পাক্কা দুইমাস পাঁচদিন প্রেম করার পর আমার মনে হচ্ছে এরকম একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে প্রেম না করলেই ভালো হত ! এই মুহুর্তে আমার সামনে স্কুল ড্রেস পড়া ভিলেন টাইপ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকা মেয়েটিই আমার তথাকথিত গফ, যে কিনা চায় আমি সবার সামনে কান ধরে তাকে সরি বলি। আমার ভুল – ওর স্কুলছুটির ১০ মিনিট লেইটে এসে পৌছেছি। কি একটা মুশকিল অবস্থা ! আমি আদুরে স্বরে মাথা নিচু করে চকলেটের প্যাকেট হাতে দিয়ে ওকে বললাম,
-বাবুউউ ওমন করেনা। এই নাও চকলেট খাও আর রাগ কমাও। রিয়া (আমার গফ) নাক ঝামটা দিয়ে বলল,
-খাব না, খাব না, খাব না! আগে কান ধরো আমিও করুণ স্বরে বলতে লাগলাম,
-প্লিজ বাবু, ওমন করেনা প্লিজ রিয়াকে কনভাইন্স করতেই যাচ্ছিলাম আর হঠাৎ কোথা থেকে যেন এক গরিলা টাইপ দাঁড়োয়ান হনহন করে এসে হাজির কষিয়ে আমার গালে একটা চড় দিয়ে বলল,
-ছোট বাচ্চা পেয়ে কিডন্যাপ করার ধান্দায় থাকো মিঁয়া? থামো দেখাইতাছি তোমারে ! আসো আমার সাথে।
বলতেই হ্যাচকা টান দিয়ে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। কোথা থেকে যেন ক’জন স্কুলড্রেস পড়া বাচ্চা ছুটে আসলো আর প্রতিবাদী সুরে বলতে লাগলো, মামা ওই লোকটাকে নিয়ে যান। ও সেই কখন থেকে রিয়াকে চকলেট দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ট্রাই করছে ! হি ইজ আ ছেলেধরা ! ”
আমি একবার করুণ দৃষ্টিতে রিয়ার দিকে তাকাই, আরেকবার দাঁড়োয়ানের দিকে রিয়া মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আর দাঁড়োয়ানের চোখে আমার জন্য রাজ্যের রাগ ! মনে মনে ভাবতে লাগলাম, এই পৃথিবীতে কি কারো আমার জন্য মায়া হয়না? আমি একটা নীরিহ ছেলে আমার আর্তনাদ কি কেউ শুনতে পায়না না কেউ না? সে যাত্রায় দুজন দাঁড়োয়ানের বেধোর ধোলাই খেয়ে মেসে ফিরে আসলাম। দুইদিন পর আমার মাস্টার্সের রেজাল্ট বেড়োলো৷ আমি তো খুশিতে গদগদ ! কারণ যতটা আশা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে ! সিজি ৩.৫ এই যুগে এত সিজি পাওয়া কি কম কথা? নিজেকে নিয়ে গর্ব আর আবেগে আপ্লুত হয়ে যাচ্ছিলাম বারবার। আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে রিয়াকে কল করলাম,
-বাবু, আমার মাস্টার্সের রেজাল্ট দিলো ! খুব ভালো হয়েছে। যতটা ভেবেছিলাম তার চেয়ে বেশ ভালো।
-(ওপাশ থেকে উৎসাহী কণ্ঠে) বাবু কঙ্গো ! ট্রিট দিবা আমাকে, ওকে? বাই দ্য ওয়ে, তোমার রেজাল্ট যেন কি?
– ৩.৫ (স্বল্পকালীন নিরবতা)
-হ্যালো রিয়া ! কিছু বলছ না কেন? কই তুমি?
-(কর্কশ গলায়) ছিঃ আসিফ ! এই রেজাল্টকে কি করে ভালো বলছ তুমি? আমার মাথায় ঠাডা পড়ল এটা শুনে ! আমার মা বাবা এখন কি করে তোমার আমার বিয়েতে রাজী হবে?
-কেন বাবু কি হয়েছে?
-তুমি কিনা ৩.৫ পাও ! আরে আমিই তো সেদিন জেএসসিতে ৫.০০ পেয়ে বসে আছি। আর তুমি কিনা এত্ত কম পেয়ে এত খুশি ! শেখো আমাকে দেখে কিছু ! আমার মা বাবা ৫.০০ পাওয়া মেয়ের সাথে ৩.৫ পাওয়া ছেলের কি করে বিয়ে দেবে? লেভেলেই তো থাকলে না আর ! শিট ! ও তো সিজি আর জিপিএ-র পার্থক্যই জানে না ! – ভাবতে ভাবতে মাথা চাপড়াতে লাগলাম। কি করলাম এটা আমি ! এখন ওকে বুঝাতে গেলে আমার মস্তিষ্কের সব তার ছিড়ে যাবে। অবশেষে পরাজিত যোদ্ধার মত হতাশ স্বরে বললাম,
– হ্যাঁ বাবু। আমি পচা স্টুডেন্ট। কি করব বলো ৫.০০ তো আমি চোখেই দেখিনি কখনো ! গফের মুখে বিজয়ের হাসি শুনে রুমমেটের কাছে গিয়ে লুটিয়ে পড়লাম। ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
– দোস্ত আমাদের মত সিঙ্গেলরা এত অসহায় কেন? ক্লাসমেটদের হয় বিয়ে হয়ে গেছে নাহয় রিলেশন করে। আর আজকাল কলেজের মেয়েদেরও সিঙ্গেল পাওয়া যায়না৷ আমাদের শেষ ভরসা তো এই স্কুলের বাচ্চারাই। এরাও যদি এমন করে তাহলে কি করে চলবে !
রুমমেট মনেপ্রাণে চেষ্টা করছিল আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার। তখনই রিয়ার কল আসলো। রুমমেটকে বললাম, কলটা ধরে বল আমি মরে গেছি ! হাত কেটে মরে গেছি ! রুমমেট ওকে একথা বলার সাথে সাথেই ও অস্থির হয়ে গেলো আমার সাথে কথা বলার জন্য। আমার চোখে রীতিমতো পানি চলে এলো আচ্ছা মেয়েটা আমাকে এত ভালোবাসে? এতটা? কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম,
-বাবু আমি আর ম আমার কথা শেষ না হতেই ওপাশ থেকে ও বলল,
– এই তুমি হাত কাটলে আমাকে বলো নি কেন? আমাকে পিক দাও নি কেন? তাড়াতাড়ি পিক তুলে দাও ! আমি আপলোড করব আর ক্যাপশনে থাকবে “আমার প্রেমে আত্মত্যাগ করা এক শহীদের রক্তমাখা হাত আমি কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলাম। কানের কাছে যেন ঠাডা পড়ছে আর বাংলা সিনেমার গান বাজছে, আমার মত এত সুখী নয়তো কারো জীবন, কি আদর স্নেহ ভালোবাসা জড়ানো মায়ার বাঁধন…
রিয়ার একেরপর এক কল, মেসেজ আসছেই ! বারবার জিজ্ঞেস করছে আমার হাত কেটে পিক কখন দেব ! আমিও বারবার বলে যাচ্ছি, এই তো একটা পারফেক্ট ক্লিক করে নেই ! নাহলে এত এত লাইক আসবে কি করে? রিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে বলছে, আচ্ছা। করো আস্তেধীরে । কিন্তু আমিও তো কম না এই ফাঁকে টমেটো সস দিয়ে হাত কাটার ডিজাইন করে যাচ্ছি ! একেই হয়ত বলে বাচ্চা গফকে হ্যান্ডেল করার নিঞ্জা টেকনিক !