হাওয়া বদল

হাওয়া বদল

মেসের সব বন্ধু বান্ধব আর বড় ভাইরা মিলে আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় এক বড় ভাই আমার ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের স্কিনে থাকা ছবিটা দেখে আমায় বললো,

– পিয়াস, মাল তো সেই রকমের হট। খেলে মজা পাবে। মালটার বাসা কোথায়? আমি কিছু না বলে বড় ভাইকে বললাম,

— ভাই একটু আপনার মোবাইলটা দেন তো। একটু কল দিবো। আমার ফোনে টাকা নেই। বড় ভাই তার ফোনটা আমার হাতে দিলে আমি গ্যালারিতে গেলাম। একটা ছবি বের করে বড় ভাইকে দেখিয়ে নিজের ঠোঁট নিজে কামড় দিয়ে বড় ভাইকে বললাম,

— ভাই, মালটা একদম কচি। খেয়ে সেই রকম মজা পাবেন। মালটার বাসা কোথায়? বড়ভাই ছবিটা দেখে রেগে আগুন হয়ে আমার নাক বরাবর সজোরে ঘুষি মেরে বললো,

-কুত্তার বাচ্চা, তর কত বড় সাহস তুই আমার ছোট বোনকে খারাপ কথা বলিস আমার নাক ফেটে রক্ত বের হচ্ছিলো। আমি গলায় থাকা গামছা দিয়ে রক্ত মুছতে মুছতে মুচকি হেসে বড় ভাইকে বললাম,

–আমি না হয় কুত্তার বাচ্চা তাই আপনার বোনকে খারাপ কথা বলেছি কিন্তু আপনি তো মানুষের বাচ্চা তাহলে আপনি কেন আমার বোনকে খারাপ কথা বললেন? বড় ভাই আমার কথা শুনে কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলো। আমি বড় ভাইকে আবার বললাম,

— ফোনের ওয়ালপেপারে যে শুধু গার্লফ্রেন্ডের ছবি থাকবে এমন তো কোন কথা না। তাছাড়া গার্লফ্রেন্ডের ছবি থাকলেও আপনি নোংরা দৃষ্টিতে তাকাবেন কেন? আপনাদের মত কিছু নিচু মন মানসিকতার মানুষের জন্য মানুষ তার পরিবারের ছবি গুলো ফোনের গ্যালারির এক কোণে গোপন করে রেখে দেয়। অথচ ফোনের ওয়ালপেপারে পরিবারের মানুষের ছবিগুলো থাকলে মনে একটা শাস্তি লাগে। আমি যতবার ফোনটা হাতে নিতাম ততবারই ছোটবোনের হাসিমাখা মুখটা দেখে মনটা ভরে যেতো। কিন্তু আজ থেকে বোনের ছবিটা গ্যালারির এক কোণেই লুকিয়ে রাখবো…

অনেকদিন পর বাসায় এসেছি। বাসায় আসার পর থেকেই ছোট বোন মাথা খারাপ করে দিচ্ছে তাকে নিয়ে কাশফুল দেখতে যেতে। তার সব বান্ধবীরা না কি কাশফুল হাতে নিয়ে ছবি তুলেছে। সেও না কি কাশফুল হাতে নিয়ে ছবি তুলবে। তাই আজ ছোট বোনকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। রিকশাওয়ালা মাঝবয়সী হবে। উনি একটু পর পর পিছন ফিরে আমাদের দিকে তাকাচ্ছেন আর মুচকি মুচকি হাসছেন। আমি উনাকে বললাম,

— মামা হাসছেন কেন? উনি আবার পেছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
-মামা, রিকশার হুডটা তুলে নেন সুবিধা হবে। আমি অবাক হয়ে বললাম,
— মানে? উনি আবারও হেসে বললো,

– ৯ বছর ধরে রিকশা চালাই আমি তো সব বুঝি। চিন্তা করেন না যে মামা। আমি নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে রিকশা নিয়ে যাবো তখন আপনাদের কাজ করতে সুবিধা হবে কিন্তু শর্ত হলো আমায় একটু ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে। রিকশাওয়ালার কোন ইঙ্গিতে কথাটা বলছে সেটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম। আমার ছোট বোনও মনে হয় বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলো। এইজন্যই ও মুখ লুকিয়ে কান্না করছে। আমি রিকশাটা থামিয়ে রিকশাওয়ালাকে নিয়ে একটু সাইডে আসলাম। তারপর রিকশাওয়ালাকে বললাম,

— তোমার রিকশায় কি শুধু প্রেমিক প্রেমিকারা উঠে? ভাই বোন উঠে না? উনি অবাক হয়ে বললো,

– আপনারা কি ভাই বোন? আমি উত্তর দিলাম,
— হে রিকশাওয়ালা বললো,
-তাহলে আপনি পাঞ্জাবি আর আপা শাড়ি পরেছে কেন? আমি তখন বললাম,
— ভাই বোন কি শাড়ি পাঞ্জাবি পরে রিকশায় উঠতে পারে না? রিকশাওয়ালা কিছু না বলে মাথাটা নিচু করে রইলো। আমি তখন বললাম,

— ইচ্ছে করছে তোমার গালে একটা থাপ্পড় মারি কিন্তু যদি মারি তাহলে বলবে গরীবের উপর অত্যাচার করেছি রুমে বসে ফোন টিপছি এমন সময় ভাবী এসে বললো,

– পিয়াস, চলো শপিং করতে যাবো। আমি অসহায় দৃষ্টিতে ভাবীর দিকে তাকিয়ে বললাম,

— তোমার সাথে শপিং করতে গেলে দোকানে দোকানে ঘুরতে ঘুরতে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
ভাবী আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,

– তোমার ভাইয়া থাকলে তোমায় এই কষ্টটা দিতাম না ভাবীর হাত ধরে সাবধানে যখন ভাবীকে রাস্তা পার করালাম তখন এলাকার পরিচিত একটা ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

– বড় ভাই দেশের বাহিরে তাই ছোট ভাই সার্ভিস দিচ্ছে। আহা কি ভাগ্য রে আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম,

— শুনেছি তোর দুলাভাই না কি ২ বছর ধরে দেশের বাহিরে আছে। আর তোর দুলাভাইয়ের না কি ৩টা ছোট ভাই আছে। ওরা কি তোর বোনকে সার্ভিস দেয়? কথাটা শুনে যখন ছেলেটা আমার দিকে রাগে আসতে লাগলো তখন পাশে থাকা একজন মুরুব্বি ছেলেটাকে আটকে বললো,

– নিজের বেলা ১৬ আনা আর পরের বেলায় কানা কড়িও না তা তো ঠিক না। নোংরা কথাগুলো তো তুমিই বলা শুরু করেছিলে ছেলেটি কিছু না বলে চলে গেলো। আমি মুরব্বি লোকটার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলাম। মুরব্বি লোকটাও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো তারপর ভাবীকে বললো,

– কিছু মনে করো না মা। সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে। তবে আশা রাখি একদিন সমাজের হাওয়া বদল হবে..

সত্যিই আজ সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে। আর এই সমাজ নষ্ট করেছি আমরা মানুষরা। আজকাল ফোনের ওয়ালপেপারে ছোট বোনের ছবি রাখা যায় না কারণ পাশে থাকা বন্ধু কিংবা বড়ভাই ছবি দেখে কমেন্ট করে ফেলবে মালটা জোশ..
আজকাল কোন এক বিকালে একই রিকশায় চড়ে বোনেকে সাথে নিয়ে ঘুরতে বের হওয়া যায় না কারণ মানুষ সেটা খারাপ চোখে দেখে মানুষ আজকাল এটা ভুলে গেছে ভাবী আর দেবরের সম্পর্কটা ভাই বোনের মতও হতে পারে..

মুরুব্বি লোকটার মত আমিও আশা রাখি একদিন সমাজের হাওয়া বদল হবে। সেদিন মানুষ গ্যালারির কোণে লুকিয়ে রাখা ছোট বোনের হাসি মাখা ছবিটা ফোনের ওয়ালপেপারে নির্ভয়ে রাখবে। একই রিকশায় ভাই বোন হাসাহাসি করে ঘুরে বেড়াবে আর সেটা কেউ খারাপ চোখে দেখবে না। ভাবী আর দেবরের সম্পর্কটা হবে মা ছেলের মত। কেউ আর ভাবীর দিকে কামুক দৃষ্টিতে তাকাবে না। সবাই শ্রাদ্ধার চোখে তাকাবে..

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত