পূজার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে অল্প কয়েকদিন হলো। বাবা মার পছন্দেই পূজাকে বিয়ে করেছি। এখন দেখছি আমার মা পূজার প্রতি তেমন সন্তুষ্ট না। মাঝে মাঝে পূজাকে অনেক শক্ত শক্ত কথা বলে ফেলে আর পূজা মুচকি হেসে এই শক্ত কথাগুলো খুব সহজেই হজম করে নেয়। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় আমি পূজার হয়ে কথার উত্তর দিই,, কিন্তু পারি না কারণ গর্ভধারিণী মা বলে কথা। আমার চাকরির প্রমোশন হলো। বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে আসলাম সবার জন্য। পূজা মিষ্টি পছন্দ করে না। আইসক্রিম খুব পছন্দ করে। তাই ওর জন্য আলাদা করে আইসক্রিম আনলাম। মিষ্টির প্যাকেট গুলো ছোট বোনের হাতে দিয়ে আমি আইসক্রিমের প্যাকেট টা নিয়ে আমার রুমে গেলাম। পর দিন সকালে দেখি মা পূজাকে বলছে,
~তোমার স্বামীর তো প্রমোশন হয়ছে। এখন থেকে তোমরা স্বামী স্ত্রী মিলে দরজা বন্ধ করে রসগোল্লা সন্দেশ খাবে,, আমরা তো এইগুলো চোখেও দেখতে পাবো না। পূজা কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো। ও ভেবেছিলো আমি ওর হয়ে কিছু একটা বললো কিন্তু আমি কিছু বলতে পারি নি কারণ গর্ভধারিণী মা বলে কথা প্রচন্ড মাথা ব্যথার জন্য পূজা সারারাত ঘুমাতে পারি নি। শেষ রাতের দিকে একটু ঘুমিয়ে ছিলো। কিন্তু সকাল ৭ টার সময় মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পূজাকে ডাকতে লাগলো। পূজা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে মাকে বললো,
-কি হয়েছে মা? মা চিৎকার করে বলতে লাগলো,
~বাপের বাড়ি থেকে কি ৮ -১০ টা কাজের মেয়ে নিয়ে এসেছো যে ওরা কাজ করবে আর তুমি নাক ডেকে বেলা পর্যন্ত ঘুমাবে। একটু পর আমার ছেলে অফিসে যাবে আমার মেয়ে কলেজ যাবে,, আর তুমি এখনো রান্না ঘরেই যাও নি। পূজা কিছু না বলে মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো। আর আমি মার সব কথা শোনার পরেও_ না শোনার অভিনয় করে চুপ করে শুয়ে রইলাম,, কারণ গর্ভধারিণী মা বলে কথা। মাকে কিছুই বলা যাবে না…
পারিবারিক একটা অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমি সবাইকে শপিং করার জন্য টাকা দিলাম শুধু পূজা বাদে। সবাই শপিং করলো আর আমি পূজার জন্য নিজে পছন্দ করে একটা শাড়ি কিনে আনলাম। যখন পূজাকে শাড়িটা দেবো, তখন আমার বোন শাড়িটা দেখে পছন্দ করে ফেলে আর শাড়িটা নিয়ে নেয়। পূজা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো,, কিন্তু আমি কিছু বলি নি, কারণ আমার নিজের বোন বলে কথা! সেদিন দেখি আমার বোন পূজাকে বলছে, ভাইয়ের যদি আগে প্রমোশনটা হতো তাহলে কখনোই তোমাদের মত নিম্নমানের পরিবারে- আমার ভাইকে বিয়ে করাতাম না। কথাটা শুনে পূজা চুপচাপ চলে গেলো আর আমি বোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটু হাসলাম। নিজের আপন বোন বলে কথা খাবার টেবিলে বসে বাবা চিৎকার করে বলতে লাগলো,
~এই তরকারী কে রান্না করছে? পূজা কিছুটা ভয় ভয় চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
-বাবা, আমি রান্না করেছি। বাবা তখন বললো,
~ এইসব কি তরকারী রান্না করেছো খাবার মুখে দেওয়া যায় না। তোমার মা কি তোমায় রান্না বান্না কিছুই শিখাই নি?
পূজা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো আর আমি একমনে খাবার খেতে লাগলাম। জন্মদাতা পিতা বলে কথা | বাথরুম থেকে এসে পূজা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-তুমি জামা কাপড় সব ব্যাগের ভিতর রাখছো কেন? আমি সেই কথার উত্তর না দিয়ে শুধু বললাম,
— তুমি তৈরি হয়ে আসো আমি নিচে যাচ্ছি আমি বাবা মাকে প্রনাম করে বললাম, মা হাসতে হাসতে বললো,
– তোর কি আবার প্রমোশন হয়েছে? আমি মার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
— না মা প্রমোশন হয় নি তবে তোমাদের ছেলে কিছুটা বুঝতে শিখেছে। আমি ছোট একটা বাড়ি- ভাড়া নিয়েছি, আজ থেকে আমি পূজাকে নিয়ে ঐ ভাড়া বাড়িতেই থাকবো। মা রেগে গিয়ে বললো,
– শেষ পর্যন্ত তুইও অন্য ছেলেদের মত বউয়ের গোলাম হয়ে গেলি? আমি মাকে বললাম,
— না মা বউয়ের গোলাম হই নি। শুধু বউকে তার প্রাপ্য সম্মানটা দিচ্ছি। একটি বার চিন্তা করে দেখো তুমি পূজার সাথে যা যা করেছো,,! তোমার মেয়ের সাথে যদি সেই একই কাজ গুলো তার শ্বাশুড়ি করে তাহলে তোমার কেমন লাগতো? বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— আচ্ছা বাবা, আজ আমার ছোট বোন যদি রান্না করতো আর সেই রান্না যদি খারাপ হতো তাহলে কি তুমি আমার ছোট বোনকে এইভাবে বকাঝকা করতে পারতে,,? যেভাবে পূজাকে বকেছো! বাবা সব রান্না সবদিন সমান হয় না। একটু ভুল হতেই পারে তাই বলে ওকে বকাঝকা না করে,, একটু ভালো করে বুঝিয়েও তো বলতে পারতে ছোট বোনকে বললাম,
— দেখ বোন, তুইও কোন একদিন অন্য বাড়ির বউ হবি। তখন যদি তোর স্বামীর দেওয়া উপহারটা কেউ কেড়ে নেয় তখন বুঝবি কতটা কষ্ট হয়। তুই এখন কলেজে পড়িস,, তোর বোঝা উচিৎ, কাউকে ছোট করে কেউ কখনো বড় হয় না ছেলে বিয়ের পর মা বাবা থেকে আলাদা হয়ে,, শুধু বউয়ের দোষে না মাঝে মাঝে মা বাবার ও দোষ থাকে,,, কিছু বাবা মা কখনো মানতেই চায় না ছেলের বউও মেয়ের মতো,,, তোমরা আমার বাবা মা তোমাদের উপর অবিচার করতে পারি না কিন্তু আমার স্ত্রী তো আমার অর্ধাঙ্গিনী আমার শরীরের অর্ধেক অংশ, তার প্রতি কি করে অবিচার করি? একটা মেয়ে তখনই সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়ে,,, যখন দেখে তার প্রতি অবিচার হচ্ছে অথচ তার স্বামী চুপ করে আছে।
যে মেয়েটা সবাইকে ছেড়ে একটা অচেনা অজানা মানুষকে বিশ্বাস করে এসেছে তাকে কি করে অসম্মান করি আমি চেষ্টা করবো সন্তান হয়ে তোমাদের প্রতি আমার কর্তব্য পালন করতে, সেই সাথে চেষ্টা করবো আমার স্ত্রীকে তার প্রাপ্য সম্মানটা দিতে পিছনে ফিরে দেখি পূজা দরজায় দাঁড়িয়ে অনবরত কান্না করছে। আমি পূজার চোখের জলটা মুছে ওর কানে কানে বললাম,
— আরে পাগলি কাঁদে না। মাঝে মাঝে কাছে আসার জন্য হলেও একটু দূরে যেতে হয়। আমি কোথাও বাড়ি ভাড়া নিইনি । অনেকদিন ধরে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হয় না এই সুযোগে শ্বশুরবাড়িও যাওয়া হবে,,, আর মা বাবাও একটু বুঝতে পারবে,, তাদের সন্তান পারিবারিক শিক্ষাটাও রপ্ত করে ফেলেছে ||