জামাই আদর

জামাই আদর

শাশুড়ী যখন পোলাও বেড়ে আমার সামনে রাখলেন, ইচ্ছা করছিল, পোলাও গপাগপ মুখে তুলে নেই। কিন্তু নতুন জামাই বলে কথা, একটু আকটু ভদ্রলোক না সাজলে নয়। পোলাও এর সাথে দুইটা ডিম দিয়েছে শাশুড়ী আমার প্লেটে। নাও বাবা খাওয়া শুরু করে দাও, শাশুড়ীর অনুমতি পেয়ে, লোভে চকচকে চোখে খাবারের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে ডিমে বসালাম কামড়, আহা কি স্বাদ। পোলাও দিলাম মুখে, আহহহহহ ওয়াক্কক্কক্ক, ধনেপাতা দিয়ে পোলাও রান্না করছে। আমার মুখের অবস্থা দেখে শাশুড়ী বলল, জামাই বাবা তোমার মুখের অবস্থা এমন করে রাখছো কেন। আম্মা আমার তো পোলাও খাওয়া নিষেধ, পোলাও খাবো না। আচ্ছা বাবা তাহলে ভাত খাও।

আমি ডিম দুইটা খেয়ে ফেললাম, ভাবলাম ভাত গরুর মাংস দিয়ে খাবো, আমি আবার গরুর মাংস বেশি পছন্দ করি।
শাশুড়ী ভাতের প্লেটে অনেকগুলো মাংস তুলে দিলো, মনে মনে খুব খুশী হয়ে বললাম, যাক ভালোই হয়েছে শ্বশুর বাড়ি কয়েক দিন আনন্দ করে খাওয়া যাবে শাশুড়ী মা যে যত্ন করছে, ভাবতেই ভালো লাগছে। ভাত মুখে তুলে মাংস মুখে দিলাম, ভেটকি মেরে মুখের খাবার উথলিয়ে দিলাম সব খাবারের উপর।

আমার বউ অন্তি দৌড়ায় আসলো, ওগো কি হয়েছে তোমার। আমি আর খাইতাম না মাংসের তরকারি, ওয়াশরুমে গিয়ে দিলাম বমি করে। শ্বশুর বাড়ির সব লোক এসে হাজির আমাকে দেখতে, কেন আমি খেতে বসে বমি করে দিলাম, সবাই জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আমার মুখের পানে। বমি করব না কি করব, যে অখাদ্য আমাকে আপনারা খাইয়েছেন, তার পর যে আমি এখনো কোমায় যাইনি এটাই সৌভাগ্য।

আমার কথা শুনে সকলে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। শাশুড়ী বিলাপ করে বলছে, আহারে বেইমান জামাই বলে কি ডিম, মাংস, পোলাও রান্না করে খাওয়াতে চাইলাম, সে খেতে পারেনা, এখন বলছে আমি তাকে কুখাদ্য খাওয়াইছি। হ আম্মাজান খুব ভালো খাদ্য খাওয়াইতে চাইছেন, রাধুনি ধনেপাতা দিয়ে পোলাও, শুটকি মাছ দিয়ে গরুর মাংস। কেন বাপের জন্মে মনে হয় এগুলো খাওনি। না গো আম্মা এগুলো আমার বাপ কেন দাদা পরদাদা চৌদ্দ গোষ্ঠী কেউ কখনো খায়নি। অন্তি তার মাকে বলল, মা ময়মনসিংহের মানুষেরা শুটকি মাছ দিয়ে মাংস রান্না করে না শুধু মাংস রান্না করে, ধনেপাতা দিয়ে পোলাও রান্না করে না, ধনেপাতা ছাড়া পোলাও রান্না করে।

অন্তির কাছ থেকে শুনে বাড়ি শুদ্ধ মানুষ আমার দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকাইয়া আছে, মনে হয় আমি ময়মনসিংহ হয়ে অনেক বড় ভুল করে ফেলছি। আমার শাশুড়ী অন্তিকে উদ্দেশ্য করে বলতেছে, তোকে বারবার বারণ করেছিলাম ময়মনসিংহের মানুষ ভালা না, ওদের সাথে আমাদের কোনো কিছুতে মিল নেই, তুই সিলেটি পুলা বিয়া কর, কেন সিলেটে কি পুলার অভাব পড়ছিল। তোর জন্য অবশেষে ময়মনসিংহের ছেলেকে মেনে নিলাম, আর সেই ছেলে কি না আমার হাতের রান্না খেয়ে বমি করে, এই দুঃখ আমি কোথায় রাখবো।

অন্তির মা অনেকক্ষণ কান্না করল, আমি অন্তিকে বললাম, শুনো আম্মাকে বইলো আমার জন্য শাক ভাজি করতে আর করল্লা ভাজি করতে, আমি আম্মার হাতের রান্না খাবো সে যেনো কষ্ট না পায়। শাক ভাজি করল্লা ভাজি খেতে চাইবার কারণ হলো সেখানে তো শুটকি মাছের সিদ্ধ করা পানি দিতে পারবে না, তাহলে শাশুড়ীর হাতের রান্না খেতেও আমার কোনো প্রব্লেম হবে না। সকাল বেলা নাস্তার টেবিলে পেট ভরে খাবো বলে গিয়ে বসলাম, ভাত আর পাট শাক ভাজি, শাক ভাজিতে হাটু সমান ঝোল, মুখে দিলাম আহা কি তিতা, চোখ মুখ খিচে কয়েক লুকমা ভাত খেলাম। শাশুড়ী মা আমার প্লেটে করল্লা ভাজি দিলো মুখে তুলে দিলাম ভাতের প্লেটে ওয়াক করে, শুটকি সিদ্ধ পানি দিয়ে করল্লা ভাজি করেছে,।

অন্তি আমার বমি পরিস্কার করছে খাবার টেবিল থেকে, শাশুড়ী আবার চিল্লাচিল্লি শুরু করছে কেন অন্তি ময়মনসিংহের ছেলে বিয়ে করল। শ্বশুর আব্বা প্রথম বার মুখ খুললেন, ওরে ফুরি তুই আর সিলেটের পুলার সাথে বিয়া করলে কি ক্ষতি হইতো। কেন তুই ময়মনসিংহের পুলারে বিয়া করলি, এই দিনটাই কি আমার দেখার বাকি ছিল, জামাই খাবার টেবিলে বমি কইরা দেয়। আমার মনে তখন গান বাজতে থাকে,, পিরিত যতন পিরিত রতন পিরিত বড়ই লেড়া, পিরিত কইরা মইরা গেছে ময়মনসিংহের ব্যাডা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত