পার্কের একটা বেঞ্চিতে বসা বোরকা,,খিমার,,হাতে মোজা পরা একটি মেয়েটি গুটিশুটি হয়ে শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে । দেখে মনে হলো কারোর জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু কারোর আসার নামই নেই।
হঠাৎ একটা ছেলের আগমনে মেয়েটা খুবই তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম জানালো। আমি কিছুটা,,, উহু কিছুটা নয় অনেকটাই অবাক দৃষ্টিতে তাদের পর্যবেক্ষণ করলাম। কৌতুহল ও সৃষ্টি হয়েছে এতক্ষণে আমার মাঝে। আর সেই কৌতুহলের বসেই আমি ওদের কাছের বেঞ্চে গিয়ে কানে ইয়ারফোন গুঁজে বসে পরলাম তাদের সংলাপ শুনবো বলে। মেয়েটা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে কিনা ঠিক জানিনা,,,তবে কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়ে কি যেনো দেখলো। আমি কিছুটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিউজ ফিড স্ক্রল করছিলাম যদিও আমার সম্পূর্ণ ধ্যান জ্ঞান তাদের দিকেই ছিলো কিন্তু দু’জনই চুপচাপ হয়ে বসে আছে। আমার এবার কিছুটা বিরক্তি লাগছে দু’জনরেই। হঠাৎ ছেলেটার কথার আওয়াজ শুনে থমকে গেলাম,,,,
—‘ কিছু খেয়েছিলে..??
_চুপ
—‘ আচ্ছা এট্টু ভাবলে হতো না? এতদিনের সম্পর্ক শেষ করে দিবে তুমি?
—‘ শেষ কিভাবে আমি করলাম? আমি তো চেয়েছিলাম বিয়ে করে নিতে,,,,সমস্যা টা তো তোমার।
—‘ কিন্তু বিয়ে,,,কিভাবে সম্ভব? তুমি তো জানো আমার পরিবার এখন বিয়ে মেনে নিবেনা। আর তাছাড়া আমি সবার ছোটো,,, এখনো আমার বড় ভাই-বোন আছে যাদের বিয়ে হয়নি। তাহলে কেমনে কি করবো বলো?
—‘ হু জানি আমি। কিন্তু তুমি আমার দিকটাও একবার ভেবে দেখো,,, তোমার সাথে যখন সম্পর্কে জড়িয়ে যায় তখন ^^বিয়ের আগে দুটি ছেলে মেয়ের মাঝে যে সম্পর্ক ভালোবাসা বলো,,,প্রেম বলো,,, যা-ই বলো তা সম্পূর্ণ হারাম বলা হয়েছে।^^এই কথাটা জানা ছিলোনা। আর আজ জানার পর থেকে আমি নিতে পারছিনা ব্যাপার টা। কেমনে নিবো বলো তো,,,তুমি এক দিকে আর আমার ইবাদত এক দিকে। আমি আমার জান্নাত,,,আমার ঈমান,,,আমার আমলের সাথে কিভাবে আপস করবো বলো আমারে?? এই হারাম একটা সম্পর্ক এভাবে বয়ে নিয়ে যাওয়া কি মুখের কথা??
—‘ তা আমি বলিনি। আমিও চাই এই হারাম সম্পর্ক টাকে হালাল করে নিতে। তোমাকে নিজের করে নিতে। কিন্তু আম্মু আব্বু এখন মেনে নিবেনা। চলো আমরা পালিয়ে যায়।
—‘ পালিয়ে যাওয়া টা সহজ। কিন্তু একবার ভেবে দেখো তো আমি পালিয়ে গেলে আমার আব্বু আম্মুকে কোন পরিস্থিতি দিয়ে যেতে হবে..? একবার ভেবে দেখো যে আমি পালিয়ে গেলে আমার আব্বু আম্মু রে সমাজের লোকজন কিভাবে বাড়ি বয়ে এসে কথা শুনিয়ে দিয়ে যাবে? একবার ভেবে দেখো আমি পালিয়ে গেলে আমার আম্মু আব্বুর এতবছর মিথ্যে প্রমান হয়ে যাবে। বেশি কিছু চাইনি শুধু এইকথা গুলোই ভেবে দেখো। আর কারে ফাঁকি দিয়ে পালাবো? যে আব্বু আম্মু এতকষ্ট করেছে তাঁদের??? কাদের লুকিয়ে পালাবো? যাদের এত ভালোবাসি তাঁদের??? কাদের রেখে পালাবো? যারা আমার কথা না ভেবে নিজেদের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে তোমার হাতে তুলে দিতে চেয়েছে তাঁদের? বলোতো আদৌও কি সম্ভব?
—‘ আমারে কয়েকটা মাস সময় দাও আমি ঠিক ম্যানেজ করে নিবো সবাইকে। ওট্টু বুঝো।
—‘ তুমি বলতে পারবে আগামী কয়মাস তুমি বাঁচবে? আমি বাঁচবো?
—‘ না
—‘ তাহলে বলো!! আচ্ছা ধরো আজই আমার হায়াত ফুরিয়ে গেলো।
কিন্তু আমি তোমার ৬ মাস সময় দিলাম,,,এর মাঝে তুমি সবটা ঠিক করার চেষ্টা করবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ যেই বিষয় তা হলো এই হারাম সম্পর্ক। এই সম্পর্ক তো শেষ হবেনা কিন্তু আমার হায়াত শেষ। তার মানে আমি একটা হারাম কাজে জড়িত থাকা কালিন মৃত্যু বরণ করলাম,,,,এর পরিণাম কি হবে ভেবেছো কখনো?? আদৌও ক্ষমা পাবো?? মৃত্যুর পরে ক্ষমা চাওয়ার কোনো ওয়ে আছে কি??? চুপ।
—‘ তাহলে আমায় তোমায় হারিয়ে ফেলতে হবে?
—‘ ঐ যে,,,,আমারও কেনো উপায় নেই। আমি ভয় করি ঐ দিনগুলো যে দিনে সবার সামনে আমার এই হারাম কাজের কথা বলা হবে। ভয় করি ঐ শাস্তি যা এমন কাজের জন্য প্রাপ্য হয়ে রয়ে গেছে। অনেকক্ষণ চুপ থেকে,,,,,,,,
—‘ হুম। নিজের যত্ন নিও। তুমিতো একদমই কেয়ারলেস। খাবে সময় মতো। সব নিয়ম করে করবে। ঘরের সবার খেয়াল রাখবে। ঠিক মতো নামায পড়বে। কোনো কাজে অলসতাকে ঠাঁই দিবেনা। পাগলামি কর বে না। আর ভুলেও কান্না করবে না। (বলে নিজে চোখ থেকে পানি মুছে) মেয়েটার গলাও ধরে এসেছে এতোক্ষণে মনে হয়।
—‘ হুম ওকে। তুমিও নিজের যত্ন নিও। আমারে যা যা করতে বল্লে সব তোমারেও মানতে হবে।
—‘ পাগলি আমার। ঠিক আছে। এইবার যাও,,,,সাবধানে যাব,,, কোনো অসুবিধে হলে প্লিজ একটা কল দিও।
মেয়েটা আর দাঁড়ায় না। যতক্ষণ না পর্যন্ত মেয়েটা ছেলেটার চোখের আড়ালে যায় ততক্ষণ পর্যন্ত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছেলেটি। আমি শুধু ভাবছি,,,,ব্রেকআপ ও বুঝি এতো সুন্দর করে হয়? ওদের কথায় আমার নিজেরই চোখে বাঁধ মানতে নারাজ,,,, আর ওদের কেমন মনের অবস্থা কে জানে!! আমারও পার্কে আসা প্রেমালাপের জন্যেই। কি ভেবে এদের কথা শুনতে এসেছি আর কি শুনিয়ে গেলো। হঠাৎ কারো ডাকে ঘোর কাটলো,,,,
—‘ সামাইরা তুমি এখানে? আর আমি তোমার পুরো পার্কে খুঁজেছি। চলো,,,,,,,
—‘ কি হলো? চুপ করে আছো কেনো? আমি কখন থেকে তোমায় খুঁজতেছি। চলো না আমরা ওদিকটায় গিয়ে বসি।
—‘ নাহিন আমার আজ শরীরটা কেমন যেনো লাগছে। আমরা পরে কথা বলবো। আজ আসি!