ইনবক্সে এক আপু নক দিয়ে জানতে চাইল,কি করেন। উত্তরে বললাম,যৌনতার গল্প শুনি। কিছুটা ভড়কে গিয়ে বলল সে, “যৌনতা।” আমি বললাম অবাক হলেন নাকি? আরে এটাই তো এখন সব হয়ে দাড়িয়েছে। সে জানতে চাইল,সেটা কেমন একটু বলবেন? আপনার শোনার সময় বা ধৈর্য্য আছে,জানতে চাইলাম। তিনি বলল,হ্যা অবশ্যই। আমি বলতে শুরু করলাম।
ভার্চুয়ালে আজ থকে প্রায় বছর তিন আগে একটা মেয়ের সাথে আমার পরিচয়।মেয়েটার নাম সামিহা। বেশ ভাল বন্ধু ও আমরা।মেয়েটা যখন ক্লাস নাইনে পড়ে,তখন তার মা মারা যায় এবং তার কিছুদিনের মধ্য তার অভিভাবকেরা তাকে বিয়ে দিয়ে দেয় একজন ৩২ বছর বয়স্ক ছেলের সাথে।ক্লাস নাইনের মেয়ে,বুঝতেই পারছেন,বয়স বড় জোর ১৫-১৬ বছরের মধ্যই হবে। বলতে পারেন,পরিবার এটা কেন করল,তবে উত্তরে এটা বলব আমার জানামতে ছেলেটা মালদার ছিল।
বয়সের পার্থক্যর জন্য কিছুটা মন খারাপ থাকলেও সে মানিয়ে নিয়েছিল।মানিয়ে নিচ্ছে আজ আজ ১০ বছর ধরে।শুধু একতরফা মানিয়ে নিয়েই যাচ্ছে,সেটা আর দুই তরফা হচ্ছে না।মেয়েটার একটা ৭ বছরের ছেলেও রয়েছে।
মেয়েটার মানসিকতা,তার মন কি চায় এটা তার স্বামী বুঝতে পারে না,বুঝতে চায় ও না সে।তার শুধু উদ্যম মাধ্যমে বেড কাপাতে পারলেই শান্তি।কিন্তু মনে মনে সে বড্ড একা।সে যেভাবে চায়,সেভাবে তাকে পায় না। এতোকিছুর পরেও সে তার স্বামীকেই ভালবাসে। আমি একদিন তাকে বলেছিলাম,শোন বয়স কোনও ফ্যাক্ট না।অনুভুতি এমন একটা বিষয়,সেটা বুড়ো বাচ্চা সবারই থাকে,শুধু বোঝার মত একটু মন মানসিকতা দরকার।একই বিছানায় শুয়ে মেয়েটা অন্যপাশে চোখের জল ফেলে,অথচ স্বামী তা বুঝতে পারে না।
তারপর থেমে গেলাম আমি,আপুটা জানতে চাইল থামলেন কেন? বলেন। প্রথম থেকে মেয়েটার সাথে যখন আমার পরিচয় হয়,তখন থেকেই জানতে পারি মেয়েটা গাইনী সমস্যায় জর্জরিত,কোমরে ব্যথা থাকে,প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া করে,শরীরে ঠিকমতো বল পায় না। মাসের মধ্য ৩০ দিনই অসুস্থ থাকে বলা চলে। এই ডাক্তার,সে ডাক্তার কোনও কিছুই তার বাদ যায় না। বলতে পারেন,একটা মেয়ে এতোকিছু কিভাবে বলল আপনাকে? হ্যা,তাহলে বুঝে নেন আমরা এতোটাই ঘনিষ্ঠ ছিলাম।
তারপর,তারপর কি হল বলুন? সে ভার্চুয়ালের ডে পিকে,টাইমলাইনে সবসময় বিষাদময় পোস্ট করত,অনেক সময় বকতাম ও এর জন্য। কিন্তু কাজ হতো না তাতে,আবার যা তাই। এভাবে ঘটনাক্রমে আমি একদিন যা না তা বলে গালি দিই,এসবের মানে কি? স্বামী সংসার নিয়ে যে সুখে আছে,তার আবার এতো দুঃখ কোথা থেকে আসে? উত্তরে সে কিছুটা হাসি দিয়ে বলতে শুরু করে,গল্প শুনবেন?শোনেন তবে এই যে এতো অসুখ বিসুখ আমার,এতো ডাক্তার কবিরাজ,গাদাগাদা ঔষধ তবুও কোনটায় কেন কাজ হয় না জানেন? কেন এতো অসুস্থ থাকি আমি?
জানেন ভেতরে ভেতরে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি,না পারছি বলতে,না পারছি মরতে।কোনদিন শুনবেন হঠাৎ করেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছি আমি। এতো অসুখ বিসুখ অসুস্থতার কারণ ঐ যৌনতা। আমি অবাক হয়ে বললাম,সেটা কেমন? উত্তরে সে বলল,জানেন আমার পিরিয়ডের সময় ও ছাড় পাই না আমি,আজ অব্দি কখন ও পাইওনি। এ সময়টাতে যদি আমি ছাড় না পাই,এটা অব্যাহত রেখে যতই ডাক্তার কবিরাজ দেখান না,মেডিসিন সহ ডাক্তার বেটে খাওয়ালেও আমি সুস্থ হব না। গন্ডগোলটা যে গোড়াতে। আমি জানতে চাইলাম,এটা নিয়ে তুমি তোমার হাজবেন্ডকে বলোনি,বলোনি এটা খুব খারাপ। সে বলল,বহুবার বুঝিয়েছি,কিন্তু লাভ হয়নি কোনও। আমি তখন নির্বাক বনে গেলাম।এটা কিভাবে সম্ভব?
সে কি পতিতার কাছে যায় নাকি,যে যেভাবে হোক করতেই হবে।এটাতো অর্ধাঙ্গিনী, তার সাথে কেন এমন? উত্তরে সে বলল,কোনদিন দেখবেন আমি আর নাই। উত্তরে বলার কিছুই ছিল না আমার। স্বামী লাইসেন্স পেয়েছে যোনিপথের,স্ত্রী দিতে বাধ্য। বাহ!কি একটা ব্যবস্থা। স্ত্রী মরল না বাচল,যৌনতা চাই ই চাই। হ্যারে,ওটা কি মানুষ নাকি জানোয়ার? জানতে চাইলাম। উত্তরে সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,জানি না। বললাম,এসব ছেড়ে বেরিয়ে যাও,এসব অমানুষদের সাথে থেকে কি করবে? যাদের মধ্য বিন্দুমাত্র বিবেক নাই। সে হাসতে হাসতে বলল,সেটা করতে পারি না। কারণ,আমার একটা সন্তান রয়েছে।ওর ভবিষ্যতের কথা ভেবে চুপ হয়ে থাকি।
বললাম,ততোদিনে তুমি হয়ত পংগু হয়ে যাবে। মেয়েটা হাসল,আর একটা প্রশ্ন করল, “মেয়েরা কেন এতো অসহায়”বলতে পারবেন? এর উত্তর আমার কাছে ছিল না,নিশ্চুপ হয়ে রইলাম। অবশেষে এটুকুই বলতে চাই,লাইসেন্স পেয়েছেন বলেই সহধর্মিণীকে শুধু যৌনতার খোরাক হিসেবে পরিমাপ না করে আত্মার খোরাক হিসেবে ভাবুন।দেখবেন,পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। এমন সামিহার মত অসংখ্য নারীরা চাপা ব্যথায় ভুগছে,না পারছে বলতে না পারছে কাঁদতে। তারও অনুভূতি আছে,সেও মানুষ।