শীতের রাত! বসে আছে একা কবরের পাশে। ভয় লাগছেনা তার, একটা মেয়ে এত রাতে একটা কবরের পাশে বসে থাকা খুব স্বাভাবিক বিষয় না। তাও বসে আছে সে। বোনের কবরের পাশে। আর চিৎকার করে কাদঁছে আর বলছে-
– বোনরে আজ তোর হত্যার প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হয়েছি আমি। সেই পাপিষ্ঠকে তার উচিত শিক্ষা দিতে পেরেছি।
হাউমাউ করে কাঁদছে সে। অতীতের স্মৃতিচারণ,,,, ফারহা ফারজু দুই বোন। দুজন জমজ। একি চেহারা দেখতে দুবোনের। দুজনই ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। দুজনের দুই দেহ হলে ও মন একটা। দুজন দুজন কে ছাড়া অচল। তারা আলাদা বাসায় থেকে পড়াশুনা করে। তাদের মা বাবা গ্রামে থাকে। কোনো ভাই নাই। তারাই এক মাত্র ভরসা। তারা পড়াশুনা শেষ করে একটা পার্লার খুলবে।ফারহা পার্লারের কাজ খুব ভালো পারে। ফারহা খুব জেদি আর গরম। সকাল সাতটা!
– ফারহা সাতটা বেজে গেছে উঠে পড়। শাওয়ার নিয়ে নাস্তা খেতে আয়।(ফারজু এটা বলে চলে যায়)
– উমমম। উফ! সকাল টা কেনো এত তাড়াতাড়ি হয়ে যায় বুঝিনা। (বিরক্তি ভাব নিয়ে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ায় ফারহা)
– আপুনি আমি রেডি।
– বোস। খেয়ে নে আমি রেডি হয়ে আসছি।
– খেয়েছিস তুই?
– হুম।
– ওয়াও! চিকেন বিরিয়ানি টা সেই হইছে।
এর মাঝে ফারজু রেডি হয়ে চলে আসে। দুজনই কালো বোরখা আর মেরুন কালার হিজাব। দুজন দরজা লক করে কলেজের দিকে রওনা দেয়। ♪কবে আইবো আমার পালারে,, কবে দিমু গলায় মালারে♪গান গাইতেছে ধনী পিতার একমাত্র পুত্র আজমির হোসাইন ও তার বন্ধুরা মিলে। আজমির অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে।এমন সময় ফারজু ফারহার আগমন। ফারহার কানে গান যায় পা বাড়ায় সাথে সাথে হাত ধরে ফেলে।
– ওদের গান ওরা গাক।ক্লাসে চল। রাগে গজগজ করে ক্লাসে চলে যায়। ক্লাস চলাকালিন আজমির আর তার বন্ধুরা ক্লাসে ঢুকে।
– স্যার আসবো? (আজমির)
– আসো। কিছু বলবে?
– জি স্যার। বলছিলাম যে আমরা সামনের সাত তারিখ ট্যুরে যাবো। সব ক্লাসে বলে আসছি যারা যারা যাবে সবাই কালকের ভিতর জানাবে। এখন এই ক্লাস থেকে কে কে যাবে, তোমরা কাল সকালে কলেজে এসে আমাদের জানিও।
– স্যার ম্যাডাম কে যাবে?
– আপনার কথা ভাবছি আর শাহাদাত স্যার রেহানা মেডাম যাবে। আপনি যাবেন স্যার?
– না। তোমরা তোমরা যাও।
– ঠিক আছে তাহলে কাল সকালে লাইব্রেরিতে আমাদের পাবে সেখানে জানিয়ে এসো।
ফারহা খুশিতে আত্মহারা।সে যাবে বলেই ঠিক করলো।
– আপুনি চল না, আমার খুব যেতে ইচ্ছে করছে।প্লিজ প্লিজ
– ঠিক আছে। আব্বু কে ম্যানেজ করছি আমি।
– লাভ ইউ আপুনি।উম্মাহহহহ।
– পাগলি।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং
– হ্যালো আস্সালামুয়ালাইকুম আব্বু।
– ওয়ালাইকুমুস্সালাম। কেমন আছিস ফারজু?
– ভালো আব্বু। আপনারা কেমন আছেন? আম্মু কই?
– আছে ভালো।
– আব্বু!
– কিছু বলবি মা?
– আব্বু আমাদের কলেজ থেকে ট্যুরে যাচ্ছে আমরা ও যাবো যদি অনুমতি দেন?
– আচ্ছা মা যাস। কবে যাবি?
– সাত তারিখে।
– ঠিক আছে।
– আব্বু তুমি খুব ভালো।রাখি।
– ফারহা আব্বু রাজি হইছে।
– হুররে। আয় আয় নাগিন ডান্স দি।
দুবোন অনেক ক্ষন নাগিন ডান্স করলো। সকালে গিয়ে বলে আসলো তারা দুবোন ও যাবে। আর কোথায় যাবে সেটা ও জেনে আসলো।কক্সবাজার যাবে। দেখতে দেখতে সময় ঘনিয়ে আসছে। ছয় তারিখ রাতে দুইবোন ব্যাগ গোছাঁচ্ছে। ব্যাগ গোছাঁনো শেষ করে খাওয়া দাওয়া শেষ করে এগারোটার সময় ঘুমাতে যায়। পাঁচটার এলার্ম দেয়। দশটায় গাড়ি বলা হইছে।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং এলার্ম বাজছে। তাড়াতাড়ি করে দুবোন ঘুম থেকে উঠে। ফারজু নাস্তা বানাতে যায় ফারহা গোসল করতে চলে যায়।গোসল করে বের হয়ে কিচেন রুমে যায় দুই বোন নাস্তা করে ফেলে।ফারজু গোসল করতে গেলে ফারহা সব পরিষ্কার করে রুমে যায় তার মধ্যে ফারজু গোসল করে বেরিয়ে যায়। দুজনে নীল কালার জামা আর সাদা সেলোয়ার আর ওরনা পরে। হালকা সাজ।দুজনকে যেন অপ্সরির মত লাগছে। উপরে তারা বোরখা পরে হিজাব পরে নেয়। নয়টার দিকে তারা কলেজের দিকে রওনা হয়।
– কিরে আজমির ফারহা ফারজু এখনো আসলোনা যে(আজমিরের বন্ধু)
– এসে পরবে। আরও কয়েকজন আসেনি তো। শীলা ও তো আসেনি।
– আমি এসে গেছি(শীলা)
– আর বাকি আছে ওরা দুজন আরও ১৫মিনিট আছে। দুইবোন কলেজ গেট দিয়ে ঢুকলো।
– ওইতো এসে গেছে।
– তোমাদের এত দেরি হলো কেনো?(শীলা)
– ১৫মিনিট সময় আছে আরও(ফারহা)
– হয়েছে হয়েছে চলো।বাসে উঠো।
এক এক করে বাসে উঠে পরলো। দুইবোন একই সিটে বসলো। তার পাশে শীলা আর আজমির। বাস চলল তার আপন গতিতে। এমন সময় শীলা বলে উঠলে-
– আজমির তুই তো খুব ভালো গান করিস। একটা গান গা না প্লিজ।
– আরে না গিটার আনিনি আমি।
– গিটার আনা লাগবেনা গা না।
আজমির আড়চোখে ফারজুর দিকে তাকায়।চোখ দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করে গাইবে কিনা। ফারজু ও মুচকি হাসি দেয়। আজমির বলে-
– ফারজু যদি আমার সঙ্গ দেয় গাইবো
– গাওনা ফারজু(শীলা)
– গা আপুনি।
– ওকে।
– ♪শুনো বলি তোমায়,না বলা কথা গুলো আজ বলে দিতে চাই।
-♪বলো কি বলতে চাও, সারাটি জীবন ধরে শুনে যেতে চাই।
– ভালোবাসি আমি যে তোমায় সব কথা কি মুখে বলে দিতে হয়।
– আপুনি আমার প্রিয় গান টা গা।
– ওকে। ♪এতদিনে পেয়েছি যে আমি সে তোমারি দেখা।
– ওও হারাতে দিবোনা তোমায় আসুক যতই বাধা(আজমির) গান গেয়ে আর শুনেই তারা কক্সবাজার পৌঁছালো। তারা একটা হোটেল বুক করলো। সবাই হোটেলে উঠলো। দুপুরের খাওয়া সেরে একটু রেষ্ট নিলো। সন্ধায় তারা সূযার্স্ত দেখতে যায়।
– কি করছো একা একা?(আজমির)
– ওহ আপনি।কিছুনা সূযার্স্ত দেখছি।
– তোমার বোন কোথায়?
– কে আপুনি?
– মানে?
– মানে আমি ফারহা।আপু চলে গেছে।
– ওহ আচ্ছা। ঠিক আছে দেখো। মিট মিট হাসছে ফারহা। আজমির এবার তাদের রুমে গিয়ে নক করলো।দুই গ্লাস জুস নিয়ে।
– দরজা খোলা চলে আয়।
আজমির ভিতরে ঢুকে ফারজু কে দেখলোনা।ওয়াসরুমে পানির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে সে আজমির কে দেখতে পায়।
– আপনি এখানে?
– তোমার বোন বলল তুমি রুমে চলে এসছো ভাবলাম শরীর খারাপ করলো নাকি তাই দেখতে এলাম।
– ধন্যবাদ।না আসলে ভালো লাগছিলোনা মাথা ব্যাথা করছে তাই চলে এসছি। ফারহা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেই আজমির কে দেখতে পেলো।
– আপনি এখানে(বিরক্তি ভাব নিয়ে)
– তোমার বোন কে দেখতে এলাম। নাও দুই বোন জুস খাও। চলি। রাতে দেখা হচ্ছে। আজমির চলে যায়।
– আপুনি এই লোক টা কে আমার সুবিধার মনে হয়না।ঘেষঁতে দিবিনা একদম।
– খুব বড় হয়ে গেছে আপুনিটা। যা ফ্রেস হয়ে আয়। রাত দশটা! সবাই রাতের খাবার খেতে এসছে। রাতে সবাই বিরিয়ানি খাচ্ছে সাথে ডিম সিদ্ধ।
– আমার খাওয়া শেষ আমি রুমে যাচ্ছি। আপুনি তুই খেয়ে আয়।
– ঠিক আছে। ফারহা রুমে চলে যায়।
– এই যাহ(আজমিরের বন্ধু)
– কি হইছে(আজমির)
– ফারহা তো স্প্রাইট খায়নি।
– ও যখন চলে গেছে কি করা(ম্যাম)
– আমরা আমরাই খেয়ে নি(স্যার) আজমির ফারজুর দিকে এক গ্লাস এগিয়ে দেয়। ফারজু ও হাসিমুখে নেয়। সবার খাওয়া শেষ।
– আমার মাথাটা ঘুরছে?
– সে কি কেনো?বেশি খারাপ লাগছে?(ম্যাম)
– না ম্যাম।আমি রুমে যাবো।
– একা যেতে পারবে(আজমির)
– হুম। এগিয়ে যেতেই পড়ে যায়।আজমির ওকে কোলে নিয়ে নেয়।
– আপনারা যার যার রুমে যান আমি ওকে রুমে দিয়ে আসি।
আজমির কোলে নিয়ে রুমের দিকে যায়।কিন্তু সে ফারজুদের রুমে না গিয়ে নিজের রুমে নিয়ে যায়।ঘুমের মাঝেই ফারজুকে সে ধর্ষন করে। একবার নয় দুইবার নয় তিন তিনবার সাথে তার নরপিশাচ বন্ধু গুলা। সকাল সকাল ফারজুর ঘুম ভাঙ্গে। নিজেকে আবিষ্কার করে আরেকটা বিছানায়।গায়ে একটা চাদর।সারা শরীর ব্যাথা। পাশ ফিরে তাকাতেই আজমির আর তার বন্ধুদের দেখতে।চিৎকার করে কেদেঁ উঠে।আজমির আর তার বন্ধুদের ঘুম ভেঙ্গে যায়।ব্যাথায় নড়তে পারছেনা।
– গুড় মরনিং ডার্লিং
– আপনারা আমার এত বড় সর্বনাশ কেনো করলেন?অমানুষের দল জানোয়ার।(কেঁদে কেঁদে)
– কি আমরা জানোয়ার?জানোয়ার কাকে বলে দেখ।
এই বলে সবাই ওকে ঘন ধর্ষন করে।চিৎকার করে কাদঁতে ও পারছেনা তার শক্তি নেই।তাদের কাজ শেষ করে তারা বেরিয়ে যায়। ফারজু কোনো রকম উঠে গোসল করে নেয়।টেবিলের উপর একটা পেট আর কলম ছিলো।বসে একটা চিঠি লিখে নিজের ওরনা দিয়ে ফ্যনের সাথে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
আড়মোডা ভেঙে ফারহা উঠলো। পাশে বোন কে দেখতে না পেয়ে ভাবলো ওয়াসরুমে। অনেকক্ষণ হয়ে গেলো ফারজু বের হচ্ছেনা দেখে ফারহা ডাকতে লাগলো কোনো সাড়া শব্দ নাই। দরজা খোলা ওয়াসরুমের।ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে আসলো। কোনো সাড়া নাই। দৌড়ে স্যার ম্যামের কাছে গিয়ে খুলে বলে। ম্যাম তাকে রাতের কথা বলে। সবাই খুজছে।হঠাৎ শীলা চিৎকার দিয়ে সবাইকে আজমিরদের রুমে ডাকলো। ফারহা গিয়ে দেখলো তার বোন ফ্যানের সাথে জুলছে।চিৎকার করে কেঁদে উঠে।সাথে সাথে জ্ঞান হারায়।
জ্ঞান ফিরলে দেখে তার বোন কে ফ্লোরে শোয়াই রাখছে। পাশে স্যার ম্যাম শীলা আর ও বাকিরা। ফারহা বিছানা থেকে নামতে টেবিলে চোখ পড়লো দেখলো বাজ করা একটা কাগজ। সে এটা নিয়ে পড়া শুরু করলো। “বোন তুই ঠিক বলছিস। ও ভালো ছেলে না। জানিস বোন ওকে আমার কাছে ঘেষঁতে দেইনি। সে আমায় জোর করে আমার ইজ্জত নিছে। বোন ব্যাথায় আমি লিখতে পারছিনা খুব কষ্ট হচ্ছে। আব্বু আম্মু কে দেখে রাখিস। তুই একমাত্র ভরষা তাদের। তবে তোর বোনের হত্যাকারীকে ছাড়বিনা তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিবি। আর লিখতে পারছিনা বোন ভালো থাকিস”।
– আপুরেএএএএএ। আমায় একা করে কেনো চলে গেলি বোন। আমি একা একা সব কিভাবে সামলাবো। আমার জন্য আজ তুই আত্মহত্যা করলি। আমি বায়না না ধরলে যে এসব কিছুই হতোনা। আব্বু আম্মু কে আমি কি বলবো তুই বলে দেনা আপু,,আপুরে তুই ছাড়া যে আমি নিঃস্ব। বোন ফিরে আয়। চিৎকার করে কাঁদতে থাকে ফারহা। স্যার ম্যাম শীলা সবাই তাকে সান্তনা দিচ্ছে।
– স্যার আমার বাড়ি যাবার ব্যবস্থা করেন। আর আপনি প্লিজ থানায় ওদের নামে একটা জিডি করেন।
– ওকে। ফারহা তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায় ফারজুর মৃত দেহ কে।ছুটে আসে তার বাবা মা।
– আল্লাহ গো। আমার মেয়েটারে কেনো তুমি এত বড় শাস্তি দিলা।আল্লাহরেএএএ। বলেই জ্ঞান হারায় তার মা।আর তার বাবা নির্বাক চোখে চেয়ে আছে তার মেয়ের দিকে। আর ফারহা বোনের লাশ বুকে নিয়ে আহাজারি করছে। মায়ের জ্ঞান আসলেই আহাজারি করেই যাচ্ছে। কেউ শান্ত করতে পারছে।
এমন সময় স্যার ম্যামরা আসে।
– থানায় জিডি করেছি তাদের ছবি ও দিয়েছি।কাল সকাল অবধি তাদের ধরে ফেলবে।
ফারজুর লাশ দাফন করা হয়ে গেছে। রাত তখন ১টা ফারহা তার বোনের প্রিয় জামা টা বুকে নিয়ে কেঁদেই চলছে। হেছকি দিয়ে কাঁদছে।থামার নাম নেই। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে স্যারের কাছে শুনেছে আজমির দের ধরে ফেলেছে। প্রায় একমাস পর! ফারহা তার বাসার নিচ দিয়ে যাচ্ছিলো তখনই চোখ যায় একটা দোকানের দিকে। একটু এগিয়ে দেখে আজমির আর তার বন্ধুরা।
– এত তাড়াতাড়ি ছাড়া পেয়ে গেলো কিভাবে?আরে ধুর আমি তো ভুলেই গেছি সে বড় লোক বাবার ছেলে। আইন কোনো শাস্তি তাদের দেয়নি আমি নিজের হাতে তাদের শাস্তি দিবো। পরদিন বিকাল বেলা ফারহা বোরখা পরে মুখ বেধে ফেলছে। যাতে কেউ না চিনে। চশমা পডছে।হাতে ব্যাগ। সেই দোকানে তারা আড্ডা দিচ্ছিলো।তখন গিয়ে সে দোকানটাতে ঢুকে।
– মামা আমারে দুই প্যাকেট বিস্কুট দেন। আর বিশ টা ডিম দেন।
– এই লও।
– কত হইছে মামা?
– ২৬০টাকা।
-মামা আমার কাছে তো ৬০টাকা নাই।
– এই নিন আমি দিয়ে দিচ্ছি। (আজমির বলল)
– টোপে কাজ হয়েছে(মনে মনে)ধন্যবাদ আপনাকে।
– আপনার নাম টা কি জানতে পারি মিস-
– ইফরাত।
– ওয়াও! নাইচ নেম।
– আসি আমি।
– চলুন এগিয়ে দিয়ে আসি।
– সিউর। চলুন। আপনার নাম?
– আজমির হোসাইন।
– আমার বাসা এসেগেছি সামনে। ছেলে ঢুকা নিষিদ্ধ।
-ওকে। বাই। আজমির চলে যায়। ফারহা তার বাসায় ডুকে পড়ে। পরদিন আজমির তাকে কাল যেখানে ছেড়েছে সেখানে দাড়িয়ে আছে।একটু পর ফারহা আসে।
– আরে আপনি?
– হ্যা। কেমন আছেন?
– এই তো ভালো। চলুন সামনে যাই। কেউ দেখলে সমস্যা হবে।
– হুম। একটা নিরিবিলি যায়গায় গিয়ে বসে।
– আপনি কি রোজ বোরখা পরেন?
– জ্বী।
– মুখটা খুলে দিন।ভালো লাগবে।
– সময় আসুক খুলবো।
– আচ্ছা।
– আজ উঠি।
– চলে যাবে? তোমার নাম্বার টা দিবে প্লিজ?
– ০১৮৭*******
– ধন্যবাদ। এভাবে তাদের দিন যেতে লাগলো।একে অপরের প্রেমে পড়লো। একদিন সন্ধায় বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে।
– কিরে শালা ওই মাইয়্যারে বিছানায় কবে আনবি?(বন্ধু)
– আজ রাতে কথা বল দেখি। ও তো এখন ভালোবাসে আমাকে। আর দেখবি সে রাজি ও হবে। রাত দশটা! ক্রিং ক্রিং ক্রিং
– হ্যালো!
– কেমন আছো?
– ভালো। তুমি?
– ভালোনা গো।
– সেকি কেনো?
– তোমায় খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে।
– যাহ দুষ্ট।
– শুনোনা। তুমি প্লিজ কাল আমাকে দেখা দাও প্লিজ আর আমায় একটু ভালোবাসতে দাও।
– ঠিক আছে।আমি এসএমএস করে একটা ঠিকানা দিচ্ছি সেখানে কাল রাতে এসো। আমি থাকবো।
– সত্যি! আই লাভ ইউ জান।
– এখন তাহলে শান্তির ঘুম দিয়ে দাও কাল তো…
– উম্মাহ।বুঝিতো বাবু।
– বাই।
– বাই।
ফারহা একটা ঠিকানা এসএমএস করে দেয়। আর আজমির ও তার বন্ধুদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এবং ঘুমিয়ে যায়। সকালে ফারহা সেই যায়গায় গিয়ে সব ঠিক ঠাক করে নেয়। মদের বতল গ্লাস সব সাজিয়ো রাখে। বিকাল বেলা আজমির আর তার বন্ধুরা রেড়ি হচ্ছে।
-তোরা একটু সামনে নেমে যাবি আমি ভিতরে ডুকবো তোরা ঠিক সন্ধ্যা সাত টায় আসবি বুঝলি?
– হুম। বুঝছি। তারা বেরিয়ে পড়ে।আধাঘন্টা পর পৌঁছে যায়। ফারহা- এসো।
– তুমি এখনো মুখ বেধে রাখছো কেনো?
– খুলবো তো।আজ তো দেখবে আমায়। রাত টা হতে দাও চিৎকারে মুখরিত হবে এই স্থান। নাও ওয়াইন খাও।
– ওয়াও ডার্লিং। সাত টা বাজার পাচ মিনিট বাকি আছে আর।
– আমি একটু আসছি।তুমি থাকো।আমি তোমার মনের মত হয়ে আসছি।
– ওকে ডার্লিং। ক্রিং ক্রিং
– হ্যালো দোস্ত আসবো নাকি?
– আয়। কিছুক্ষণ পর তার বন্ধুরা ও চলে এলো। আর তখনই পর্দায় তারা উল্টো মুখ করা এক শাড়ী পরা মেয়ে কে দেখলো। আস্তে আস্তে সে মুখ ঘুরিয়ে নিলো আর আজমির রা সবাই বলে উঠলো।
-ফারজু??
– নাা। আমি ফারজু নই।আমি ফারজুর জমজ বোন যার জন্ম আমার আধা ঘন্টা আগে হয়েছে। কত আদরের বোন ছিলাম তার কিন্তু তোরা নরপশু রা আমার বোন টা কে বাচঁতে দিলিনা। আইনি শাস্তি তোরা পাসনি এবার আমার দেয়া শাস্তি তোরা ভোগ করবি। ইফরাতই ফারহা। ফারহাই ইফরাত। যাকে তুই ভালোবাসিস। সরি ভুল বললাম শরীরকে ভালোবাসিস। হাহাহহহাহা। পালানোর চেষ্টা করে লাভ নেই, দরজা বন্ধ। আর এখন তোদের আমি আগুনে পুড়িয়ে মারবো।
– এই না না দয়া করো হাত জোর করছি ক্ষমা করে দাও। আমাদের মেরোনা দরজা খোলো। এই দরজা ভেঙে ফেল।
– লাভ নেই। কেরোসিন ডেলে দিছি এই দেখ দিয়াশলাই,, বলেই আগুন জালিয়ে দেয়।তারা চিৎকার করতে থাকে। পুরা ঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে আর ফারহা শুধু হাসছে আর চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। সেখান থেকে ফিরে বোনের কবরের পাশে বসে আছে ফারহা।
– পেরেছি আমি তোর খুনিদের শাস্তি দিতে। আমি পেরেছি। বোন আয় না একবার আমার কাছে একবার বুকে নে না বোন। কাঁদতে কাঁদতে কবরের পাশেই ঘুমিয়ে যায় ফারহা। সকালে গ্রামবাসী তাকে মৃত ঘোষনা করে আর কবর দিয়ে দে তার বোনের পাশে সেই শোকে তার বাবা স্ট্রোক করে আর তার মা দিনভর শুধু কেঁদেই চলে।