১৪

১৪

পুলিশের কনস্টেবলের চাকরী’তে যয়েন দেয়ার পর পরই, বেঈমান এক্স গার্লফ্রেন্ডের প্রতারণার বদলা নেয়ার জন্য থানা থেকে ১৪ জন কনস্টেবল নিয়ে তার বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম। সাথে এক প্যাকেট ইয়াবা ট্যাবলেট নিলাম।

শালী’কে ইয়াবা মহিলা ব্যবসায়ী বলে- চালান করে দেবো, জেলার জেলখানায়। আমার মতো এক সহজ-সরল ছেলের সাথে প্রতারণার মাশুল কত’টা ভয়ানক হতে পারে, তা এবার সে হাড়ে-হাড়ে টের পাবে। আমি শাওন। রাঙ্গামাটিতে পুলিশের চাকরী করি। ঘুষ দিয়ে এখানে ট্রান্সফার হয়ে এসেছি। শুনেছি আমার এক্স এই জেলাতে আছে। আমি আগে একজন ভার্সিটির মেধাবী স্টুডেন্ট ছিলাম। গায়ের রং কিঞ্চিৎ কালো হলেও, সব সময় পড়াশুনায় ব্যস্ত ছিলাম। কলেজে তুখোড় স্টুডেন্ট তখন আমি।

আমি বলছি আগের কথা। মেয়েরা আমার দিকে ভাব করার জন্য নজর দিলেও কিন্তু তখন আমি কাউকে তোয়াক্কা করতাম না। আমাকে যে, জেলার টপ স্টুডেন্ট হতে হবেই। উপবৃত্তি আর টিউশনির টাকায় আমার পড়াশুনা তখন চলত। সারাক্ষণ বই নিয়েই থাকতাম। কিন্তু এই মেয়ে আমার জীবনে এসে আমার জীবনকে তেজপাতার মতো তছনছ করে দেয়। প্রথমত আমি তার দিকে তাকাতাম না। কিন্তু একটা সুন্দরী মেয়ে একটা কালো ছেলের পিছনে দৌঁড়াচ্ছে বিষয়টা কতক্ষণ সহ্য করা যায়।

শেষে আমিও পড়ে গেলাম তার ভালবাসার ফাঁদে। পরে জানতে পারি আমার মতো ছেলে ঘুরানোই মেয়েটার বেড হেভিট। আমার মতো আরো ডজন খানেক ছেলে আছে তার। আমার ভালবাসা ছিলো পানির মতো স্বচ্ছ। তাই তাকে ভুলতে পারলাম না। তার জন্য কবিতা থেকে শুরু করে, রক্ত দিয়ে নামও লিখতে থাকলাম দেয়ালে দেয়ালে। আমার বি পজেটিভ রক্ত দেখে, সে আমার জন্য পাগল হয়ে গেলো।

তার জন্য টিউশনির টাকা থেকে হরেক রকমের গিফট আর ট্রিট দিতে থাকলাম। ১৪ মাসে ১ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা খরচ করলাম। শেষে মেয়ে বলে কিনা তার বিবাহ ঠিক হয়ে যাচ্ছে! আমি আমার কালো চেহারা, কালো ফিগার আর চিকন শরীর দেখিয়ে বললাম, কি কম আছে আমার মাঝে? সে আমাকে উত্তর দিলো “সরকারী চাকরী” এর শুধু কম আছে। আমি বললাম, “যদি সরকারী চাকরীই তোমাকে পাওয়ার মাধ্যম হয়, তাহলে হবো আমি সরকারী কর্মকর্তা।” তার জন্য ভার্সিটি ছেড়ে দিলাম। ইন্টারের সার্টিফিকেট দিয়ে কি মেলে সরকারী চাকরী? শেষে ভিটেমাটি বন্ধক রেখে ১৪ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে নিলাম কনস্টেবলের পুলিশের চাকরী।

তার কপালে চুমু দিয়ে গেলাম পুলিশ ট্রেনিং -এ। পুলিশে ট্রেনিং যে কি কষ্ট, তা আর বলতে। আমাকে সকালে পিটিয়ে উঠিয়ে দিতো। দৌঁড় দিয়ে যেতো হতো কয়েক কিলোমিটার। ঠিক সময় না আসতে পারলে আবার মাইর। দড়ি বেয়ে উঠতে হতো উপরে। নীচের দিকে তাকালে মনে হতো মানুষ পিঁপড়া হয়ে গেছে। কতবার যে প্যান্টের তলা ফেটেছে ওয়াল টপকাতে গিয়ে, তার হিসেব নেই। শুধু তার জন্য পালিয়ে আসতে পারতাম না। শেষে আমি কনস্টেবল হয়ে গেলাম । কিন্তু এসে শুনি কিনা তার ইচ্ছায় বিবাহ হয়ে গেছে! এটা শুনে দুইদিন কোমায় ছিলাম।

কিন্তু কোমা থেকে ফিরে আসলাম বদলা নেবো বলে। নিজেকে জিমে নিয়ে গেলাম। ইয়া বড় মাসল বানালাম। যাতে তাকে ইচ্ছামত পিটাতে পারি যেন। খবর নিয়ে জানলাম মেয়েটির বিবাহ হয়েছে রাঙ্গামাটিতে। আরো ১৪ লাখ টাকা দিয়ে বদলি হলাম রাঙ্গামাটিতে। সেখানে প্রথমে তাকে খুঁজতে গিয়ে, শান্তি বাহিনীর কাছে খেলাম মাইর। পরে ১৪ বার কান ধরে শেষ রক্ষা হলো। আমি বলছি সে ছলনাময়ীর কথা যাকে জগৎ, ইরা নামে চিনে। তাই আজ যখন ইরার বাড়ির ঠিকানা পেলাম, তাই ইয়াবার প্যাকেট নিয়ে রওনা দিলাম তার বাড়ির দিকে। আমার সাথে আরো ১৪ জনকে নিয়ে এলাম। যাতে ইরা পালাতে না পারে।

কিছুক্ষণ পরে জিপে করে চলে এলাম ইরার হাজবেন্ডের বাসায়। বাসা তো নয় যেন রাজপ্রাসাদ। বাড়ির সামনে দারোয়ান প্রবেশ করতে না দিলে দিলাম এক মাইর। ১৪ বার কানে ধরালাম তাকে। আজ আমার যে ক্ষমতা আছে, সাথে প্রশাসনও আছে। এখন আমি যা ইচ্ছা তা করতে পারি। কলিংবেল চাপতেই দেখি “ইরা” দরজা খুলেছে। প্রথমত আমাকে সে চিন্তেই পারিনি। পরে যখন রাইফেল বের করলাম তারপর চিনলো। রাইফেলের নীচে সব। চিনবে বা কি করে আমি যে ফেয়ার এন্ড লাভলী মেখে এসেছি। সে আমাকে দেখে, নাক কান্না করতে লাগল। আমি গলতে থাকলাম। কিন্তু প্রশ্রয় দিলাম না।

আমাকে যে বদলা নিতে হবে। আমি সাদা কাগজ দেখিয়ে বললাম ” চার্চ ওয়ারেন্ট”। ভিতরে অনিচ্ছাসত্ত্বেও ঢুকতে দিলো সে। দুদকের মতো সব কিছু এলোমেলো করতে থাকলাম। বইপত্র, আসবাবপত্র সব মেঝেতে ছুঁড়ে মারলাম। “ইরা” চা বানাতে গেলে, পকেট থেকে ইয়াবার প্যাকেট বিছানার নীচে রেখে দিলাম। সে চা নিয়ে আসলে, চা পান করে তাকে বিছানায় উল্টিয়ে দেখালাম “এগুলা কী?” সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, এগুলা হিস্টাচিন এর ট্যাবলেট। আমি বললাম,”এগুলা বাবা”। সে দেয়ালে ঠাঙ্গানো বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে রইল। আমি বললাম,” বাবার ব্যবসা করো, না?” সে আবার বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে রইল।

আমার সাথে দু’জন মহিলা মোটা কনস্টেবলও নিয়ে এসেছি। নতুন এসেছে। তারা “ইরা” কে রেসলিং খেলার মতো মারতে থাকল। আমি রেফারি হয়ে আনন্দে শিস দিতে থাকলাম। সে “ওমাগো” বলে কাঁদতে কাঁদতে শেষ। শেষে আমিও চুলের মুড়ি ধরে ইচ্ছামতো পিটাইলাম। তারাও শিস দিতে থাকল। ১৪ বার পিটালাম। শেষে থানায় নিয়ে ১৪ শিখের ভিতরে ঢুকিয়ে রাখলাম। জানুক, প্রতারণা কি! শেষে আমরা নতুন পুলিশ ১৪ জন গিয়ে ১৪ বার করে ১৪ ঘন্টা মারলাম।

কিন্তু পরে, ইরার চেহারা দেখেই ওসি সাহেব “থ” হয়ে গেল। আমরা ভাবলাম হয়ত ইরার প্রেমে পড়েছে। তা আর নতুন কি! এই মেয়ে যে ছলনাময়ী। যাদু জানে।। ওসি সাহেব কাঁদতে কাঁদতে বললেন,”হারামজাদার বাচ্চা, কাকে নিয়ে আসছস? এটা তো আমার বউ!” “তার মানে ইরা ওসি সাহেব’কে বিবাহ করেছে।” ওসি সাহেব কোমড় থেকে পিস্তল নেয়ার আগেই দিলাম দৌঁড়। আমি এখন দৌঁড়াচ্ছি, ওসি সাহেব বন্দুক আর ১৪ জন কনস্টেবল নিয়ে আমার পিছনে দৌঁড়াচ্ছেন।। বন্দুক আর বোম ফুটছে আমার আশেপাশে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত