“দেখুন বুবলিকে একা পেয়ে কি করলো শাকিব খান।” ইউটিউবে ফানি ভিডিও দেখার জন্য গেছিলাম। হুট করে চোখের সামনে এমন একটা নিউজ দেখে চোখ ঘুরান্টি দিলো। মাথার মধ্যে একটা চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে বুবলিকে একা পেয়ে কি করবে শাকিব খান? বুকটা ধুকধুক করছে। টানটান উত্তেজনা। আমাকে ভিডিও দেখতেই হবে। নিজেকে প্রস্তুত করে গভীর আগ্রহে যেই না ভিডিও অপেন করব। অমনি আম্মা ডাক দিলো….
–রুবেল কইরে?
-আম্মা রুমের ভিতরে।
–একটু আয়তো?
-ক্যান?
–দরকার আছে।
-পারমুনা, মোবাইল টিপতেছি।
–তুই আসবি নাকি মোবাইল ভাংমু।
-আচ্ছা আসতেছি।
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। মনে মনে শুধু ভিডিওর কথা ভাবছি। কখন দেখতে পারব! ইসসসস খেলা হপে আম্মারর কাছে গেলাম বললাম….
–কিচ্চে ডাকো কেন?
-একটু বাজারে যা।
–কেন?
-মাংস আনতে হবে।
–সাইফরে (ছোট ভাই) বলো আমি পারমুনা।
-ও ছোট মানুষ পারবেনা, তুই যা। ভাবলাম বাজারে যাই। যাওয়ার সময় দেখবো। আহারে ভিডিও। কিন্তু মন মানছেনা। কি করলো শাকিব খান? আমাকে দেখতেই হবে। আম্মা বলল….
–কিরে যাবি নাকি মোবাইল ভাংমু?
-আচ্ছা টাকা দাও, আমি যাচ্ছি। অতঃপর আম্মার কাছ থেকে টাকা নিলাম। বাজারে উদ্দেশ্যে যেইনা যাব আম্মা বলল….
–রুবেল তোর মোবাইলটা দিয়ে যা।
-মানে মোবাইল দিমু কেন? (অবাক হয়ে)
–দরকার আছে।
-দিতামনা।
–দিবি নাকি আছাড় দিমু?
-তুমি মোবাইল দিয়ে কি করবা?
–তোর বাবার সাথে ভিডিও কলে কথা বলব।
-আমি আসার পর নিও?
–তুই দিবি নাকি ভাংমু?
অগত্যা মোবাইল টা দিতে হলো। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। ভিডিও টা দেখতে পারলামনা। আফসোস! ভাবলাম খুব তাড়াতাড়ি বাজারে গিয়ে মাংস এনে তারপর দেখবো। যেই ভাবা সেই কাজ। খুব তাড়াতাড়ি বাজারে গেলাম। ভালো দেখে এককেজি মাংস কিনলাম। মাথায় শুধু ভিডিওরর কথা ঘুরছে,’ বুবলিকে একা পেয়ে কি করলো শাকিব খান।’ তাড়াতাড়ি করে বাসায় আসার জন্য রওনা হলাম। এদিকে রাস্তায় আমার ছোট বেলার বন্ধু নাজমুলের সাথে দেখা। আমাকে দেখেই বলল….
–কিরে কি অবস্থা? অনেকা দিন পর দেখা হলো।
-এইতো ভালো তোর?
–চলছে আরকি। তা এত তাড়াতাড়ি বাসায় যাচ্ছিস কাহিনী কি?
-কিছুনা এমনি….
–আচ্ছা তাহলে চল চা খেয়ে আসি।
-নারে তুই যা, আমার বাসায়য় যেতে হবে।
কে শোনে কার কথা। নাজমুল এক প্রকার টানতে টানতে আমাকে নিয়ে বাজারে গেলো। দুজনে মিলে চা খেলাম। এদিকে আমার মাথায় “বুবলিকে একা পেয়ে কি করলো শাকিব খান” কথাটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। কি আছে ভিডিওতে আমাকে দেখতেই হবে। নাজমুলকে বলে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে দেখি সাইফ মোবাইলে গেমস খেলছে। মাথার চান্দি গরম হয়ে গেলো, বললাম…..
–হারামি মোবাইল তোর কাছে কেন?
-আম্মায় দিছে।
–মোবাইল দে….
-পারুমনা।
–কেন?
-হুন্ডা খেলাই?
–মানে?
-হুন্ডা গেমস খেলছি। সাইফের কাছে থেকে যেই না মোবাইল নিতে যাব অমনি ও চিৎকার দিলো। চিৎকার শুনে আম্মা আসলো, বলল….
–কিরে চেঁচাচ্ছিস কেন?
-আম্মা ভাই খালি মোবাইল চায়? (সাইফ)
–কিরে?
–আমার মোবাই লাগবে। (আমি)
-পরে নিস…. (আম্মা)
–কেন?
-তুইতো সারাদিনই টিপস। ও বাচ্চা মানুষ একটু নিক।
আম্মার কথা শুনে সাইফ আমাকে ভেংচি কেঁটে দৌঁড়ে ওর রুমে চলে গেলো। আমিও পিছে পিছে গেলাম। কিন্তু সাইফ দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে একটা গানই মনে পরছে “ছোট ভাই যখন মোবাইল নিয়া আমার চোখের সামনে দিয়ে হাইট্টা যায়, ও বুকটা ফাইট্টা যায়।”
কিন্তু এদিকে আমার উত্তেজনা বেরেই চলছে। সাইফ রুমের দরজা বন্ধ করে দিছে। আমার শুধু “বুবলিকে একা পেয়ে কি করলো শাকিব খান” কথাটা মনে পরছে। মনটা ছটফট করছে। আহো ভাতিজা আহো, ভিড্ডু দেহুম। প্রায় ১ ঘণ্টা পর সাইফ মোবাইল দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো। মনে হচ্ছে প্রাণ ফিরে পেলাম। আমার রুমে এসে খুশিতে একটু ওদা চান্স দিলাম। মোবাইল অন করে দেখি ৫% চার্জ। মেজাজটাই বিগরে গেলো। মনডায় কয় সাইফরে ধইরা কাইট্টা মাটিত্তে পুইত্তা ফালাই। ছোট ভাই হিসেবে মাফ করে দিলাম। মোবাইল চার্জে লাগিয়ে ডাটা অন করলাম। ইউটিউবে গেলাম। ভিডিও টা সামনে পেলামনা।
একটু খোজাখুজির পর পেলাম। ভিডিও টা চোখের সামনে আসতেই দিলমে লাড্ডু ফুটেগা। যাক বহু সাধনার পর ভিডিও দেখতে পাব। আহ কি শান্তি! ভিডিও প্লে করলাম। কানেক্টিং হচ্ছে….কিছুক্ষণ পর আসলো। বুবলি আর শাকিব খান রুমে বসে আছে। হেসে হেসে কথা বলছে। আমি গভীর আগ্রহে দেখছি। খেলা হবে এবার। আবার তখন-ই বিদেশ থেকে আমার ছোট খালা ফোন দিলো। কেমনডা লাগে? ফোন কেঁটে দিলাম। আবার ফোন দিলো, রিসিভ করতেই ঝাড়ি শুরু করলো…..
–কিরে ফোন কাটোস কেন? হ্রামি থাবড়া খাবি।
-সরি খালা…
–আচ্ছা তোর আম্মার কাছে দে…
-এহন পারুমনা, পরে কথা বইলো।
–তুই দিবি নাকি বিচার দিব?
-আচ্ছা।
আম্মাকে ফোন দিলাম। আধাঘণ্টা কথা বলার ফোন কেঁটে গেলো। মোবাইল নিয়ে দেখি এমবি শেষ। মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেলো। হে আল্লাহ তুম আকাশ থেইক্কা বিরিয়ানি ফালাও মুই খাইতে খাইতে উঠুঙ্গি। উপায়ন্তর না পেয়ে টাকা লোন নিয়ে এমবি কিনলাম। রুমে এসে ভিডিও অপেন করলাম। আবার প্রথম থেকে শুরু। শাকিব খান, বুবলি হেসে হেসে কথা বলছে। আমার আগ্রহ বারছে। কি হবে দেখার ইচ্ছা। অবশেষ শাকিব খান আর বুবলি কথা বলার পর দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর গান শুরু হলো ‘গোলাপি গোলাপি তোর গাল গোলাপি’
গানটা শেষ হয়েই ভিডিও শেষ। লও ঠ্যালা ফকিন্নির কাণ্ড দেখো। ভাবলাম কি আর হলো কি। আবেগে, দুঃখে রাগে নিজের মাথার চুল নিজেরই টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। মেজাজ তিনগুণ খারাপ হয়ে গেলো। আয়নার সামনে গিয়ে ইচ্ছেমত নিজের চুল টানলাম। এখন প্রসুর ভালো লাগছে । সাথে মাথা ব্যথা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিছানার উপর ধপাসসসস করে গা এলিয়ে দিলাম। আর দূরে কোথাও গান বাঁজছে “কালা কালা তর মাও কালা তরে আমি দিমু উগান্ডার মালা। ও ও বুবলি তর ভাই আমার শালা।”