রাত বারোটা ছু্ঁই ছুঁই। উদভ্রান্তের মত ফেসবুকে স্ক্রল করে যাচ্ছি । কিসের আসায় এমনটা করছি কে জানে? কোন লক্ষ্য নেই উদ্দেশ্য নেই, তবুও এই পথ চলা। হঠাৎ কেউ একজন ম্যাসেঞ্জারে নক করলো। আমি সাথে সাথে সিন করলাম। আইডির নাম পাগলীর পাগল ( ছদ্মনাম)। আমি মনে মনে ভাবলাম এইটা আবার কোন ছাগল। আমাকে ওয়েব পাঠিয়েছে। প্রথম প্রথম এই ওয়েবকে আমি ভাবতাম চড় টাইপের কিছু। আমি ওয়েবের বদলে হ্যালো লিখে পাঠিয়ে দিলাম। এমন এমন নাম পাওয়া যায় ফেসবুকে যে দেখলে বোঝায় উপায় নেই যে আইডি ছেলের নাকি মেয়ের। আমি হ্যালো পাঠিয়ে দিয়ে আবার মনযোগ দিলাম স্ক্রলিংয়ে। আবার ওই আইডি থেকে ম্যাসেজ। তবে এবার ম্যাসেজ দেখে অবাক হলাম।
— 018453***** কল দিতে পারেন এই নাম্বারে?
ঠিক এমনটাই লেখা ছিল ম্যাসেজে। আমি কিছুক্ষন ম্যাসেজটার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম। আমার আইডি দেখে কি মেয়েদের আইডি মনে করলো নাকি? নয়তো ছেলে হয়ে ছেলেকে নাম্বার দিয়ে কল দিতে বলে কেন? নাকি আবার এইটা…….!
আমি দেরী না করে রিপ্লাই দিলাম,
— ভাই বুঝলাম না। কল দিবো কেন আপনাকে?
পাঠানোর সাথে সাথে সিন হলো। তারপর পুরুৎ করে একটা শব্দ হলো। আমার ম্যাসেজের নিচে তিনটা ডট উঠানামা করছে। তারমানে ওপাশ থেকে কিছু একটা লিখছে।
— ভাই এই নাম্বারে কল দিয়ে বলবেন সজীবকে যেন বিরক্ত না করে।
আমি এই রিপ্লাই দেখে টিনের চালে কাক হয়ে গেলাম। কি লিখছে আর কি বোঝাতে চাচ্ছে তা বুঝতে আমার খুবই বেগ পেতে হচ্ছে। তাই আমি লিখলাম,
— ভাই কি বলতেছেন? ভাই আপনি মনে হয় ভুল রাস্তায় চলে এসেছেন। আপনি যাকে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছেন সে নিশ্চয়ই আমি না। আমার নামটা আরেকবার দেখেন।
আবারো সাথে সাথে সিন হলো এবং তিনটা ডট লেখার নিচে উঠানামা করতে লাগলো। আমি অপেক্ষায় আছি পরবর্তী রিপ্লাইয়ের জন্য। আল্লাহ জানে কি লিখছে।
— ভাই আমি আপনাকেই বলছি। একটা মেয়ে আমার এক বন্ধুকে খুব বিরক্ত করছে। আপনি যদি একটু ধমক দিয়ে মেয়েটাকে নিষেধ করেন তাহলে হয়তো মেয়েটা ভয় পাবে। প্লীজ ভাই একটু হেল্প করেন। খুবই বিপদে আছি।
এবার সত্যিই হার্টঅ্যাটাক হয়ে যাওয়ার অবস্থা হলো। আচ্ছা প্রোপিকে আমাকে কি গুন্ডার মত লাগে? হয়তো গুন্ডার মতই লাগে। নয়তো এই লোক মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করে কেন? প্রোপিক পাল্টে কালকে সকালেই দশ বছর আগের একটা পিক ঝুলিয়ে দিব।
— ভাই বিশ্বাস করেন আমি গুন্ডা না। দেখেন না কি নিষ্পাপ চেহারা আমার। ভাই আমি জীবনে একবার মাত্র একটা কুকুরকে ভয় দেখাতে গিয়েছিলাম। কুকুরটা আমাকে এমন দৌড়ানি দিয়েছে যে আর জীবনে কুকুরের সামনে বুক ফুলিয়ে হাঁটতে পারিনি। আর আপনি বলছেন একটা মেয়েকে ভয় দেখাতে? ভাই মেয়েরা তো বাঘের চেয়েও ভয়ঙ্কর। আমার দ্বারা কাউকে ভয় দেখানো সম্ভব না।
এতবড় ম্যাসেজ লিখতে গিয়ে আমার আঙুল ব্যাথা হয়ে গেল। তারপরেও কষ্ট করে লিখে পাঠিয়ে দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। দেখি কি ম্যাসেজ পাঠায়। আবারো পুরুৎ করে শব্দ হলো আর তিনটা ডট উঠানামা করতে লাগলো। আমি তাকিয়ে আছি।
— ভাই প্লীজ একটু হেল্প করেন। আমি জানি আপনি গুন্ডা না। আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিষ্টে একমাত্র আপনিই আছেন যাকে আমি ভরসা করতে পারি। ভাই আপনি নাম্বারটায় একটা মিসকল মারেন। দেখবেন মেয়েটা নিজেই ফোন দিবে। তারপর তাকে বুঝিয়ে বলবেন যেন সজীবকে আর ফোন দিয়ে বিরক্ত না করে। নাহ এই লোকটা দেখি বিশাল ত্যাঁদড়। দিব নাকি ব্লক মেরে? নিজের খেয়ে পরের মোষ তাড়ায় কোন শালায়? আর আমি তো খাই আমার বাপেরটা। তাই এবার একটু অন্যভাবে লিখলাম।
— ভাই এখন তো আমার পক্ষে কল দেয়া সম্ভব না। কালকে সকালে দেই?
এবার পাঠিয়ে দেওয়ার দুই মিনিট পরেও যখন কোন রিপ্লাই পেলাম না তখন ভাবলাম যে আপদ বুঝি বিদায় হয়েছে। কিন্তু আমাকে হতাশ করে দিয়ে তিন মিনিটের মাথায় ঠিকই রিপ্লাই আসলো।
— ভাই এখন কল দিলে কি হবে? ভাই বিপদে পড়ে হেল্প চাইছি আর আপনি এমন করছেন? হায়রে পৃথিবীতে এখন আর ভাল মানুষ নেই।
এবার আমার মেজাজ গরম হয়ে গেল। শালায় দেখি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে। মন চাইছিল ইচ্ছেমত কয়েকটা বাংলা গালি মেরে ব্লক দিয়ে ফেলে রাখি। কিন্তু লেখালেখি করার সুবাদে আমার একটু পরিচিতি আছে ফেসবুকে। যদি আমার এই গালাগালির স্ক্রীনশট মেরে ছেড়ে দেয় তাহলে পশ্চাৎ চাপড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তাই ঠান্ডা মাথায় একটা মিথ্যা কথা বানিয়ে লিখে পাঠিয়ে দিয়ে ঝীম মেরে বসে রইলাম।
— ভাই আসলে ঘটনা হচ্ছে আমি এখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার পাশে আমার বউ শুয়ে আছে। যদি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে শোনে তাহলে বিশ্বাস করেন ভাই আমাকে আজীবনের জন্য টেংরি ভেঙে বিছানায় শুইয়ে দিবে।
ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিয়ে আমি কষিয়ে এক লাথি হাঁকালাম আমার রুমমেট দিদারের পশ্চাৎ বরাবর। হারামজাদা ঘুমের ঘোরে ওর দেড় মণ ওজনের পা আমার গায়ে উঠিয়ে দিচ্ছে। আমি অপেক্ষায় আছি কখন লোকটা রিপ্লাই দেয়। কিন্তু দশ মিনিট হলো লোকটা আর রিপ্লাই দেয় না। আমি ভাবলাম যাক বাবা এইবার সত্যিই আপদ বিদায় হয়েছে।
মোবাইল চার্জে লাগিয়ে মাত্রই বিছানায় মাথা লাগিয়েছি এমন সময় আমার মোবাইলটা ভ্যাঁ করে চিৎকার দিয়ে উঠলো। আমি ধড়ফড় করে উঠে বসে মোবাইল হাতে নিলাম। আমার একটা মাত্র কলিজা ফোন দিয়েছে আমায়। তাও আবার রাত একটায়। তাই আমি ফোন ধরে মিষ্টি গলায় বললাম,
— আমার ময়না পাখিটা এতরাতে জেগে থেকে কি করে? ময়না পাখি কি ঘুমায়নি? আমি ভেবেছিলাম হয়তো সে প্রতিউত্তরে দুই চারটা উম্মাহ দিবে। তবে বিশ্বাস করুন এমন কিছু শুনবো তা আমি জীবনেও কল্পনা করিনি।
— হারামীর হারামী ঘরে বউ রাইখা আমার সাথে লটরপটর করো? খোদার কসম কালকে তোরে যদি পাই তাইলে কোপাইয়া ফালাফালা কইরা ফালামু। রিফাত মিন্নির ভিডিও দেখোস নাই? একেবারে সেইরকম কইরা কোপামু । কালকে তোরে পাইয়া লই।
ভাবলাম ময়না পাখির কন্ঠ শুনবো কিন্তু শুনলাম কাকের কন্ঠ। সাথে এই মারাত্মক লেভেলের হুমকি। আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল সবকিছু। ওই পাগলীর পাগল আইডিটা তাহলে মিথিলার ছিল? আর মিথিলা আমার বউয়ের কথাটা সত্যি মনে করে আমাকে এমন হুমকি দিলো? কিন্তু এখন পর্যন্ত ইতিহাসে কোন গার্লফ্রেন্ড তার বয়ফ্রেন্ডকে ছেলে আইডি দিয়ে চ্যাটিং করেনি । আমার সাথেই এমন কেন ঘটলো?