একটা বনফুলের দোকানে আবির ভাই বসে আছেন। আমি একটা চেয়ারে বসে বললাম ” ভাই এই রকম মেয়ে কে আপনি তালাক দেন না কেন? আবির ভাই একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। মানুষ টা খুব ভালো। আমি আজ আবির ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলাম। অনেক রাগারাগি করলেন আবির ভাইয়ের স্ত্রী । আবির ভাই হেসে হেসে বললেন ” পাগল ছেলে।
শিশিরের সাথে আমি সংসার করছি ৪ বছর। আমাকে এই ৪ বছরে একটুও শান্তি দেয় নি। বরং আমার উপর অনেক অত্যাচার করেছে। আমি ইচ্ছা করলেই তালাক দিতে পারি। কিন্তু আল্লাহ্’র কাছে একজন অপরাধী বান্দা হয়ে যাব। আল্লাহ্ যদি আমাকে প্রশ্ন করেন মেয়েটা অনেক দজ্জাল ছিল ঠিক আছে। কিন্তু তুই কি আমার মায়ায় পড়ে মেয়েটার সাথে সংসার করতে পারলি না? মেয়েটা কে তো আমি তোর জীবনসঙ্গী করে দিয়েছিলাম। আমার মায়ায় পড়ে। আমার প্রেমে পড়ে।
আমাকে ভালবেসে মেয়েটার সাথে সংসার করতে পারলি না? যা আমি তোর প্রতি অখুশি হয়ে তোকে জাহান্নামে দিয়ে দিলাম। আমি আল্লাহ্ কে অনেক ভয় পাই। আমি আল্লাহ্’র প্রেমে পড়ে শিশিরের সাথে সংসার করতাছি। নইলে মেয়েটা কে কবেই তালাক দিয়ে দিতাম। তালাক দিলে সমাজের মানুষ আমাকে কিছু বলার সাহস আছে? আমি আমার বউ কে তালাক দিব তাতে সমাজের মানুষের কি? একটা কে তালাক দিয়ে আরেক টা করব। কিন্তু আমি পারি না। আল্লাহ্ কে খুব ভালবাসি। আল্লাহ্ আমার প্রতি রাগ করবেন। তাই তালাক দেই না। ”
আবির ভাইয়ের দিকে চেয়ে রইলাম। সত্যি খুব ভালো মনের একজন মানুষ। উনার মতো মানুষ হয় না। বনফুল বিস্কুট খেতে খেতে অনেক কথা বললাম।
একটা বাস স্টেশনে বসে আছি। বাস স্টেশনে অনেক চেয়ার রাখা আছে যাত্রীদের বসার জন্য। তিন টা মেয়ে একসাথে বলল ” তামিম ভাই কেমন আছেন? আমি চুপ করে বসে থাকলাম। কোনো কথা বলে নি। আমার পাশে অতিথি বসা ছিল। মেয়েটা কে আমি ছোট বেলা থেকে পছন্দ করি। কোনো দিন বলে নি ভালো লাগার কথা। ৩ জন মেয়ে উঠে চলে গেল। অতিথি বলল ” কেমন আছেন? আমি হাসি মুখে উত্তর দিলাম ভালো আছি। অতিথি একটা বাহানা দিয়ে বলল ” ৩ জন মেয়ের প্রশ্নর উত্তর দিলেন না কেন? ”
আমি একটু আরাম করে বসলাম। একটু সুন্দর মুখ করে বললাম ” প্রথম মেয়েটার বাবা সুদ খাই। যারা সুদ খায় তাদের কে আল্লাহ পছন্দ করেন না। তাই আমিও পছন্দ করি না। অতিথি কপালে হাত দিয়ে হিজাব টা একটু সরিয়ে বলল ” দ্বিতীয় মেয়েটার কি দোষ ছিল? আমি আবার বললাম ” দ্বিতীয় মেয়েরও দোষ ছিল। তার বাবা এলাকার চেয়ারম্যান। ইলেকশনের আগে বলেছিল গ্রামের অনেক উন্নয়ন করবে। কিন্তু এখন গরীবলোকের সরকার থেকে আসা চাউলের টাকা টা খেয়ে পেলে। গরীবলোকদের কে চাউল দেয় না। উন্নয়ন তো দূরের কথা। সব টাকা দিয়ে ছেলে – মেয়েদের ভালো ভার্সিটি তে পড়াচ্ছে। অতিথি একটু চোখ টানাটানা করে বলল ” তা বুঝলাম। কিন্তু তৃতীয় মেয়েটার কি দোষ ছিল? ”
আমি একটা শিশুর দিকে চেয়ে বললাম ” মেয়েটার কাজ হলো ছেলেদের সাথে প্রেম করে ছেলেদের টাকা – পয়সা সব খেয়ে আরেক টা ছেলের প্রেমে পড়া। তারপর আরেক টা। তারপর আরেক টা। অতিথি এবার রাগ হয়ে বলে ” তাইলে আপনিও কি এই মেয়ের সাথে প্রেম করে ছ্যাকা খেয়েছেন? আমি বুঝতে পারছি মেয়েটা রাগ করছে। কারণ আমি তো মেয়েদের বিরুদ্ধে কথা বললাম তাই রাগ করছে। আমি বললাম ” এইবার ক্রিকেট বিশ্বকাপে সব খারাপ ব্যাট করছেন তামিম ভাই। সব থেকে ভালো ব্যাট করছেন সাকিব ভাই বাকী সব মোটামুটি। কিন্তু তামিম ভাই আগে যখন ব্যাট করতেন তখন আমি টিভির দিকে ” আ ” করে চেয়ে তাকতাম। তামিম ভাই এই বিশ্বকাপের অনেক আগে ভালো ব্যাট করছেন। বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন।
কিন্তু উনার এখন কি হলো ঠিক মতো করে ব্যাট করতে পারেন না। আমার কথা হলো এই কথা টা কি এগারোজন খেলোয়াড় ছাড়া আর কেউ জানে না? না। তা সত্য না। দর্শকরাও জানে। তাই আমিও মেয়েটার এসব কাণ্ড দর্শক হিসাবে জানলাম। অতিথি আর কোনো প্রশ্ন করে নি চুপ করে আছে। মা রাতে ভাত দিতে দিতে বললেন ” তামিম আমি আর কত কষ্ট করব। একটা বিয়ে কর বাবা। আমার অনেক কষ্ট হয়। আমি ভাতে কামড় দিতে দিতে বললাম ” মা আই লাভ ইউ। মা হেসে হেসে বললেন ” মাংস দেই? আমি মাথা দিয়ে নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললাম ” দেও মা। মায়ের একটা রোগ আছে। সেটা হলো মা কে কত টুকু ভালবাসি সেটা আমার মুখ থেকে শুনতে চান। তাই মা কে খুশি করার জন্য বলি আই লাভ ইউ মা।
রাতে শুয়ে আছি। অতিথির কথা খুব মনে পড়ছে। অতিথি কে আমি ভালবাসি সেটা আমি নিজে নিজে জানি কিন্তু কেউ জানে না। মনে মনে ভালোবাসার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। আবির ভাই আমার দিকে চেয়ে বললেন ” কি তামিম। হাসছ কেন? আমি আবির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বললাম ” মা বিয়ের জন্য আমাকে জোর করছেন। কি করব ভাই? আবির ভাই একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন ” আমার কাছে একটা মেয়ে আছে। তাকে তুমি দেখতে পারো। আমি বললাম ” ভাই আমি একটা মেয়ে কে ছোট বেলা থেকে পছন্দ করি কিন্তু তাকে কোনো দিন বলা হয় নি। তাকে কি একবার বলব? আবির ভাই কপালের মধ্যে দু’টা আঙুল রেখে বললেন ” নাম কি? আমি একটু একটু লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললাম ” অতিথি। ”
ও আমার সাথে একদিন পরিচয় করে দিও। বাকী কাজ আমি করব। চিন্তা কইর না বড় ভাই হিসাবে সম্মান করো না। সম্মান টুকু রাখব। এরপর দু’জন হাঁটতে লাগলাম। অফিসে যাওয়ার পর খুব অবাক হলাম। আমি অফিসের বসের মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে তাকলাম। আবির ভাই আমাকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখে বললেন ” লজ্জা পাইছ? জ্বী ভাই। আবির ভাই একটা চেয়ারে বসে বললেন ” জানো আল্লাহ্ নবী কি বলছেন? আল্লাহ্ নবী বলছেন যে মেয়ে পুরুষের মতো হয়ে আর যে পুরুষ নারীর মতো হয়ে রূপ নিবে সে নারী – পুরুষ নবীর উম্মত হতে পারে না। নারী নারীর মতো থাকবে। নারীর যা যা ড্রেস তা পড়বে। পুরুষ পুরুষের মতো থাকবে। আবির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম ” তাইলে ভাই এই মেয়ের কপালে অনেক কষ্ট আছে। আবির ভাই বললেন ” সব কিছু আল্লাহ্ ভালো জানেন।
আবির ভাই আমার হাতে ধরে বললেন ” চলো ছাদে গিয়ে একটু ঘুরে আসি। ছাদে আসার পর মন টা ভালো হয়ে গেল। অতিথির সাথে আবির ভাই কে পরিচয় করে দিয়েছিলাম। আজ অতিথি আমাকে ডাক দিয়ে বলে ” একটা কথা শুনেন। আমি দাঁড়িয়ে তাকলাম। অতিথি বলল ” আপনি আমাকে ভালোবাসেন সেটা নিজে বলতে পারেন না? আবির ভাই কে দিয়ে বলার কি আছে। আপনি খুব ভালো মানুষ আমি জানি। আমাকে বিয়ে করতে চাইলে মা কে বলেন। আমি এই বিয়েতে রাজী। আমি খুশি হয়ে বললাম ” মা কে আপনাদের বাসায় পাঠাব। অতিথি মুচকি হেসে হেসে চলে গেল।
রাস্তায় দেখলাম অনেক মানুষ । আমি সেখানে গিয়ে দেখি একটা গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে। গাড়িটার মধ্যে এখনও গান বাজতাছে। ইশ! খুব আপসোস হলো। একটা ছেলে মারা গেছে বাকী সব আহত হয়েছেন। গান বাজানো ভালো কাজ না। ছেলেটার মাথা খুঁজে পাওয়া যায় নি। হয়তো গাড়ির নিচে পড়ে আছে। একটা পিচ্চি ছেলে ভাইয়া ভাইয়া বলে কান্না করতে তাকল। হয়তো ছেলেটার ভাই ছিল। একজন মুরুব্বি এসে বললেন ” তামিম গাড়ির মধ্যে যে গান বাজে সেটা কি তুমি বন্ধ করতে পারবে? আমি গাড়িতে ঢুকার চেষ্টা করলাম। কিন্তু অনেক চেষ্টা করার পর ঢুকে গেলাম। গান টা বন্ধ করলাম। বাসায় আসার পর দেখলাম আবির ভাই। আবির ভাই মায়ের সাথে অতিথির কথা বলছে। মা আমাকে ডাক দিয়ে বললেন ” তামিম আজ অতিথির বাসায় যাব। তুই কি যেতে চাস? আমি লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললাম ” মা তুমি যা ভালো বুঝো তাই করো। মা অনেক খুশি হলেন। মা বললেন ” ঠিক আছে। আজ যাব। ”
রাতে চাচাতো ভাইদের বাসায় গেলাম। চাচাতো ভাইয়ের একটা বাচ্চা মেয়ে আছে বছর ১ হবে। কথা বলতে পারে না। শুধু ” অ ” হু ” করে। আমি কোলে নিয়ে বললাম ” খেয়েছো? কান্না করে বলল ” অ। তারমানে বুঝতে পারছি খেয়েছে। এখন বললাম ” আমার সাথে খেলবে? ভিতর থেকে শ্বাসপ্রশ্বাস এনে বলল ” হু। তারমানে খেলবে একটু কোলে নিয়ে দুষ্টামি করলাম। ভাবি এসে বললেন ” তামিম ভাই আজ কিন্তু খেয়ে যেও। আমি হেসে হেসে বললাম ” ঠিক আছে। রাতের বেলা বাসায় আসতে যাব ঠিক তখন দেখলাম একটা পাগলি মহিলা বাচ্চা নিয়ে বসে আছে। আমি বললাম ” বাচ্চার নাম কি? আমার কথার উত্তর না দিয়ে অনেক কথা মনে মনে বলতে লাগল। আমাকে পাত্তা ঐ দেয় নি। আমি পরে চলে আসলাম। বাচ্চা ছেলে টা ঘুমাচ্ছে। আবার মহিলার কাছে গিয়ে বললাম ” এই নেন ৫০০ টাকা এটা দিয়ে বাচ্চা কে কিছু কিনে দিবেন। টাকাও নেয় নি। পড়ে চলে আসলাম।
বাসায় আসারপর মা বললেন ” মেয়েটা খুব ভালো। তোর পছন্দ আছে। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। অতিথির কথা টা ভেবে ভেবে রাতে ঘুমিয়ে তাকলাম। আবির ভাই সকালে কল দিয়ে বললেন ” তামিম তুমি এখন কোথায় আছো? আমি পানি খেতে খেতে বললাম ” বাসায় আছি। এখন বের হব। আবির ভাই কান্না করে বলেন ” শিশির এক্সিডেন্ট করেছে। ডাক্তার বলল রক্তের প্রয়োজন। এখনও রক্ত পাওয়া যায় নি। এখন আমি কি করব? আমি নাম জানতে চাইলাম। আবির ভাই রক্তের নাম বললেন। ও মা এই রক্তের গ্রুপ তো আমার শরীরে আছে। হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দিলাম। আবির ভাই চুপ করে বসে আছেন। আমার দিকে চেয়ে বললেন ” শিশির বাঁঁচবে তো?
আমি মন খারাপ করে বললাম ” আল্লাহ্ আল্লাহ্ করেন। ৩ দিন পর শিশির ভাবি চোখ খুললেন। আবির ভাইয়ের দিকে চেয়ে কান্না করলেন। আবির ভাই মাথা টা হাতিয়ে দিলেন। অতিথির সাথে বিয়ের আজ তিন দিন হলো। আমার হাতে একটা টিফিন দিয়ে বলল ” দুপুরবেলা খাবেন। ঠিকঠাক ভাবে খাবেন। অফিসে গিয়ে ফোন দিবেন। রাস্তাঘাটে দাঙ্গাহাঙ্গামা দেখলে যাবেন না। এখন দেশের অবস্থা ভালো না। ” আমি হে বলে চলে আসলাম। বাহিরে অনেক রোদ ছাতা টা আনলে ভালো হতো। আমি একটা টমটমে উঠলাম। একটা বাচ্চা ছেলে কান্না করতাছে। আমাকে দেখে চুপ হয়ে থাকল। হয়তো আমাকে ভালো লেগেছে। অতিথি কল দিল। বলল ” কোথায় আছি? ”
বললাম ” টমটমে। চুপচাপ হয়ে দু’জন কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। অতিথি আবার কল দিয়ে বলল ” বাসায় রাতে তাড়াতাড়ি আসতে। আমি বললাম ” ঠিক আছে। আবির ভাই আমাকে মিষ্টি দিয় বলেন ” আমার জন্য একটা শুভ দিন। মিষ্টি খাওয়া মিয়া। আমি বুঝতে পারছি। হয়তো কোনো বাবু আসবে। মানুষ টার মুখে কত মায়া। যে কেউ দেখলে মায়ায় পড়ে যাবে। রাতে অফিস করে তাড়াতাড়ি বাসায় গেলাম। অতিথি ভাত নিয়ে অপেক্ষা করছে।