” তামিম ভাইয়া শুনো না। একটা কথা ছিল। ” এই কথা বলে অতিথি দৌড় দিয়ে আসতে লাগল। আমি দাঁড়িয়ে তাকলাম। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল ” বাবা রে বাবা খরগোশের মতো দৌড়াচ্ছ। আমার ডাক কি তোমার কানে যায় না? নাকি না শুনার ভাণ করে হাঁটতে লাগলে? আমাদের একটা কাজ করে দিবে? “আমি একটু নরম গলায় বললাম ” চাচা কোথায়? ” মেয়েটা হাত টা নাচিয়ে নাচিয়ে বলল ” বাবা তো ডুবাই চলে গেছেন। ও তো নিজে বাজার করতে পারো না? মেয়েটা মুখ কালো করে বলল ” তামিম ভাইয়া কি যে বলো না? মেয়ে হয়ে আমি বাজার করতে যাব কেন? মেয়েরা ঘরের মধ্যে তাকা কিন্তু খুব ভালো। আমিও বললাম ” ঠিক কথা। এবার কি দিতে চাও দেও। “মেয়েটা বাজারের লিস্ট দিল। লাস্ট কথা ছিল ” ভাইয়া আমার মোবাইলে ২০ টাকা দিও। ” তারপর চলে যেতে চাইল। আমি পনপন করে বললাম ” নাম্বার কে দিবে শুনি? ”
মেয়েটা অবাক চোখে তাকিয়ে বলে ” তোমাকে কত দিন নাম্বার দিয়েছি তা কি মনে আছে? আমার নাম্বার টা তোমার কাছে রাখলে এমন কি ক্ষতি হয় শুনি? আমি বললাম ” নাই বলে নাই। নাম্বার কি দিবে? না আমি চলে যাব। রাগের মাথায় বলল ” নেন নাম্বার। ” তারপর মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল। আসরের আযান পড়তেই নামাজ পড়তে গেলাম। নামাজ পড়লে মনের ভিতর অনেক শান্তি আসে। নামাজ পড়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। বাজারে যাওয়ার পর একটা হাতি দেখতে পেলাম। আমি একটুও অবাক হয় নি। কিন্তু বাজারের মানুষজন সবাই ” আ ” করে তাকিয়ে তাকল। রাতের বেলা অতিথি বলে ডাক দিতেই চাচি দরজা খুললেন। তামিম সব বাজার করে এনেছ ? ”
” জ্বী চাচি সব বাজার করে আনছি। ” এই কথা বলে আমি আমার রুমে চলে আসলাম। অতিথির পরিবার আমার আপন কেউ না। তারা যে ফ্ল্যাটে থাকে আমিও সেখানে তাকি। ৩ বছর ধরে সেখানে তাকি। অতিথি আমাকে বড় ভাইয়ের চোখে দেখে না। আমাকে কত বার ভালবাসার কথা বলছে সেটা ৩ বছরে খাতা কলমে হিসাব করে বলতে হবে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়। ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। উঠতে নয়টা ভেজে গেল। দরজায় শুধু কলিংবেল। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম ” দরজা টা ভাঙ্গিস না। আমি আসতাছি। চোখে অনেক ঘুম তবুও দরজার ধারে গিয়ে আবার দরজায় মাথা লাগিয়ে ঘুমাতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু একসাথে বিশ টা বেল দিল। এরপর আর সহ্য করে তাকতে পারি নি। দরজা খুলতেই বলল ” মানুষ যে এতো অলস হয় তোমাকে না দেখলে জানতে পারতাম না। ”
” কিসের জন্য এসেছ? ”
” তোমার জন্য মা তরকারী পাঠিয়েছেন। ” একটা বাটি আমার হাতে দিয়ে চলে গেল।
কি তামিম ভাই আজকাল তো আপনাকে পাওয়া ঐ যায় না কোথায় তাকেন? অফিসের কাজ বুঝি খুব বেশি? এতো টুকু কথা বলে পাশের রুমের ভাবি দরজা লাগিয়ে আমার কাছে আসলেন। আমি হেসে হেসে বললাম ” কাজ তো। কাজের জন্য মন টা ভালো থাকে না। চুপচাপ তাকতে ভালো লাগে। আপনি কোথাও বের হবেন বুঝি? ভাবি হাতে ব্যাগ দেখিয়ে বললেন ” বাজার করতে যাব। ” এই কথা বলে দাঁড়িয়ে তাকলেন।
মহাবিপদে পড়লাম। আমি যদি বিদায় না নিয়ে চলে যাই তাইলে আমার সাথে বসে সারা সকাল গল্প করতে ভাবি রাজি তাই বললাম ” ভাবি অফিসের টাইম হয়ে গেছে আমি বরং যাই। পাশের রুম থেকে অতিথি রাগের মাথায় বেল দিতে দিতে দরজা টা প্রায় ভেঙ্গে দিতে লাগল। আজ যদি বাবা এখানে তাকতেন তাইলে ভাবির মাথায় একটা থাপ্পড় দিয়ে বলতেন ” বেয়াদব মেয়ে। মেয়ে হয়ে বাজার করতে যাবি কেন? বাজারে যাওয়া ঠিক না? লোকজন অনেক অনেক খারাপ কথা বলবে। তাইলে পুরুষ মানুষ কিসের জন্য? ” এসব কথা বলে ভাবি কে বকাবকি করতেন। বাবা মেয়েদের কে বাজারে যাওয়া একদম পছন্দ করেন না। আমাদের বাজার টা খুব বড়ও না ছোটও না এক রকম মোটামুটি বড় আছে।
আমাদের বাজারে পাশে একটা বড় পর্যটক এলাকা আছে। বাজার থেকে দূরে মাত্র ৩ কি.মি.। বড়লোক পরিবার এখানে ভ্রমণ করতে এসে এখানে রাতে থাকে। সেটা বড় কথা না। ভ্রমণ করতে এসে এখানে তাকবেই। সব থেকে খারাপ কথা হলো চায়না মেয়েরা ছোট ছোট গেঞ্জি আর ছোট ছোট প্যান্ট পড়ে বাজারে ঘুরাঘুরি করত। এরপর বাবা বাজারে মিটিং করে চায়না মেয়েদের বাজারে আসা যাওয়া নিষেধ করে দেন। বাবা ছিলেন খুব রাগি। লিফটে উঠতে যাব। অতিথি ডাক দিয়ে বলল ” সিরি দিয়ে উঠো। তোমার সাথে কথা আছে। ” আমার হাতে ল্যাপটপ। আমি মিনমিন করে বললাম ” কি এক মেয়েরে। বাবা যদি পাইতেন তাইলে সারাদিন কান ধরিয়ে রাখতেন। যেখানে পায় সেখানে ডাক দিয়ে বলে ” দাঁড়ান। ”
আমি বললাম ” কিসের জন্য দাঁড়াব? কাছে এসে বলল ” আমি বললে দাঁড়ানোর সময় নাই কিন্তু পাশের রুমের ভাবি বললে সারাদিন দাঁড়িয়ে কথা বলতে ভালো লাগে। এতো কিসের কথা তোমাদের মধ্যে শুনি যে এক দুই ঘন্টায়ও তোমাদের কথা শেষ হয় না। রোমান্টিক কথা চলে বুঝি। এমনিতেই রাগে হাত পা চটরপটর করের তারপর মেয়েটার এতো আজেবাজে কথা রাগের মাত্রা আর বেশি করে দিল। কিন্তু কি করব বাবা বলছেন ধৈর্য্য তাকতে হবে। রাগের মাথায় ৩ -৪ টা খারাপ কথা বললে পরে নিজের কাছেই খারাপ লাগবে। তাই চুপ করে তাকলাম। চুপ করে আছি বলে অতিথি মিনমিন করে বলল ” এখন ভাজা মাছ টাও উল্টিয়ে খেতে পারে না। ”
এই মেয়ের সাথে কথায় পারব না। যদি এক কথা বলি তাইলে দশ কথা বলবে। ক বললে কলকাতা বুঝে। ল্যাপটপের ব্যাগ টা অতিথির হাতে দিয়ে বললাম ” চুপ করে হাঁটতে তাকো। আমার দিকে চোখ টা ত্যাড়া করে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমাকে খেয়ে ফেলবে। রুম টা ভালো করে পরিষ্কার করলাম। বাবা আসবেন। বাবা অগোছালো রুম একদম সহ্য করতে পারেন না। বিকালে বাবাকে আনতে সায়দাবাদ তে গেলাম। বাবা আমাকে দেখেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। ফ্ল্যাটের কাছে আসতেই অতিথি দৌড় দিয়ে বাবা কে সালাম করল। বাবা অতিথি কে খুব পছন্দ করেন। বাবা অতিথি কে বললেন ” মা তুমি তো অনেক বড় হয়ে গেছো? ” অতিথি আমার দিকে চেয়ে বলে ” কিন্তু মানুষের চোখে তো আমি বড় না। ” আমাকে খুঁচা দিতে লাগল। আমি বুঝতে পারছি।
সকালবেলা ভাবি ডাক দিয়ে বললেন ” তামিম ভাই তোমাকে তো এখন খুঁজে ঐ পাওয়া যায় না। কোথায় থাকো? ”
পিছনে বাবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনলেন। ভাবি কে একদম সহ্য করতে পারেন না। বাবা আমাকে ডাক দিয়ে ভিতরে আনলেন। ও মা। অতিথিও আমার রুমের ভিতর। তোর এই মহিলার সাথে কিসের এতো কথা রে? সারাদিন তুই নাকি এই মহিলার সাথে কথা বলিস? ” অতিথিও কুটনি বুড়ির মতো অবাক হয়ে শুনতাছে। বাবার সামনে মেয়েটাকে কিছু বলতে পারি না। চুপচাপ হয়ে বললাম ” বাবা উনি তো আমার ভাবি হয়। ভাবির সাথে কিসের এতো কথা তাকতে পারে? ” বাবাও বললেন ” ঠিক। আমিও তাই বললাম। কিন্তু অতিথি বলল ” তুই নাকি ফিসফিস করে কি বলিস? ” মেয়েটা আমার বারো টা বাজিয়ে দিবে। রাগের মাথায় বললাম ” আমার রুম থেকে বের হয়ে যাও। কোনো দিন আমার রুমের ভিতরে আসবে না। দিন দিন মাথার উপর উঠে যাচ্ছ। ” একটা গামছা নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
বুম বুম তামিম ভাইয়া। ” এই কথা টা বাচ্চা ছেলে বলল। খুব রাগ উঠছিল। আমি কত বড় একটা ছেলে। আমাকে কোথায় সালাম করবে তা না করে আমাকে এসব আজেবাজে কথা বলছে। বাচ্চা ছেলে টা কে একটা ডাক দিলাম। কাছে আসতে চায় নি। আমি নিজে তার কাছে গিয়ে কানের মধ্যে ধরে একটা থাপ্পড় দিলাম। কত বড় বেয়াদব একটা ছেলে। ছেলে টা ভ্যাএএএএ করে কান্না করে দেয়।
অতিথি দরজা টা ফাঁক করে দেখল কে কান্না করতাছে। আমাকে দেখেই সাপের মতো ফুসফুস করে কাছে এসে বলে ” এতো বড় একটা ছেলে হয়ে বাচ্চা ছেলে কে মারতে লজ্জা হলো না? লজ্জা হবে কি করে। যে মানুষ টা ভালোবাসা বুঝে না তার আবার লজ্জা হবে। অতিথি বাচ্চা ছেলেটাকে নিয়ে চলে গেল। এখন বুঝতে পারছি এই ছেলেটা মনে হয় অতিথিদের বাসায় বেড়াতে এসেছে। সকালবেলা কলিংবেল। দরজা খুলে দেখি মা আসছেন। আমি কিছু সময়ের জন্য বোকা হয়ে গেলাম। মা কে বললাম ” মা তুমি এতো সকাল কিভাবে আসলে আমাকে একটা কল দিলে না কেন? তাইলে আমি তো তোমাকে নিয়ে আসতাম। ”
মামা হেসে হেসে বললেন ” বউমা আমাকে স্টেশন থেকে বাসায় নিয়ে আসল। চিন্তা করিস কেন? চোখ মোটা করে বললাম ” বউমা আসল কোথায় থেকে মা? মা – বাবার সাথে আমি পারব না। মা-বাবার যুক্তি অনেক মারাত্মক। তারা যা করে তা যুক্তির মাধ্যমে করে। মা – বাবার মধ্যে কোনো সময় ঝগড়া দেখি নি। মা হাজার ভুল করলেও বাবা কিছু বলেন না। বাবা বরং বলেন ” ভুল হলেই মানুষ শিখতে পারবে। ভুল না হলে শিখবে কোথায় থেকে? মা কে খুব ভালোবাসেন। মায়ের চোখে পানি দেখলে বাবা ভাবেন মা কান্না টা বাবার জন্য এসেছে। মা ভিতরে এসে বললেন ” তোর বাবা কোথায়? ”
আমি ব্যাগ টা আনতে আনতে বললাম ” বাবা ঘুমাচ্ছেন। দুপুরে কাজী এসে আমার রুমে বসে তাকল। আমি ঘুমাচ্ছিলাম। মা এসে বললেন ” চল। অতিথিদের বাসায় এখন তোর বিয়ে। অতিথি তৈরি হয়ে বসে আসে। মেয়েটা কত সুন্দর করে সাজগোজ করে কন্যা সেজে বসে আছে। আমি পাঞ্জাবি পড়ছি আর ভাবছি। হঠাৎ বিয়ে ভাবতেই বুকের ভিতর কেঁপে উঠে। এখন বুঝতে পারলাম। অতিথিদের বাসায় কেন এতো মেহমান আসলেন। শেষ পর্যন্ত মেয়েটা আমাকে বিয়ে করেই ছাড়ল। সত্য প্রেম কোনো দিন হারিয়ে যায় না।
বিয়ের আজ ৪ মাস হয়ে গেল। কিন্তু আমার রুমে ৪ দিনও থাকে নি। রাগ করলেই বাপের বাসায় চলে যায়। সেখানে গিয়ে ১০ – ১৩ দিন আরাম করে থাকে তারপর আবার রাগ ভাঙ্গিয়ে নিয়ে আসি। কি ঝামেলা। মেয়েদের একটাই সমস্যা বাপের বাসা কাছে তাকলেই আসতেও সময় লাগে না যেতেও সময় লাগে না। আজও ঝগড়া। আমি বললাম ” মশারি টা দেও তো। অতিথি ঘুমাতে ঘুমাতে বলল ” তুমি তো দাঁড়িয়ে আছো। তুমি ঐ তো দিতে পারো। রাগের মাথায় বললাম ” তুমি তোমার বাপের বাসায় চলে যাও। যাও বলছি যাও। ” মেয়েটা রাগ করে এক দৌড়ে চলে গেল। ৫ দিন হয়ে গেল। আমি গিয়ে আনি নি।
মা বাবা আসলেন বিচার করতে। মা – বাবা অনেক বুঝাইলেন। মেয়েদের যদি একটু জেদ না থাকে তাইলে এইটা কিসের মেয়ে। মেয়েদের নাকি একটু জেদ তাকতে হয়। স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। স্বামীর ভালোবাসা পরীক্ষা করার জন্য। মা – বাবা আমাকে অনেক দোষ দিতে লাগলেন। আমি নাকি অতিথি কে ভালোবাসি না। আমি ভাবতে লাগলাম সত্যি ঐ আমি অতিথি কে কোনো দিন ভালোবাসার চোখে দেখে নি। ইশ! বড় অন্যায় করছি মেয়েটার উপর। মেয়েটা কিছু চায় না শুধু স্বামীর একটু ভালোবাসা চায়। কোনো দিন বলে নি আমার এই লাগবে সেই লাগবে। আমি সরি বললাম। মা – বাবা হাসি মুখে অতিথি কে আমাদের বাসায় নিয়ে আসলেন।