ক্লাসের একপাশে বসে আমি দুই কর্ণারের দুজনের ইশারায় প্রেমালাপ দেখছি। অথচ স্যার পুরো দমে ক্লাস নিচ্ছেন।
আমি দুটো ই বেশ উপভোগ করছি। এক স্যারের ক্লাস দুই. তাদের ইশারায় প্রমালাপ। আমি আবার উপভোগ প্রিয় মানুষ। সব জিনিষ আমি উপভোগ করতে ভালোবাসি।
এই যেমন ধরেন ক্লাসের লেকচার সবাই বোর হলেও আমি মোটেও বোর হইনা। কারণ পড়ার সাথে সাথে স্যার ব্যক্তি হিসেবে কেমন তা চিন্তা করি। মানে ঘরের বউ এর সাথে কেমন আচরণ করতে পারেন বা কতটা রসিক সব আমার মাথায় ঘুরপাক করে। ঠিক তেমনি এদের ব্যাপারটাও আমি বেশ ইনজয় করছি।
হঠাৎ কি একটা কারণে মেয়েটা ক্লাস ছেড়ে উঠে গেল। সাথে সাথে ছেলেটাও চলে গেল। আমার উপভোগে ব্যাঘাত ঘটল। ক্লাস শেষে বাসায় এসে দেখি আমার দুই ভাই প্রচন্ড রকমের ঝগড়া করছে। তাও একটা টিশার্ট নিয়ে। আমি দাড়িয়ে বেশ উপভোগ করছি। একজন আরেকজন নাক ফাটিয়ে দিবে। বই ছিড়ে ফেলবে। তাদের একে অপরের গোপন তত্ত্ব ফাঁস করে দিবে এরকম বহু হুমকি চলছে তাদের মাঝে।
আমি আরেকটু উপভোগ করার জন্য সাহিব মানে আমার ছোট ভাইটাকে বললাম, লাবিব কালকে তোর নীল শার্টটাও পড়েছে তোকে না বলে। এখন কিনা তোকে টিশার্ট পড়তে দিচ্ছে না..! একথা শুনে ওদের আরো তুমুল ঝগড়া শুরু হল। আমি ভিডিও করছি। অবসরের বিনোদন হিসেবে কাজে দিবে। ঝগড়ায় অনেক গোপন তত্ত্ব ফাঁস হয়ে যায় অনায়াসে । সেসব দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা যায়। বিকেলে খালা তো বোনেরা এসেছে বাসায়। তাদের জন্য নাস্তা বানিয়ে আনার অর্ডার পড়ল। আমি বিষয়টা উপভোগ করার জন্য নুডলস না রান্না করে সেমাই পেয়াজ ডিম দিয়ে ভেজে রান্না করে নিয়ে গেলাম। তারা আমার রেসিপি দেখে প্রায় হুলস্থুল কান্ড এই কান্ড টা ই আমি বেশ উপভোগ করছি তাদের মাঝে বসে।
একবার এক ছেলে ক্লাসে লুকিয়ে আমাকে প্রেমপত্র দিয়েছিল বইয়ের ভাঁজে। আমি সেটা দেখেও না দেখার ভান করি। পরে সেই প্রেমপত্রটা আমার পাশের জনের বইয়ে ঢুকিয়ে দেই। পাশের জন সেটা পেয়ে সুজা স্যার এর কাছে নিয়ে যায়। যেহেতু এখানে ছেলেটি নাম উল্লেখ করেনি তাই মেয়েটি নিজের জন্য ভেবে ছেলেটিকে বেশ প্যাঁদানি খাওয়ায়। ব্যাপার টা আমি বেশ উপভোগ করি। নিজে এসব করলে মজা পেতাম না। কিন্তু ছেলেটা করুণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। বুঝতে পারেনা কি হল। কাকে দিল আর কে কি করল। রাস্তায় ৫ টাকা ভাড়া কমবেশির জন্য যখন রিকসাওয়ালা সাথে তর্ক করে সেটাও আমি দাড়িয়ে উপভোগ করি। মাঝেমধ্যে এসব দেখার জন্য ক্লাস টাইম দেরি হয়ে গেলে রিকসা ওয়ালা মামাকে আমি মাঝখানে ৫/১০ দিয়ে তর্ক টা শেষ করি তাদের। আমি নাই তাহলে এসব আর কারো উপভোগ করার দরকার নাই।
খালার সাথে বিয়েতে গিয়েছি এর পিছনে আরো একটা কারণ আছে। ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে হবে। সেটাও আমার কাছে বেশ উপভোগের বিষয়। খালা কে ইশারায় অনেক মেয়ে দেখালাম। খালা কারো নাক বুচা, গাল ফুলা, চোখ ট্যারা দাঁত ব্যাকা এরকম বিভিন্ন উপাধি দিয়ে নাকচ করছেন। আমি বিষয়টা খুব উপভোগ করছি। মেয়েদের এত খুঁত থাকে জানতাম না। আর মেয়েরাই তা বের করে দেয়। মাঝে মাঝে আমার নিজের বোরিং লাগলে সময় না কাটলে আব্বু আম্মুর মাঝে ঝগড়া লাগিয়ে দেই। বেশ ইন্টারেস্টিং বিষয়টা উনাদের ঝগড়ার প্রায় ডায়লগ আমার মুখস্ত তারপরও লাইভে দেখার মজা অনেক।
বাসায় সন্ধ্যায় হুট করে শুনলাম মেহমান আসবে। আমাকে রান্নাঘর থেকে দূরে থাকার জন্য বলা হয়েছে। শুনলাম মেহমানরা নাকি আমার কাজিনকে দেখতে আসছে। বিষয়টা আমি খুব উপভোগ করছি। রান্নাঘরে না গেলেও সাঁজার ঘরে আমার প্রবেশাধিকার আছে। সেজেঁগুজে কাজিন যখন মেহমানের সামনে গেল। আমিও গেলাম তার সাথে। সবাই বেশ ভালো ভাবে কথাবার্তা বলছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম পাত্র মানে ছেলেটা কি রকম জানি উসখুশ করছে। সবাই মোটামুটি সেটা বুঝতে পেরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। উনারা মনে করছেন আমি কিছু উল্টাপাল্টা করেছি। অথচ আমি এসবের ধারে কাছেও না। আমি তো এই মুহূর্তে এই বিষয়টা ই উপভোগ করছি। ছেলেটা কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু পেট থেকে কথা বের করতে পারছে না। আমি সবার সামনে ই বললাম পেট খারাপ হয়েছে? সবাই হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
ছেলেটা আর কিছু না ভেবে বলে দিল। সে আমাকে দেখতে এসেছে ইতি কে নয়। আমি বিনা মেঘে বিজলি পড়ার মত অবস্থায় দাড়িয়ে আছি। ভাবছি ছোটবেলায় মেলায় হারিয়ে যাওয়া কোনো প্রেমিক নাকি আমার! ছেলেটা তিন গ্লাস ঠান্ডা পানি খেয়ে বেশ ঠান্ডা হয়ে আমার সামনে বিয়ের প্রস্তাব রাখল। আমি ততক্ষণে মোবাইলে কিছু উপভোগ করছিলাম। বাসায় সবার মত আছে এমন ছেলে পাওয়া যায় না লাখে একটা। হাতছাড়া করা যাবে না। আমি ভীষন চিন্তিত। বিষয়টা কিভাবে উপভোগ করা যায় সেটা ই ভাবছি,, মাত্র সাতদিনের মধ্যে বিয়ে। সবাই ব্যস্ত কাজে আমি কিছু ই করছি না।
কোনো কিছু উপভোগ না করলে আমার ভালো লাগে না। হবু বর শপিং আর কি কাজে ব্যস্ত উনার কাজের জন্য ই নাকি বিয়ের এত তাড়া। আব্বু আম্মুকেও ঝগড়ায় আনতে পারছি না কাজের জন্য তাদের দুরত্ব অনেক। ভীষন রকম বোরিং লাগছে। চারদিকে সাজ সাজ রব অথচ আমি ঘরে একা বসে আছি। আজকে রাতে ই আমার বিয়ে। নাহ আর পারছি না কিছু তো উপভোগ করতে ই হবে না হলে আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। কনে সাঁজা অবস্থায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরলাম। একা একা রাস্তায় হাটছি বেশ লাগছে আমার। এখন বিষয়টা বেশ উপভোগ করা যাবে। কনের সাঁজে রাস্তায় একা একা হাটার মজা ই আলাদা। এই ১ম আমি সেটা উপভোগ করছি।
মোবাইল অফ করে দিয়েছি এতক্ষণে বাসায় একটা কান্ড শুরু হয়ে গেছে নিশ্চিত। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ হাত ধরল। তাকিয়ে দেখি আপাদমস্তক বর সাঁজা আমাকে পছন্দ করা পাত্র। আরে,বিষয়টা শুধু তুমি উপভোগ করলে হবে আমি করব না! আমি পালিয়েছি আসর থেকে। চল আমরা মিলে বিষয়টা উপভোগ করি! কেমন হবে বল তো এই মুহূর্তে কি হচ্ছে সেটা না ভেবে আমি বিষয়টা বেশ উপভোগ করছি….