দেবদাস

দেবদাস

আমার ভাবি বিয়ের দিন আমাকে বিদায় দেওয়ার একটু আগে আবার মনে করে দিয়েছিল,দেখিস,বরকে কিন্তু সব সত্য বললেও প্রেমের ক্ষেত্রে মোটেও সত্যিটা বলবিনা।যদি সাধু সাজতে বলে ফেলিস,মনে রাখবি সে সারাজীবন তোকে সন্দেহ করবে। ভাবীর কথা মনে রেখে নতুন বরের সাথে গল্পগুজব করছি।কে কয়টা প্রেম করেছি না করেছি।আমি বললাম একটা প্রেমও করিনি,শুধু আপনার মতো একজনকে সব ভালোবাসা দিব বলে। বর আমার কথা শুনে খুশি হয়ে গেলো।বলল, তারমানে আমি তোমার জীবনের প্রথম পুরুষ তাইনা?আমি বললাম,হুম শেষ পুরুষ। শেষ পুরুষ মানে?

আমি বিয়ের আগে তিনটা প্রেম করেছিলাম।বিয়ে হয়ে যাচ্ছ বলে ব্রেকআপ করে দিয়েছি সব।এখন নতুন জীবন শুরু করেছি।যার সাথে বাকি জীবন প্রেম ভালোবাসা দিয়ে সংসার করব।সে কথাতো আর সে জানেনা। বললাম,
আরে শেষ মানে বোঝেননা! মানে আমি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত আপনার সাথে কাটাবো তাই বললাম শেষ পুরুষ।
বর একটু কষ্ট পেল। বললো, আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দিবনা বউ।আমাদের ভালোবাসার কসম। প্রথম দিন থেকে এরকম ভালোবাসা পাবো বুঝতেই পারেনি।ধীরে ধীরে রোমান্টিক কথাবার্তার দিকে এগোচ্ছিলাম আমরা।কিন্তু শ্বশুর আব্বার ডাকাডাকিতে আর এগোনো গেলনা। ও বউমা,ও হাসান দরজাটা খুল আব্বা,তাড়াতাড়ি খোল না-হয় বেশ কেলেংকারী হয়ে যাবে রে। হাসান তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতে শ্বশুর মশাই আমাকে বললেন, বউমা তোমার নামটা জানি কি? শায়লা হাসান আব্বা।আগে শুধু শায়লা ছিলো বিয়ের পর হাসান যোগ হলো।

–তাহলে ঠিক আছে মা। অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।এক পাগল আসছে যে বলে কিনা তার নাম নাকি দেবদাস।আর তার পার্বতীর নাকি আমাদের ঘরে বিয়ে হয়ে গেলো।

শ্বশুর আব্বা হাসানের হাত ধরে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গেল।আমিও গেলাম পিছন পিছন। দেবদাস আসলে আমাকে খুঁজতে এেসেছে।বিয়ের আগে সদ্য ব্রেকআপ হওয়া এক্স বয়ফ্রেন্ড।আসল নাম ফরহাদ।দুজনই একই গ্রামের।একই সাথে খেলাধুলা একই সাথে বেড়ে ওঠা।ফরহাদ ছিলো শান্ত-শিষ্ট।আর আমি বানর স্বভাবের। এগাছ ওগাছ, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম,ঝিলের পাড়ে বসে বড়শি ফেলা,বর্ষার সময় ব্যাঙ ধরে বোতলে আটকানো আর ক্লাসের পড়া না শিখে মাষ্টার মশাইয়ের সাথে মস্কারা ছিল আমার স্বভাব।আর প্রতিদান স্বরুপ, বাবার বকুনি, মায়ের খুন্তির মাইর,আর মাস্টারের বেতের বাড়ি এসব থাকতো প্রতিদিনের উপহার।আমার ব্যাথায় আমি ব্যাথিত না হলেও যে ব্যাথা পেত সে হচ্ছে ফরহাদ।

ও তাই আমাকে বাঁচানোর জন্য অনেক মিথ্যা বলত।বড় হয়েও সে দ্বারা বজায় রেখেছিল সে।প্রেমের ক্ষেত্রে প্রথম প্রেমের সময় হেল্প করলেও দ্বিতীয়টার ক্ষেত্রে সে দূরে সরে যাচ্ছিল। তারপর একদিন যা হওয়ার তা হয়ে গেলো।তিনদিন প্রেম করেছিলাম দুজন।ফরহাদ চতুর্থ দিন এসে বলল,আমি তোর জন্য দেবদাস হবো।তারপর আমার সাথে স্বইচ্ছায় ব্রেকআপ করেছে শুধু দেবদাস হয়ে থাকার জন্য।চন্দ্রমুখী ছাড়া দেবদাস হচ্ছে সে।আমার নাম দিলো শায়লা থেকে পার্বতী। এখন সে সন্ন্যাসী না হয়ে মদ নিয়ে চন্দ্রমুখী ঘরে না গিয়ে পার্বতীর শ্বশুর বাড়ি চলে আসল। ওর বিশ্বাস নাকি পার্বতীর বিয়ে এই ঘরে হয়েছে।পার্বতী সয়ং ওকে এই কথা বলেছিল।আর পার্বতী বিয়ের আগে কয়টা প্রেম করছে,তাদের সাথে কোথায় গেলো,কি দিলো আর কি নিলো সব একে একে সব ফাঁস করে যাচ্ছে।

আড়াল থেকে ফরহাদের কথা শুনে কলিজা শুকিয়ে গেলো।এভাবে ধরা খেয়ে যাবো ভাবতেই পারিনি।বিশ্বাস করে ওকে জামাইর বাড়ির ঠিকানা দিয়ে ভুল করলাম নাকি। তবে রক্ষা পাচ্ছি শুধু নামের কারণে।হাসান আর শ্বশুর ওকে অনেক্ক্ষণ ধরে বুঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে ও ভুল ঠিকানায় এসেছে।সে মদের নেশায় আমার আসল নাম ভুলে গেলো।শুধু পার্বতী, পার্বতী করে যাচ্ছে।আর পার্বতীর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতেছে। হাসান ওযে ভুল ঠিকানায় এসেছে তা ওকে বুঝাতে আমার হাত ধরে ওর সামনে নিয়ে যাচ্ছিল।আমিও না করতে পারছিনা বলে,সামনে এসে দাড়ালাম। ধরা খেয়েতো যাবো আজ।কিন্তু খেলামনা। ফরহাদ আসার সময় সঙ্গে করে দুইটা বাংলা মদের বোতল নিয়ে এসেছিলো।খেতে খেতে বেহুশ হয়ে গেলো।আমিও শেষ রক্ষা পেলাম।

হাসান আর শ্বশুর আব্বা ধরাধরি করে রাস্তায় রেখে আসলেন।সবাই যে যার রুমে চলে গেলেও আমার ভয় ভয় লাগছিল।ওর যদি হুঁশ ফিরে আর নেশা কেটে গেলে নামতো মনে পড়ে যাবে।তখন কিন্তু ধরা খেয়ে যাবো। আমার সব কীর্তিকলাপ সব কিন্তু ফাঁস করে দিলো। হাসানকে বললাম, আপনাদের বাসার ছাঁদে ইট পাটকেল আছে? ও বেশ অবাক হয়ে বলল,কেন? চলেন না আগে ছাদে যায় তারপর বলব।আপনাকে একটা জিনিস দেখাবো,যা আপনি জীবনেও দেখেননি। হাসান রাজি হয়ে গলো,কিছু ইট-পাথর কুড়িয়ে ছাদে গেলাম দু’জন। হাসান খুব আগ্রহ নিয়ে দাড়িয়ে আছে না দেখা জিনিস দেখার জন্য। আমি বললাম চোখ বন্ধ করুন আমি না বলা পর্যন্ত চোখ খুলবেন না।

নিয়ে আসা ইট-পাথরগুলো থেকে একটা বড় ইটের টুকরো খুজে নিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দেখলাম রাস্তায় ফরহাদ গভীর ঘুমে।ইটের টুকরোটাতে একটা কাগজ বেধে দিয়েছিলাম, ভাই বিয়ে করে সংসারে বিশ্বাস কুড়াতে চাই,তুই বিশ্বাস ভেঙে দিস না।লিখে টুকরো টা ছেড়ে দিলাম নিচে,কিন্তু টুকরো টা গিয়ে লাগল তার মাথায়। সাথে সাথে লাল রক্ত বের হলো। নিজেকে বাচাতে বেঁচেরার জীবনটা শেষ করে দিলাম নাকি! খুব মায়া হলো,হাজার নাহোক, ছোটবেলার বন্ধুতো। হাসানকে ডাক দিলাম,দেখে যান আপনারা যে ছেলেটাকে রাস্তায় রেখে আসছেন তার মাথা দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। মরে গেলে কিন্তু আপনারা সবাই ফেঁসে যাবেন। হাসান তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসে বললো,হ্যারে ঠিক বললে।এখন কি করা যায় বলতো। চলেন হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসান অবাক হয়ে বলল,তুমি গেলে আব্বা আম্মা কিছু বলবেনা।

-আব্বা আম্মাকে আপনি সামলিয়ে নিবেন। তাড়াতাড়ি চলেন।

ফরহাদকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে দুজন চলে আসলাম।ভাবিকে চুরি করে ফোনে জানালাম ঘটনা। মাঝখানে বেশ কয়েক মাস পেরিয়ে গেলো।একদিন আমি আর হাসান আমার বাপেরবাড়ি দাওয়াত খেতে যাচ্ছি। আমাদের গেইটের সামনে ফরহাদের সাথে দেখা হয়ে গেলো।আমি ভয় পেয়ে গেলাম অনেক।এখন দেখলে আমার নাম ধরে ডাক দিলে কিন্তু শেষ।আমার স্বামী জানে,আমার প্রথম পুরুষ সে। ফরহাদকে দেখে হাসান বলল,এই ঐ পাগলটা না?তোমাদের গেইটের সামনে কি করছে?চলনা একটু কথা বলি। হাসান হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে বলল,ভাই কেমন আছেন আপনি?আমাদের চিনতে পারছেন? ফরহাদ আমার আর হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল,কারা ভাই আপনারা,চিনলাম নাতো?এলাকায় কি নতুন এসেছেন?

হাসান ঘাবড়ে গিয়ে বলল,না ভাই শ্বশুর বাড়ি এসেছি।আপনি যদি একটু সরতেন আমরা ভিতরে যেতে পারতাম।
আমার ভেতরের সব রাগ একসাথে ফুঁসে উঠলো।হাসানকে ভাই এসে ভিতরে নিয়ে গেলো।আমি ফরহাদকে বললাম,কিরে দেবদাস,সেদিনতো বলেছিলি তোর জীবনে পার্বতী ছাড়া চন্দ্রাবতীরও স্থান নাই। এখন দেখি পার্বতীর সাথে পার্ট মারছিস?তুই হালা সেদিন শ্বশুর বাড়ি গিয়ে এমন করেছিলি কেন? ফরহাদ দেখি রেগেমেগে দাঁত কটমট কটমট করতে করতে চলে গেলো।

বাড়িতে গিয়ে ভাবিকে বললাম ভাবি দেবদাসের কি হলো।আমি কথা বলতে চাইলাম,ব্যাটা পার্ট মেরে না চেনার ভান করে চলে গেল কেন? আর বলিসনা সে সত্যি তোকে চিনেনা।যেদিন তুই ইট ছুড়ে মারলি সেদিন থেকে ওর ব্রেইন ওয়াশ হয়ে গেলো আগের সব কথা ভুলে গেলো।এখন পাশের বাড়ির রুহানির সাথে প্রেম করে সামনের শুক্রবার তাদের বিয়ে। একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললাম, শান্তির নিশ্বাস। উফফ বাঁচলাম বাবা,বিশ্বাস করে বয়ফ্রেন্ড দেবদাস কে স্বামীর ঠিকানা দিয়ে কি ভুল করে কতো যে আতংক ছিলাম,এক রাতো এতোদিন শান্তির ঘুম হয়নি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত