ে বসবার মতো অবস্থা নেই। কবীর দাঁড়িয়ে থাকে। সাখাওয়াত হোসেন মুখ তোলেন না। জিজ্ঞেস করেন,

‘কেমন চলছে আজকাল?’ কবীর হাসিমুখে জবাব দেয়,

‘ভালো। বেশ ভালো।’

‘তা কী করবে ভাবছো?’

‘ওই যে, যা করছি।’ সাখাওয়াত সাহেব এবার মুখ তোলেন। চশমাটা নাকের উপর থেকে তুলে চোখে লাগিয়ে বলেন,

‘এই করে চলবে?’

কবীর হাসে একটু। অপ্রস্তুতের হাসি।

‘চলছে তো।’

‘একে চলা বলে?’

‘চলা ব্যাপারটা আপেক্ষিক, ফুপা। আপনার এই করে চলবে না, আমার চলছে। আবার আপনি যা করেন, তা করে আপনার চলছে। আমার ক্ষেত্রে চলবে না।’ ‘তোমার চলা নিয়ে কে মাথা ঘামাচ্ছে? আমরা বলছি রুপন্তীর কথা। এভাবে থাকা ওর অভ্যেস নেই। তুমি জানো, বিয়ের আগে সপ্তাহে দু’দিন রেস্টুরেন্টে না খেলে ওর মুখ শুকিয়ে যেত?’

‘সে তো আমারও যেত। পাড়ার মোড়ে সিগ্রেট না খেলে। জানেন ফুপা, যেদিন সিগ্রেট খেতাম, সেদিন মা-বাবা ধরতে পারতো না। অথচ যেদিন টানতাম না, সেদিন বাসায় জিজ্ঞেস করতো- “কীরে, মুখ শুকনো কেন? কিছু খাসনি বুঝি?” আমি তখন কী বলি, বলুন তো? বলতে তো পারতাম না, তোমার ছেলে আজ সিগ্রেট টানেনি, তাই তার মুখ-চোখ শুকনো! হাহাহা!’ সাখাওয়াত সাহেব আর কিছু বললেন না। বারান্দা থেকে উঠে বইটা ফেলে রেখে ভেতরে চলে গেলেন।

‘তোমার কাছে শ’খানেক টাকা হবে? তাদের রাতের খাওয়ার জন্য কিছু বাজার করা দরকার।’

‘কেন হবে না? ওইযে ওই শার্টের পকেট থেকে নিয়ে নাও।’ রুপন্তী এগিয়ে গিয়ে হ্যাঙ্গারে ঝুলে থাকা নীল শার্টের পকেটে হাত দেয়। টাকা বের করে গুনে দেখে। মৃদু স্বরে বলে,

‘আশি টাকা কেবল।’

‘নিয়ে নাও। আরও লাগবে?’

‘না, আর লাগবে না। আমরা বেরোচ্ছি।’

শৈলী ফুপু কখন দরজার আড়ালে এসে দাঁড়িয়েছেন, বুঝতে পারেনি রুপন্তী। চমকে উঠেই নিজেকে সামলে নেয় সে। ‘এখন না ফুপু। রাতে খেয়ে যাবেন।’ ‘আজ না। অন্য একদিন। তাছাড়া এত রাতে আবার বাজার করার ঝামেলায় ফেলতে চাচ্ছি না তোদের।’ আড়চোখে কবীরের দিকে তাকান তিনি। কবীর আধশোয়া, তার মুখের সামনে একটি বই। তিনি তাই তার মুখের অবস্থাটা ধরতে পারলেন না। ওদের বাসার নিচ থেকে কালো রঙের ঝকঝকে গাড়িটা যখন বেরিয়ে গেল, সন্ধ্যা ছাড়িয়ে গাঢ় রাত হতে শুরু করেছে।

রুপন্তী খাবার বন্দোবস্ত করছে। সে বুঝতে পারছে না, কী তৈরি করবে। আলু-বেগুনের ডালিটা বের করে দেখলো, আলু শেষ। কয়েকটা বেশ পুরোনো বেগুন পড়ে আছে। ফ্রিজে ডিম আছে একটা। শুকনো মরিচ দিয়ে বেগুন পুড়িয়ে ভর্তা করা যায়। মা মাঝেমধ্যে ছোটবেলায় করতেন। তবে সেটা অভাবের তাড়নায় নয়, শখে। আজ সে এটা তৈরী করে কবীরকে খাওয়াবে। অভাবের তাড়নায়? উঁহু, অভাবে নয়। এমনিই। অনেকদিন খায়নি, তাই শখের বশে খাওয়া। খেতে বসে রুপন্তী কাগজটা কবীরের হাতে দিলো। কবীর এক হাতেই ভাজ খুলে দেখলো। আবার ভাঁজ করে রেখে দিলো। কিছু বললো না। রুপন্তীই খানিক পর জিজ্ঞেস করলো, ‘যাবে?’ কবীর সাধারণত এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর করে না। চুপ করে থাকে। এবার বললো, ‘তুমি কী চাও?’ ‘তুমি যা চাও, আমিও তাই। আমার কোনো চাওয়া নেই।’

কবীর চুপ করে থাকে। ওর চাওয়া নেই, এটা খুব ভুল কথা। মানুষ মাত্রই নিজস্ব চাওয়া-পাওয়া থাকে। রুপন্তীর চাওয়া একটু স্বচ্ছলতা। এমন দোষের কিছু চাওয়া নয়। তবু সে মুখ ফুটে চাইবে না। এই না-চাওয়াটা কবীরকে কষ্ট দেয়। মনে হয়, রুপন্তী যদি একটুখানি কিছু চাইতো! সে হয়তো দিতে পারতো না, বলতো- এখন তো হাতে কিছু নেই, ক’দিন পর দিই? রুপন্তী হয়তো কখনো বুঝতো, কখনো বুঝতো না; রাগ করতো। কবীর মাঝ রাত্রিতে দশটাকার ছোট্ট একটা গোলাপ দিয়ে রাগ ভাঙাতো। নিজেকে বড় হালকা লাগতো তার।

রুপন্তী এসব কিছুই বলছে না। তার অস্বচ্ছলতার কষ্ট, খালি পকেটে আশি টাকায় অভিনয় কিংবা শখের বশে পোড়া বেগুন খাওয়ার অজুহাত, সব তার ভেতর আটকে রেখেছে মেয়েটা। সে নিজে ভারী হয়ে আসছে, এরপর সেই ভার অজান্তেই চেপে দিচ্ছে কবীরকেও। কবীর বুঝতে পারছে না, আর কতটুকু হলে সে এই ভারে নুইয়ে পড়বে।

রাতে বহুদিন পর সংকোচ ঠেলে রুপন্তীকে কাছে টানে কবীর। কাছে টেনে কপালে শব্দ করে এক চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি কি চাও কাল আমি যাই তোমার ফুপার ওখানে ইন্টার্ভিউটা দিতে?’ রুপন্তী নিজের সবটা গুঁজে দিয়েছিল কবীরের বুকে। প্রশ্ন শুনে একটু মুখ তোলে সে। কিছু বলে না। বুকের উপর হাত চালিয়ে কী যেন আঁকিবুঁকি করে। কবীর তাড়া দেয়, ‘স্পষ্ট করে বল না, প্লিজ। তুমি কি জানো, তোমার এমন চুপ করে থাকা আমাকে কষ্ট দেয়?’

‘আমি যা বলবো, তুমি শুনবে?’ কবীর লম্বা শ্বাস ছাড়ে। বলে,

‘শুনব। বল।’

‘তুমি তোমার মনের কথা শোনো। তোমার মন যেটা চাইবে, সেটা করো।’

কবীর আবার দোটানায় পড়ে। মেয়েটা স্পষ্ট করে কিছু বলে না। তার মন তো চায় লিখতে। সারাজীবন কেবল লিখে যেতে। তার লেখা চিত্রনাট্য দিয়ে নাটক হবে, টেলিফিল্ম হবে। এরপর হবে সিনেমা হলের দর্শক উপচে পড়া মুভিও। সে কি তার মনের এই কথা শুনতে পারবে? মানুষ চাইলেই কি মনের সব কথা শুনতে পারে? পারে না। মানুষ নিজেকে ভাবে স্বাধীন, অথচ সে সত্যিই স্বাধীন না। পরদিন সকালে তাই কবীরকে তার স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে হলো। সে যখন পুরোনো সার্টিফিকেট গুলো নিয়ে বেরুলো কাগজে দেয়া ঠিকানায়, রুপন্তী একবার জিজ্ঞেস করলো- ‘তুমি কি সিওর?’

কবীর হাসলো। সে সিওর না। কী করতে হবে, তা-ও সে জানে না। কিন্তু রুপন্তীকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে তার ভালো লাগে না। সত্যিই তো। মেয়েটা বড়লোক বাপের একমাত্র মেয়ে। কত আদরে বড় হওয়া এক মেয়ে, তার সংসারে এসে দু’বেলা চাল-ডালের হিসেব কষছে। সে পা বাড়ায় বাইরে। পেছনে রুপন্তীর গলা ভেসে আসে, ‘সাবধানে যেও। ছাতাটা নিয়ে যাও, আকাশের অবস্থা বাকিটুকু শোনা যায় না। কবীর তিনতলা সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত নামতে থাকে।

বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। বড় বড় ফোঁটা। রাস্তার দু’ধারে দোকানে কত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। কবীর দাঁড়ায় না। কোথাও না। তার কোনো আশ্রয় নেই। কোথাও নেই। তাকে ছুটতে হবে। ঝড়-বৃষ্টি যা-ই আসুক, ছুটতে হবে। প্লাস্টিকের ফাইলের ভেতর বৃষ্টির পানি তার সার্টিফিকেট গুলোকে স্পর্শ করছে। ক্রমেই ছড়িয়ে যাচ্ছে। কবীর খেয়াল করছে না। বুঝতে পারছে না। কে জানে, হয়তো বুঝতে পারছে। কে বলেছে, মানুষ কেবল অন্যের সঙ্গে অভিনয় করে? মানুষের সবচেয়ে নিখুঁত অভিনয় নিজের সঙ্গে। এতটাই নিখুঁত, সে একজীবন কাটিয়ে দেয়, অথচ বুঝতেও পারে না।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত